সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

দারুল উলূম হোসাইনিয়া কওমী কেরাতিয়া মাদরাসা

March 24 2024, 06:40

প্রতিষ্ঠানের নাম :- দারুল উলূম হোসাইনিয়া কওমী কেরাতিয়া মাদরাসা

প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা :- গ্রাম: পূর্ব সলিয়াবাকপুর, ডাকঘর: সলিয়াবাকপুর, উপজেলা: বানারীপাড়া, জেলা: বরিশাল। যাতায়াত: বরিশাল শহর থেকে নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) গামী বাসে চড়ে গুয়াচিত্রা বাজার নেমে ১.৫ কি.মি. উত্তরে গুয়াচিত্রা-চাখার সড়কের পাশে মাদরাসার অবস্থান।

প্রতিষ্ঠা কাল :- ১৯৫১ ঈসায়ী/১৩৭১ হিজরী।

প্রতিষ্ঠাতা :- হযরত সুফী আরেফ আলী মুনশী রহিমাহুল্লাহ (ইন্তেকাল: ১৯৭৭ ঈসায়ী)। বিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট সংস্কারক, ইসলামী শিক্ষা সম্প্রসারক এবং দাওয়াত ও তাবলীগের প্রবীণ মুরুব্বী।

প্রতিষ্ঠাকালিন মুহতামিম :- মাওলানা কাজেম আলী (প্রাপ্ত তথ্যামতে প্রথম মুহতামিম)।

প্রতিষ্ঠাকালিন জামাত সংখ্যা,বর্তমান সমাপনী জামাত / মাদরাসা দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত হলে্ এর উদ্বোধনীর সন :- মাদরাসায় বর্তমানে তিনটি বোর্ডের অধীনে চারটি বিভাগে পাঠদান করা হয়। যথা:
০১. কিতাব বিভাগ (জামাতে শরহে বেকায়া পর্যন্ত)।
০২. হিফজুল কুরআন বিভাগ।
০৩. নাজেরা/কেরাত বিভাগ।
০৪. নূরানী বিভাগ (নার্সারি থেকে তৃতীয় জামাত পর্যন্ত)।

প্রতিষ্ঠাকাল থেকে চলমান সময় পর্যন্ত কৃতি শিক্ষার্থীর নাম, তাদের বর্তমান সামাজিক- অবস্থান :- • শহীদ আবুল কাসেম রহ. (তিনি বরিশাল মাহমুদিয়া মাদরাসা মসজিদের নির্ণামকাজ চলাকালীন শহীদ হন)।
• মাওলানা আবু সাঈদ মকবুল হোসাইন রহ. (ফকিহুল উম্মত মুফতি মাহমূদ হাসান গাঙ্গুহী রহ. এর খাদেম)।
• মাওলানা আফসার উদ্দীন (নাজেমে তা’লীমাত, কেরাতিয়া মাদরাসা)।
• মাওলানা হোসাইন আহমাদ (সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া মাহমুদিয়া, বরিশাল)।
• মাওলানা হাফেজ আব্দুল জব্বার (ইমাম, রিয়াদ সৌদি আরব)।
• মাওলানা হাফিজুর রহমান (সিনিয়র শিক্ষক, ছারছিনা জামেয়া এ নেছারিয়া দ্বীনিয়া)।
• মাওলানা শহিদুল ইসলাম নাজিরপুরী।
• মাওলানা আব্দুর রব (পরিচালক, আশরাফুল উলূম হাফিজিয়া কওমী মাদরাসা, সদর ঝালকাঠি)।
• মাওলানা মুজ্জাম্মেল হোসেন (মুহতামিম, হাবিবপুর তা\’লীমুল কুরআন কওমী মাদরাসা, উজিরপুর) প্রমুখ।

অত্র অঞ্চলের মানুষকে নিরক্ষরতা দূরিকরণে মাদরাসার ইতিবাচ ভূমিকা, মানুষের সামাজিক সাংস্কৃতিক দৈনতার পরিবর্তনে প্রতিষ্ঠানের অবদান :- দক্ষিণবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী এই দ্বীনি মারকায প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রেক্ষাপট ছিল শিরক ও বিদআতের বিরুদ্ধে সামাজিক বিপ্লব। প্রাক বাংলাদেশ যুগ ও তারও বহু পূর্বে সমগ্র উপমহাদেশের ন্যায় এতদঅঞ্চলের মুসলমানগণ স্বীয় ঈমানী চেতনা থেকে বিচ্যুৎ হয়ে নানাবিধ কুসংস্কার, বিদআতি কর্মকান্ডসহ শিরকের ন্যায় ভয়াবহ পাপাচারে জড়িয়ে পড়ে। চলমান বৃটিশ অপশাসনে মুসলিম সমাজ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ধ্বংসের চূড়ান্তে পৌছে যায়।
এসময় উপমহাদেশ জুড়ে আবির্ভূত হন ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কারকগণ। তাদেরই যোগ্য উত্তরসূরী বিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট সংস্কারক কুতুবে রব্বানী হযরত সুফী আরেফ আলী মুনশী রহিমাহুল্লাহ।
তিনি তাঁর একদল সাথীদের নিয়ে এ অঞ্চলে সংস্কার আন্দোলন গড়ে তোলেন। এ আন্দোলন অব্যাহত রাখা, দক্ষ ও মুখলেস দা\’ঈ তৈরি করা এবং সহীহ দ্বীন ও দ্বীনি শিক্ষার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে দারুল উলূম দেওবন্দের অনুকরণে তিনি এই মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মাদরাসাটি দেশ ও জাতির গুরুত্বপূর্ণ খেদমত আঞ্জাম দিয়ে আসছে। বর্তমানে মাদরাসায় দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত, নিয়মিত মাসিক ইসলাহী জলসা, বাৎসরিক মাহফিল এবং ওলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

মাদরাসার স্বর্নোজ্বল ইতিহাস :- উপমহাদেশে বৃটিশদের আগমনের পর স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হলে মুসলমানদের সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে ঘোর অন্ধকার নেমে আসে। নানারকম নির্যাতন-নিপীড়ন ও আকীদা-সংস্কৃতির উপর নেমে আসা বিধ্বংসী আগ্রাসনে উপমহাদেশ জুড়ে ধর্মীয় ও সামাজিক বিপ্লব অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় উম্মাহর একদল কিংবদন্তী সিপাহসালার ভারতের উত্তর প্রদেশে বিশ্ববিখ্যাত দারুল উলূম দেওবন্দ -এর গোড়াপত্তন করেন। দেওবন্দ আন্দোলনের অংশ হিসেবে উপমহাদেশ জুড়ে কওমী মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে।
একই প্রেক্ষাপটে, একই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে দারুল উলূম দেওবন্দের অনুকরণে ১৯৫১ ঈসায়ী মোতাবেক ১৩৭১ হিজরী সনে প্রতিষ্ঠিত হয় বরিশাল জেলার বানারীপাড়া-উজিরপুরের প্রাচীনতম এবং দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি মারকায, দারুল উলূম হোসাইনিয়া কওমী কেরাতিয়া মাদরাসা। প্রতিষ্ঠা করেন দক্ষিণবঙ্গের বিশিষ্ট বুযুর্গ, বিংশ শতাব্দীর সংস্কারক, দাওয়াত ও তাবলীগের প্রবীণ মুরুব্বী, ওলিয়ে কামেল হযরত সুফী আরেফ আলী মুনশী রহিমাহুল্লাহ (ইন্তেকাল: ১৯৭৭ ঈসায়ী)। বৃটিশ শাসনামলে সুফী সাহেব রহ. যে শিক্ষা ও সংস্কার আন্দোলনের সূচনা করেন তারই উজ্জ্বল দান কেরাতিয়া মাদরাসা। প্রতিষ্ঠা পরবর্তী সময়ে অসামান্য কুরবানী ও মেহনতের দ্বারা আমৃত্যু তিনি এর খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। দ্বীনের জন্য তাঁর কুরবানীর ঘটনাবলী কিংবদন্তী হয়ে এ অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে আজও বহুল প্রচলিত।
মাদরাসার প্রতিষ্ঠালগ্নে সুফী সাহেব রহ. কে জমিদান করে সহযোগিতা করেন তাঁর বিশিষ্ট সাথী, একই গ্রামের মরহুম মোঃ আছমত আলী ও মোঃ কাছেম আলী হাওলাদার ভ্রাতৃদ্বয়। পরবর্তীতে অন্যান্যদের জমিদান ও সর্বসাধারণের বহুমুখী সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটি আজকের রূপ লাভ করে। যুগে যুগে নানারকম প্রতিকূলতা ও বিক্ষুদ্ধ সময়ের সাক্ষী হয়ে দীর্ঘ সাত দশক অতিক্রম করে প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে চলছে, আলহামদুলিল্লাহ।

মাদরাসার বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করে আগামীর পরিকল্পনা :- বর্তমানে মাদরাসায় তিনটি বোর্ডের অধীনে চারটি বিভাগে পাঠদান করা হয়। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আ\’মল-আখলাকের উন্নতি এবং বহুমুখী দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান আছে। পাঠ্য এবং সহায়ক বিষয়াবলীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপ।

পাঠ্য বিষয়সমূহ:
• কিতাব বিভাগ (শরহে বেকায়া পর্যন্ত)।
• হিফজুল কুরআন বিভাগ।
• নাজেরা/কেরাত বিভাগ।
• নূরানী বিভাগ (নার্সারী থেকে তৃতীয় জামাত পর্যন্ত)।

সহায়ক অন্যান্য কার্যক্রমসমূহ:
•পূর্ব সলিয়াবাকপুর আরেফ আলী মুনশী রহ. এতিমখানা
•লিল্লাহ বোর্ডিং
•হযরত সুফী আরেফ আলী মুনশী রহ. কুতুবখানা
•আল আ’রিফ জমিয়তে তোলাবা
•আল আ’রিফ নাশিদ পরিবার
•সাপ্তাহিক ও মাসিক সেমিনার
•বার্ষিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক মজলিশ
•দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত
•জমিয়ত পাঠাগার ইত্যাদি।

মাদরাসার বিতাবখানাটি বরিশাল তথা দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম প্রাচীন। আগামীতে ইনশা-আল্লাহ কিতাবখানায় দাওরা হাদীস পর্যন্ত দরস চালু হবে। পরবর্তীতে সময়োপযোগী আরও বিভিন্ন পাঠ্য বিষয় যুক্ত করাসহ উচ্চতর গবেষণা কেন্দ্র চালু হবে ইনশা-আল্লাহ।
এছাড়া সাহিত্য, শিক্ষা ও গবেষণাধর্মী নিয়মিত সাময়িকী প্রকাশ এবং বিভিন্ন মেয়াদে দেয়ালিকা প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে ইনশা-আল্লাহ।

মাদরাসাটি যে বোর্ডের অধিনে :- ০১. বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক), ০২. হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশন, ০৩. নূরানী তা\’লীমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশ।

মাদরাসার হিসাব ব্যাবস্থা / ফান্ড:- সাধারণ মানুষের দান ও অন্যান্য।

বর্তমান মুহতামিম :- মাওলানা হাফেজ ওবায়দুল হক

বর্তমান মুহতামিমের মোবাইল নাম্বার :- ০১৭১৪-৪৭৬৮৮৫ (দফতর)

বর্তমান শিক্ষাসচিব :- মাওলানা আফসার উদ্দীন

বর্তমান শিক্ষকবৃন্দের তালিকা :- ০১. মাওলানা হাফেজ ওবায়দুল হক
০২. মাওলানা আফসার উদ্দীন
০৩. মাওলানা মুফতি আরিফ বিল্লাহ
০৪. মাওলানা মুফতি এমদাদুল্লাহ
০৫. মাওলানা মুফতি মাহমুদুল হাসান
০৬. মাওলানা আব্দুল্লাহ জামাল
০৭. মাওলানা ওমর ফারুক নাঈম
০৮. মাওলানা হাফেজ বনী আমিন
০৯. মাওলানা হাফেজ আল আমিন
১০. হাফেজ নাইমুর রহমান
১১. ক্বারী মাইনুল ইসলাম
১২. মাওলানা নাইমুর রহমান
১৩. ক্বারী ইমরান নাসির
১৪. ক্বারী বাবুল হোসেন
১৫. মাস্টার মোঃ বেলায়েত হোসেন

চলমান মোট ছাত্র সংখ্যা :- ৩০০ জন।

চলমান ছাত্রাবাসে অবস্থান রত ছাত্র সংখ্যা :- ২০০ জন (আনুমানিক)।

তথ্য দানকারীর নাম :- নাফিস অলি (স্নাতকোত্তর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়)

তথ্য দানকারীর মোবাইল :- +৮৮০১৬০১৬৬৬৮০৬

তথ্য দানকারীর ইমেইল :- nafisoli.bd@gmail.com

Spread the love