সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

হযরত মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ. এর সংক্ষীপ্ত জীবনী…

May 02 2019, 04:21


Manual8 Ad Code

নাম :- হযরত মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ.

জন্ম / জন্মস্থান :- জন্ম ও শৈশব: এই উপমহাদেশে বৃটিশ শাসনের সায়াহ লগ্নে ০১-০৩-১৯৩৪ সালে বৃহত্তর সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট ধানাধীন গোয়াছপুর গ্রামের এক দ্বীনদার সম্ব্রান্ত মুসলিম খান্দানে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম নূরুল হক মুন্সী ছিলেন সমকালীন এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও নিরলস সমাজ সেবী।

শৈশব কাল :- আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মেহেরবানীর বদৌলতে মহান-সাধক, জ্ঞানী ও মহাপুরুষদের আবির্ভাবে গোটা পৃথিবী ধন্য হয়েছে। উপকৃত হয়েছে পৃথিবীর মানুষ তাদের পরশ লাভে। স্বল্পতম সময়ে মানব কল্যাণের মত কীর্তির স্বাক্ষরে জীবনকে যারা মহিমান্বিত করতে সক্ষম হন তাদের অন্যতম ছিলেন হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলাধীন ‘জামি’আ ইসলামিয়া আরাবিয়া গোয়াছপুর মাদ্রাসা’র প্রতিষ্ঠাতা ও মুহতামিম, উস্তাদুল মুহতারাম হযরত মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ.। মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ একটি নাম, একটি ইতিহাস, একটি জীবন, একটি আদর্শ ও বহু মাত্রিক এক প্রতিভা। ইসলামী ইতিহাস, ঐতিহ্য, তাহযীব-তামাদ্দুনকে সমাজে প্রতিফলিত করতে অপ্রতিরোধ্য গতি সম্পন্ন একজন রাহবার। একটি দেশ, একটি জনপদ বা একটি জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা সবার থাকেনা। নেতৃত্ব দিতে হলে মানুষের থাকতে হয় সহজাত কিছুগুণ। যে জাতি যত দক্ষ গুণান্বিত এবং জনদরদী রাহবার পায়, সেই জাতি তত সমৃদ্ধ হয়ে উঠার পথে এগিয়ে যায়। একেকটি জাতির মধ্যে একেকজন রাহবারের নাম তারকার মতো জ্বল-জ্বল করতে দেখা যায়। সেই নামটি হয়ে উঠে জাতি গঠনের প্রেরণা। জাতির নৈতিকতা আদর্শ ও মূল্যবোধ গড়ে ওঠে ঐ রাহবারের চেতনার ওপর ভর করে। কখনো-কখনো এসব রাহবার নিজ জাতি এবং ভৌগলিক সীমানা পেরিয়ে হয়ে ওঠেন বৈশ্বিক। তেমনি এক অত্যুজ্জল বাতি ঘরসম মহান রাহবার ছিলেন আমাদের প্রাণপ্রিয় উস্তাদ, মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ.। যার নীতি আদর্শ মানব প্রেম এলাকায়-ই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকেনি। নিজ এলাকার গন্ডি পেরিয়ে দেশ ব্যাপী আদর্শ ও উদারতার প্রতিক হয়ে উঠেছিলেন। যাকে সকলই শ্রদ্ধার সাথেই স্মরণ করে থাকে। মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ. ছিলেন সমকালিন সময়ের এক জ্ঞানী-প্রজ্ঞাবান ও পথহারা মানুষের পথের দিশারী। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। বহুদিন আগে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে মহন প্রভুর দরবারে চলে গেলেন। নিজ প্রতিষ্ঠিত জামি’আর ছাত্র-শিক্ষক ও অসংখ্যক গুণগ্রাহীদেরকে শোকের সাগরে
একেকটি জাতির মধ্যে একেকজন রাহবারের নাম তারকার মতো জ্বল-জ্বল করতে দেখা যায়। সেই নামটি হয়ে উঠে জাতি গঠনের প্রেরণা। জাতির নৈতিকতা আদর্শ ও মূল্যবোধ গড়ে ওঠে ঐ রাহবারের চেতনার ওপর ভর করে। কখনো-কখনো এসব রাহবার নিজ জাতি এবং ভৌগলিক সীমানা পেরিয়ে হয়ে ওঠেন বৈশ্বিক। তেমনি এক অত্যুজ্জল বাতি ঘরসম মহান রাহবার ছিলেন আমাদের প্রাণপ্রিয় উস্তাদ, মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ.। যার নীতি আদর্শ মানব প্রেম এলাকায়-ই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকেনি। নিজ এলাকার গন্ডি পেরিয়ে দেশ ব্যাপী আদর্শ ও উদারতার প্রতিক হয়ে উঠেছিলেন। যাকে সকলই শ্রদ্ধার সাথেই স্মরণ করে থাকে। মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ. ছিলেন সমকালিন সময়ের এক জ্ঞানী-প্রজ্ঞাবান ও পথহারা মানুষের পথের দিশারী। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। বহুদিন আগে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে মহন প্রভুর দরবারে চলে গেলেন। নিজ প্রতিষ্ঠিত জামেয়ার ছাত্র-শিক্ষক ও অসংখ্যক গুণগ্রাহীদেরকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন কিন্ত মানুষের আত্মা থেকে নয়, মানুষ তাকে ভুলেনি। কবির ভাষায়- ‘মরিতে চাহিনা আমি এই সুন্দর ভুবনে, মানবের তরে আমি বাঁচিবার চাই’। সত্যিই তাঁর কায়া-নশ্বর এই পৃথিবীতে নেই তবে মানবের হৃদয়ে আছে। তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন তাঁর মহৎ কর্ম ও স্মৃতি বিজড়িত ‘জামি’আ ইসলামিয়া আরাবিয়া গোয়াছপুর মাদরাসা’র মাঝে। মাদরাসার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে তাঁর নিরলস প্রচেষ্ঠাকে আমরা বিন¤্রচিত্তে স্মরণ করছি।

শিক্ষা জীবন :- নিজ গ্রামের স্থানীয় মক্তব ও প্রাইমারী স্কুলে মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ.-এর প্রাথমিক শিক্ষার হাতে খড়ি। পরবর্তীতে ইসলাম বিরুধী তৎপরতা আর অপসংস্কৃতি নিধনে সিংহ পুরুষ, মোজাহিদে মিল্লাত মাওলানা মুখলিছুর রহমান রায়ধরী রহ. প্রতিষ্ঠিত জামেয়া সাদীয়া রায়ধর মাদ্রাসায় উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জন করেন। হযরত রায়ধরী রহ. এর খেদমতে থেকে একাদারে ১১বৎসর অত্যন্ত সুনাম ও সুখ্যাতির সাথে অধ্যয়ন করেন। সর্ব শেষে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী চট্টগ্রাম হতে অসামান্য কৃতিত্বের সাথে দাওরায়ে হাদীস (টাইটেল ক্লাস, কামিল (এম. এ) ডিগ্রি প্রাপ্ত হন।

কর্ম জীবন :- কর্মজীবন:
শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করে মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ. নিজ এলাকায় গোয়াছপুর জামে মসজিদের ইমাম ও খতীব এবং একই সাথে গাতাবলা দাখিল মাদ্রাসায় আরবী হেড মাওলানা হিসেবে শিক্ষকতার মহান পেশায় নিযুক্ত হন। সেখানে ৫বৎসর সুনামের সাথে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে ইসলামী তামাদ্দুন, ইতিহাস-ঐতিহ্যকে সমাজে প্রতিফলিত করতে ও সমাজে সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ইংরেজী ১৯৬৯সালে মতান্তরে ১৩৭৬বাংলা সনে নিজ একান্ত চেষ্ঠায়, ধলাইপাড়ের মাওলানা আব্দুর রহিম রহ., মাস্টার মোহাম্মদ আলী রহ., ক্বারী আলী হায়দার দা.বা. ও এলাকাবাসীদের সাথে নিয়ে “জামি’আ ইসলামিয়া আরাবিয়া গোয়াছপুর মাদরাসা” নামে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের একটি দ্বীনি শিক্ষা কেন্দ্র মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং আজীবন তিনি ঐ মাদরাসার প্রধান পরিচালক পদে অভিষিক্ত হন। হযরত মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ. এর বলিষ্ঠ ও গতিশীল নেতৃত্বে জামি’আ ইসলামিয়া আরাবিয়া গোয়াছপুর মাদরাসা অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। বাস্তব ও সর্বস্তরের মানুষের জানা যে, মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ. এই মাদরাসার তরে নিজ ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে প্রায় সব জায়গা-জমিন বিলিয়ে দেন।

দাম্পত্য জীবনে:
তিনি গোয়াছপুর গ্রামের স¤্রান্ত পরিবার ভূইয়া বাড়ীর মরহুম আব্দুল মতলিব সাহেবের তিন সন্তানের প্রথমা কন্যা মিসেস রাবেয়া খাতুনের সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। মৃত্যকালে তিন ছেলে মাহমুদুল হাসান, মাহফুজুল হাসান মানসুর, মাহবুবুল হাসান, চার কন্যা-মাহমুদা আক্তার, মাহবুবা আক্তার, মাসহুদা আক্তার ও মাজেদা আক্তার সফরাজ এবং স্ত্রীকে রেখে যান।

তাসাউফের দীক্ষা:
যুগতাফস, ওলীয়ে কামীল, মোজাহিদে মিল্লাত, মুফতীয়ে আজম আল্লামা মুফতী ফয়জুল্লাহ রহ. এর নিকট বায়আত গ্রহণ করেন। মুফতী ফয়জুল্লাহ রহ. ইন্তেকালের পর ছাবরিয়া চিশতীয়া তরীকার উজ্জল নক্ষত্র, আমীরুল মোজাহিদীন, পীর সাহেব চরমোনাই রহ. এর কাছে বায়আত গ্রহণ করেন। মৃত্যুপর্যন্ত তিনি চরমোনাই রহ. এর মুরীদ ছিলেন। চরমোনাই পীর সাহেবের কাছে বয়াআত থাকাবস্থায় আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী ও জিকির-আযকারে লিপ্ত থাকতেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হযরতের মাঝে ছিল তাহাজ্জুদের পর থেকে নিয়ে ফজরের আগ পর্যন্ত নিয়মিত যিকিরের আমল। বাড়ীর প্রবীণ মৃরব্বীরা বলেন-এমন কোন রাত যায় নাই যে রাতে ঘুম থেকে উঠেই মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ.-এর যিকির শুনিনাই। অর্থাৎ প্রতি রাতে ফজরের নামাযের জন্য ঘুম থেকে উঠেই শুনি মাওলানার মধুর কণ্ঠে যিকির করছেন। যার ফলে মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ.-এর ইন্তেকালের বছর দু’য়েক পর কবর হেফাজত করার লক্ষ্যে চতুর্পাশে দেওয়াল দেয়ার জন্য মাটি খনন করাবস্থায় হঠাৎ মিস্ত্রিরির পা কবরের মাটি ভেদ করে কবরে ঢুকে গিয়ে কবরের এক সাইড ভেঙ্গে যায়। ফলে মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ.-এর লাশ বেশির ভাগই বের হয়ে যায়। বাহির থেকে মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ.-এর কাফন স্পষ্ট বেড়িয়ে পড়ে। জনতা তাদের প্রিয় মানুষের লাশ এক নজর দেখার জন্য মাদরাসা প্রাঙ্গণে তথা কবরের পার্শ্বে জড়ো হতে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শী রাজমিস্ত্রী জনাব জবরু মিয়া সাহেব, মাদরাসার শিক্ষকমন্ডলী ও ছাত্রবৃন্দ এবং হযরতের আত্মীয় স্বজন সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গগণ জানালেন যে, মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ. ইন্তেকালের প্রায় বছর দু’য়েক অতিত হয়ে যাওয়ার পরও তার অক্ষত লাশ দেখে আমরা অবাক হয়ে গেলাম। তাঁর অক্ষত লাশ দেখে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন-মনে হচ্ছে তাকে দুই/একদিন আগে দাফন করা হয়েছে। ধবধবে সাদা কাফনের কাপড়ে কোন ময়লা দেখা যায়নি। তার কবরের বাঁশের কাঠাইও একবারে কাঁচা রয়েগেছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি কাঠাই লাগানো হয়েছে। পরবর্তীতে পুনরায় মাটি দিয়ে তার কবর ঢেকে দেওয়া হয়। আল্লাহর ওলীদের ক্ষেত্রে আল্লাহপাক যা করে থাকেন মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ.-এর বেলায় তাই করেছেন। মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ. যে একজন খাঁটি আল্লাহর ওলী ছিলেন তাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নাই। যারা হযরতের বন্ধু মহল বা হযরতের সাথে চলা-ফেরা উঠা বসা করেছেন তারা সকলেই একবাক্য বলেন-মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ. এর মত খাঁটি নির্লূভ আল্লাহর ওলী আমরা খুবই কম দেখিছি। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সারাটি জীবন-যৌবন, ধন-সম্পদ, মানুষ, দেশ ও দশের উপকারে বিলিয়ে দিয়েছেন।

Manual1 Ad Code

সামাজিক জীবনে:
সামাজের সর্বস্তরের মানুষের কল্যানে হযরতের অবদান ছিল অপরিসীম। অবসর সময়ে তিনি নিজ গ্রামে এমনকি নিভৃত পল্লী অঞ্চলের অসহায় গরীব ও এতিম
দরিদ্রদের প্রতি তার হাত থাকতো একান্ত সম্প্রসারিত। সামাজিক বিচার-আচারে তিনি একান্ত সচেষ্টভাবে শরীক হতেন। ন্যায়-অন্যায়ের যথাযথ সমাধান করে সমাজে শান্তি ও মানবতা সুলভ দয়া-মায়া প্রতিষ্ঠা করতেন। এব্যাপারে জাতি, ধর্ম, গোত্র এবং ধনী-দরিদ্রের তার কাছে মোটেই প্রার্থক্য, ফরাক বা তারতম্য ছিলনা। বরং আল্লাহর বান্দা মানুষ হিসেবে সবার প্রতি মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ.-এর সমান দরদ ছিল। পক্ষান্তরে, জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান আলিম হিসেবে সমাজে প্রচলিত চরম ও রেওয়াজ যা শিরক ও বিদআত রূপে হিন্দুদের থেকে সংক্রামিত হয়ে মুসলমানদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছিল। কুরআন ভিত্তিক দলীল-প্রমাণাদিসহ এর সমাধি রচনায় তিনি ছিলেন আপোষহীন চির সংগ্রামী। পরন্ত গান-বাদ্য, নৃত্যকীর্তন, মদ-গাজা, উলঙ্গপনা, টিভি-ভিসিয়ার এবং পীর-ফকিরী নামে শরীয়ত বিহীন বেশরয়ী কর্ম-কন্ডের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন আহরহ সোচ্চার ও প্রতিবাদ মুখর।

অবদান :- ব্যক্তিগত জীবনে:
ব্যক্তিগত জীবনে মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ. ছিলেন খুবই সাদা-সিদে ও অনাড়ম্বর জীবন যাপনে সহজ সরল পোষাক পরিধান করতেন। তবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতায় তিনি ছিলেন খুবই সজাগ। আমারা ছোট বেলায় দেখেছি ও এলাকার সর্বস্তরের মানুষসহ মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ. এর ছাত্রদের কাছ থেকে শুনেছি যে, হযরত রহ. ছিলেন প্রকৃতিগতভাবেই অত্যধিক মিশুক। অতি সহজেই অপরকে আপন করে নেয়ার চুম্বক শক্তিতে তিনি ছিলেন অনেকটাই অতুলনীয়। যুগের প্রতিভাবর মহান ব্যক্তিত্ব মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ. বল্যকাল থেকেই স্বীয় পিতা-মাতার একান্ত বাধ্য ও অতিথি পরায়ন ছিলেন। ছোটদের প্রতি দয়া-মায়া বড়দের তাযীম ও তাকরীম এবং জ্ঞানী ও আলেম-উলামাদের শ্রদ্ধা করতেন। মাদরাসার ছোট বড় সকল ছাত্রদের প্রতি হযরত রহ. এর ছিল অপার ভালোবাসা। ছাত্রদেরকে তিনি অত্যধিক আদর করতেন। স্নেহ আর মমতায় অতি সহজেই সিক্ত করে দিতেন ছাত্রদের কোমল হৃদয়। তাই ছোট-বড় সকল ছাত্ররাও ছিল হযরত রহ. এর খুবই ভক্ত ও অনুরক্ত। শিক্ষণীয় খোশ গল্প বুননেও হযরত ছিলেন বে-নজীর। দিন রাতের অসংখ্যা কর্ম ব্যস্ততা সত্ত্বেও হযরত রহ. নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। যথা সময়ে নামায আর দীর্ঘ সময় ধরে নামাযে দাড়িয়ে থাকার চিরন্তন অভ্যাসটুকু মৃত্যু পর্যন্ত হযরতের মাঝে ছিল অটুট। মোটকথা, খোদাভীরুতা একাগ্রতা আর সহিঞ্চুতায় তিনি ছিলেন একেবারে বে-মিছাল। হযরত রহ. আজ আমাদের মাঝে নেই। প্রায় দুই যুগ অতীত হয়ে যাচ্ছে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন প্রিয়তম আল্লাহর সান্নিধ্যে।
একজন আলেমের মৃত্যু মানে গোটা আলমের মৃত্যু। পবিত্র আল কুরআনের দৃষ্টিতে ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাধ আস্বাদন উপভোগ করতে হবে। মৃত্যুর এই শরাব পান করা থেকে কেউই মুক্ত নন। আগে পরে সবাইকে একদিন মউতের পেয়ালা পান করতে হবে। ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় দুনিয়ার এই আড়ম্বর ত্যাগ করতে হবে, এর থেকে কেউ মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারবে না। মৃত্যুর এ নিয়মের ধারাবাহিকতায় আমাদেরকে হতবাক করে নয়ন যুগল অশ্রুসিক্ত করে ঝড়ে গেল মাওলানা আব্দুল হান্নান রহ. নামক দীপ্তময়ী একটি ফুল। হযরত রহ. ছিলেন সাধারণের মাঝে অসাধরনত্বের ঐশ্বর্যে মহীয়ান। জ্ঞান-গভীরতা তাক্বওয়া আত্মশুদ্ধি মানব সেবা তার অন্যতম চারিত্রক বৈশিষ্ট। তার ইলম-আমল ব্যক্তিত্ব ও চারিত্রিক প্রভাবে বহু মানুষের জীবন ধারায় এসেছে বৈপ্লিবিক পরিবর্তন। দলমত নির্বিশেষে সব ধরণের মানুষের মাঝে তার গ্রহণ যোগ্যতা ছিল ব্যাপক। একারণেই তাকে দেখলে অন্তরে শ্রদ্ধা জাগত।
.
ছড়া-
সবার চোখে হলেন তিনি আলোয় ভরা প্রাণ
জ্ঞান পৃথিবীর ঐ কাননে ছিলেন হাজার ফুলের ঘ্রাণ ।

আমরা যে তার শ্রম সাধনার আলোক রেখা দিয়ে
জ্ঞানের জমীনতপ্ত করে আনবো হীরক নিয়ে।

দ্বীন-হক্কের প্রাণ তিনি, ছিলেন অটল-অবিচল
গড়লেন কত আলেম উলামা, মুফতি মুহাদ্দিসের দল।

লাল প্রভাতে সে যেন এক লা-শারীকের দান,
দ্বীনের মহান নাবিক তিনি ওলামাদের শান।

তাসাউফের মহান সাধক, আল্লার মহা দান,
দিলের আধাঁর, দুর করিতে শিখাইলেন কুরআন।

Manual6 Ad Code

দুঃখ সুখের মাঝে গড়া বর্নাঢ্য এই জীবন টাকে
আল্লাহ তাঁকে করছেন সফল দুনিয়া ও আখেরাতে।

এই গোয়াছপুর জামি’আর বুকে যার অপরসীম অবদান
যেন মুক্তা হীরার জ্যোতি,অশেষ অনির্বাণ।

মানব প্রাণের মমতা আর দিল দরদী জন
বাতিল দ্রোহের সানাই তিনি গোয়াছপুর জামি’আর বন্ধন।

প্রতিক তিনি রাহে-দ্বীনের দরজা উচ্চারণ
আব্দুল হান্নান সাহেব তিসি যে গোয়াছপুর জামি’আর জাগরণ।

মৃত্যু তারিখ :- জীবনের পরিসমাপ্তি: হযরত রহ ১৫ ডিসেম্বর ১৯৯৫ ইং সনের শুক্রবার দিন জুম্মার নামাজের খুৎবা পাঠরত অবস্থায় হঠাৎ (হাই প্রেশার) রক্তচাপে অসুস্থ হয়ে যান। হাই প্রেশার নিয়েই এই দিনের ইমামতি করেন। এই খুৎবা ও ইমামতি তার জীবনের শেষ। শুক্রবার রাতেই হযরত রহ. হয়ে পড়েন শয্যাশায়ী। হযরতের অসুস্থতার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার মানুষ দলে-দলে তাদের প্রিয় ব্যক্তিকে এক নজর দেখতে জড়ো হতে লাগলো হযরতের বাড়ীতে। সকলের মতামতের উপর এ্যাম্বুলেন্স এনে হযরতকে সিলেট ওসমানী মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হযরত রহ. ১৪০২ বাংলার পৌষ মাসের ৩তারিখ, ২৪ রজব ১৪১৬ হিজরী, ১৭ ডিসেম্বর ১৯৯৫ ইংরেজি রোজ রবিবার রাত ১১ঘটিকায় মুচকি হাসিবস্থায় মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিয়ে নিলেন। ইন্নলিল্লাহি….রাজিউন। হযরতের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে হবিগঞ্জ, চুনারুঘাট তথা দেশ-বিদেশে শোকের ছায়া নেমে পড়ে। লাশ নিয়ে আসা হয় হযরতের নিজ বাড়ীতে। গোসল দিয়ে নতুন কাপড় পরিধান করিয়ে মৃতদেহ নিয়ে আসা হলো হযরতের প্রাণপ্রিয় প্রতিষ্ঠিত জামি’আ প্রাঙ্গণে। স্বজনদের কান্না-কাটিতো ছিলই। ভক্ত অনুরক্ত ও ছাত্রদের বেদনাশ্রু ও যেন বাধ ভাঙ্গা জোয়ার। হযরত রহ. এর জানাযায় হাজার-হাজার আলেম-উলামা, ইমাম, সাধারণ মানুষ ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ তাতে শরীক হন। যার দরুন হযরতের নিজ গ্রামের মানুষ অবাক (আশ্চর্য) হয়ে যায় এবং তাদের গোয়াছপুরের মধ্যে সর্ব প্রথম এরূপ বিশাল জানাযার নামায হযরতেরটি অনুষ্ঠিত হয়। যা আর কোন দিন এই গ্রামে হয় নাই। মাদরাসা মাঠে তার নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় ইমামতি করেন, তার বন্ধুবর ও ঘনিষ্ঠ সুখ-দু:খের সাথী, বিশ্বনন্দিত মোফাসসিরে কুরআন, শায়খুল হাদীস আল্লামা তাফাজ্জুল হক সাহেব মুহাদ্দীসে হবিগঞ্জী। বর্তমান সময়ের মতো তখনকার সময়ে মোবাইল ফোন ছিল না, তাই সব জায়গায় সংবাদ যায়নি। তারপরও কম সময়ে আত্মীয়-স্বজন হাজার হাজার ভক্ত, অনুরক্ত, শুভাকাঙ্খী, উলামা-মাশায়েখ ও ছাত্রবৃন্দ সহ সাধারণ মানুষ জানাযায় শরীক হওয়ার ফলে ঈদগাহ মাঠ, মাদরাসা মাঠ ও এর বাহিরের রাস্তা ঘাটে তিলধারণের ঠাই ছিল না। এবিপুল মানুষের সমাগমই অনুধাবন করা গিয়েছিল যে, তিনি কত বড় মনের একজন মহৎ ব্যক্তি ছিলেন। পরিশেষে দোয়া করছি, রাব্বুল আলামীন এই জ্ঞান তাপস মহান ব্যক্তিত্বকে তুমি ক্ষমা করে দাও, তার কবরকে আলোকিত করে দাও এবং তাকে জান্নাতুল ফেরদাউসের মেহমান বানিয়ে দাও। আর আমাদেরকে তার উত্তরসুরি হওয়ার তাওফীক দাও। আমীন ॥ [ মুল: আলহাজ্ব মাওলানা এহসানুল হক খান দা.বা.। অনুলিখন: মাহফুজ আল মানসুর ]

Manual2 Ad Code

তথ্য দানকারীর নাম :- মাওলানা মাহফুজ আল মানসুর

তথ্য দানকারীর মোবাইল :- 01717-447171

Manual4 Ad Code

Spread the love

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code