সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

শাইখুল হাদীস আল্লামা নুরুল ইসলাম বিশ্বনাথী রহ: এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

January 14 2020, 06:45


Manual5 Ad Code

নাম :- নুরুল ইসলাম

জন্ম / জন্মস্থান :- জন্ম:- পবিত্র শাবান মাসের ১৪ ই দিবাগত রাত্রে (১০-০৪-১৯৪০ ঈসায়ী) বাদ মাগরিব, সিলেট সদর- লালা বাজার-ইউনিয়নের অন্তর্গত চক্রাইপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন।

শৈশব কাল :- ছোটবেলা থেকেই উনার ইসলাম শিক্ষার প্রতি অধিক আকর্ষনবোধ ছিল,
১৯৫২ ঈসায়ী সনে উনার পিতা চক্রাইপুর গ্রাম থেকে চলে আসেন, বিশ্বনাথের ৭নং দেওকলস ইউনিয়নের কালিগঞ্জ বাজার সংলগ্ন তাতালপুর গ্রামে।
এবং

শিক্ষা জীবন :- এবং সেখানে ১৯৫৫ ইং সালে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য চক কাশিমপুর বিশ্বনাথ মাদরাসায় ভর্তি হন।
পরে সেখান থেকে ১৯৬১ ইং সালে জামেয়া ইসলামিয়া হুসাইনিয়া গহরপুর বালাগঞ্জ মাদরাসার ছাফেলা দুওমে (ছরফ) ভর্তি হন।
এবং ১৯৬৯ ইং সালে দাওরায়ে হাদীস (মাষ্টার্স)পড়ে উলুমুল হাদীস সহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন লাভ করেন।

কর্ম জীবন :-
লেখা পড়া ইতি টানার পর
১৯৭২ ইং সালে ছাতক ঝিগলী মাদরাসায় সর্ব প্রথম খেদমত করেন।
পরে ১৯৭৫ ইং সালে জামেয়া ইসলামিয়া হুসাইনিয়া গহরপুর মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন।
পাশাপাশি মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস হিসাবে দায়িত্ব
পালন করেন,প্রতিষ্ঠান সমুহের,
আতাপুর মাদরাসা -কালিগঞ্জ মহিলা টাইটেল মাদসারা-এবং দারুল উলুম বাগিছা মাদরাসা,সিলাম মাদরাসা সহ আরো অনেক মসজিদ- মাদরাসার দায়িত্ববহন করেন।

Manual4 Ad Code

অবদান :- উনি শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর উদ্দীন আহমদ গহরপুরী (রহ:)
এর অন্যতম খলীফা ছিলেন,গহরপুরী (রহ:) এর স্বংস্পর্শে থেকে আজ তিনি সিলেটের সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশের তথা বহির্বিশ্বেও খ্যাতি অর্জন করেছেন।
উনার কাছ থেকে উপকৃত হয়েছে
সুশীল সমাজের সর্ব মহলের লোকজন,
এজন্যে সিলেট বাসী তথা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের আলেম – উলামা উনাকে চিনতো,
সবাই হুজুরের নসিহত ও দোয়ার জন্য অধিক আগ্রহী ছিল।
একেক স্থানে লোকজন পরিচয় জানতো একেক রকম,কেউ চিনতেন বিশ্বনাথী
কেউ চিনতেন মইজপুরী
কেউ বা আবার জানতো তালালপুরী,তবে খলীফায়ে গহরপুরী (রহ:) বললে মানুষ বিশ্বনাথী হুজুর কে চিনতো। আর এই নামেই পরিচিত ছিলেন বেশী।

আমানত দারি- লেনদেন,
——————–
বিশ্বনাথী (রহ:) এর মাঝে আমানত দারি ছিল বিরল,কেউ টাকা পয়সা হুজুরকে দান করিলে,হুজুর প্রথমে জিজ্ঞাস করতেন,টাকা কোথায় দান করেছেন, মাদরাসায় না আমাকে,যদি হুজুর জানতেন মাদরাসায় সাথে সাথে রিসিট কেটে রাখতেন,মাহফিলে বা ব্যক্তিগত কেউ টাকা দিলে জিজ্ঞেস করে তখন উক্ত টাকা উনার পাঞ্জাবীর ডান পকেটে রাখতেন,
আর নিজের হলে বাম পকেটে রাখতেন, যাতে টাকায় গড়মিল না হয়।হিসাব নিকাশের ক্ষেত্রে এতটাই বিচক্ষণতা ছিল,যে কেউ আশ্চর্য হয়ে যেতো।
ছিল পরিষ্কার-পরিচ্ছন হিসাব নিকাশ।

বিবাহ,,
—————
১৯৭৫ ইং সালের গহরপুর মাদরাসার বাৎসরিক জলসার মঞ্চে উনার বিবাহের আকদ সম্পন্ন হয়।আকদ পড়ান শাইখুল হাদীস আল্লাম নূরউদ্দীন আহমদ গহরপুরী (রহ:)।এবং দোয়া করেন বরুনার পীর শায়েখ লুৎফুর রহমান (রহ:)।
ঐ সময় মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন, শায়খে কৌড়িয়া (রহ:) ও শায়খে রায়পুরী (রহ:)।

পরিবার,
————–
উনার স্ত্রী সহ,৩ পুত্র
হাফিজ মাও: জুনায়েদ আহমদ
(রশীদ আহমদ ফুজায়েল)
মাও: হুছাইন আহমদ,
৬ কন্যা সহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন।

তরিকতের পীর,
——————
হযরত লুৎফুর রহমান বর্ণভী (রহ:) এর কাছ থেকে সর্ব প্রথম মুরিদ হন,উনার ইন্তকালের পর।
আল্লামা নূর উদ্দীন আহমদ গহরপুরী (রহ:) এর কাছে বায়আত গ্রহণ করেন।
এবং ১৯৮৩ ইং সালে গহরপুরী (রহ:) কাছ থেকে ইযাযত প্রাপ্ত হন।

Manual5 Ad Code

হজ পালন,
—————-
১৯৯১ ইং সালে আল্লামা নূর উদ্দীন আহমদ গহরপুরী এর সাথে প্রথম হজ আদায় করেন।
এর পর ধারাবাহিক নয়(৯) বার গহরপুরী (রহ:) এর সাথ হজ করার সৌভাগ্য হয়।
পরে ১৯৯১ইং-২০১৮ ইং পর্যন্ত সর্বমোট (১৮) আটার বার হজ পালন করেন।এছারাও উমরা পালন করেন আনেক বার।

এজাযত প্রাপ্ত খলীফাগন,
——————–
বিশ্বনাথী (রহ:) এর এজাযত প্রাপ্ত
খলীফাগণের মধ্যে কয়েক জনের নাম নিচে দেওয়া হল।
১| মাও: নিয়ামত উল্লাহ সাহেব, ছাতক- সিলেট
২|হা: মাও: যুবায়ের আহমদ আনসারী, বি-বাড়িয়া,
৩| মাও: আ: হাই সাহেব, উমরপুর,ওসমানী নগর- সিলেট
৪|মাও: আ: রহমান সাহেব,কলুমা,বালাগন্জ – সিলেট
৫|মাও: আব্দুল কাইয়ুম সাহেব,হাজিপুর- বালাগন্জ- সিলেট,
৬|হা: মাও জুনায়েদ আহমদ সাহেবজাদায়ে বিশ্বনাথী (রহ:)
সহ আরো অনেক খলীফাগণ আছেন।তারমধ্য একজন মারা গেছেন মরহুম মাও: হুসাইন আহমদ, কাড়োর গাঁও-ছাতক- সুনামগঞ্জ,

Manual8 Ad Code

মাদরাসা পরিচালনা,
——————-
১৯৮৮ইং সালে জামেয়া মিফ্তাহুল উলূম আতাপুর মাদরাসা,কালিগঞ্জ বাজার,বিশ্বনাথ,সিলেট-এর পরিচালনা দায়িত্ব হুজুরের অর্পণ করা হয়।
১৯৮৮ইং সাল থেকে ১৫-১২-২০১৯ ইং পর্যন্ত একাদ্বারে (৩২)বছর এহতেমামের দায়িত্ব পালন করেছেন।
এবং ২০০৪ইং সালে
দারুল উলুম হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) মহিলা টাইটেল মাদরাসা কালিগঞ্জ বাজার- বিশ্বনাথ, সিলেট, হুজুরের তত্ব্যাবধানে প্রতিষ্ঠিত হয়।
এবং ২০১৬ ইং সালে দারুল উলুম মাদরাসা বাগিছা বাজার, বিশ্বনাথ,সিলেট, হুজুরের তত্ব্যাবধানে প্রতিষ্ঠিত হয়।

মৃত্যু তারিখ :- ইন্তেকাল, —————— ১৫-১২-২০১৯ ইং রোজ রবিবার, সকাল ৮-৩০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিয়ুন………. হুজুর জীবনের শেষ প্রান্থে এসে বার্ধক্যজনিত কারনে প্রায় সিলেট বড় বড় ডাক্তার দেখাতেন, মারা যাওয়ার আগের দিন শনিবার সিলেট মাউন্ট এডোরা হসপিটালে ভর্তি হন,রাতে ডাক্তাররা উনাকে দেখার পর উনাকে সুস্থ ঘোষণা দেয়, রবিবার হুজুরকে বাড়িতে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেন, হুজুরের সাহেবজাদা,, রবিবার সকালে হুজুর খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই তায়াম্মুম করেন, তারপর ফজরের নামাজ আদায় করেন,হসপিটালের বয়,(সেবক)দের সাথে একটু মজা করে কথা বলেন,পরে তাদের কে ডাক দিয়ে চা খাওয়ার কথা বলেন, তারাও মজা করে বলে,, হুজুর আপনি একা চা খাবেন আমাদের খাওয়াবেন না,হুজুর জবাব দেন, যাও তুমরাও খাও আমারেও খাওয়াইও, চা খাওয়ার একটু পরে হঠাৎ একটু অস্থিরতা অনুভব করলেন, সাথে সাথে তিনি চলে গেলেন মাউলার ডাকে, সংবাদটি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পরলে, সবাই পাগল হয়ে যায়,কেউ বিশ্বাস করতে পারছিলনা, মেনে নিতে পারলোনা, দৌড়ে ছুটে গেল হুজুরের বাড়িতে,সবাই অশ্রুভেজা চোখে স্তব্ধ, নির্বাক দৃষ্টিতে একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছে। প্রজন্ম এমন এক বুযুর্গকে হারিয়ে বেদনায় শোকাহত- মর্মাহত, হৃদয়ের গহীনে ধাক্কা লাগলো অন্তর ফেটে চৌচির হয়ে গেল।বিসর্জিত হয় হুজুরের মুরিদ,মুহিব্বিন,ছাত্র ও ভক্তগনের সীমাহিন অশ্রু কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সবাই, যেন হুজুর চলে যাননি, নিয়ে গেছেন শত সহস্র ভক্তের হৃদয়, প্রিয় উস্তাদের জানাজা অংশ নিতে সিলেট বিভাগের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মইজপুর গ্রামে নেমেছিল সর্বস্তরের মানুষের ঢল। জানাজায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে তিনি কতটা জনপ্রিয়, কতটা আদরণীয়, রবিবার দিবাগত রাত ৮ ঘটিকার সময় হুজুরের জানাজার সময় নির্ধারন করা হয়, জানাজা পড়ান হুজুরের বড় সাহেবজাদা হা: মাও: জুনায়েদ আহমদ, ————/ হুজুরের বিদায়ে গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে পড়ে আমরা এতিম হয়ে গেলাম, মহান রাব্বুল আলামিন যেন হুজুরকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করুন।

 

Manual5 Ad Code

Spread the love