সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

মাওলানা মু’তাসিম আলী রাহ. এর কর্মময় জীবন

December 14 2019, 04:21


Manual6 Ad Code

নাম: মাওলানা মু’তাসিমহ আলী

ঢাকাউত্তর মুহাম্মদপুর জামিয়া দ্বীনিয়া আসআদুল উলূম রামধা’র সাথে যে নামটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সেটি হলো- হযরত মাওলানা মু’তাসিম আলী রাহ.। জামিয়ার খেদমতকে তিনি জীবনের প্রধান ব্রত হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। যিনি দারুল উলূম দেওবন্দের মতো বিশ্ব বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে মাতিন (হাদিসের দরসে উস্তাদের সামনে কিতাবের ইবারত পাঠকারী) হওয়ার মতো বিরল সৌভাগ্য অর্জন করতে পেরেছিলেন। তাঁর পক্ষে বড় কোন দারুল হাদিস মাদ্রাসার মুহাদ্দিস হওয়া কোনও ব্যাপারই ছিলো না। কিন্তু সব সুযোগ-সুবিধাকে পেছনে ফেলে একটি ক্ষুদ্র হাফিজিয়া মাদ্রাসার খেদমতে নিজেকে বেঁধে ফেলেন। এই মহান ব্যক্তির হাতের পরশেই রামধা হাফিজিয়া মাদ্রাসা হতে আজকের এই বিশাল জামিয়া।

Manual2 Ad Code

শায়খ মু’তাসিম আলী রাহ. আজ আমাদের মধ্যে নেই; কিন্তু তিনি রেখে গেছেন এক অসাধারণ পূণ্যস্মৃতি ও অসংখ্য নেক ইয়াদগার তালাবা। এই স্মৃতিস্তম্ভটি যুগযুগ ধরে তাঁর মহিমা কীর্তন করে যাবে ইনশাআল্লাহ। বক্ষমান নিবন্ধে এ ক্ষণজন্মা পুরুষের জীবনের মূল তথ্যগুলো তোলে ধরার চেষ্টা করবো। জন্ম: এ মহান ব্যক্তি পূণ্যভূমি সিলেটের অন্তর্গত বিয়ানীবাজার থানাধীন করগ্রামে ১৯৩৩ ঈসায়ি মোতাবেক ১৩৩৯ বাংলা সনে এক ভাগ্যবান দম্পতি সমর আলী ও রহীমা বেগমের ঔরসে জন্ম গ্রহণ করেন।

Manual3 Ad Code

তিনি ছিলেন তিন ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে সপ্তম। শিক্ষা লাভ: তিনি যে পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছেন সেটি ছিলো শিক্ষানুরাগী ও ধর্মানুরাগী পরিবার। এই সুবাদে ধর্মীয় প্রাথমিক শিক্ষাগুলো পিতা-মাতা ও বড় ভাই-বোনদের কাছ থেকে লাভ করেন। তাঁর লেখাপড়ার ক্ষেত্রে পরিবারের সকলেই ছিলেন সচেতন। এই সচেতনতার ফলশ্রুতিতেই তিনি দারুল উলূম দেওবন্দের মতো জগদ্বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের এক গর্বিত সন্তান হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন।

হযরতের প্রাতিষ্ঠানিক লেখা-পড়া শুরু হয় রামধা প্রাইমারি স্কুল থেকে। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখা-পড়া করে রাণাপিং মাদ্রাসায় মক্তব চাহারমে ভর্তি হন। সেখানে কৃতিত্বের সাথে মিশকাত জামাত পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। পরে দারুল উলূম দেওবন্দে গিয়ে (১৯৫৭ সালে) পূণরায় জালালাইন ও মিশকাত জামাত পড়ে ১৯৬০ সালে দাওরায়ে হাদীস সমাপন করেন। দাওরায়ে হাদীসে অধ্যয়নকালে তিনি নিয়মিত বোখারী শরীফের ইবারত পড়তেন। যার দরুন তিনি তাঁর বোখারী শরীফের শায়খ আল্লামা ফখরুদ্দীন মুরাদাবাদী রহ. এর নেকদৃষ্টি লাভ করেছিলেন। তাঁর কৃতিত্ব ও আসাতেযায়ে কেরামের সুদৃষ্টির কারণে দারুল উলুমে অধ্যয়ণরত তখনকার বাঙ্গালি ছাত্ররা তাঁকে নিয়ে অনেক গর্ব করতেন।

Manual8 Ad Code

দাম্পত্য জীবন: হযরত রহ. মোট চারটি বিবাহ করেন। প্রথম দু’জনের সাথে বিচ্ছেদ হয় যায়। এদের তরফে হযরতের কোনো সন্তান নেই। তৃতীয় ও চতুর্থ জনের তরফে হযরতের বেশ ক’জন সন্তান জন্ম গ্রহণ করেন। তন্মধ্যে ৬ ছেলে ও ৪ মেয়ে জীবিত আছেন। কর্মজীবন: ১৯৬০ সালে লেখাপড়া শেষ দাওরায়ে হাদীস পাশ করার পর তিনি ভারতের কাছাড় জেলার ভিতরকুল মাদ্রাসায় তিন বছর, জকিগঞ্জের ভূঞার মোরা মাদ্রাসায় এক বছর, হযরতের বাড়ির কাছের আদিনাবাদ মাদ্রাসায় ছয় মাস শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি সিলেটের গোপশহর মাদ্রাসার মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে থাকা অবস্থায় তিন বছর কাজির বাজার জামে মসজিদের ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি জামিয়া রামধার মুহতামিম হিসেবে অধিষ্ঠিত ছিলেন। আধ্যাত্যিক জীবন: তিনি আওলাদে রাসুল হযরত আসআদ আল মাদানী রাহ. এর মুরীদ ছিলেন। তাঁরা দু’জনের পারস্পরিক আন্তরিকতা ছিলো অসাধারণ।

Manual5 Ad Code

আসআদ আল মাদানী রাহ. যখনই বাংলাদেশে আসতেন তখনই দেখা যেত কোন এক ফাঁকে রামধা মাদ্রাসায় সামান্য সময়ের জন্য হলেও একবার আসতেন। এমনকি আগের দিন একবার রামধায় এসেছেন আবার পরের দিনও এসেছেন এমন ঘটনাও রয়েছে। রাজনৈতিক জীবন: হযরত রাহ. সারাজীবন জমিয়তের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন; কখনও সদস্য, কখনও ইউ.পি. সভাপতি, আবার কখনও বিশেষ উপদেষ্টা। জমিয়ত সংগঠনটিকে তিনি প্রাণপণে ভালোবাসতেন। বিশেষ গুণাবলি: হযরতের গায়ের রং ছিলো একেবারে দুধে-আলতা সাদা। বেশি সৌন্দর্যের কারণে তাকে দেখলে কিছুটা লাল রঙ্গের মনে হতো। চেহারার গঠন ছিলো অত্যন্ত সুন্দর। কণ্ঠস্বর ছিলো খুবই মধুর। বাচ্চারা তাঁর কাছে খুব বেশি ভালোবাসা পেতো। তাঁর ভাষা ছিলো যাদুময়ী। সুন্দর উপস্থাপনায় ছিলেন অত্যন্ত নিপুণ। তবে তিনি ছিলেন স্বল্পভাষী। সাদামাটা জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। আর্থিক দন্যতার কারণে তাঁকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। মাদ্রাসার কাজে দু’বার লন্ডন ও একবার আমেরিকা সফর করা সত্ত্বেও নিজের জন্য কিছু করার কোনো চিন্তা করতে পারেন নি।

নিজের প্রয়োজনীয়তার চেয়ে মাদ্রাসার প্রয়োজনীয়তাকে সব সময় অগ্রাধিকার দিতেন। তিনি যেমন এলাকার মানুষকে ভালো বাসতেন এলাকার মানুষও তাকে তেমনি ভালো বাসতো। তিনি যেমনি ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক তেমনি ছিলেন একজন সফল মুহতামিম। ইন্তেকাল: ২০১৩ সালের ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, বুধবার সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের সময় নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। ঐ দিন বাদ আসর হযরতের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযাকে কেন্দ্র করে রামধা এলাকায় আলেম-উলামার উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ মিলে হাজার হাজার লোকের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় হযরতের নামাযে জানাযা। জনাজার ইমামতি করেন বড় ছেলে মাওলানা হাম্মাদ আহমদ। তথ্যদাতা মাওলানা মামুনুর রশীদ শিক্ষক, জামিয়া রামধা, সিলেট

Spread the love

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code