সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

মাওলানা ফয়জুল বারী শায়খে মহিশপুরী রহ এর আধ্যাত্মিক জীবন

May 15 2019, 05:40

জন্ম  আল্লামা মহেশপুরী রাহ. আনুমানিক ১৩৩৫/১৩৪৮ হিজরির (রবিউল আউয়াল) মোতাবেক ১৯১৬/১৯২৯ ঈসায়িতে বাংলাদেশের সিলেট জেলাধীন কানাইঘাট পৌরসভাস্থ মহেশপুর গ্রামের এক দ্বীনদার সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। হযরতের দাদা মুনশী আব্দুর রহমান রাহ., পিতা জনাব আসাদ রাহ. ও মাতা জনাবা মাহমুদা রাহ.।

শিক্ষাকাল

আল্লামা রাহ. ছোটবেলায় গ্রামের মসজিদের মক্তবে ইসলামি শিক্ষার মাধ্যমে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হওয়ার পাশাপাশি তিনি প্রাইমারি স্কুলে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তারপর তিনি তদানিন্তন কানাইঘাট ইসলামিয়া মাদরাসায় (বর্তমান কানাইঘাট দারুল উলূম) ভর্তি হয়ে অতি সুনামের সাথে (সম্ভবত) সাফেলা আউয়াল পাশ করেন।
তারপর প্রায় ১৯৪১ ঈসায়িতে ভর্তি হন ইমদাদুল উলূম উমরগঞ্জে এবং অতি দক্ষতার সহিত পড়ালেখা করেন। এমনকি ছয় জামাত তিনি তিন বৎসরে শেষ করেন।
সেখানে তিনি আলিয়া ৩য় বর্ষ শেষ করে চলে যান জামিউল উলূম গাছবাড়ি মাদরাসায়। আলিয়া ৪র্থ/ ৬ষ্ঠ বর্ষ পর্যন্ত সেখানে কৃতিত্বের সাথে অধ্যয়ন শেষ করেন প্রায় ১৯৪৯ ঈসায়িতে।
তারপর তিনি দ্বীনী উচ্চ শিক্ষার জন্য ১৯৪৯ ইং এর দিকে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হয়ে দীর্ঘ ৪/৫ বছর দাখিল ও কামিলে অতি সুনামের সাথে শিক্ষা লাভ করতঃ তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান বোর্ডের পরীক্ষায় প্রথম স্তরে বৃত্তিসহ প্রথম নম্বরে পাশ করেন।

কর্মজীবন 
১৯৫৩ ইংরেজিতে সিলেট আলিয়া মাদরাসার কামিল জামাতে পরীক্ষায় হযরত রহ. এর উত্তরণের খবর বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশ হলে সুদূর যশোর জেলাধীন মাগুরা সিদ্দিকিয়া মাদরাসা থেকে এক প্রতিনিধি দল কানাইঘাটে এসে প্রায় ১৯৫৪ ইং সনে তাকে সেই মাদরাসায় নিয়োগ দেয়। সেখানে প্রায় তিন বছর শিক্ষকতা করে আনুমানিক ১৯৫৬/১৯৫৭ ইং সনে সেখান থেকে বিদায় নিয়ে আল্লামা বায়মপুরী রহ. এর আদেশে কানাইঘাট দারুল উলূম মাদরাসায় অধ্যাপনার কাজ শুরু করেন।
সুদীর্ঘ অর্ধ শতাব্দী কাল মাদরাসার শিক্ষক নাযিমে তা’লীমাত, শায়খুল হাদিস ও মুহতামিমের দায়িত্ব পালনের পর বিভিন্ন কারণে ২০০৬ সালে জামেয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়া নয়াসড়ক মাদরাসায় তারই মাধ্যমে বুখারী শরীফের দাস চালু হয়। সেখানে একাধারে ৫ বছর হাদীসের দাস প্রদান করে।
আল্লামার শিষ্যদের সংখ্যাও অনেক যাদের মাঝে রয়েছেন শায়খুল হাদীস, মুফতি ও মুহাদ্দিস অনেক।
আল্লামা মহেশপুরী রাহ. একজন দক্ষ শিক্ষক ছিলেন। তার সাথে সাথে তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত দাঈ।
হযরতের রাজনীতির ময়দানে অনেক অবদান রয়েছে। তিনি আমৃত্যু ইসলামি ভাবধারায় রাজনীতি করে গেছেন।
ইন্তেকাল : জীবন ভর দ্বীনের খেদমত করে অবশেষে ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর থেকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর পরিশেষে ৮ রবিউল আউয়াল ১৪৩৫ হিজরি ২৭ পৌষ ১৪২০ বাংলা, মোতাবেক ১০ জানুয়ারি ২০১৪ ইং রোজ শুক্রবার নিজ বাড়িতে বেলা ১.৩০ মিনিটের সময় মাওলার ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের কাছ থেকে চিরতরে বিদায় নিলেন।

জানাযা ও দাফন  
১১ জানুয়ারি ২০১৪ রোজ শনিবার সকাল ১১.০০ ঘটিকার সময় কানাইঘাট দারুল উলূম মাদরাসা ময়দানে আল্লামার জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় লক্ষাধিক মুসল্লি শরীক হন এবং তার জানাযার নামাজের ইমামতি করেন তারই সুযোগ্য পুত্র প্রাজ্ঞ আলেমে দ্বীন মাওলানা আব্দুল লতিফ দা.বা.। নামায শেষে তাকে প্রিয় কর্মস্থল কানাইঘাট দারুল উলূম মাদরাসার আঙ্গিনায় আল্লামা বায়মপুরী রহ. এর কবরের পাশে দাফন করা হয়।

সংগ্রহে- ইলিয়াস মশহুদ

Spread the love