সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী’র সংক্ষিপ্ত জীবনী

December 21 2020, 05:20

Manual1 Ad Code

নাম :- জুনায়েদ বাবুনগরী

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মুহতারাম আমীর ও হাটহাজারী মাদ্রাসার বর্তমান শায়খুল হাদিস, বিদগ্ধ আলেম, বহু গ্রন্থ প্রণেতা আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ১৯৫৩ সালের ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার প্রসিদ্ধ গ্রাম বাবুনগরে জন্মগ্রহণ করেন।

তার আসল নাম মুহাম্মদ জুনায়েদ হলেও তিনি জুনায়েদ বাবুনগরী নামে দেশব্যাপী পরিচিত। পিতা শায়খুত তাফসীর আল্লামা আবুল হাসান (রহ.) ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার সিনিয়র উস্তাদ এবং দাদার নাম মরহুম নজির আহমদ (রহ.)। তার মা ফাতেমা খাতুন (রহ.) বাবুনগর মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হারুন বাবুনগরীর (রহ.) মেয়ে। হারুন বাবুনগরীর পিতা সুফি আজিজুর রহমান (রহ.) হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতাদের একজন এবং আবু বকর সিদ্দিকের (রাঃ) বংশধর।

বাড়ির পার্শ্ববর্তী প্রসিদ্ধ দ্বীনি শিক্ষা কেন্দ্র আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদ্রাসায় তিনি মক্তব, হেফজ ও প্রাথমিক জামাতখানার শিক্ষা লাভ করেন। বাবুনগর মাদ্রাসায় হেফজ শেষ করার পর আল্লামা আযহারুল ইসলাম ধর্মপুরীর (রহ.) কাছে তিনি সফীনা শুনিয়েছেন। বাবুনগর মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করার পর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মাদ্রাসা আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে ভর্তি হন।

Manual2 Ad Code

১৯৭৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করেন। হাটহাজারী মাদ্রাসায় তাঁর বিশিষ্ট উস্তাদগণের মধ্যে আছেন হযরত আব্দুল কাইয়ুম (রহ.), মুফতি আহমদুল হক (রহ.), পিতা আল্লামা আবুল হাসান (রহ.), আল্লামা আব্দুল আজিজ (রহ.), মাওলানা খালেদ (রহ.), আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) প্রমুখ। ১৯৭৬ সালে তিনি পৃথিবী বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইউসুফ বিন্নুরীর (রহ.) কাছে করাচির জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় উলুমুল হাদীস বিভাগে হাদিসের উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য ভর্তি হন। ২ বছর পড়াশোনা করার পর হাদিস বিভাগ থেকে তাঁকে একটি মাকালা (অভিসন্দর্ভ) লিখতে বলা হয়। যে মাকালার ভিত্তিতে তাঁকে সর্বোচ্চ সনদ দেওয়া হয়েছিল তার নাম “সীরাতুল ইমামিদ দারিমী ওয়াত তারিখ বি শায়খিহী”।

Manual6 Ad Code

আরবি ভাষায় তিনি এই মাকালা রচনা করেছিলেন যার অর্থ ইমাম দারিমী ও তার ওস্তাদগণের জীবন বৃত্তান্ত। শুরুতে ইলমে হাদিস, ইলমে আসমায়ে রিজালের উপর একটি মুকাদ্দামাও লিখেছেন। বিন্নুরী টাউনে তাঁর উল্লেখযোগ্য উস্তাদগণের মধ্যে ছিলেন: পৃথিবী বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইউসুফ বিন্নুরী (রহ.), আনোয়ার শাহ কাশ্মিরীর (রহ.) ছাত্র মাওলানা ইদ্রিস মিরাঠী (রহ.) এবং আল্লামা আব্দুল্লাহ ইউসুফ নোমানী ছিলেন তার তত্ত্বাবধায়ক। তাখাচ্ছুছাতের বছর তিনি মাওলানা ওয়ালী হাসান টুঙ্কির (রহ.) কাছে তিরমিজী শরীফ এবং মুহাম্মদ ইউসুফ বিন্নুরীর (রহ.) কাছে বুখারী শরীফের দরস লাভ করেন।

তাখাচ্ছুছাতের নেসাব শেষ করার পর ১৯৭৮ সালে মাওলানা আব্দুল কাদের রায়পুরীর খলিফা ও জানেশীন মাওলানা আব্দুল আজিজ রায়পুরীর (রহ.) কাছে বায়আত গ্রহণ করেন। মাহে রমযানে তিনি কিছুদিন উনার খানকায়, সোহবতে ছিলেন, তরিকতের লাইনে কিছু মেহনত করার জন্য। ১৯৭৮ এর শেষের দিকে তিনি পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরে আসেন। দেশে আসার পর প্রথমে আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদ্রাসায় শিক্ষকতা আরম্ভ করেন। সেখানে একটানা ২২ বছর খেদমত করেছেন।

বিভিন্ন কিতাবাদীর পাশাপাশি তিনি বুখারী শরীফ পর্যন্ত দরস দিয়েছেন। জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়া বিন্নুরী টাউনের মত করে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম বাবুনগর মাদ্রাসায় তিনি উলুমুল হাদিস বিভাগের গোড়াপত্তন করেন। ২০০৩ সালে তাঁকে দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় ডাকা হয়। তখন থেকে এ পর্যন্ত হাটাহাজারী মাদ্রাসার খেদমতে নিয়োজিত আছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে আরবি, বাংলা ও উর্দু ভাষায় বেশ কিছু কিতাবাদিও রচনা করেছেন।

যার মধ্যে কিছু প্রকাশিত হয়েছে আর কিছু অপ্রকাশিত আছে। তার মধ্যে রয়েছে সীরাতুল ইমামিদ দারিমী ওয়াত তারিখ বি শায়খিহী (আরবি), তালিমুল ইসলাম (আরবি), ইসলামিক সায়েন্স (উর্দু), জুনায়েদ বাবুনগরীর রচনা সমগ্র (বাংলা) ইত্যাদি। তার বিভিন্ন আর্টিকেল বিভিন্ন ম্যাগাজিনে প্রকাশ করা হয়েছে। দারুল উলুম লখনৌর আরবি পত্রিকা আল বাসুল ইসলামি, দারুল উলুম দেওবন্দের মাসিক পত্রিকা আদ দায়ীতে তার লেখা ছাপানো হয়েছে।

Manual8 Ad Code

কাতারের আল আরব পত্রিকায় তাঁর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে। তাঁর ভাইয়ের সংখ্যা ৩ জন। সবাই আলেম ও হাফেজ। ছোটভাই মাওলানা শোয়াইব (দাঃবাঃ) বাবুনগর মাদ্রাসার উস্তাদ এবং তাঁর ছোট মাওলানা জুবায়ের (দাঃবাঃ) রাউজান সুলতানপুর মাদ্রাসার মুহাদ্দিস হিসেবে আছেন। দুই বোন। দুই বোনের স্বামী সবাই আলেম। এক বোনের নাম রাশেদা। তার স্বামীর নাম মাওলানা আবু জাফর শাহাদাত (রহ.)। তিনি ভালো লেখক, সুসাহিত্যিক ও জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদের পেশ ইমাম ছিলেন।

আরেকজন মাহমুদা খাতুন। তাঁর স্বামী মাওলানা জাকারিয়া (দাঃবাঃ)। মাদার্শা একটি মাদ্রাসার পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর পাঁচজন মেয়ে এবং একমাত্র ছেলে হাফেজ সালমান বাবুনগরী। মেয়েদের সবার স্বামী আলেম। ২০১৯ পর্যন্ত তাঁর ছাত্রের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি। তিনি হুসাইন আহমদ মাদানির আজাল্লে খলিফা ফতেবাদের মাওলানা আব্দুস সাত্তার (রহ.) ও আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.) এবং আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভীর (রহ.) শাগরেদ আল্লামা সুলতান যওক নদভীর (দাঃবাঃ) কাছ থেকে খেলাফত পেয়েছেন।

Manual3 Ad Code

তথ্যদাতা: মাওলানা মাহবুবুর রহমান নিজামী কর্তৃক নেওয়া সাক্ষাৎকার থেকে সংগৃহীত

Spread the love

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code