সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

মাওলানা আহমদ আব্দুল্লাহ চৌধুরী

July 26 2025, 10:47


Manual6 Ad Code

নাম- আহমদ আব্দুল্লাহ.

হযরত শায়খ আহমদ আব্দুল্লাহ চৌধূরী যিনি হবিগঞ্জের শীর্ষস্থানীয় আলেমগনের মধ্যে অন্যতম। বহু প্রতিভাধর, মেধাবী ও যোগ্যতা সম্পন্ন চিন্তাশীল আলেম হিসেবে সর্বত্র সুপরিচিত। তিনি একই সঙ্গে শাইখুল হাদিস, লেখক, গবেষক, অনুবাদক, সম্পাদক, শিক্ষাবিদ, ইতিহাসবিদ, মুফাসসির,ত্বাত্ত্বিক আলোচক, ইমাম ও খতিব, আসলাফ ও আকাবিরে দেওবন্দের নন্দিত উত্তরসূরী এবং ছাহিবে নিসবত বুযুর্গ আলিম।

জন্ম : শায়খ রহ. ১৯৬৭ সনের ২৭ নভেম্বর রোজ: সোমবার হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার হিয়ালা গ্রামের স্বনামধন্য চৌধুরী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মাওলানা হারুনুর রশীদ চৌধুরী। পারিবারিকভাবে তাঁরা খুবই সম্ভ্রান্ত, ভদ্র ও সুশিক্ষিত ও চিন্তা চেতনার দিক থেকে ছিলেন পাক্কা দেওবন্দী।

Manual3 Ad Code

শিক্ষাজীবন : শায়খ নিজ বাড়ির সাবাহি মকতব ও প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন শুরু হয়। অতপর হবিগঞ্জ সদরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী রায়ধর মাদরাসায় ভর্তি হয়ে একাধারে শরহে জামী পর্যন্ত সুনাম ও কৃতিত্বের সাথে পড়াশোনা করেন । এরপর মেশকাত পর্যন্ত পড়েন বাহুবল কাসিমুল উলুম মাদরাসায়। ১৯৮৮ সনের মেশকাতের পরীক্ষায় দ্বীনি শিক্ষা বোর্ড হবিগঞ্জ -এ প্রথম স্থান অধিকার করেন। সর্বশেষ উম্মুল মাদারিস দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসায় দাওরায়ে হাদীস পড়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে একাডেমিক পড়াশোনার সমাপ্তি ঘটান।

Manual2 Ad Code

কর্মজীবন : ১৯৮৯ থেকে অধ্যাপনার কাজ শুরু করেন। ১১ বছর মুহাদ্দিস হিসাবে সিলেট অঞ্চলের রায়ধর মাদরাসায়, তারপর মুহাদ্দিস হিসাবে দুই বছর আল্লামা তাফাজ্জল হক হবিগঞ্জী রহ.পরিচালিত জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া উমেদনগর মাদরাসায়, তারপর সৌদি আরবের ‘হাইয়া আমর বিল মা’রুফ একাডেমিতে’ দায়ী ও মুদাররিস হিসেবে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর দেশে ফিরে পুনরায় উমেদনগর মাদরাসায় পূর্বের পদে যোগদান করেন। তার পর চার বছর মুহাদ্দিস ও মুফাসসির হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দারুল আরকাম মাদরাসায় ২০০৭ সালের শুরুতে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জামেউল উলুম মাদরাসা মিরপুর,১৪, এর ভাইস প্রিন্সিপাল ও নাজেমে তালিমাত হিসেবে রাজধানীতে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা হয়। এখানে তিনি বুখারী, মুসলিম ও হেদায়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কিতাবসমূহ পাঠদান করতে থাকেন।

পারিবারিক জীবন : শায়খ রহ. দুই পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। বড় ছেলে হাফেজ আদনান প্রবাসী। ছোট ছেলে হাফেজ বোরহান শিক্ষার্থী। দুই মেয়ে বিবাহিত। প্রত্যেকের স্বামী আলেম এবং প্রতিষ্ঠিত।

গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রম : শায়খ রহ. মূলত একজন শিক্ষাবিদ আলেম ছিলেন। শিক্ষা কেন্দ্রিক তাঁর অনেক গবেষণা ও কর্ম রয়েছে। হবিগঞ্জ দ্বীনি শিক্ষা বোর্ডের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ছিলেন দুই বছর। তাঁর উস্তাদ আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী হাফিজাহুল্লাহ’র প্রতিষ্ঠিত ‘আল-ফারুক ইসলামী গবেষণা পরিষদের’ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

সামাজিক অবদান : জীবনভর শিক্ষকতা করেছেন দেশ-বিদেশে। ফলে নিজ এলাকায় থাকা হয়েছে খুব কম সময়। তবু শেকড়ের টানে গ্রামের মানুষদের জন্য কিছু করার চিন্তা সবসময় তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াত। সে থেকেই তিনি সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হোন। নিজ গ্রামের ‘হিয়ালা তাফসীরুল কোরআন ও ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের’ সভাপতি ছিলেন এক যুগেরও অধিক সময়।

Manual4 Ad Code

রচনাবলি : অধ্যাপনা ও গবেষণার পাশাপাশি শায়খ রহ. বেশ কিছু কিতাব রচনা করেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য–

১. دراسة المكرم على مقدمة مسلم

২. تعريف اثبت الكلام في القرائة خلف الإمام

৩. খোলাসাতুন্নাহু

৪. স্বপ্ন ব্যাখ্যার মূলনীতি ইত্যাদি।

প্রতিষ্ঠান থেকে অব্যহতি : শায়খ রহ. সর্বদা তাঁর দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন ছিলেন। এইসব রোগ-ব্যাধির মাঝেও সকল দায়িত্ব যথাসময়ে পালনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন। যখন থেকে দায়িত্ব আদায়ে ত্রুটি অনুভব করছিলেন, তখন থেকেই মাদরাসা থেকে অব্যহতি নিতে চাচ্ছিলে। কিন্তু মাদরাসা কর্তৃপক্ষ তাঁর প্রতি সদয় হয়ে দরস ও দায়িত্ব কমিয়ে প্রতিবারই রেখে দিচ্ছিল। শায়খের খেদমতের সুবিধার্থে ঢাকায় বাসা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মাদরাসার বেতন ভোগ করে আগের মতো দায়িত্ব পালন করতে না পারায় তাঁর ভেতরে এক ধরনের পীড়া কাজ করত। সর্বশেষ ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত অব্যহতি নিয়ে গ্রামে চলে আসেন।

গ্রামীণ আলো-বাতাস ও প্রাকৃতিক পরিবেশে কিছুদিন থাকার পরে আগের তুলনায় কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। কিছুটা হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। এই সময়ে আল্লামা ওলীপুরী হাফিজাহুল্লাহ’র মাদরাসায় কিছুদিন দরস দেন। ফের শরীর খারাপ করলে অব্যহতি নিয়ে আমৃত্যু বাড়িতেই কাটান।

ইন্তেকাল : বিগত ১২ মে ২০২৫ তারিখে শায়খ রহ. হার্ড এটাক করলে তাঁকে সিলেট মাউন্ট এডোরা হসপিটালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই ১৮ মে সকাল নয়টায় তিনি ইহকালের সফর সমাপ্ত করে পরকালের যাত্রা শুরু করেন। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!

জানাজা : ঐদিনই বাদ আসর জানাজার সময় নির্ধারণ করা হয়। জানাজায় দূর-দূরান্ত থেকে তাঁর ছাত্র, ভক্ত, মুহিব্বিন অংশ নেন। তাঁর সর্বশেষ কর্মস্থল ঢাকা থেকে শতাধিক ছাত্র ও সহকর্মীদের এক কাফেলা অংশগ্রহণ করে। জানাজার ইমাম ছিলেন মরহুমের ছোট ছেলে হাফেজ বোরহান চৌধুরী।

তথ্য পেরক
আবু আশফাক মুহাম্মাদ শওকত হুসাইন

তাকমীল,

Manual1 Ad Code

জামেউল উলূম মাদরাসা,মিরপুর-১৪, ঢাকা।

islamia2024@gmail.com

Spread the love