সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

মাওলানা আব্দুল বাসিত বরকতপুরী রাহঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

November 10 2018, 06:57


Manual8 Ad Code

আব্দুল বাসিত বরকতপুরী।

Manual3 Ad Code

পিতা: আব্দুল মান্নান মনাফ মাস্টার

Manual4 Ad Code

মাতা: আশরাফুন নেছা বিবি।

Manual8 Ad Code

বাবা আব্দুল মান্নান মনাফ মাস্টার ছিলেন দেওয়ান আব্দুর রহিম হাই স্কুলের হেড মাস্টার। তিনি চাইলেন ছেলে তার মতো মাস্টার হবে। শায়খে বাঘার রহ. এর ওয়াজ শুনে তাঁর মা চাইলেন ছেলেকে মাদরাসায় পড়িয়ে আলেম বানাবেন। যাক মায়ের নেক বাসনা আল্লাহ কবুল করেছেন। তিনি পরবর্তীতে মাদরাসায়ই ভর্তি হলেন। আলেম হলেন। সিলেটের সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশ তথা বর্হিবিশ্বেও তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। তার দ্বারা জাতি উপকৃত হয়েছে। উপকৃত হয়েছে সুশীল সমাজ। তিনি সেই মায়ের স্বপ্ন পূরণে দুর্বার গতিতে এগিয়ে গেছেন। আব্দুল বাছিত থেকে মাওলানা আব্দুল বাছিত পরে জন্মস্থান ‘বরকতপুর’ গ্রামের নামটিই তাঁর নাম হিসেবেই সর্বমহলে স্বীকৃত। বরকতপুরী হুজুর বললেই সিলেটবাসী তথা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের আলেম-উলামারা তাকেই চিনেন।
১৯৪৭ ইংরেজি সনে বালাগঞ্জ উপজেলার বরকতপুরগ্রামের মাস্টার আব্দুল মান্নান মনাফ ঔরসে ও আশরাফুন নেছার গর্ভে সম্ভ্রান্ত এক পরিবারে মাওলানা আব্দুল বাছিত বরকতপুরী (রাহ.) জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মায়ের তত্বাবধানে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি পরিবার থেকেই শুরু হয়। পরে শায়খে বাঘা (রাহ.)’র একটি বয়ানের দ্বারা মায়ের হৃদয় বিগলিত হওয়ার ফলেই তিনি তাকে গলমুকাপন মাদরাসায় ভর্তি করেন। এখানে মুখতাছার জামাত পর্যন্ত পড়েন। পরে সিলেটের প্রাচিণতম দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রানাপিং মাদরাসায় ভর্তি হন। পরে রাজধানী ঢাকার লালবাগ মাদরাসায় ভর্তি হন। সেখান থেকে আল্লামা হাফেজ্জি হুজুর (রহ.)’র তাকে একটি চিঠি দিয়ে পাকিস্তানে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য প্রেরণ করেন। সেখানে গিয়ে পাকিস্তানের বিন্নুর টাউনে আল্লামা ইউসুফ বিন্নুরী রাহ.’র কাছে হাদিসের দারস গ্রহণ করেন।
শিক্ষকবৃন্দ : আল্লামা আব্দুল বাছিত বরকতপুরী রাহ. যুগশ্রেষ্ট হাদিস বিশারদদের খেদমত, সুহবাত ও দারস থেকে হাদিস, ইলমে ফিকাহসহ নানাবিদ জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ আল্লামা ইউসুফ বিন্নুরী, শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকসহ প্রমুখদের নিকট দারস গ্রহণ করেন। দাম্পত্যজীবন : ১৯৬৯ ইংরেজিতে আল্লামা আব্দুল বাছিত বরকতপুরী (রাহ.) সিলেটের প্রবিণ আলেম আল্লামা ওয়ারিস উদ্দিন হাজিপুরী রাহ.’র বড় মেয়ে বিলকিছ বেগম মারজিয়্যার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। হযরতের বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালিম বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি স্বীয় ফুফা আল্লামা ফখরুদ্দীন রাহ.।
বৈবাহিক জীবনে তিনি ৭ ছেলে ও ৩ মেয়ের জনক। কর্মজীবন : জামেয়া গলমুকাপন, আল্লামা নুর উদ্দিন আহমদ গহরপুরী রাহ. প্রতিষ্ঠিত গহরপুর মাদরাসা, জামেয়া ক্বাসিমুল উলূম দরগাহ মাদরাসা, শহরতলীর দক্ষিণকাছ হোসাইনিয়া ইসলামিয়া, মাদরাসাতুল বানাত বারুতখানা মহিলা মাদরাসাসহ আরো অন্যান্য মাদরাসায় একজন সাধারণ শিক্ষক থেকে নিয়ে শায়খুল হাদিস হিসেবে দিনের খেদমত করে গেছেন। দীর্ঘ দিন তিনি সিলেটের বিখ্যাত কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড আজাদ দ্বীনি এদারা’র মহাসচিব হিসাবে দায়ীত্ব পালন করেন।
এছাড়া খাদিমুল কোরআন পরিষদের সভাপতিও ছিলেন তিনি। আল-আরাফা ইসলামি ব্যাংকের শরীয়া বিভাগের চেয়ারম্যানসহ আরো বিভিন্ন সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছেন। সিলেট ছাড়াও বাংলাদেশের প্রায় অনেক জেলায় তিনি ছিলেন সুপরিচিত। কাওমি মাদ্রাসা স্বীকৃতি আন্দোলন সিলেট বিভাগ থেকে তাঁর ভুমিকা ছিল উল্যেখ যোগ্য। বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় উলামায়ে কেরামদের মাঝে ছিলেন অন্যতম একজন। নিজ হাতে গড়েছেন হাজার হাজার মুহাদ্দিস এবং মুফতি এবং আলেমে দ্বীন। বাংলাদেশ ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন অনেক আলেমদের সাথে তাঁর ছিল ঘনিষ্ট সম্পর্ক।তিনি এখন আর আমাদের মাঝে নেই। অজু অবস্থায় আলিঙ্গন করে নিয়েছেন মৃত্যুর সোপানকে। জীবন সুস্পষ্টতা এবং স্বচ্চতাই আর অমুখাপেতিাই ছিল তাঁর তুলনাহীন আদর্শ।
বিদায় হে প্রিয় উস্তাদ : তিনি ১৬ ডিসেম্বর ১৭’ইং শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় সিলেট নগরীর সাদারপাড়াস্থ আলামিন-২’র বাসায় বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। বৃহত্তর সিলেটের নামকরা ইসলামি ব্যক্তিত্বদের চোখে অশ্রু। অশ্রুভেজা হাজার হাজার আলেম-উলামা, মুফতি-মুহাদ্দিসদের চোখ। অজানা অচেনা চোখে জল। কার কান্না কে থামাবে? সবাই যেনো কি হারিয়ে ফেলেছেন। নির্বাক দৃষ্টিতে একে-অন্যের দিকে তাকাচ্ছেন। ণজন্মা ইসলামি ব্যক্তিত্বকে হারানোর বেদনায় সবাই শোকাহত।
দেশের অসংখ্য আলেম-উলামার উস্তাদ, শায়খুল হাদিস, আল্লামা আবদুল বাসিত বরকতপুরী রাহ.কে ১৭ ডিসেম্বর রোববার চোখের জলে শেষ বিদায় জানান শোকগ্রস্ত সিলেটবাসী। কাফনের সাদা কাপড়ে আবৃত তাঁর মরদেহ যেন নিপ্রাণ অন্তিম নয়, তারই কোন অনবদ্য রচনা এভাবেই তাকে বরণীয় করে রাখে মাদরাসার শিক-শিার্থীরা। প্রিয় উস্তাদের জানাযায় অংশ নিতে সিলেট বিভাগের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নগরীর আলিয়া ময়দানে নেমেছিল সর্বস্তরের মানুষের ঢল। জানাজায় হাজার হাজার শোকার্ত মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে তিনি কতটা জনপ্রিয়। কতটা আদরণীয়।
ওইদিন বেলা আড়াইটার সময় সিলেট আলীয়া মাদরাসা ময়দানে নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। মরহুমের ২য় ছেলে মাওলানা উনাইছ আহমদ জানাযায় ইমামতি করেন। পরে হযরতের মরদেহ লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে বালাগঞ্জ উপজেলার বরকতপুর গ্রামের পারিবারিক গোরস্তানে তাকে দাফন করা হয়। বরকতপুরি হুজুর শুধু আলেম ছিলেন না, তিনি শুধু শায়খুল হাদিস বা মুহতামিম বা খতিবই ছিলেন না, তিনি বৃহত্তর সিলেটের একজন সালিশ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। যুগ সচেতন এবং তথ্য প্রযুক্তির সম্পর্কে সম্পক ধারণা ছিল তার। তিনি আমৃত্যু কুরআন-হাদিসের খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।

Manual1 Ad Code

 

সংগৃহিত

Spread the love

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code