সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

মাওঃ খলীলুর রহমান রাজনগরী (রাহঃ)

November 05 2019, 04:38

নাম :- খলীলুর রহমান

জন্ম / জন্মস্থান :- শায়খুল হাদিস মাওঃ খলিলুর রহমান মুহাদ্দিসে রাজনগরী (রাহঃ) মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার ৫ নং রাজনগর সদর ইউপির অন্তর্গত ঘড়গাও, বালি দিঘির উত্তর পারে এক সম্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৪৮ ইংরেজী সনের ৩রা মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ দরাসত উল্লাহ মাতা লতিফা বেগম মরহুমের ২ ভাই ও ৫ বোন ছিলেন। ভাই-বোনদের মধ্যে তিনি সবার ছোট ছিলেন।

শৈশব কাল :- শৈশবকালে তিনি খুব মেধাবী ছিলেন।

শিক্ষা জীবন :- জামেয়া হেমায়তুল ইসলাম ঘড়্গাঁও টাইটেল মাদ্রাসার সুনামধন্য উস্তাদ মাওঃ আব্দুল হামিদ ঝিঙ্গাবাড়ী হুজুর তাদের বাড়ীতে লজিং থাকতেন এবং তার হাতে রাজনগরী হুজুরের প্রাথমিক লেখা-পড়া শুরু হয়।
তিনি তাকে ঘড়্গাঁও মাদরাসায় ভর্তি করান এবং শরহে জামী পর্যন্ত পড়েন।
অতঃপর তিনিই তাকে তৎকালীন সিলেটের ঐতিয্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইলমে হাদীসের সুতিকাগার গোলাপগঞ্জ ঢাকা উত্তর রাণাপিং হোসাইনিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় ভর্তি করান। মুখতাছার (দ্বাদশ শ্রেণী) জামাতের পরিক্ষায় আজাদ দ্বীনি এদ্বারায়ে তালীম বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ডে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান লাভ করেন।
আসাতিজায়ে কেরামের বড়ই স্নেহভাজন ছিলেন।
তিলে তিলে তাদের রুহানী পরশে নিজেকে সুন্নতে নববীর আলোকে গড়তে লাগলেন। জালালাইন, মিশকাত ও দাওরা অত্যন্ত সুনামের সাথে পড়েন এবং ১৯৭৫ সালে বোর্ডের পরিক্ষায় প্রথম মেধার স্বাক্ষর রাখেন।

কর্ম জীবন :- দাওরায়ে হাদিস শেষ করার পর আল্লামা রিয়াছত আলি (রাহঃ) তাকে লালারচক মাদ্রাসায় শিক্ষকতার জন্য পাঠান।
সেখানে ১৯৭৬/ ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত পাঠ দান করেন এবং এর পরে জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম দেউলগ্রাম বিয়ানীবাজার মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন।
হাদিস পড়ান প্রায় ১৯৭৭/১৯৮০ সাল পর্যন্ত।
১৯৮৬-১৯৯৩ সাল (বাংলা সন- ১৩৯৩-১৪০০) জামেয়া ইসলামিয়া কর্মদা মাদ্রাসায় মুহতামিম হিসেবে যোগদান করেন। তার পজ্ঞা ও সাবলীল ব্যবহারে কট্রর বিরোধীরাও হিতাকাঙখী হয়ে যায়।
১৯৮৭ ইংরেজী সনে তিনি জামেয়া হেমায়াতুল ইসলাম ঘড়্গাঁও টাইটেল মাদ্রাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদান করেন।
হাদিস, তাফসীর ফেকাহ-এর কিতাব সমূহ পড়ান।
১৯৮৮ সালে পবিত্র বায়তুল্লাহ এর হজ্ব পালণ করেন।
১৯৯৭ ইং হতে তিনি পবিত্র বোখারী শরীফ, তিরমিযি শরীফ সহ হাদিসের বিভিন্ন কিতাব সমুহ পড়ান।
অর্থাৎ শায়খুল হাদিস হিসেবে ছিলেন ২০১০ পর্যন্ত।
২০১১ ইং হতে ২০১৩ ইং পর্যন্ত জামেয়া রাহমানিয়া মৌলভীবাজারের শায়খুল হাদিস ছিলেন।
প্রায় ৩৫ বছর তিনি হাদিসে নববী (সাঃ) এর খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন।
১৭ বছর শায়খুল হাদিস ছিলেন।
১৯৮৮ সাল থেকে তিনি মৌলভীবাজার-এর পশ্চিম বাজার জামে মসজিদে দীর্ঘ ২৩ বৎসর জুম’আ পূর্ব বয়ান রাখেন। এই বয়ান শুনার জন্য অনেক দুর-দুরান্ত থেকে ধর্ম প্রাণ মানুষ আসতেন এবং তারা তাদের আত্মার খোরাক পেতেন।
২০০২ সালে রাজনগর এর চৌধুরীবাজারে মনিরুদ্দিন মদীনাতুল উলুম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০০৬ সালে রাজনগরের ফতেহপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত জাহিদপুর আব্দুল্লাহপুর এলাকায় জামেয়া ইসলামিয়া নামে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন।
রাজনীতির ময়দানে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রাহঃ) কতৃক প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মৌলভীবাজার জেলার সভাপতি ছিলেন।
আল্লাহর জমীনে আল্লাহর খেলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন তিনি আমৃত্যু করে গেছেন। রাজনগর, মৌলভীবাজার-এর কোথায় ইসলাম বিরুধী কার্যকলাপ হলে তিনি সর্বাগ্রে প্রতিবাদ ও প্রতিরুধের ভুমিকা পালন করতেন।
মানুষ তাকে মুজাহিদে মিল্লাত উপাধীতে ভুষিত করে।
আধ্যাত্মিকতার ময়দানে তার ইসলাহি সম্পর্ক ছিল, আল্লামা লুৎফুর রহমান শায়খে বর্ণভী (রাহঃ)। আল্লামা হাবিবুর রহমান শায়খে রায়পুরী (রাহঃ) আল্লামা আব্দুল জলীল শায়খে বদরপুরী (রাহঃ) ইত্যাদি। ৪ তরিকায় তিনি ইজাযত প্রাপ্ত ছিলেন। ইলমে দ্বীন আহরণের প্রতি তার বড়ই আকর্ষণ ছিল।
বিশেষ করে ইলমে হাদিস ও ইলমে তাফসীরের কিতাব সমূহ প্রায়ই গভীর রাত পর্যন্ত মুতালাআ করতেন।
পরনিন্দা, সমালোচনা, হিংসা- বিদ্বেষ মোটেই পছন্দ করতেন না। আপাদমস্তক সুন্নাতে নব্বীর আনুসারী ছিলেন। মাথায় পাগড়ী মাল, মেসওয়াক হাতে লাঠি ও তাসবীহ, আতর তার নিত্য দিনের সঙ্গী ছিল। নবীজি (সাঃ) এর সুন্নাত তিনি তালাশ করে বের করতেন এবং সে মুতাবিক আমল করতেন।
নবীজি (সাঃ) এর সাথে তার গভীর মহব্বত ছিল। তিনি প্রকৃত আশেক্বে রাসুল ছিলেন। চমৎকার বাগ্মিতার অধিকারী, সৎ সাহসী ও দ্বীনের সাচ্চা মুজাহিদ ছিলেন।
একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে তিনি ভয় করতেন না। বাতিল, নাস্তিক-মুরতাদ সুদখোরদের বিরুদ্ধে তার অগ্নিঝরা বয়ান সদা সর্বদা অব্যাহত ছিল।
আল্লাহর দ্বীন প্রচার ও প্রসারের জন্য সিলেট বিভাগের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে তিনি ছুটে যেতেন। তার রুহানী বয়ানে অনেক মানুষ সত্য পথের দিশা পায়।
সপ্নে নবীজি (সাঃ) এর সাথে সাক্ষাতঃ-

তিনি নিজে বর্ণনা করেন, রানাপিং মাদ্রাসায় পড়কালিন সময়ে একদিন মাদ্রাসা ছুটি হবার পর কিতাব নিয়ে পায়ে হেটে লজিং বাড়ীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন, পেটের ক্ষুধায় ঐ সময় রাস্তার পাশে পড়ে যান।
ঐ রাত্রেই তিনি দয়াল নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে সপ্নে যুগে দেখতে পান।
তা ছাড়া কর্ম জীবনে তিনি আরো কয়েক বার সপ্নে যুগে নবী কারীম (সাঃ) এর সাক্ষাত লাভে ধন্য হন।

মৃত্যু তারিখ :- ২৮/০৭/২০১৪ ইং ২৯ শাবান ১৪৩৫ হিজরী ১৪ আষাঢ় ১৪২১ বাংলা রোজ শনিবার আল্লাহর নামে জিকিররত অবস্থায় পরলোক গমন করেন। ইন্নালিল্লাহি ও ইন্না ইলাইহি রাজিউন । মরহুমের জানাজার নামায পড়ান তার ২য় ছেলে হাফিজ হিফজুর রহমান হেলাল সাহেব। মৃত্যুকালে তিনি ৬ ছেলে ২ মেয়ে এবং ১ স্ত্রীসহ অসংখ্য ছাত্র-ভক্তবৃন্দ ও অগনীত গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তার জানাযায় প্রচুর মানুষের সমাগম ছিল। প্রত্যেকদর্শীদের বর্ণনা মতে রাজনগরের সর্ব বৃহৎ জানাজা তার হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন- আমিন।

তথ্য দানকারীর নাম :- মোঃ আলিম উদ্দীন, মৌলভীবাজার

তথ্য দানকারীর মোবাইল :- ০১৮১১-৯১৪২৯৩

Spread the love