সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

খতিব উবায়দুল হক আমার বাবা

November 07 2018, 02:34


Manual8 Ad Code

লিখেছেন- ইমরানা হক বেবী

Manual2 Ad Code

মৃত্যু চিরসত্য, এর থেকে কারও পালানোর সুযোগ নেই। মুমিন বান্দাদের বিশ্বাসের প্রধান হাতিয়ার আল্লাহু আকবার। তিনবার আল্লাহু আকবার বলে কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে অকস্মাৎ বাবা চলে গেলেন রাব্বুল আলামিনের সানি্নধ্যে। আমার বাবা মরহুম মাওলানা উবায়দুল হক জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব ছিলেন। তিনি ১৯২৮ সালের ২ মে সিলেট শহর থেকে ৭৪ কিলোমিটার দূরে ঐতিহ্যবাহী গ্রাম বারোঠাকুরিতে জন্মগ্রহণ করেন। ২৪ রমজান, ৬ অক্টোবর ২০০৭ সালে ক্ষণস্থায়ী জীবন তুচ্ছ করে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনে চলে গেছেন। বয়স ৮০ বছর হলেও বার্ধক্যের কোনো ছোঁয়া ছিল না দেহে, মনেই হয়নি এত তাড়াতাড়ি তিনি চলে যাবেন। বাবা ইসলাম প্রচারে যে দায়িত্ব পালন করেছেন সবাই তা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবেন। আলেম সমাজ ছাড়াও অন্যান্য পরিমণ্ডলে বাবাকে কে না চিনতেন। প্রায় ২৩ বছর যিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে কাটিয়ে ছিলেন বায়তুল মোকাররমের খতিব হিসেবে, যার পেশাগত দক্ষতার সঙ্গে নীতিগত দৃঢ়তার কারণে বৃহত্তরভাবে সমাদৃত হয়েছেন। বায়তুল মোকাররমের খতিব হয়ে দীনের একজন প্রহরী হিসেবে যে ভূমিকা রেখেছেন তা অবিস্মরণীয়।

১৯৫৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদ্রাসায় চাকরি শুরু করেন এবং ‘৮৫ সালের ২ মে অবসর নেন। শিক্ষকতা থেকে অবসর গ্রহণের পর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব পদে থেকে এ পদটিকে জাতীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। আমার দাদা মরহুম মাওলানা জহুরুল হকও একজন বড় আলেম ছিলেন এবং তিনি ছিলেন হাকিমুল উম্মাত মাওলানা আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর খলিফা। তিনি এতই বুজুর্গ ছিলেন যে, কোথাও কোনো ওয়াজ মাহফিল হলে নিজ খরচে যাতায়াত ও খাবার সঙ্গে নিয়ে যেতেন। শিশুকাল থেকে কৈশোর পর্যন্ত দাদার তত্ত্বাবধানে বাবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত হয়। বাবা ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। বয়স যখন ১৪ বছর তখন তাকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্বখ্যাত ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র দারুল উলুম দেওবন্দে পাঠানো হয়। বাবা আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করলেও তার চার ছেলেকেই কওমি মাদ্রাসায় পড়িয়েছেন। মেয়েদের প্রচলিত মাদ্রাসা ও আধুনিক শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। বাবা পোশাক-আশাকে ছিলেন অনাড়ম্বর। দায়িত্বশীল অভিভাবক হিসেবে অসাধারণ, বাড়িতে সবাইকে স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ দিতেন। শুধু ধর্মীয় ব্যাপারেই নয়, পারিবারিক জীবনেও বাবার সিদ্ধান্ত ছিল অত্যন্ত সঠিক। সংকীর্ণতা কখনো তাকে স্পর্শ করেনি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে আত্দীয়দের সঙ্গে দ্বিমত হয়েছে কিন্তু বাবা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার পরামর্শ দিতেন।

বাবা কিছুতেই ভুলতে পারছি না তোমার স্মৃতি, তুমি আমাদের মাঝে নেই, এ কঠিন সত্য এখনো মানতে কষ্ট হয়। আশ্রয়হীন হয়ে গেছি, শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে গেছি, সব ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলি, একাকিত্ব প্রকট হয়ে ওঠে, কখনো ক্লান্ত হয়ে দুই চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসে। মনে হয় বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, হঠাৎ জেগে উঠে চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখি বাবা তো কোথাও নেই! বুকের গভীর থেকে চাপা কান্না বেরিয়ে আসে, বাবা তুমি কোথায়? জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যার অস্তিত্ব সেই বাবা কোথায়? আজ তুমি পৃথিবীতে নেই, আর ফিরে আসবে না। বিপদে অস্থির ব্যাকুল কণ্ঠে বলবে না বেবী ভয় কী, আমি তো আছি।

Manual7 Ad Code

পাগড়ি মাথায় কালো জোব্বা পরা বাবাকে আর দেখা যাবে না বায়তুল মোকাররমের মিম্বারে। নিজের জীবনী লেখার ব্যাপারে বাবার বিশেষ একটা আগ্রহ ছিল না, তাকে কাছে থেকে যারা দেখেছেন তারা যদি তার জীবন সম্পর্কে লিখে রেখে যান তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতে পারবে খতিব উবায়দুল হক কেমন ছিলেন, স্পষ্টবাদিতা ছিল যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আমাদের সমাজে যারা আদর্শ মানুষ আছেন, তারা একে একে পৃথিবী থেকে চলে যাচ্ছেন। বাবা না থাকায় যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা যদি আল্লাহতায়ালা অন্য কোনোভাবে পূরণ করে দেন। মহান আল্লাহর দরবারে বাবার ওপর রহমতের জন্য দোয়া করছি, জীবনের সব গুনা আল্লাহ যেন মাফ করে দেন এবং তাকে যেন জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন। আমিন।

Manual5 Ad Code

Spread the love