সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

আল্লামা আব্দুল বারী ধর্মপুরী

March 24 2024, 06:13

নাম :- আল্লামা আব্দুল বারী ধর্মপুরী

জন্ম তারিখ / জন্মস্থান :- ১২ অক্টোবর ১৯৪১ ইংরেজি মুতাবিক ২১ রমযান রোজ রবিবার মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানাধীন ধর্মপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

শৈশব কাল :- প্রখর মেধাবী ছাত্র হিসেবে নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। প্রতিটি ক্লাসেই তিনি প্রথম স্থান অধিকার করে শিক্ষক মণ্ডলী ও অভিভাবকদের দৃষ্টি কাড়েন।

শিক্ষা জীবন :- প্রাথমিক লেখাপড়া শেষে জীবনের মোড় ঘুরে যায় তাঁর। ইলমে ওহীর মহাসমুদ্র তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাক দেয়। সে ডাকে সাড়া দিয়ে ইলমে ওহী অর্জনের জন্য স্থানীয় আলেম মাওলানা মাহমুদুর রহমান রহ. এর নিকট কিছুদিন উর্দু, ফার্সি, মিজান,মুনশায়িব ইত্যাদি মৌলিক কিতাবাদী পাঠ শেষে ইলমে ওহীর স্থানীয় কেন্দ্র মুন্সীবাজার বাইতুল উলুম মাদরাসায় (বর্তমান নাম জামেয়া দারুল হাদিস মুন্সিবাজার) ভর্তি হন। সেখানে মাধ্যমিক স্তর কাফিয়া পর্যন্ত লেখাপড়া করেন।

অতঃপর ইলমে ওহী হাসিলের তীব্র আকাঙ্ক্ষায় তিনি রাজনগর থানাধীন গড়গাঁও মাদরাসায় এক বছর অধ্যয়ন করেন। তারপর তৎকালীন শ্রেষ্ঠ শিক্ষাকেন্দ্র জামিয়া লুৎফিয়া আনওয়ারুল উলুম হামিদনগর বরুণা মাদরাসায় ভর্তি হন। একাধারে তিন বছর ছিলেন তিনি সেখানে। ততদিনে মিশকাত জামাত পর্যন্ত অধ্যয়ন করে ফেলেন। অতঃপর হযরত শাইখে বর্ণভী রহ.-এর পরামর্শে ইলমে হাদীসের মহাসমুদ্রে ডুব দেওয়ার মানসে তিনি জামিয়া ইসলামিয়া হুসাইনিয়া গহরপুর মাদ্রাসায় প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ শাইখুল হাদীস আল্লামা নূরউদ্দীন আহমদ গহরপুরী রহ.-এর সান্নিধ্যে চলে যান। সেখানেই তাকমীল ফিল হাদীস তথা টাইটেল ক্লাসে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়ার গৌরব লাভ করেন।তাছাড়াও হযরত শায়খে বর্ণভী রহ. এবং আল্লামা গহরপুরী রহ. এর সার্বিক পরিচর্যায় বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের সাথে সাথে আধ্যাত্মিক জ্ঞানেও সমৃদ্ধ হতে থাকেন।

কর্ম জীবন :- জামিয়া গহরপুরে দাওরায়ে হাদীস সম্পন্নের পরপর সেখানেই একাধারে ৬ বছর অধ্যাপনা করেন। অতঃপর বরুণা মাদরাসায় দাওরায়ে হাদীস টাইটেল ক্লাস খোলা হলে হযরত শায়খে বর্ণভী রহ. তাঁকে বরুণা মাদরাসায় মুহাদ্দিস পদে নিয়োগ প্রদান করেন। সেখানে সুদীর্ঘ ৭ বছর অত্যন্ত সুনামের সাথে হাদীসের দারস দেওয়ার পর জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গায় ১ বছর, দারুস সালাম খাসদবীর মাদরাসায় ১ বছর হাদীসের খিদমাতে নিয়োজিত ছিলেন। অতঃপর ১৯৯০ ইংরেজি থেকে ২০০৮ ইংরেজি পর্যন্ত সুদীর্ঘ ১৮ বছর ঐতিহ্যবাহী জামেয়া দ্বীনিয়া মৌলভীবাজারের শাইখুল হাদীস হিসাবে থাকার পর তিনি চলে যান জামিয়া ক্বাওমিয়া দারুল হাদীস মুন্সিবাজার মাদরাসায়। সেখানে ২ বছর যাবৎ হাদীসের খেদমত আঞ্জাম দেন। অতঃপর ২০১১ ইংরেজি সাল থেকে ইন্তিকাল অবধি মৌলভীবাজার শহরের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনী বিদ্যাপীঠ আল-জামেয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদরাসার শাইখুল হাদীস হিসাবে থাকার পাশাপাশি জগন্নাথপুর মহিলা মাদরাসায়ও শাইখুল হাদীসের দায়িত্ব পালন করেন।

অবদান :- ইসলামের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে রাজনীতি। আর এ রাজনীতি বাদ দিয়ে কেবল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের নামই ইসলাম নয়, এ বোধ ও প্রত্যয় থেকেই জীবনের শুরু লগ্ন থেকে তিনি ইসলামী রাজনীতি ও আন্দোলন-সংগ্রামের সাথে সম্পৃক্ত হন। প্রথমে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। পরে হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর ডাকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতৃবৃন্দসহ সকলেই খেলাফত আন্দোলনে যোগ দিলে তিনিও খেলাফতের সাথে যুক্ত হন। পরবর্তী সময়ে খেলাফত মজলিসের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। তাঁর বলিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষকতায় খেলাফত মজলিস মৌলভীবাজার জেলায় শক্তিশালী অবস্থানে পৌছুতে সক্ষম হয়। মৃত্যু অবধি তিনি খেলাফত মজলিস মৌলভীবাজার শাখার উপদেষ্টা ও হযরত শায়খে বর্ণভী রহ.-এর প্রতিষ্ঠিত সংগঠন আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা হিসাবে ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক)-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি ও তানযীমুল মাদারিসিল আরাবিয়া মৌলভীবাজার-এর সভাপতি হিসেবে অত্যন্ত নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে নিজ দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছিলেন।
এছাড়াও ১৯৯৩ ইংরেজি থেকে মৌলভীবাজার জেলার উলামায়ে কেরামদের একক সংগঠন উলামা পরিষদ মৌলভীবাজার\’-এর সভাপতি হিসাবে ছিলেন।

দাউদ হায়দার, আলাউদ্দীন, তসলিমা নাসরিন-সহ সকল ইসলামদ্রোহী, নাস্তিক-মুরতাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে সবসময়ই আল্লামা আব্দুল বারী ধর্মপুরী ছিলেন প্রথম কাতারে। বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে তাঁর বজ্রকণ্ঠ ছিল সর্বদাই সোচ্চার।
ইজাযাত লাভ ও দাওয়াতে তাবলীগ
১৯৬৭ সালে যুগশ্রেষ্ট বুযুর্গ উপমহাদেশের প্রখ্যাত পীরে কামিল, শাইখুল ইসলাম আল্লামা হুসাইন আহমদ মাদানী রহ.-এর সুযোগ্য খলীফা হযরত শায়খে বর্ণভী রহ.-এর হাতে বাইআত গ্রহণ করেন। অতঃপর শায়খে বর্ণভী রহ.-এর প্রধান খলীফা হযরত মাওলানা আব্দুল কাদির শায়খে লুৎফাবাদী রহ.-এর কাছ থেকে ১৯৭৮ সালে ইজাযাত লাভ করেন। আল্লামা আব্দুল বারী ধর্মপুরী অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় যুক্তিতর্ক সহকারে সাধারণ মানুষের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছে দিতে ছিলেন সদা তৎপর। ছোট-বড় সভা-সমিতি ও সেমিনারে তিনি ছিলেন একজন বিজ্ঞ আলোচক।এছাড়াও তিনি ছিলেন একজন যোগ্য ন্যায়বিচারক। জেলার সর্বত্র এ জন্য তিনি সমানভাবে সমাদৃত ছিলেন। শেষ বয়সে তিনি অধিকাংশ ওয়াজ মাহফিলের সভাপতি হিসাবে থাকতেন। আল্লামা ধর্মপুরী রহ. সভাপতির চেয়ারে বসা থাকা অবস্থায় অন্যান্য আলোচকদের হিসাব-নিকাশ করে কথা বলতে হতো।

পারিবারিক জীবন
১৯৬৬ সালে শায়খে বর্ণভী রহ.-এর আপন ভাগ্নী বরুণা পশ্চিম বাড়ি নিবাসী জনাব হাজী ইসরাঈল মিয়ার পঞ্চম কন্যা সারা খাতুন-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ৩ পুত্র ও ৮ কন্যাসন্তানের জনক ছিলেন। পুত্ররা হচ্ছেন-মুফতি হিফজুর রহমান ফুয়াদ (মুফতি ও মুহাদ্দিস,বরুণা মাদরাসা), মাওলানা সাইফুর রহমান ফয়সল (মুহাদ্দিস, দারুল উলুম টাইটেল মাদরাসা মৌলভীবাজার), মোঃ আতিকুর রহমান নোমান (দুবাই প্রবাসী)। কন্যারা হচ্ছেন- নিশাত, হামিদা, বতুল, আসমা, সালমা,ফাহিমা,হুমায়রা,মঞ্জুরা।
আল্লামা ধর্মপুরী একদিকে যেমন যোগ্য পিতৃত্ব লাভে ধন্য ছিলেন, তেমনি মিতবাক শরীফ একঝাঁক আলিমের শ্বশুর হওয়ারও গৌরবও অর্জন করেন।

মৃত্যু তারিখ :- এ মহান মনীষী আলিম দীর্ঘ ৬ মাস যাবৎ বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় থাকার পর ২০২২ সালের ৬ এপ্রিল মুতাবিক ৪ রমযান ১৪৪৩ হিজরী বুধবার ইফতারের পূর্বমহূর্তে মৌলভীবাজার শহরের কাজিরগাঁও এলাকার নিজের ভাড়া বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। পরের দিন বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় মরহুমের নামাযে জানাযা মৌলভীবাজার টাউন ঈদগাহ মাঠে তাঁর বড় পুত্র মুফতি হিফজুর রহমান ফুয়াদ-এর ইমামতিতে অনুষ্ঠিত হয় জানাযায় অংশগ্রহণ করেন বৃহত্তর সিলেটের আলেম-উলামা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সহ হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ জনতা। মৌলভীবাজার শহরের পূর্ব ধরকাপন জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্তানে তাঁকে চিরনিদ্রায় সমাহিত করা হয়।

মোবাইল :-

তথ্য দানকারীর নাম :- এহসানুল হক ফুযায়েল

তথ্য দানকারীর মোবাইল :- +৮৮০১৭৫১৫৫৬৮৩১

Spread the love