সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিসে দেহলবী

November 12 2018, 04:42


Manual5 Ad Code

মুহাদ্দিছে দেহলবী (রহঃ)
১৭৪৬ ইং——–১৮২৪ইং

জন্ম ও বাল্যকালঃ শাহ আব্দুল আজিজ ছিলেন শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিছে দেহলবী রহঃ এর পুত্র। ২৫ রমযান ১১৫৭ হিঃ/১১ অক্টোবর ১৭৪৬ সনে জন্মগ্রহন করেন।বাল্যকালেই কুরআন মাজীদ হিফজ করেন, তাজবীদ ও ক্বেরাত শিক্ষা করেন। এগার বছর বয়সে তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুর” হয়। তার পিতা স্বীয় খলিফাদের মধ্যে একজন যোগ্য
ব্যক্তিকে তাঁর শিক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত করেন। মাত্র দুই বছরে তিনি আরবি ভাষায় এবং বিভিন্ন বিষয়ে বিষ্ময়কর দক্ষতা অর্জন করেন। তাঁর স্বাভাবিক উদ্যম ও মেধার তুলনা বিরল।
অতঃপর পিতার দরসে তিনি অংশগ্রহণ করেন। এই দরসে শুধু আলিম সমাজে খ্যাত  অসাধারণ স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন ছাত্ররা অংশ গ্রহণ করতেন। ষোল বছর বয়সে তিনি তাফসির, হাদীস, আকায়েদ, ফিক্বহ, উসুল, মানতিক, জ্যামিতি, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, ইতিহাস, ভূগোল ইত্যাদি বিষয়ে বুৎপত্তি অর্জন করেন । কিন্তু তার বিশেষ আকর্ষণ ছিল কুরআন মাজিদের প্রতি। তিনি নিজেই বলেছেন, তার পিতা তার উস্তাজকে কুরআন মাজীদ শিক্ষা দেওয়ার জন্য বিশেষ তাকীদ দিতেন। পিতার মৃত্যুর পর তিরি ষোল বছর
বয়সে অধ্যাপনার পৈতৃক দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখন হতে মৃত্যু অবধি তিনি অধ্যয়ন,
অধ্যাপনা, রচনা ও সংকলন, তাবলীগ ও মুরিদগণের তালীম এবং শিষ্যদের সাধনা পরিচালনায় ব্যাপৃত থাকেন। আলিম সমাজ তাঁকে সিরাজুল হিন্দ উপাধী প্রদান করেন। তাঁর স্মৃতি শক্তি ছিল অতুলনীয়। অনেক বিখ্যাত পুস্তকাদির সুদীর্ঘ উদ্ধৃতি তিনি মুখস্ত লেখাতে পারতেন।বাতিনী ও রূহানী জগৎ বিষয়ক জ্ঞানগর্ব বক্তব্য পেশ করলে মনে হত যেন সমুদ্র উদে ¦লিত হচ্ছে। কথা বললে উপস্থিত লোকজন বিমুগ্ধ হয়ে যেত। আর তাদের অন্তর আল্লাহ প্রেমের নূরে উদ্ভাসিত হয়ে যেত। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এতই বাস্তবধর্মী ছিল যে, তিনি সৎ-নিয়তে ইংরেজী শিক্ষা করার ফতোয়া প্রদান করেন। তাঁর মৃত্যুর ৫০/৬০ বৎসর পরও অধিকাংশ আলিম এইরূপ স্থির মতামত প্রকাশে বিরত থাকেন।

Manual8 Ad Code

শাহ আব্দুল আযীয (রহঃ) প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার ও শুত্রবার শিক্ষানিকেতনে ওয়াজ করতেন। এতে অসংখ্য আগ্রহী শ্রোতা যোগদান করতে। তাঁর বাচনভঙ্গি এতই চিত্তাকর্ষক ছিল যে, বিভিন্ন মাজহাব ও জাতির লোক তাঁর আলোচনায় তৃপ্ত হত। তাঁর কোন কথা কারো মনোকষ্টের কারণ হত না। প্রথম হতেই তাঁর আলোচনার রীতি ছিল খুবই পরিচ্ছন্ন এবং প্রাঞ্জল। কোন কঠিন বিষয়কে তিনি এমন সুন্দর ও সহজ ভাবে উপস্থাপন করতেন যে পন্ডিত ব্যক্তিরাও আশ্চর্য হয়ে যেত। সমসাময়িক কালে তিনি ছিলেন আলেম-শায়েখদের কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর শিষ্যত্ব বড় বড় আলেমদেরও গর্বের বিষয় ছিল। তাঁর রচনাবলী প-িতদের কাছে প্রামাণ্য গ্রন্থরূপে বিবেচিত হয়।

Manual6 Ad Code

মৃত্যুঃ রমজান ১২৩৯ হিঃ/এপ্রিল ১৮২৪-এর শেষ দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থতা বেড়ে গেলে নগদ সমস্ত সম্পত্তি তিনি শরীয়ত মুতাবিক ভ্রাতুষ্পুত্র ও যাবিল-আরহামদের মাঝে বণ্টন করে দেন। তাঁর পরিহিত বস্ত্র দ্বারাই তাঁর কাফন দানের ওসিয়ত করে যান। ৭ই শাওয়াল ১২৩৯/৫ই জুন ১৮২৪ সালের রবিবার সকালে তাঁর ইন্তেকাল হয়। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বৎসরের কিছু বেশি। পর পর পঞ্চান্ন বার তাঁর জানাযার নামাজ আদায় করা হয়। দিল্লীর তুর্কি দরজার বাইরে পারিবারিক গোরস্থানে পিতার কবর বরাবর তাঁকে দাফন করা হয়। উত্তরসূরীঃ তাঁর মাত্র তিন কন্যা ছিল। একজনের বিবাহ হয় ভ্রাতুষ্পুত্র ঈসার সঙ্গে, দ্বিতীয় জনের বিবাহ হয় অপর ভ্রতুষ্পুত্র মাওঃ আব্দুল হাই-এর সঙ্গে, তৃতীয় জনের  স্ববংশীয় শাহ মুহাম্মদ আফজালের সঙ্গে। তৃতীয় কন্যার পুত্র শাহ মুহাম্মদ ইসহাক ও শাহ মুহাম্মদ ইয়াকুব তাঁর স্থলাভিষিক্ত
ছিলেন। কিন্তু ১২৫৬ হিজরীতে তিনি ভারত হতে মক্কায় হিজরত করেন।

রচনাবলীঃ তাঁর রচনাবলী নিম্নে উল্লেখকরা হল-* তাফসীরু ফাতহিল আযিয,সাধারণতঃ তাফসীরে আযীযী নামে পরিচিত।

* তুহফায়ে ইসনা আশারিয়া

* বুসতানুল মুহাদ্দিসীন (মুহাদ্দেসদের জীবনী গ্রন্থ)

*উজালা-ই- নাফেয়া (উসূলে হাদীস)

*সিদরুশ-শাহাদাতাইন (কারবালার ঘটনা)

Manual7 Ad Code

* আযীযুল ইকতিবাস ফী ফাদায়েলে আখরিন নাস (খুলাফায়ে রাশেদীনের ফজীলত
সম্বলিত হাদীস ও ঐতিহাসিক বিবরণের সংকলন)

Manual5 Ad Code

* মীযানুল আকাইদ

*ফাতাওয়ায়ে আযীযী (দুই খন্ড)

* রসায়েলে খামসা (ফারসী ভাষায়)

*মালফুজাতে শাহ আব্দুল আযীয।

Spread the love

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code