সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

মাওলানা শায়খ তৌহিদ আলী” রহ. এর সংক্ষিপ্ত জীবনি

May 15 2020, 10:37


Manual7 Ad Code

লিখেছেন- হাফেজ মাহফুজ হোসাইন

মাদানী সিলসিলার বরেণ্য শায়খ বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন হযরত মাওলানা তৌহিদ আলী বৃহত্তর সিলেটের একজন স্বনামধন্য আলেম।

Manual5 Ad Code

জন্ম- ১৯২৩ সালে সুনামগঞ্জ জেলাধীন ছাতক উপজেলার ভাতগাঁও ইউপি`র ঐতিহ্যবাহী ঝিগলী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম ।তাঁর পিতার নাম: পীর হোসেন আলী,মাতার নাম: মোছা. জলিকা বিবি।২ বোন ও তিন ভাই।ভাইদের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ। শিক্ষাজীবন- প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষা তিনি নিজ ঘরেই স্বীয় মাতাপিতার কাছথেকে লাভ করেন।অতঃপর বিশ্বনাথের দৌলতপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠগ্রহণ করেন।

Manual7 Ad Code

তারপর উভয় জগতের সফলতা লাভের উদ্দেশে দ্বীনী শিক্ষা অর্জনের জন্য কওমী মাদরাসায় ভর্তি হন প্রথমে বৃহত্তর সুনামগঞ্জের দারুল উলুম দরগাহপুর মাদরাসায়,দরগাহপুর থেকে গিয়ে ভর্তি হন ওসমানীনগর পারকুল মাদরাসায়। সেখানে কাফিয়া জামাত পর্যন্ত পড়ালেখা করেন।

এ সময় তাঁর একান্ত অনুগত উস্তাদ ও তালিমী মুরুব্বি মাওলানা আব্দুল মুছাব্বির রহ. এর পরামর্শে ভর্তি হন তখনকার সময়ের অন্যতম দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেউলগ্রাম মাদরাসায় পড়েন ফজিলত ১ ম বর্ষ পর্যন্ত।এরপর উচ্ছশিক্ষা অর্জনের তাগিদে ১৯৪৩ সাল নাগাদ সময়ে রওয়ানা হন বিশ্ববিখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দের উদ্দেশ্য।কিন্তু দারুল উলুম দেওবন্দে পৌঁছাতে গিয়ে দেরী হয়ে যায়।পৌঁছে দেখেন দেওবন্দের ভর্তির নির্ধারিত সময় শেষ।তখন গিয়ে ভর্তি হন তৎকালীন সময়ের অন্য আরেকটি শ্রষ্ঠতম কওমী দরসগাহ মাযাহিরুল উলুম সাহরানপুরে।সেখানে তিনি উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমদের তত্তাবধানে থেকে মিশকাত ও দাওরায়ে হাদীস কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করেন।

তখনকার সময়ে সাহরানপুরের শাইখুল হাদীস ও সদরে মুদাররিস ছিলেন হযরত মাওলানা খলিল আহমদ সাহরানপুরী রহ.। শাইখুল আরব ওয়াল আজম সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী রহ.ও তখন সাহরানপুরে সাপ্তাহে দু-দিন বুখারী শরীফের দারস প্রদান করতেন। সাহরানপুর দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করে চলে আসেন দেওবন্দে।মাদানী রহ. এর খানকায়।মাদানী রহ. এর সংশ্রবে থেকে আধ্যাত্মিকতার সবক নেন দুই বছর যাবৎ।

এরপর তাঁর নির্দেশে চলে আসেন বাংলাদেশে।আসার সময় তাঁর মুরশিদ মাদানী রহ. তাঁকে কিছু কিতাব,জায়নামাজ ইত্যাদি হাদিয়াও দিয়েছিলেন,এবং প্রাণভরে তাঁকে দু’আও করেছিলেন। কর্মজীবন- দেশে ফিরে তিনি শিক্ষকতার গুরুদায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের সূচনা করেন, তাঁর সহপাঠী খলিফায়ে মাদানী শায়খে গাজিনগরী রহ. এর স্মৃতি-বিজড়িত দারুল উলুম দরগাহপুর থেকে।এরপর নিজ গ্রামবাসীর সবিনয়পূর্বক অনুরোধে নিজ গ্রাম ঝিগলী মসজিদের ইমামতির দায়িত্ব গ্রহন করেন। মাদ্রসা ও মসজিদ প্রতিষ্ঠা- ইমামতিতে থেকে তিনি লক্ষ করলেন যে,সমাজে ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে গূঢ় অন্ধকার বিরাজ করছে।এমতাবস্থায় সমাজকে ইসলামের আলয় উদ্ভাসিত করার পবিত্র মানসে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করেন দক্ষিণ ছাতকের নিজ গ্রাম ঝিগলীতে জামেয়া আরাবিয়া ইসলামীয়া ঝিগলী মাদরাসা।

Manual5 Ad Code

প্রথমে মাদরাসাটি ছিলো (বর্তমান ঝিগলী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে) মক্তবাকারে।স্থানের সংকুলান না হওয়ায় ১৯৫৬/৫৭ সালের দিকে মাদরাসাটিকে তিনি অন্যত্র স্থানান্থরিত করেন, আজকে যেখানে সুবিশাল আঙ্গিকে দাঁড়িয়ে আছে তাঁর সেই প্রটিতিষ্ঠানটি। ১৯৯৪ সালের দিকে নিজ বাড়ীর পাশে একটি পাঞ্জেগানা মসজিদও প্রতিষ্ঠা করেন। মসজিদটির ভিত্তি স্থাপন ও উদ্বোধন করেন আব্দুল করীম শায়খে কৌড়িয়া রহ.। আধ্যাত্মিকতা ও সমাজসেবা- শায়খে ঝিগলী রহ. ছাত্রজীবনথেকেই তাযকিয়ার প্রতি বিশেষ খেয়ালী ছিলেন। এ কারণেই তাকমীল ফীল হাদীস সমাপনের পরেই হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. তাঁকে দুইবছর নিজ তত্তাবধানে রেখে তাযকিয়া-অন্তর পরিশুদ্বতার সবক নিবিড় যত্নসহকারে দেন।

এর পর সমাজ পরিশুদ্বতার নির্দেশ সহকারে দেশে প্রেরণ করেন। দেশে আসার কিছুদিন পর সিলেট সীমান্তঘেসা ভারতের করীমগঞ্জের এক মাহফিলে হযরত মাদানী রহ. বাংলাদেশের তাঁর তিন সালিককে খেলাফ প্রদানে ভূষিত করার ঘোষণা দেন। কিন্তু আল্লাহর হুকুমে সেদিনকার মাহফিলে শায়খে ঝিগলী রহ.’র পিতামরহুম তৎকালে সকরাতের হালাতে থাকায় তিনি আর ঐ মাহফিলে উপস্থিত হতে পারেননি। এরপরে তিনি শায়খে কৌড়িয়া রহ.’র কাছে বাইয়াত হয়ে তাঁর কাছ থেকে সবক নেন,এবং এক কালে খেলাফতও লাভ করেন।

শারিরীক চিকিৎসকগণ বাহ্যিক রোগব্যাধির চিকিৎসা করে সমাজ সেবা করে চলেন,আর আত্মিক চিকিৎসক তথা হক্কানী পীর-বুযুর্গগণ অদৃশ্য রোগব্যাধির চিকিৎসা করে সমাজ সেবার অংশ হয়ে থাকেন। এ দৃষ্টিতে শায়খে ঝিগলী রহ. সমাজসেবর এক অনন্য উদাহারণ।মানুষকে ক্বাদ আফলাহা মান তাযাক্কা এর মিসদাক বানানোর জন্য আজীবন তিনি চেষ্টা করে গেছেন।পরিশুদ্বতার সবক নিয়ে জীবনভর তিনি মানুষের উপকারে নিমগ্ন ছিলেন।আজও সেই মানুষগুলা তাঁর জীবন্ত স্মৃতিস্মরণে কেঁদে ওঠে। তাঁর সুবিশাল বাংলোতে আগত মেহমান-পথিক-মুসাফিরগণের ফ্রী থাকাখাওয়া ও বাসস্থানের উন্মুক্ত সুযোগ ছিল। বিপদগ্রস্থ অসহায় মানুষেরা তাঁকে নিজেদের অতি আপন বলে মনে করত।জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সমাজের উপকারে নিজেকে নিবিষ্ট করে রেখেছিলেন।

সন্তানাদি- শায়খে ঝিগলী রহ. ৩ পুত্র সন্তান ও ৪ কন্যাসন্তান মহান খালিক আল্লাহর পক্ষ হতে প্রাপ্ত হয়েছিলেন। পুত্র সন্তানত্রয়ের মধ্যে জ্যষ্ঠজন ছাত্রাবস্থায় সিলেটের দারুস সালাম মাদ্রাসায় ইন্তিকাল করেন(রাহিমাহুল্লাহ)। অপর ২ জনের মধ্যে বড় সন্তান দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারি জামেয়া থেকে ইফতা বিভাগে অধ্যায়ণ করত: বর্তামানে লন্ডন বসবাসরত আছেন।

আর তাঁর ছোট সন্তান হা. মাও. সাঈদুর রহমান জামেয়া ইউনুসিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে তাকমীল ফীল হাদীস সমাপন করে এখন তাঁর প্রতিষ্ঠিত জামেয়া ঝিগলীর নির্বাহী মুহতামিম হিশেবে উক্ত প্রতিষ্ঠানের সর্বময় ইহতিমামের দায়ীত্বে আছেন। কন্যাগণের মধ্যথেকে দুইজন স্বপরিবারে লন্ডনে বসবাসরত এবং অপর দুইজন স্বদেশেই পরিবারসমেত বসবাস করছেন। মৃত্যু- ঈসায়ী ২০০০ সনের ৯ মে ইংল্যান্ডে সফররতত অবস্থায় ইস্ট লন্ডনে এই মহা মনিষী ইন্তিকাল করেন।

Manual2 Ad Code

ইস্ট লন্ডন মসজিদের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হয়। বাংলাদেশ তথা বৃহত্তর সিলেটের ইসলামী সমাজের মুকুটহীন এ সম্রাটের উত্তরোত্তর দরজাবুলন্দি কামনা করছি। আল্লাহ যেন তাঁর এই মুশফিক বান্দাকে আপন রহমতের শান্তিময় ছায়ায় আশ্রয় প্রদান করেন। মাহফুজ হুসাইন চৌধুরী। শিক্ষার্থী: জামেয়া মাদানিয়া,সিলেট। তথ্যদাতা: হা. মাও. সাঈদুর রহমান। নির্বাহী মুহতামিম,জামেয়া ঝিগলী।

Spread the love

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code