সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

মাওলানা আব্দুল করিম ইবনে মছব্বির

June 15 2019, 13:33


Manual5 Ad Code

নাম: মাওলানা আব্দুল করিম ইবনে মছব্বির। ১৯৬৭ ইংরেজী সালে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কালিজুরী গ্রামে এক ধর্মভীরু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মছব্বির। মাতার নাম মোছা. কমলা বেগম। তাঁর দাদার নাম আলহাজ্ব আব্দুর রশীদ। তিনি তৎকালীন জমিয়ত নেতা ছিলেন। পারিবারিক জীবন: তাঁরা তিন ভাই ও এক বোন। তিনি মেঝো। ধর্মভীরু নারী নাছিমা বেগমের সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। তাঁর পাঁচ সন্তান; আরাফাত করিম, আবিদা করিম, শাহরিয়ার করিম, আদিল করিম, সাজিদা করিম।

শিক্ষাজীবন: তাঁর পিতা প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মুছব্বিরের সাহেবের হাত ধরে জামিয়া ইসলামিয়া বুধবারী বাজার ক্বওমী মাদরাসাতে দ্বীনি শিক্ষার জন্য ভর্তি হন। মক্তব পাঞ্জমে আজাদদ্বীনি এদ্বারায়ে তা’লিম বোর্ডে প্রথম স্থান অধিকার করেন। প্রখর মেধার অধিকারী মছব্বির পরবর্তীতে জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম দেউলগ্রাম এবং ১৯৮৯ সালে তিনি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীট ঢাকা উত্তর রানাপিং আরাবিয়া হুসাইনিয়া মাদরাসা থেকে প্রথম বিভাগে দওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করেন। কওমী মাদরাসায় পড়াশোনাকালীন সময়ে তিনি ফুলবাড়ী আজিরিয়া আলিয়া সিনিয়র মাদরাসা থেকে দাখিল, আলিম, এবং সিলেট সরকারী আলীয়া মাদরাসা থেকে কামিল পাশ করেন, এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাশ করেন।

Manual3 Ad Code

১৯৯১ সালে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী প্রফেসর বদরুদ্দোজা চৌধুরী এর কল্যাণে জাতীয় সংসদ মসজিদের ইমাম ও খতীব হিশেবে যোগদান করেন। তিনি ছাত্র জীবন থেকে বিভিন্ন সাথে ওয়াজ নসিহত করতে দাওয়াত পেতেন। ১৯৯৬ সালে তিনি একটি ক্বওমী মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিশেবে যোগদান করেন। তিনি তখন থেকে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী লেখালেখি শুরু করেন। তাঁর লেখায় মুগ্ধ হয়ে বাংলার কিংবদন্তী লেখক হুমায়ুন আহমেদ এর লেখা বই “শ্রাবণ মেঘের দিন” এ তাঁকে নিয়ে কিছু লেখেন। এছাড়া বিখ্যাত ঔপন্যাসিক কাশেম বিন আবু বকর ১৯৯৬ সালে “ধনির দুলালী” নামে লেখা বইটি তার নামে উৎসর্গ করেন। বহুমূখী প্রতিভার অধিকারী মাওলানা আব্দুল করিম মানুষের কল্যাণে সমাজসেবা ও কল্যানমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন।

মানুষের সেবার নিমিত্তে তিনি তাঁর পিতা মাওলানা আব্দুল মছব্বির সাহেবের নামে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প শুরু করেন। এগুলোতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিশেবে নেতৃত্ব দিতেন ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী ও ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল। সহজ সরল সাদা মনের মানুষ মাওলানা আব্দুল করিম সকলেরই প্রিয় ও আপন ব্যক্তি হিশেবে পরিচিত হয়ে উঠেন। তিনি ২০০১ সালে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর স্টাফ রিপোর্টার হিশেবে যোগদান করেন। তিনি সাংবাদিকতার শীর্ষ পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এবং তথ্য মন্ত্রণালয় হতে ইস্যুকৃত এ্যক্রিডিটেশন কার্ড পান। প্রথম আলো, যুগান্তর, জনকণ্ঠসহ বাংলাদেশের প্রায় সকল পত্রিকায় তার লেখাপত্র প্রকাশ হতো। পাশাপাশি বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় ইসলামী অনুষ্ঠানের আলোচনায় অংশ নিতেন। বিভিন্ন ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে তাঁর বিশেষ অবদান।

Manual3 Ad Code

তিনি ২০১২ সালে ঢাকা উত্তর রানাপিং আরাবিয়া মাদরাসার দুর্দিনের মুহতামিম। সিলেট শহরের নুরপুর জামে মসজিদ এর মুতাওয়াল্লী জালালাবাদ ক্যন্টনম্যান্ট বোর্ড স্কুলের পরিচালনা কিমিটির সদস্য, ও সর্বোপরী হযরত শাহরাণ মাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পাশাপশি তিনি বিভিন্ন কওমী মাদরাসা ওয়াজ মাহফিলে বক্তা হিশেবে যোগদান করতেন। তিনি ২০১১ সালের ১৬ মার্চ দৈনিক আমার দেশ পত্রিকাতে প্রথম পাতায় লিখেছিলেন “মাহমুদুর রহমান তোমার মুক্তি চাই” অতঃপর লেখাটি প্রকাশ হওয়ার তিনদিন পর মাহমুদুর রহমান মুক্তি লাভ করেন। তাঁর দরছে বোখারীর শিক্ষক শায়খুল হাদীস আল্লামা রিয়াছত আলী রহ.। এবং ইলমে তাসাউফের শিক্ষক শায়খুল হাদীস আল্লামা শাহ আহমদ শফি। তিনি তাঁর নিকট বাইআত গ্রহণ করেন। বেশিরভাগ জেনারেল শিক্ষিতশ্রেণির লোকদের সাথে মাওলানা করিম ইবনে মছব্বিরের ভালো সম্পর্ক ছিলো এবং এই শ্রেণির মানুষজনই তাকে বেশি মহব্বত করতেন শ্রদ্ধা করতেন।

২০১৪ সালে তিনি ফ্রান্সে পাড়ি জমান। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি জীবনের সবচে বিভীষিকাময় দিনগুলোর মুখোমুখী হয়েছেন। ধারাণপ্রসূত জঙ্গি আখ্যা দিয়ে তাঁর উপর এবং তাঁর পরিবারের উপর চালানো হয় নির্যাতনের স্ট্রিমরোলার। ২০১৬ সালে ফরাসী ক্রুসেডার বাহিনী তাঁর ফ্যমিলির ৬ সদস্যকেও নির্মমভাবে নির্যাতন করে। বিভিন্নভাবে মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন করে অনেকটা হত্যার পরিকল্পনা করে। তার শরীরে হাই টেকনোলজির অস্ত্র দিয়ে মাংসপেশীতে অনু ঢুকিয়ে নির্যাতন করা হয়। ইলেক্ট্রিক হেলমেট দিয়ে তাকে ও তার পরিবারকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। কিন্তু তিনি আল্লাহর মেহেরবানীতে শেষ রক্ষা পান। তাঁর বৃদ্ধ পিতার দুআর বরকতে তিনি ও তাঁর ৫ সন্তান এবং সহধর্মীনি এখনও বেঁচে আছেন।

Manual2 Ad Code

উল্লেখ্য যে, মাওলানা করিমকে সিজদারত অবস্থায় যে ক্রুসেডার লাত্থি মেরেছিলো সে একটি সুড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। মাওলানা করিম ইবনে মছব্বির এক সময় জাতীয়তাবাদী আদর্শের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও তিনি কাদীয়ানী বিরুধী সংগঠন “আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওত” এর কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তৎকালিন সভাপতি ছিলেন, বায়তুল মুকাররমের খতীব আল্লামা উবায়দুল হক রহ.। এখন তিনি স্বপরিবারে ফ্রান্সে বসবাস করছেন।

Manual4 Ad Code

লিখেছেন: মুহাম্মদ আব্দুল মুকিত

Spread the love

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code