সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমান রাহ.-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

October 10 2019, 03:48


Manual5 Ad Code

ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমান রাহ.

জন্ম: মুফতি আবদুর রহমান (রাহ.) ১৯২৫ সালে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ইমামনগর গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম চাঁন মিয়া।

শিক্ষাজীবন: মুফতি আবদুর রহমান (রাহ.) নাজিরহাট ও হাটহাজারি মাদরাসায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক লেখাপড়া সমাপ্ত করেন। উচ্চ মাধ্যামিক শিক্ষা সমাপ্তির পর তিনি উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য ভারতের তথা উপমহাদেশের বিখ্যাত মাদরাসা দারুল উলুম দেওবন্দে গমন করেন। ১৯৫০ সালে সেখানে কওমি মাদরাসা পাঠ্যক্রমের সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিস কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেন। দারুল উলুম দেওবন্দের ইফতা বিভাগের তিনি প্রথম ডিগ্রি লাভকারী মুফতি।

কর্মজীবন: মুফতি আবদুর রহমান (রাহ.) দেশে ফেরার পর পূর্ব এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্র আল-জামিয়া আল ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হযরত মুফতি আজিজুল হক (রহ.) এর আহ্বানে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়ে তাঁর কর্ম জীবনের শুভসূচনা করেন। সুদীর্ঘ ছয় বছরের মিশন শেষে ১৯৬৮ সালে তিনি আল জামিয়া পটিয়ায় প্রত্যাবর্তন করেন। সেখানে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত পুরোদমে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একাধারে জামিয়ার প্রধান মুফতি, সহকারী মহাপরিচালক ও শিক্ষা বিভাগীয় পরিচালকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দাওরায়ে হাদিসে সর্বোচ্চ কিতাব বুখারী শরীফের ১ম খণ্ডের পাঠদান করেন। আল জামিয়া পটিয়ার সহকারী পরিচালক থাকাকালে তিনি দেশব্যাপি একশ’ সদস্য বিশিষ্ট ইফতা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি দেশের প্রায় ১৮টি উত্তরাঞ্চলীয় জেলার সহস্রাধিক দ্বীনি প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত ‘তানযীমুল মাদারিস আদ্বীনিয়্যা বাংলাদেশ’ (উত্তরবঙ্গ) এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

Manual3 Ad Code

ইসলামী ব্যাংকিং এ অবদান মুফতি আবদুর রহমান (রাহ.) ইসলামি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিং-এর ক্ষেত্রেও অনন্য অবদান রাখেন। তিনি সুদভিত্তিক অর্থনীতির বিরুদ্ধে অতুলনীয় ভূমিকা রাখেন। ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরায় তিনিই সর্বপ্রথম ২০০২ সালে ইসলামি অর্থনীতি ও ইসলামি ব্যাংকিং বিভাগ চালু করেন। ইসলামি ব্যাংকিং ও অর্থনীতিকে এদেশের আলেম, ওলামা ও মাদরাসা পড়ুয়াদের মধ্যে বিস্তৃতির জন্য বেশ কয়েকবার আন্তর্জাতিক সেমিনারেরও আয়োজন করেন তিনি। ২০০৬ সালে ১৫ দিন ব্যাপি এক অর্থনৈতিক কর্মশালা ও সেমিনার আয়োজন করেন তিনি। এ কর্মশালা ও সেমিনার বাংলাদেশের আলেম ওলামাদের ইসলামি অর্থনীতি ও ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে বহুদুর এগিয়ে দেয়। এ বিষয়ে তাঁদের উৎসাহ ব্যাপকভাবেই বৃদ্ধি পায়।

Manual3 Ad Code

মুফতী আব্দুর রহমান (রাহ.) ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ১ম শরী‘আহ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। তিনি আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ও ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের শরী‘আহ সুপারভাইজরি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের শরী‘আহ সুপারভাইজরি কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আইসিবি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের শরী‘আহ আ্যাডভাইজার ছিলেন। সেন্ট্রাল শরীয়াহ্ বোর্ড ফর ইসলামী ব্যাংকস্ অব বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠালগ্ন (২০০১) থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেন্ট্রাল শরীয়াহ্ বোর্ডের প্রতিষ্ঠা চেয়ারম্যান মাওলানা উবায়দুল হকের মৃত্যুর পর ২২ জুলাই ২০০৮ সালে সেন্ট্রাল শরীয়াহ্ বোর্ডের উপ-নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত চেয়াম্যান হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। একই সাথে ২০০৪ সাল থেকে তিনি সেন্ট্রাল শরীয়াহ্ বোর্ডের ফিক্বহ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

তাঁর উদ্যোগে ২০০২ সালে ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকাতে পক্ষকালব্যাপি এক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামি অর্থনীতি ও ব্যাংকিং এ অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ একক ব্যক্তি হিসেবে ‘সেন্ট্রাল শরীয়াহ্ বোর্ড ইসলামী ব্যাংকিং অ্যাওয়ার্ড ২০০৭’ লাভ করেন। দ্বীনী অবদান: ১৯৬২ সালে তিনি উত্তরবঙ্গ গমন করেন। সেখানে জনসাধারণকে নিয়ে বহু মসজিদ ও মাদরাসা, মক্তব ও হেফজখানা প্রতিষ্ঠা করে নবপ্রজন্মের জন্য এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেন। সেখানকার সর্বজন পরিচিত ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্র আল জামিয়া কাসেমুল উলুম জামীল মাদরাসা হযরত ফকিহুল মিল্লাত এর সর্বাত্মক চেষ্টারই ফসল। ১৯৯১ সালে তিনি রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থান বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি ব্যতিক্রমধর্মী উচ্চ শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। নাম দেন মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী। এটি বর্তমানে পাকিস্তান,ভারত,বাংলাদশে উচ্চতর ইসলামী শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত।

Manual6 Ad Code

২০০৪ সালে তিনি বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় জামিআতুল আবরার নামে আর একটি প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন করেন। বছরখানেকের ভেতর প্রতিষ্ঠানটি একটি বৃহৎ শিক্ষাকেন্দ্রে রূপ নেয়। ফকিহুল মিল্লাত ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে তাঁর একটি সেবামূলক সংস্থা রয়েছে। এ সংস্থার মাধ্যমে তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসংখ্য মসজিদ, মাদরাসা, মক্তব, হেফজখানা প্রতিষ্ঠা করেন। বিদেশ ভ্রমণ: আরব বিশ্ব তথা দুবাই,বাহরাইন, কাতার ইত্যাদি রাষ্ট্র এবং ভারত ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে বড় বড় ইসলামি অর্থনৈতিক সেমিনারে তিনি যোগ দেন। এসব সেমিনারে ইসলামি অর্থনীতির উপর তাঁর গবেষণালব্ধ বিভিন্ন প্রবন্ধ খুবই সমাদৃত হয়।

মৃত্যু: মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ আলেম ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমান (রাহ.) ১০/১১/ ২০১৫ ইং তারিখে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৯১ বছর। মরহুমের নামাজে জানাযা বুধবার সকাল সকাল ১০টা ১০ মিনিটে শুরু হয় । ১০টা ১৫ মিনিটে তা শেষ হয়। জানাজা নামাজ পরিচালনা করেন মুফতি আরশাদ রাহমানি। তিনি মুফতি আবদুর রহমানের বড় ছেলে। এতে যোগ দেন অগণিত মানুষ।

 

তথ্য দাতা: মুফতি আবু নুহা মাক্কি

Manual2 Ad Code

Spread the love

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code