সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

মাওলানা শায়খ তৌহিদ আলী রহ. এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

March 13 2021, 04:13

Manual1 Ad Code

নাম :- নামঃ মাওলানা শায়খ তৌহিদ আলী রহ.

জন্ম / জন্মস্থান :- শায়খে ঝিগলী রহ. ১৯২৩ সালে মরহুম পীর মুহাম্মদ হুসেন আলী এর ঔরসে আখলুমা বিবির কোল আলোকিত করে সুনামগঞ্জ জেলার, ছাতক থানাধীন ভাঁতগাও ইউনিয়নের এক ঐতিহ্যবাহী গ্রাম ঝিগলীর এক সম্ভান্ত পারিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।

শৈশব কাল :-  তিনি যখন পড়া-লেখার বয়সে উপনীত হলেন। পিতা-মাতার কাছেই প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। ঈর্ষণীয় মেধা ও আগ্রহ থাকায় অতি অল্পদিনেই বিশুদ্ধভাবে কুরআনুল করীম তেলাওয়াত,অযু, নামায ও তাঁর পদ্ধতি,  বিভিন্ন দোয়া-দুরুদ, প্রাথমিক প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসাঈল আয়ত্ত করে নেন। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সূচনা হয় নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অত্যন্ত সুনামের সাথে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন।এবং মেধার সাক্ষর রাখেন।তারপর চলে যান বিশ্বনাথের দৌলতপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে এস এস সি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন।

শিক্ষা জীবন :-  সাধারণ শিক্ষায় তিনি মেট্রিক পর্যন্ত পড়ালেখা  করেন। কিন্তু তিনি এ ধাটার শিক্ষায় অাশ্বস্ত এবং তৃপ্ত হতে পারিলেন না। তবু্ও বড়দের অাদেশ ও বাবা মায়ের মন রক্ষার্থে  নিয়মিত স্কুলে যেতেন।ক্লাস করতেন। মনযোগ সহকারে পড়তেন। কিন্তু তাঁর হৃদয়ের গহীণে সব সময় ইলমে ওহীর শিক্ষা গ্রহনের অাকর্ষণ তরাঙ্গায়িত হতে থাকতো। তাঁর তপ্ত হৃদয়ের উষ্ণতার এ তরঙ্গমালা অনুভব করলেন তাঁরই প্রিয় শিক্ষক হাবিবুর রহমান বুহারী রহ.।তিনি শায়খে ঝিগলী রহ. এর মাতা পিতাকে পরামর্শ দিলেন,অাপনাদের ছেলেকে মাদ্রসায় ভর্তি করে দেন। তার পরামর্শেই ভর্তি করা হলো মাদ্রাসায়। তাঁর মাদ্রাসা শিক্ষা -জীবনের সূচনা হয় সুনামগঞ্জের প্রাচীন দ্বীনি বিদ্যাপীঠ,খলিফায়ে মাদানী রহ. মদফুনে মক্কী শায়েখে গাজীনগরী রহ. এর স্মৃতি বিজড়িত দারুল উলূম দরগাহপুর মাদ্রাসায়। দরগাহপুর মাদ্রাসায়  কিছু দিন পড়ালেখা করার পর বৃটিশ খেদাও  অান্দোলনের একজন বীর মুজাহীদ,শায়খে ঝিগলী রহ. এর খাছ উস্তাদ মাওলানা অাব্দুল মুছাব্বির  রহ.এর সাথে চলে যান পারকুল মাদ্রাসায়।সেখানে তিনি কাফিয়া পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। তারপর প্রিয় উস্তাদে মুহতারাম মাওলানা অাব্দুল মুছাব্বির রহ.  পরামর্শে ও তত্বাবধানে ভর্তি হন তখনকার সময়ের অন্যতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্টান দেউলগ্রাম মাদ্রাসায়। ফযিলত ১ম বর্ষ পর্যন্ত দেউলগ্রাম মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেন।

★দেওবন্দের পথেঃ ১৯৪৩ সনের দিকে দেওলগ্রাম মাদরাসার স্বনামধন্য শিক্ষক মাওলানা শাহাবুদ্দীন বানীগ্রামী রহ.ও মাওলানা মসদ্দর আলী রহ. সাহেবদ্বয়ের পরামর্শে পাড়ি জমান বিশ্বখ্যাত দ্বীনী বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেলবন্দে। যাওয়ার সময় এ দুই শিক্ষক শায়খে ঝিগলী রহ. এর হাতে একটি চিটি দেন শায়খুল আরব ওয়াল আজম সায়্যিদ মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী রহ.এর নামে। তিনি দেলবন্দ গিয়ে পৌছলেন। কিন্ত তখন ভর্তির নির্ধারিত সময় শেষ। সঙ্গত কারণেই মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ভর্তি করতে অপারগতা পেশ করেন। তিনি মাদানী রহ.এর সাথে সাক্ষাত করেন এবং তাঁর শিক্ষকদ্বয়ের দেয়া চিঠি মাদানী রহ.এর হাতে অর্পণ করেন। তখন মাদানী রহ. বললেন,ব্যাটা! আমাদেরতো ভর্তির নির্ধারিত সময় শেষ। তাই ভর্তির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। দেওবন্দে ভর্তি করা অসম্ভব। তুমি এক কাজ করো! মাযাহিরুল উলুম সাহারানপুর ভর্তি হয়ে যাও। সেখানে আমি সপ্তাহে দু-দিন বুখারী শরীফের দরস প্রদান করে থাকি। মাদানী রহ.এর নির্দেশে তিনি ভর্তি হয়ে যান সাহারানপুর মাদরাসায়। সেখানে মিশকাত ও দাওরায়ে হাদীস অত্যন্ত কৃতিত্ব ও সুনামের সাথে সম্পন্ন করেন। উল্লেখ্য,তখনকার সময়ে মাযাহেরুল উলূমের সদরে মুদাররিস ও শায়খুল হাদীস ছিলেন মাওলানা খলিল আহমদ সাহারানপুরী রহ.।
°
★আধ্যাত্নিক সাধনাঃ সাহারানপুরে দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করে আধ্যাত্নিক সাধনার জন্য চলে আসেন দারুল উলূম দেওবন্দে। মাদানী রহ.খেদমতে। তাঁর ইসলাহী খানকায়, আত্নিক সংশোধনাগারে। প্রায় দুবছর মাদানী রহ. এর খেদমত ও সংশ্রবে অবস্থান করেন। অত:পর মাদানী রহ.এর নির্দেশে চলে আসেন নিজ মাতৃভূমি বাংলাদেশে। আসার সময় মাদানী মহব্বত ও স্নেহের নিদর্শণ স্বরূপ একটি আরবী রিসালা ও জায়নামায হাদিয়া দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন,\”তৌহিদ আলী আমি করিমগঞ্জের একটি মাহফিলে মাওলানা লুৎফুর রহমান শায়খে বর্ণভী রহ. মাওলানা আব্দুল হক শায়খে গাজীনগরী রহ. ও তোমাকে সহ বিশেষ কয়েকজনকে খেলাফল প্রধান করবো। সেদিন তুমি সেই মাহফিলে উপস্থিত থাকবে।\” আরো বলেছিলেন, \”তৌহিদ আলী! তুমি নিজ দেশে গিয়ে তোমার দেশ ও জাতির কল্যাণের লক্ষে একটি দ্বীনী প্রতিষ্টান গড়ে তুলবে\”।
কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! সেদিন শায়খে ঝিগলী রহ.এর পিতা ভীষণ অসুস্থ থাকার কারণে করিমগঞ্জের সেই মাহফিলে উপস্থিত হতে পারেননি। মাদানী রহ.যখন করিমগঞ্জের মাহফিলে বললেন, তৌহিদ আলী সিলেটি কোথায়? তখন কায়িদুল উলামা শায়খুল আরব ওয়াল আজম সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী এর সুযোগ্য ও বিশেষ খলিফা হাফিজ মাওলানা আব্দুল করিম শায়খে কৌরিয়া রহ. বললেন,হযরত! তৌহিদ আলী সিলেটি তাঁর পিতা ভীষণ অসুস্থ থাকার কারণে আজ উপস্থিত হতে পারেননি। তখন মাদানী রহ. বললেন, আব্দুল করিম আপনি তাঁকে এই সংবাদ পৌছে দিবেন যে, আমি তাকে খেলাফত প্রদান করলাম।
মাদানী রহ. এর ইন্তেকালের পূর্বে তিনি আর কারো হাতে বয়আত হননি। তবে শায়খ কৌরিয়া রহ. এর সাথে সব সময় যোগাযোগ ও আত্নিক সম্পর্ক রাখতেন। নিজের পীর ও মুর্শিদ হিসাবে মানতেন।
মাদানী রহ. এর ইন্তেকালের পর তিনি শায়খে কৌড়িয়া রহ. এর কাছে বয়আত হন। বয়আতের কিছুদিন পর শায়খে কৌড়িয়া রহ. তাঁকে ২৭ রমজান সিলেট সুবিদবাজারস্থ সুলেমান খা মসজিদে খেলাফত প্রদান করেন।

Manual7 Ad Code

কর্ম জীবন :- কর্মজীবনঃ দেশে ফিরে প্রথমেই খলিফায়ে মাদানী শায়খ আব্দুল হক গাজীনগরী মদফুনে মক্কী রহ. এর স্মৃতি বিজড়িত সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনী বিদ্যাপীঠ দারুল উলূম দরগাহপুরে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ হন। এবং সেখানে জামে তিরমিযী শরীফসহ বিভিন্ন কিতাবের দরস প্রদান করেন। দারুল উলূম দরগাহপুরে ছিলেন অল্প কিছুদিন।  তারপর পিতার নির্দেশে চলে আসতে হয় নিজ গ্রামে।

অবদান :- অবদানঃ ১৯৪৮ সালের দিকে গ্রামে ফিরে এলাকাবাসীর অনুরোধে নিজ গ্রামের জামে মসজিদের ইমাম ও খতীব পদে নিযুক্ত হন। তবে শর্ত জুড়ে দেন। তা হলো- (এক) ইমাম মুয়াজ্জিনের উপর কেউ কোন ধরণের খবরদারী করতে পারবেনা। (দুই) ইমামতির বিনিময়ে আমি কোন ধরণের ভাতা গ্রহণ করবো না। তারপর থেকে একাধারে দীর্ঘ ২৮ টি বছর ঝিগলী জামে মসজিদের ইমামতির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আঞ্জাম প্রদান করেন।
তখনকার সময়ে ঝিগলীতে সুলাইমান খাঁ নামে একজন পীর সাহেব থাকতেন। বাড়ী ছিল ভানুগাছে। ঝিগলী জামে মসজিদের প্রতিষ্টাতা ছিলেন এই পীর সাহেব। এলাকার অধিকাংশ মানুষ ছিলেন এই পীর সাহেবের মুরিদ।  সকলে তাঁকে অনেক ভালবাসতেন। শ্রদ্ধা  করতেন। একদিন শায়খে ঝিগলী রহ. পীর সাহেবের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে জমায়েত করেন। এালাকাবাসীর কাছে মসজিদের দক্ষিণপাশে প্রাথমিকভাবে মক্তবাকারে একটি মাদরাসা নির্মাণের প্রস্তাব পেশ করেন। যা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয়। এভাবেই সূচনা বা গোড়াপত্তন হয় জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া ঝিগলী\’র।
°
মাদরাসা স্থনান্তরঃ সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম চলে যায় ছয় থেকে সাত বছর।  প্রথমবারের মত পুরো এলাকায় একটি মাত্র দ্বীনী শিক্ষাগার। অল্প দিনেই প্রচুর ইলমে দ্বীনি পিপাসুরা একত্রিত হতে থাকলেন। শ্রেণী বাড়লো! বৃদ্ধি পেলো ছাত্র-ছাত্রী! প্রয়োজন দেখা দিল সুপ্রশস্ত ও স্থায়ী একটু জায়গার। একটি প্রশস্ত ঘর নির্মাণের। সে লক্ষে জমা করলেন এলাকাবাসীকে। তাদেরকে জানালেন প্রিয় উস্তাদে মুহতারাম মাদানী রহ. এর সর্বশেষ নসিহতের কথা \” তৌহিদ আলী! তুমি নিজ দেশে গিয়ে তোমার দেশ ও জাতির কল্যাণের লক্ষে একটি দ্বীনী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে।\”
তাদের সামনে তুলে ধরলেন ইসলামী শিক্ষার গুরুত্ব ও ফযিলত।  মাদরাসার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা।
চাইলেন এলাকাবাসীর সাহায্য-সহযোগিতা। কামনা করলেন এলাকাবাসীর অনুমোদন।  তারপর সর্বসম্মতিক্রমে ১৯৫৬ সালের দিকে জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া ঝিগলী মাদরাসা স্থানান্তরিত হয়।
°
মসজিদ নির্মাণঃ শায়খে ঝিগলী রহ. এর পীর ও মুর্শিদ কায়িদুল উলামা হাফিজ মাওলানা আব্দুল করিম শায়খে কৌড়িয়া রহ.এর নির্দেশ দেন বাড়ির পাশে একটি মসজিদ নির্মাণের। কাল বিলম্ব না করে পাঁচ একর জমি মসজিদের নামে ওয়াকফ করে দেন ১৯৯৪ ইংরেজীতে পাঞ্জেগানা নামায আদায়ের জন্য নির্মিত হয় তিন গম্বুজ ও চার মিনার বিশিষ্ট একটি প্রবিত্র মসজিদ। পুরনো ঐতিহ্য ও গম্বুজে খাজরাজের স্মৃতি ধারণ করে ইট ও শুরকি দিয়ে নির্মাণ করা হয় মসজিদটিকে। শায়খে কৌড়িয়া রহ. ভিত্তি স্থাপন ও উদ্ভোধন করেন।

মৃত্যু তারিখ :- মৃত্যুঃ ২৬ শে বৈশাখ ১৪০৭ বাংলা মোতাবেক ৯ মে ২০০০ ঈসায়ী রোজ সোমবার ৭৭ বছর বয়সে লন্ডন সফররত অবস্থায় দুই ছেলে ও চার মেয়েসহ আমাদের অসংখ্য মুরিদান ও বক্তকে এতিম করে চলে যান না ফেরার দেশে। হে আল্লাহ তাঁর কবরকে তোমার নূরে নুরান্নিত করো। তোমার রহমতের শুভ্র চাঁদরে তাঁকে এবং তাঁর কবরকে আচ্ছাদিত করো। বেলা হিসাবে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করো। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামিন।

মোবাইল :- শায়খ তৌহিদ রহ. এর কনিষ্ট সাহেবজাদার মোবাইল নাম্বারঃ 01716242927

Manual8 Ad Code

তথ্য দানকারীর নাম :- মাওলানা আশরাফুল আলম। #ঠিকানা: মল্লিকপুর, ভীমখালী, জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ। #শিক্ষকঃ জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া ঝিগলী। ছাতক,সুনামগ।

Manual4 Ad Code

তথ্য দানকারীর মোবাইল :- 01719463045

Manual1 Ad Code

Spread the love

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code