সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

আল্লামা নূর উদ্দিন গহরপুরী রহ. এর জীবন ও কর্ম

October 16 2019, 09:53


Manual7 Ad Code

নাম: নূর উদ্দিন

জন্মঃ সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার শিওরখাল মোল্লাপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯২৪ সালে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন তিনি। তার পিতা মাওলানা জহুর উদ্দিন এবং মাতা ছুরেতুন্নেসা। তারা উভয়ই দ্বীনের খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। গহরপুরী শিশু বয়েসেই পিতাকে হারিয়ে এতিম হন। মায়ের আদর যতœ এবং দোয়া তাহার জীবনের পাথেয় হিসেবে কাজ করে।

Manual6 Ad Code

শিক্ষা জীবনঃ ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত নিজ পরিবারেই তার প্রাথমিক শিক্ষার শুরু। এক সময় তাকে স্থানীয় সুলতানীয়া মক্তবে ভর্তি করা হয়। এরপর তিনি ইছামতি মাদ্রাসা ও পুর্বভাগ জালালপুর মাদ্রাসায় কিছুদিন লেখাপড়া করেন। তৎকালিন সময়ে শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানীর (রহঃ) খলিফা বৃহত্তর সিলেটের বিখ্যাত বুযুর্গ বাঘার শায়েখ মাওলানা বশির উদ্দিনের যাতায়াত ছিল গহরপুরে। আলেম ও দ্বীনদার পরিবার হিসেবে গহরপুরীর বাড়িতেই তিনি যাতায়াত করতেন। একবার তিনি গহরপুরীর বাড়িতে আসলে শিশু নুর উদ্দিনকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আবেগে আপ্লুত মুহতারামা ছুরতুন্নিসা শায়খে বাঘার কাছে অভিবাবকত্ব নেওয়ার জন্য দাবি জানান।

Manual7 Ad Code

শায়েখ মহিয়ষী জননীর আবেদনে সাড়া দিয়ে শিশু নুর উদ্দিনকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে বাঘা মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। এর পর থেকে শিশু নুর উদ্দিন লেখাপড়ার পাশাপাশি হযরত শায়খে বাঘার খেদমতে নিয়োজিত থাকতেন। কিশোর বয়সেই বাঘার খাদিম হিসেবে তার পরিচয় ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তিনি হিফযুল কুরআন সমাপ্ত করেন। মনের ঐকান্তিকতা আর আল্লাহ তাআলার প্রদত্ত প্রখর মেধাকে কাজে লাগিয়ে তিনি ঘুমকে ত্যাগ করে শায়খ ঘুমানোর পর রাতে কুরআন মজীদ হিফজ করতেন। এক রাতে কি এক কারনে শায়খ সাহেব কিশোর নুর উদ্দিনকে শাসন করতে গিয়ে প্রহার করলেন। এরপর বিষয়টি শায়খের মনে দাগ কাটতে লাগল। তিনি আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না।

নুর উদ্দিনকে ডেকে পাঠালে দেখতে পান তার মুখে মৃদু হাসি, মনে কোন দুঃখ নেই, ক্ষোভ নেই। শায়খে বাঘা গভীর মমতায় অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন বালক নুর উদ্দিনের দিকে। তার ভবিষ্যত কল্যাণ চিন্তায় তার মন দুমড়ে কেঁদে উঠে। তিনি মহান আল্লাহর দরবারে তার জন্য বিশেষ মোনাজাত করেন। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে গহরপুরীকে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ ইসলামী বিদ্যাপিট দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। ইতিমধ্যে ভারত স্বাধীন হয়ে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। ভারত এবং পাকিস্থান। রেফারেন্ডারের মাধ্যমে সিলেট পুর্ব পাকিস্থানের সাথে যুক্ত হয়। গহরপুরী ১৯৫০ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে দাওরায়ে হাদিস ১ম বিভাগে ১ম স্থান অর্জন করেন।

দেওবন্দ থাকাকালিন অবস্থায় তিনি তার আদব-আখলাক ও জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে উস্তাদগনের মন জয় করেন। বিশেষত,উপমহাদেশের প্রখ্যাত শায়খুল হাদিস শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানী’র (রহঃ) নৈকট্য হাসিল করতে সক্ষম হন। ইলমে হাদিসের প্রতি ছিল তার বিশেষ অনুরাগ। ফলে দাওরা পাশ করে তিনি আরো এক বছর হাদিস ও ফিকাহ শাস্ত্র গবেষণায় অতিবাহিত করেন। শায়খুল ইসলাম মাদানী ছাড়াও তিনি দেওবন্দের যেসব জগৎ বিখ্যাত মনীষ দের শির্ষত্ব লাভ করেন তারা হলেন-ক্বারী তৈয়্যব (রহঃ), শায়খুল আদব মাওলানা এজাজ আলী আমরুহী (রহঃ), মাওলানা ইব্রাহিম বলিয়াভী (রহঃ), মাওলানা মেরাজুল হক (রহঃ), মাওলানা ফখরুল হাসান (রহঃ) মুরাদাবাদী। লেখাপড়ার প্রতি শিক্ষাজীবন ছাড়াই আজীবন তার গভীর মনোযোগ ছিল। দেওবন্দেই তিনি তার মেধার সাক্ষর রাখেন এবং সকলের দৃষ্টি আকর্ষনে সক্ষম হন। তিনি ফারিগ হওয়ার পরই মাদানী রহঃ এর হাতে বায়াত হন। আধ্যাত্বিক উন্নতি ও পরিশুদ্বি সাধনায় রত হন।

কর্ম জীবনঃ ১৯৫২ সালে স্থায়ী পীর ও উস্তাদ মাদানী (রহঃ) ও শায়খুল আদব এজাজ আলী (রহঃ) এর নির্দেশে মাওলানা গহরপুরীকে সরকারী শায়খুল হাদীস পদে বরিশালের পাঙ্গাসিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় প্রেরণ করা হয়। এর পূর্বে বরিশাল আলিয়া মাদ্রাসা থেকে শায়খুল হাদীস ছেড়ে দেওবন্দ কর্তৃপক্ষের আবেদন প্রেক্ষিতে গহরপুরীকে প্রেরণ করা হয় বরিশালে। এ নিয়োগ ছিল এক বিরল ঘটনা। সরকারী শায়খুল হাদীস পদের জন্য প্রেরনের ঘটনায় ইলমে হাদীসের পরিলক্ষতার বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি নিজে নিজে কোরআন শরীফ হিফজ করে বিস্ময় সৃষ্টি করেছিলেন। শায়খে বাঘা রমজানের খতমে তারাবির জন্য হাফিজ সাহেব তালাশের কথা বলেন। তিনি জানান যে ত্রিশ পারা তিনি মুখস্ত করেছেন। বাকি সাত পারা তিনি সাত দিনেই মুখস্ত করে নামাজ পড়িয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। একদা আল্লামা গহরপুরী (রহঃ) হাদীস পড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ উটে গিয়ে পার্শ্ববর্তী জমিতে দুটি সাপকে বেদম প্রহার করলেন। পরে সাপ মারার কারন জানতে চাইলে বললেন, ওরা দুটি জ্বীন, প্রতিদিন আমার কাছে পড়তে আসে। প্রায়ই ওরা পরস্পরে ঝগড়া করে। আজ কিছু বেশী ঝগড়া করেছে তাই তাদের বিচার করলাম।

Manual6 Ad Code

১৯৫৭ সাল পর্যন্ত পাঙ্গাসিয়ায় সুনামের সাথে শায়খুল হাদিসের দ্বায়িত্ব পালনের পর ২বছর বালিয়া মাদ্রাসায় শায়খুল হাদিস হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর তিনি তাঁর নিজ গ্রামে চলে আসেন। এবং গহরপুর জামেয়া প্রতিষ্টা করেন। এ প্রতিষ্টানটি ছিল ব্যতিক্রম ধারার। প্রথমে দাওরাইয়ে হাদিস এরপর মিশকাত বা ফজিলত জামাত এমনি করে অন্যান্য শ্রেণী খোলা হয়। প্রতিষ্টা কাল থেকেই তিনি মাদ্রাসার মোহতামিম ও শায়খুল হাদিসের দ্বায়িত্ব পালন করেন। তার এই প্রতিষ্টিত মাদ্রাসা থেকে হাজার হাজার আলেমে দ্বীন যোগ্যতার সাথে দেশে বিদেশে প্রতিষ্টা লাভ করায় তার সুনাম ও সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে দেশ হতে দেশান্তরে। ১৯৯৬ সালে দেশের সর্ববৃহৎ কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসীল আরাবিয়ার চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করা হয় এবং মৃত্যু অবধি তিনি এ গুরু দায়িত্ব সফল সাথে পালন করেন। তিনি পাকিস্তান আমলে রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা হিসেবে ১৯৭০ এর জাতীয় নির্বাচনে খেজুরগাছ প্রতীক নিয়ে অংশ গ্রহন করেন।
২০০৫ সালের ২৬ শে এপ্রিল তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল (৮১) বছর। তিনি চার স্ত্রী, একমাত্র ছেলে মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু ও ৪ মেয়েসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।

Manual6 Ad Code

Spread the love

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code