আশারায়ে মুবাশশরা এর পর শ্রেষ্ঠ সাহাবাগণের একজন হলেন আমীরুল মু’মিনীন হযরত মুয়াবিয়া রাঃ। হযরত আলী রাঃ এবং হযরত হাসান রাঃ এর সাথে সন্ধিচুক্তির পর তার খিলাফতের জমানায় ইসলামের উন্নতি সমৃদ্ধি সবচে’ বেশি হয়েছে। সাম্রাজ্যের পর সাম্রাজ্য মুসলমানদের পদানত হয়।
হযরত উসমান রাঃ এর শাহাদতের পর থেকে নিয়ে হযরত হাসান রাঃ এর সাথে সন্ধি পর্যন্ত ইসলামের যে বিজয় যাত্রা থমকে ছিল, তা মুয়াবিয়া রাঃ এর জমানায় নব উদ্যমে আবার শুরু হয়। পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে পরে ইসলামের বিজয় নিশান। তিউনিশিয়ার কায়রাওয়ান থেকে উজবেকিস্তানের বুখারা পর্যন্ত এবং ইয়ামান ও ইথিউপিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল ইসলামী হুকুমাত। হেযাজ, শাম, মিশর, ইরাক, জাযীরাতুল আরব, আরমানিয়া, পারস্য, খুরাসান এবং আমু দরিয়ার উপারের রাজ্যগুলো ছিল ইসলামী সালতানাতের অধীন। [দুয়ালুল ইসলাম, ইমাম যাহাবীকৃত, ৬০ হিজরী পরিচ্ছেদ-১/২৮]
মুয়াবিয়া রাঃ এর সময়কালে অসংখ্য জল ও স্থলভাগের বিজয় অর্জিত হয়। তার শাসনামলেই পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন হয়।
মুয়াবিয়া রাঃ এর নেতৃত্বে সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এবং তাবেয়ীগণের উত্তম আখলাক ও চরিত্র মাধুরিমা ইসলামের বিস্তৃতি এবং স্থায়িত্বের জন্য অনেক অবদান রাখে।
খিলাফতে রাশেদার জমানার পর আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ এর শাসনামলই ছিল ইসলামের ইতিহাসের সর্বোত্তম সময়। এ সময়ই পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়ে। ‘সমস্ত দ্বীনের উপর ইসলামকে বিজয়ী করার’ কুরআনী নির্দেশের বাস্তব ফসল প্রতিফলিত হয় এ স্বর্ণালী যুগেই।
মুয়াবিয়া রাঃ এবং উমাইয়াদের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ কেন?
হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর মৃত্যুর পর একের পর উমাইয়া বংশের শাসক আসতে থাকে। অবশেষে ১৩২ হিজরী মুতাবিক ৭৪৯ ঈসাব্দে বনু আব্বাসের আবুল আব্বাস সাফফাহ নামক একজন ব্যক্তি বনু উমাইয়ার শাসনব্যবস্থা খতম করে আব্বাসী খিলাফতের গোড়াপত্তন করেন।
একথা বলাই বাহুল্য যে, বনু আব্বাসীরা বনু উমাইয়াদের শক্তি সামর্থকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। বংশীয় গোঁড়ামী হেতু বনু আব্বাসীয়রা বনু উমাইয়াদের কঠোর বিরোধী ছিল। যেমন পরবর্তী শাসকের পূর্ববর্তী শাসকদের সাধারণতঃ বিরোধী হয়ে থাকে।
বিশেষ করে যখন আগের কোন শাসনব্যবস্থা ধ্বংস করে নতুন শাসনব্যবস্থা চালু হয়, তখন স্বাভাবিকভাবে পূর্ববর্তী শাসকের ভাল কাজগুলোকেও খারাপভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়। উত্তম কাজগুলোকে মন্দ করে দেবার প্রচেষ্টা করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে সকল ধরণের অভিযোগ-অপবাদ আরোপ করা হয়। সেই সাথে পূর্ববর্তী শাসকদের চরিত্র-আখলাক নিয়ে সত্যমিথ্যা সংবাদ ছড়ানো হয়। যার ফলে পূর্ববর্তী শাসকের প্রতি মানুষের মনে ঘৃণা জন্মায়। আর বর্তমান শাসকের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পায়। পুরো দুনিয়াব্যাপী রাজনৈতিক রাষ্ট্রগুগলোর শাসকগণ যার প্রকিষ্ঠ প্রমাণ। যা দিবালোকের ন্যায় সকলের কাছেই পরিস্কার।
নির্মম বাস্তবতা
আগের শাসকের প্রতি বর্তমান শাসকের বিরূপ ভাবাপন্ন হবার এ স্বাভাবিক ও বাস্তবতাই প্রতিফলিত হয়েছে বনু আব্বাসীয়দের শাসনামলে।
আব্বাসী খিলাফত শুরু হয়েছিল হিজরী দ্বিতীয় শতকে। আর সেই সময়কালেই সাধারণতঃ ইতিহাস সংকলন শুরু হয়েছে।
আর ইতিহাসবীদগণও উপরোক্ত মানসিকতার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন স্বাভাবিকভাবেই। এ কারণে পূর্ববর্তীদের ইতিকথাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে, মুয়াবিয়া রাঃ এর সময়কালের উত্তম কাজগুলোও খারাপ করে দেয়া হয়। তার কীর্তিমান কর্মকাণ্ডগুলোও কলংকযুক্ত করা হয়। তার ইসলামী এবং সামাজিক পদক্ষেপগুলোকে মন্দভাবে পেশ করা হয়। তার সময়কালের শ্রেষ্ঠ ও ঐতিহাসিক কাজগুলোকে ধামাচাপা দিয়ে এর মাঝে দোষ ও দূর্বলতা খোঁজে বের করা হয়।
শুধু তাই নয়, হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর উত্তম ও শ্রেষ্ঠ কাজগুলোকে এমনভাবে পাল্টিয়ে দেয়া হয় যে, তার আখলাক চরিত্র সম্পর্কে জনমনে বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হয়।
এমন সব ঘটনাবলী দিয়ে ইতিহাস ভরপুর করা হয়, যা দেখে হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ এর উপর অভিযোগের পাহাড় দাঁড় করানো যায়।
কতিপয় ইতিহাস রচয়িতা তার জমানার শাসকের সন্তুষ্টিলাভের আশায় তাদের পা চাটার পথকে বেছে নেন। শাসকের দৃষ্টিতে ভাল হয়ে পুরস্কার লাভের নিমিত্বে ইতিহাস রচনায় উপরোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে তারা রুটি রুজির ব্যবস্থা করে নেয়।
যেহেতু আব্বাসী খিলাফতের সময়কালে সাধারণতঃ ইতিহাস রচনা শুরু হয়। আর আব্বাসী শাসকেরা ভয়ানকভাবে উমাইয়া শাসকদের বিরোধী ছিল। তাই এ সময়কার ইতিহাস রচয়িতারা শাসককে খুশি করতে হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ এর অপবাদ ও অভিযোগের রসদ সরবরাহ করে। যার দ্বারা তারা শাসকদের সন্তুষ্টি ও পুরস্কার অর্জন করে দুনিয়া কামাই করে।
এর উল্টো সত্য ইতিহাস লিখে শাসকের রোষানলে পতিত হবার মত সৎসাহস অনেকেই প্রদর্শন করতে পারেননি।
বনু আব্বাসীয়রা ক্ষমতা দখলের পর কি পরিমাণ বর্বরতা ও হিংস্রতা প্রদর্শন করেছিল। যার বিপরীতে তাদের বিরুদ্ধে কলম ধরা ও উমাইয়া শাসকদের প্রশংসনীয় কাজগুলো ইতিহাস হিসেবে উপস্থাপন করা একজন লেখকের জন্য কতটা কঠিন ছিল তা দু’ একটি ঘটনা দেখলেই আমরা আন্দাজ করতে পারবো।
১
وَذَكَرَ فِي تَرْجَمَةِ مُحَمَّدِ بْنِ سُلَيْمَانَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ النَّوْفَلِيِّ قَالَ: كُنْتُ مَعَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَلِيٍّ أَوَّلَ مَا دخل دمشق، دخلها بالسيف، وأباح القتل فيها ثلاث ساعات، وجعل جامعها سبعين يوماً إسطبلاً لِدَوَابِّهِ وَجِمَالِهِ، ثُمَّ نَبَشَ قُبُورَ بَنِي أُمَيَّةَ فَلْمْ يَجِدْ فِي قَبْرِ مُعَاوِيَةَ إِلَّا خَيْطًا أَسْوَدَ مِثْلَ الْهَبَاءِ، وَنَبَشَ قَبْرَ عَبْدِ الْمَلِكِ بن مروان فوجد جمجمة، وكان يجد في القبر العضو بعد العضو، إلا هِشَامِ بْنِ عَبْدِ الْمَلِكِ فَإِنَّهُ وَجَدَهُ صَحِيحًا لَمْ يَبْلَ مِنْهُ غَيْرُ أَرْنَبَةِ أَنْفِهِ، فَضَرَبَهُ بِالسِّيَاطِ وَهُوَ مَيِّتٌ وَصَلَبَهُ أَيَّامًا ثُمَّ أَحْرَقَهُ ودقَّ رماده ثم ذره فِي الرِّيحِ،
ইবনে আসাকীর মুহাম্মদ বিন সুলাইমান বিন আব্দুল্লাহ নওফিলের জীবনীগ্রন্থে লিখেছেন যে, তিনি বলেছেন ‘আব্দুল্লাহ বিন আলী (আবুল আব্বাস এর সেনাপতি) প্রথম যখন দামেস্কে প্রবেশ করেন তখন আমি তাঁর সাথে ছিলাম। তিনি তরবারী হাতে সেখানে প্রবেশ করেন এবং তিন ঘন্টার জন্যে খুন-খারাবী ও গণহত্যা বৈধ করে দেন। সেখানকার জামে’ মসজিদ ৭০ দিন যাবত তাঁর উট-ঘোড়া ও অন্যান্য চতুষ্পদ জন্তুর আস্তাবল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এরপর তিনি উমাইয়াদের কবরগুলো খনন করেন। মুয়াবিয়া রাঃ এর কবরে একটি কালো সূতা ব্যতীত কিছুই পাননি। আব্দুল মালিক বিন মারওয়ানের কবর খনন করা হয়। সেখানে একটি মাথার খোল পাওয়া যায়। কোন কোন কবরে এক বা একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাওয়া যায়। তবে হিশাম বিন আব্দুল মালিকের লাশ পাওয়া যায় সম্পূর্ণ অক্ষত। নাকের অগ্রভাগ ছাড়া তাঁর শরীরের অন্য কোন স্থানে কোন দাগ কিংবা জীর্ণতার চিহ্নও পড়েনি। সেনাপতি আব্দুল্লাহ মৃত হিশামের লাশ পেয়ে ওই মৃত লাশকে চাবুক দিয়ে পিটিয়েছে। কয়েকদিন সেটিকে শূলিতে চড়িয়ে রাখে। তারপর আগুনে পুড়িয়ে ছাইগুলো বাতাসে উড়িয়ে দেয়। [আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-১০/৪৯, ১০/৪৫, ইফাবা-১০/৯৩]
শুধু তাই নয়, আরো কী করেছে?
قَالَ: ثُمَّ تَتَبَّعَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَلِيٍّ بَنِي أُمَيَّةَ مِنْ أَوْلَادِ الْخُلَفَاءِ وَغَيْرِهِمْ، فَقَتَلَ مِنْهُمْ فِي يَوْمٍ واحد اثنين وتسعين ألفاً عِنْدَ نَهْرٍ بِالرَّمْلَةِ، وَبَسَطَ عَلَيْهِمُ الْأَنْطَاعَ وَمَدَّ عليهم سماطاً فأكل وهم يختلجون تحته،
বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আব্দুল্লাহ উমাইয়া বংশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সন্তান-সন্ততিদের তথা পরবর্তী প্রজন্মের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। সে তাদেরকে খুঁজে খুঁজে বের করে এবং হত্যা করতে থাকে। একদিনে সে রামাল্লা নদীর তীরে তাদের ৯২ হাজার লোককে হত্যা করে। তাদের মৃত ও অর্ধমৃত দেহের উপর সে ন্যাকড়া বিছিয়ে দেয়। তার উপর পশমী দস্তরখান রেখে সে অনায়াসে খাওয়া দাওয়া করে। নীচে আহত, ক্ষত-বিক্ষত দেহগুলো কাতরাচ্ছিল, গড়াগড়ি খাচ্ছিল। [আলবিদায়া ওয়াননিহায়া-১০/৪৯, ১০/৪৫, ইফাবা-১০/৯৩]
এই ছিল বনু আব্বাসীয়দের অবস্থা। বনু উমাইয়াদের প্রতি ছিল তাদের ভয়ানক বিদ্বেষ এবং প্রতিশোধপরায়ণতা। যারাই উমাইয়াদের আত্মীয় ছিল বা তাদের পছন্দ করতো তাদের খুঁজে খুঁজে বের করে হত্যা করা হতো। শুধু হত্যা নয় চালানো হতো বর্বরতম নির্যাতনও।
এমন সময়ে কোন লেখক উমাইয়া শাসক মুয়াবিয়া রাঃ এর কীর্তিগাঁথা লিখবে, তার সাফল্য তুলে ধরে সত্য ইতিহাস উপস্থাপন করার সাহস দেখানো কি সম্ভব ছিল?
শুধু তাই নয়!
২
আব্বাসী খলীফা মামুনুর রশীদ বিষয়ে ইমাম যাহাবী রহঃ লিখেছেনঃ
سنة أحدى عشرة ومئتين
فيها أظهر المأمون التشيع وأمر بأن يقال خير الخلق بعد النبى صلى الله عليه وسلم على رضى الله عنه، وأمر بالنداء أن برئت الذمة ممن ذكر معاوية بخير (دول الاسلام-১/১৮৩)
২১১ হিজরীতে আব্বাসী খলীফা বাদশা মামুনুর রশীদ শিয়া হবার কথা প্রকাশ করেন। সেই সাথে সরকারীভাবে ঘোষণা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর সর্বোত্তম ব্যক্তি হলেন হযরত আলী রাঃ। এই ঘোষণাও দেন যে, যে ব্যক্তি মুয়াবিয়া রাঃ এর ব্যাপারে ভাল কথা বলবে, তার ব্যাপারে রাষ্ট্রের কোন যিম্মাদারী নেই। [দুয়ালুল ইসলাম, ইমাম যাহাবীকৃত-১/১৮৩]
শিয়াদের স্বীকৃতি
এসব ঘটনার সত্যতা প্রসিদ্ধ শিয়া ঐতিহাসিক মাসঈদী তার কিতাব ‘মুরাওয়াজুজ জাহাব’ গ্রন্থে বাদশা মামুনুর রশীদের আলোচনায় এভাবে উদ্ধৃত করেঃ
وفى سنة اثنتى عشرة ومائتين نادى منادى المأمون: برئت الذمة من أحد من الناس ذكر معاوية بخير أو قدمه على احد من أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم (مروج الذهب ومعادن الجوهر-৪/৩৪)
২১২ হিজরীতে বাদশা মামুনুর রশীদ ঘোষণা করায় যে, যে ব্যক্তি মুয়াবিয়া রাঃ এর কোন ভাল বিষয় উল্লেখ করবে, বা তাকে কোন সাহাবীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিবে তার ব্যাপারে রাষ্ট্র দায়িত্বমুক্ত। অর্থাৎ তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের নয়। [মুরাওয়াজুজ জাহাব, মাসঈদী শিয়াকৃত-৪/৩৪]
উপমহাদেশের প্রসিদ্ধ ইতিহাসবীদ আল্লামা শিবলী নুমানী রহঃ তার কিতাব ‘আলইনতিক্বাদ আলা তামাদ্দুনিল ইসলামী’ এর মাঝে ইসলামী ইতিহাস সংকললের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেনঃ
ثم ان هناك امر آخر وهو ان المؤرخين بامرهم كانوا فى عصر بنى العباس
ومن المعلوم أنه لم يكن يستطيع احد ان يذكر محاسن بنى امية فى دولة العباسيين فاذا صدر من احد شيء من ذالك فلتة كان يقاسى قائلها انواعا من الهتك والايذاء وخامة العاقبة وكم لنا من امثال هذه فى اسفار التاريخ الخ (الانقاد على كتاب التمدن الاسلامى-২৪)
স্মর্তব্য যে, ইসলামী ইতিহাসের ঐতিহাসিকগণ সাধারণতঃ আব্বাসী শাসনামলের। আর এতো জানা কথাই যে, আব্বাসী আমলে বনু উমাইয়াদের ভাল বিষয়গুলে বর্ণনা করার সাহস কারো ছিল না। কেননা, বনু উমাইয়াদের ভাল কিছু যদি কারো মাধ্যমে কদাচিৎও প্রকাশ পেতো, তাহলে তাকে নানাভিদ নির্যাতনের শিকার হতে হতো। সম্মানহানী ছাড়াও নানা ধরণের শাস্তি পেতে হতো। ইতিহাসের পাতায় এর অনেক নজীর পাওয়া যায়। [আলইনতিকাদ আলা কিতাবি তামাদ্দুনিল ইসলামী, আল্লামা শিবলী নুমানীকৃত-২৪]
পরিস্কার কথা যে, সরকারীভাবে এমন প্রকাশ্য ঘোষণা এবং কঠোর হুমকির পর ঐতিহাসিকগণ যে ইতিহাস রচনা করেছেন তাতে হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ এর দোষত্রুটিই বর্ণিত হবে। তাদের কাছে মুয়াবিয়া রাঃ এর আখলাকী গুণাবলী এবং ইসলাম ও জাতীয় খিদমাতের বর্ণনা পাওয়ার আশা রাখা অরণ্যে রোদন ছাড়া আর কী’ হতে পারে?
ফলে যা হবার তা’ই হয়েছে। সুবিধাবাদী-ভীতসন্ত্রস্ত লেখকেরা কলমের খোঁচায় ধামাচাপা দিয়েছেন হযরতে মুয়াবিয়া রাঃ এর কীর্তিমান জীবন। ইতিহসের নামে অসত্য আর অপবাদের জলোচ্ছাসে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে এ মহান সাহাবীর উজ্জ্বল দ্বিগ¦জয়ী খিদমাত।
তবে, খুবই অল্প সংখ্যক ঐতিহাসিক যারা রাষ্ট্রীয় এ জুলুমের পরোয়া না করে সত্য প্রকাশ করেছেন। তাদের সংখ্যা নিতান্তই হাতে গনা কয়েকজন। তাই ইসলামী ইতিহাস পাঠকগণ এ বাস্তব অবস্থা মাথায় রেখে ইতিহাস পড়া খুবই জরুরী। নতুবা বাস্তবতা বিবর্জিত ইতিহাস নামক এক ভাগাড়েই ঘুরপাক খেতে হবে।
মোটকথা হল, উপরোক্ত কারণে ইতিহাসের পাতায় হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ এর বিষয়ে অধিক পরিমাণ অভিযোগ পাওয়া যায়। আর বিদ্বেষীরা এ বিষয়গুলোও যাচাই ছাড়াই খুব প্রচার করেছে। এসব ছড়িয়ে এ মহান সাহাবী ও ইসলামের একনিষ্ট খাদিমের চরিত্রে কালিমা লেপন করে জাতির সামনে নোংরাভাবে পেশ করেছে।