সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

৩০শে মে দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী:কওমী মাদরাসা একান্নবর্তী একটি পরিবার

May 30 2020, 16:05

Manual1 Ad Code
মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ

আমাদের দেশে এক সময় বিশাল বিশাল পরিবার ছিলো, শতাধিক সদস্যের পরিবারে একই পাত্রে খাবার পাক হতো,সবাই মিলেমিশে খাওয়া দাওয়া করতেন বিধায় এধরণের পরিবারকে বলা হত এক+অন্ন= একান্নবর্তী পরিবার,একই অন্ন বা খাবার সবাই খেতেন। এধরণের পরিবার হতো এলাকায় অভিজাত ও অনন্য।
একান্নবর্তী পরিবার বর্তমানে লুপ্তপ্রায় হলেও আমাদের কওমী মাদরাসা সমুহ এধারা শুধু অব্যাহত রাখেনি,ঐতিহ্য কে করেছে আরও শানিত,এজন্যই কওমী অনন্য।
একান্নবর্তী পরিবারের সব সদস্য হতেন একই রক্ত সম্পর্কের,আর কওমী পরিবারের সকল সদস্য হন ঈমানী সম্পর্কের, একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যরা একই পাত্র থেকে মিলেমিশে খাবার গ্রহণ করেন নিজ পারিবারিক ঐতিহ্য রক্ষায়,কওমী পরিবারের সদস্যরা একই পাত্রে খাবার গ্রহণ করে দ্বীন-ইসলামের ঐতিহ্য রক্ষায়।

Manual1 Ad Code

অতি সংক্ষেপে কওমী পরিবারের কয়েকটি বৈশিষ্ট তুলে ধরছি।

★ কওমী পরিবার ইমাম আবু হানিফা রঃ এর স্বার্থক অনুসারী, আবু হানিফা শব্দের শাব্দিক অর্থ অত্যাধিক একনিষ্ঠ, কওমী সন্তানরাও আহলে সুন্নাতের নীতি আদর্শ বাস্তবায়নে অত্যাধিক একনিষ্ঠ।
তাইতো তাদের বলা হয়, মৌলবাদী,যারা ইসলামের মুল চেতনা একনিষ্ঠভাবে ধরে আছে যুগ যুগ ধরে।

Manual5 Ad Code

★ কওমী সন্তানরা দ্বীন-ইসলামের সীমান্ত রক্ষী,দেশের সম্পদ চোরাচালান ও অবৈধভাবে অন্যদেশের মালামাল দেশে আনা রোধকল্পে সীমান্ত রক্ষী যেভাবে সদাজাগ্রত বীর, কওমী সন্তানেরা ও দ্বীন ইসলামে নতুন সংযোজন (বেদাত) ও দ্বীন থেকে কিছু কাটছাঁট (মডারেট ইসলাম) রোধে সদা জাগ্রত বীর।

★ কওমী সন্তানেরা যে দেশেই বসবাস করে সে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে অগ্রনী ভুমিকা রাখেন ও রক্ষায় সচেষ্ট থাকেন, স্বাধীনতার চেতনা তাদের রক্তে বহমান,ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে তাদের পুর্বপুরুষ যে কুরবানী পেশ করেছেন, সে চেতনা ধারণ করে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের স্বাধীনতা রক্ষায় নিজ দেশের প্রেক্ষাপটে কওমী সন্তানরা আজও তৎপর। মুক্তিকামী জনতার কল্যাণে কওমী সন্তানেরা নিবেদিত, একথা কওমী বিদ্বেষীরা স্বীকার করতে বাধ্য।

Manual4 Ad Code

★ কওমী সন্তানেরা ভোগ করতে জানেননা,ত্যাগ করতে জানেন,বালাকোট,শামেলী,ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষায় ধর্মদ্রোহীদের চক্রান্ত রোধে শাপলা চত্বরে রক্ত দিয়েছে কওমী সন্তানেরা, প্রয়োজনে আরও কুরবানী দিবে,অপশক্তির সাথে আপোষ করবেনা,তাদের রক্ত ব্যবহার করে ভোগকারী মীরজাফরদের সময়েই জবাব দিবে, ইনশাআল্লাহ।

★কওমী সন্তানেরা দেশ -জাতির স্বার্থে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের সাথেও ঐক্য করতে পারে,ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে উলামায়ে দেওবন্দ এভাবেই শিক্ষা দিয়েছেন।
কওমী সন্তানেরা সংকীর্ণ নয়,বৃহত্তর স্বার্থে উদার।

★ কওমী সন্তানেরা নিজ পিতা মাতা ও শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করা,তাদের সেবাকে শুধু সৌজন্যতা আর কর্তব্য নয় এবাদত মনে করে, ছাত্র উস্তাদের এমন আত্মার আত্মীয়তা আর ও কোথাও পাওয়া যাবেনা,একথা অকপটে বলা যায়।

★কাওমী সন্তানের পরিচয় দিয়ে গিয়ে দারুল উলুমের ভুতপুর্ব মুহতামীম হাকীমুল ইসলাম আল্লামা ক্বারী মুহাম্মাদ তাইয়েব বলেন,কওমীরা দ্বীনী দিক থেকে মুসলমান, আক্বীদাগত দিক থেকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত,মাযহাবের দিক থেকে হানাফী,দর্শনের দিক থেকে আশআরী ও মাতুরীদি,মাশরাবের দিক থেকে সুফী,তরীকার দিক থেকে চিশতী ও নক্সবন্দী,চিন্তাধায় ওয়ালীউল্লাহী, মুলনীতির দিক থেকে কাসেমী,শাখাগত মাসআলার দিক থেকে রাশীদী,সামগ্রিক দিক থেকে মাহমুদী,এবং নিসবতের দিক থেকে দেওবন্দী,।
১৮৬৬ সালের ৩০শে মে প্রতিষ্ঠিত হয় দারুল উলুম দেওবন্দ, এই দেওবন্দই কওমী মাদ্রাসার কেন্দ্রবিন্দু। এখান থেকেই সারা বিশ্বে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কওমী মাদরাসা, হাকীমুল ইসলাম বর্নিত দিক গুলিই দেওবন্দ তথা কওমীদের ব্যাপক পরিচয়।
মুলত কওমী মাদরাসা নিছক কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়,একটি মানতাবাদী বৈপ্লবিক কেন্দ্র, একটি চিন্তাধারা,একটি চেতনার বাতিঘর, হেদায়াতের দ্রুবতারা,একটি দর্শন, একটি বিপ্লব, একটি ইলহামী দ্বীনী সূতিকাগার, হক ও হক্বানিয়াতের এক দুর্ভেদ্য দুর্গ এবং হেরার মশালবাহী এক মাকতাবে ফিকির।
পরিশেষে বলবো,
هر وقت سر بلند
ديوبند ديوبند
সর্বদা সুমহান
দেওবন্দ এরই নাম।
আল্লাহ আমাদের দেওবন্দের চেতনা ধারণও লালনের তাওফিক দিন।

লেখক:মুহাদ্দিস,জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজিরবাজার,সিলেট।

Manual8 Ad Code

Spread the love

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code