সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

মাওলানা সায়্যিদ আব্দুল মাজীদ (রহঃ) এর জীবন ও কর্ম

October 14 2019, 08:56

Manual2 Ad Code

নাম :- সায়্যিদ আব্দুল মাজীদ

জন্ম / জন্মস্থান :- আল্লামা সায়্যিদ আব্দুল মাজীদ (রহঃ) ১৮৯২ ইংরেজী সনের ৭ই ফেব্রুয়ারী মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানাধীন সোনারগাঁও (বলরামপুর) পীরের বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম পীর কোরবান আলী সাহেব। কবির ছন্দময় উক্তি যেন তাঁর বেলায় প্রযোজ্য- “কতলগ্ন বরষের তপস্যার ফলে এ ধরণী তলে আজি ফুটিল এ মাধবী”।

শৈশব কাল :- ভুমিকা :
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের প্রতি দয়াপর্বশ হয়ে আদমকুলকে সৎপথে পরিচালনার জন্য যুগে যুগে প্রতিটি গোত্রে ও দেশে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে নবী ও রাসুলকে পাঠিয়েছেন। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) হলেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। তাঁর পর আর কোন নবী বা রাসুলের আগমন হবে না। আর তাদের কাজ দুনিয়াতে জারী রাখার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত একদল মানুষকে আল্লাহপাক মনোনীত করেছেন, যারা নবী ও রাসুলদের উত্তরসূরী হিসেবে এ ধরাকে সুন্দরভাবে পরিচালনার চেষ্টা করেন। তাদের কষ্ট ও ত্যাগের বিনিময়ে পথভুলা মানুষেরা পেয়েছে সঠিক পথের সন্ধান। তাদেরকে আমরা অসাধারণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে মনে করি। প্রকৃতপক্ষে তারা হলেন আল্লাহর ওলী। তাঁরা সকল বাধা-বিপত্তির মুখে ছিলেন সত্যের পথে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় অটল। তারা হলেন নবী (সাঃ) এর প্রতিনিধি। আর যারা নবী (সাঃ) এর প্রতিনিধির আহ্বানে সাড়া দেবে তারাই হবে সফলকাম। নবী করীম (সাঃ) এর প্রতিনিধিগণের মধ্যে একজন হলেন, মুনাজিরে ইসলাম, যুগশ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক রাহ্বার আল্লামা সায়্যিদ আব্দুল মাজীদ (রহঃ).

🌷🌷 *নাম ও বংশ পরিচয়* :
—————————-
রাসুল (সাঃ) এর বিদায় হজ্জের মর্মষ্পর্শী আকুণ্ঠ বাণী, “ফাল ইয়ুবাল্লিগিশ শাহিদুল গায়িব” তোমরা যারা উপস্থিত, তারা অনুপস্থিতদের কাছে (সত্যের বাণী) পৌঁছে দেবে। তাঁর এই মর্মষ্পর্শী বাণীর প্রতি অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর আল্ ও আসহাব (পরিবার ও সাথীবর্গ) পৃথিবীর দিগ দিগন্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েন। তাদেরই একদল লোক মদীনা হতে ৭৩২ খৃষ্টাব্দে (বাগদাদ প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে) দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে বাগদাদ হিজরত করেন। সেখানে দীর্ঘকাল অবস্থানের পর তাদেরই কিছু লোক “দায়ী ইলাল্লাহ”। আনুমানিক ১২শ- শতাব্দির শেষ দিকে ইয়েমেন হয়ে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পার্শ্ববর্তী জাবাল শহরে বসতি স্থাপন করেন এবং সেখানে ব্যাপকভাবে দ্বীন প্রচার করতে থাকেন। সেখানে কিছুকাল অবস্থানের পর
শাহ্ মহররম আলী (রহঃ) এর নেতৃত্বে আনুমানিক ১৬শ শতাব্দির মধ্যভাগে তাদেরই একদল লোক দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের তিস্তার নিকটবর্তী ভাওয়াল অঞ্চলে হিজরত করেন। সেখানে কিছুদিন অবস্থানের পর বলরামপুরের আলী খাঁ ও তৎকালীন রাজা হরিনারায়নের বিশেষ অনুরোধে বলরামপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং এখানে ব্যাপকভাবে দ্বীন প্রচার করতে শুরু করেন। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই বহু সংখ্যক অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করে হেদায়াত প্রাপ্ত হয় এবং এলাকা থেকে বিভিন্ন প্রকার কুসংস্কার , শিরক, বেদআ’ত দূরীভূত হয়।
দ্বীন প্রচারে আগত সায়্যিদ শাহ্ মহররম আলী (রহঃ)এর ৪র্থ বংশ ধারায় পীর কোরবান আলী সাহেবের ঔরসে তাঁর প্রথম সন্তান আল্লামা সায়্যিদ আব্দুল মাজীদ (রহঃ)।

Manual8 Ad Code

শিক্ষা জীবন :- 🌷🌷 *বাল্য ও শিক্ষা জীবন* :
—————————–
মাত্র ছয় বৎসর বয়সেই তিনি মাতৃহারা হয়ে পিতার তত্ত্বাবধানে বেড়ে উঠেন। প্রাথমিক শিা তিনি তাঁর পিতার কাছ থেকে গ্রহণ করে বাড়ীর পার্শ্ববর্তী একটি স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণী সমাপ্ত করেন। তারপর তিনি সিলেট আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন এবং কামিল (টাইটেল) পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।
আনুমানিক ১৯১৬ ইংরেজী সনে তৎকালীন আসাম বোর্ডের অন্তর্গত সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল (টাইটেল) পরীক্ষা দিয়ে বোর্ডে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার লাভ করেন।
এরপর তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতা আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন এবং সেখানে বিভিন্ন বিষয়ের উপর পড়াশুনা করে পারদর্শিতা অর্জন করেন। কলকাতা থাকা কালে তিনি বেশ কয়েকবার দেওবন্দ মাদরাসা সফর করেন। কুতবুল আলম হুসাইন আহমদ মাদানী (রহঃ)সহ আরো অনেকের সাথে তাঁর বেশ সুসম্পর্ক গড়ে উঠে।
তৎকালীন সময়ের দেওবন্দের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের কাছ থেকে তিনি আধ্যাত্মিকতা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও ইলমে দ্বীনের বিশেষ যোগ্যতা হাসিল করেন।

💐💐 *সহপাঠী ও সাথীবৃন্দ* :
—————————-
তাঁর ছাত্র জীবনের বিশেষ সাথীদের মধ্যে রয়েছেন, হযরত মাওঃ শামসূল হক ফরিদপুরী (রহঃ), ফখরে বাঙ্গাল মাওঃ তাজুল ইসলাম (রহঃ), হযরত মাওঃ আব্বাস আলী সাহেব শায়খে কৌড়িয়া (রহঃ) প্রমুখ।

💐💐 *শিক্ষকতা* :
————–
কলকাতা আলিয়া মাদরাসা থেকে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পর প্রথমে করিমগঞ্জের একটি মাদরাসায় কিছু দিন শিক্ষকতা করে সিলেটের মোগলা বাজারের নিকটবর্তী দাউদপুর মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। সেখানে তিন বৎসর শিক্ষা দানের পর তিনি শ্রীমঙ্গল হাইস্কুলে হেড মাওঃ পদে নিযুক্ত হন।
কিন্তু সেখানে বেশীদিন শিক্ষকতা করেননি।
কারণ, ইলমে ওহীর অমীয় সুধা শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ ও কাসেম নানুতবী (রহঃ) এর চিন্তা-চেতনা তাঁকে ভাবিয়ে তুলে। তিনি আসহাবে সুফফার আদলে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে নিজ বাড়ীতে চলে আসেন।

কর্ম জীবন :- 🌷🌷*বিবাহ শাদী ও সন্তান সন্ততি:
—————————–
ব্যক্তি জীবনে তিনি দুটি বিবাহ করেন।
তিনি ধর্মপুরের বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী,সমাজপতি,
হাজী ইয়াকুব উল্লাহ সাহেবের বড় মেয়ের সাথে
প্রথম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তীতে আরো একটি বিবাহ করেন। ১ম স্ত্রীর পক্ষে তার এক মেয়ে ও তিন ছেলে সন্তান ছিলেন : যথাক্রমে :(১) মাওলানা ইলিয়াস আহমদ রহ. (২)আল্লামা খিজির আহমদ রহ. (৩)মাওলানা ডা :শিব্বির আহমদ রহ.(৪)আসমা বেগম।
২য় স্ত্রীর পক্ষে এক মেয়ে -মোছা:মাদীনা জান্নাত (জীবিত)
এছাড়া তার বংশ পরম্পরায় অসংখ্য-পঞ্চাশের ও বেশী আলেম হাফেজ ক্বারী, মুফতি মুহাদ্দিস রেখে যান।

Manual8 Ad Code

🎤📒 *রাজনৈতিক অবদান * :
—————————–
রাজনৈতিক ময়দানে তাঁর সরব উপস্থিতি ছিল। তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯১৯ সালে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ প্রতিষ্ঠার পর তাতে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি তৎকালীন মৌলভীবাজার মহকুমা (বর্তমানে জেলা) এর জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতির দায়িত্ব দীর্ঘদিন পালন করেন।
মৌলভীবাজারের কুসুমবাগে তাঁর সভাপতিত্বে কুতবুল আলম আল্লামা সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী (রঃ) একাধিকবার প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।

✒✒ *সাহিত্য ও লেখালেখি* :
—————————–
তিন ছিলেন একজন বিদগ্ধ সাহিত্যিক ও কবি। শাহ আব্দুল ওয়াহ্হাব চৌধুরী , শাহ শীতালং, শাহ ইয়াছিন, শাহনুর প্রমুখ মরমী সাধক ও কবিদের মত তিনিও ছিলেন একজন শরীয়তপন্থী উচ্চ শিক্ষিত আলেম, মরমী কবি ও সাহিত্যিক। সিলেটি লোকসাহিত্যে তাঁর বেশ দখল ছিল। তিনি শরীয়তের আলোকে অনেক গান-কবিতা রচনা করেছেন।
তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে, বয়ানুল ঈমান, আশিকনামা, রতিবিধি ইত্যাদি। এছাড়া উর্দু সাহিত্যেও তার যথেষ্ট দখল ছিল। তিনি উর্দুতে অনেক মানপত্র, প্রশংসা কাব্য রচনা করে গেছেন। ১৯৯১ সালে সিলেট স্থানীয় রেডিও/বেতারে সিলেটি লোকসাহিত্যের উপর লেখা তার কবিতার উপর আলোকপাত করা হয়।

🌹 *আধ্যাত্মিক জীবন:* 🌹
————————–
আরেফ বিল্লাহ আল্লামা আব্দুল মাজীদ (রঃ) এর পুরো জীবনটাই যেন আধ্যাত্মিকতার এক উপাখ্যান। শৈশবকাল থেকেই চাল-চলন কার্যাদী পরিশুদ্ধভাবে শরীয়ত মোতাবেক ছিল। আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকার এক নিয়মিত অভ্যাস ছিল।

নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ ও জিকির আয্কার করতেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন খুবই পরহেজগার, তাকওয়াবান। তিনি যাচাই-বাছাই ছাড়া কারো হাদিয়্যা দাওয়াত গ্রহণ করতেন না। তাঁর আধ্যাত্মিকতার সংস্পর্শে এসে হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হয়েছে। অসংখ্য মানুষ পেয়েছে সঠিক পথের সন্ধান। তিনি পায়ে হেঁটে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে সর্বস্তরের জনতাকে আহ্বান জানাতেন দ্বীনের পথে।
তার এই মেহনতের ফলে এলাকার মানুষ দ্বীন ইসলামের দিক থেকে সামগ্রিকভাবে উপকৃত হয়েছে। বহু সংখ্যক আলেম ওলামা তৈরী হয়েছে, যারা বিভিন্ন এলাকায় মাদরাসা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে দ্বীনের খেদমত চালিয়ে যাচ্ছেন।

অবদান :- 💐💐 *মাদরাসা প্রতিষ্ঠা* :💐
———————-
রহমতে দু’জাহান রাসুল (সাঃ) যখন আল্লাহ প্রদত্ত ইলমে ওহীর অমীয় সুধা তৃষ্ণার্ত সাহাবাগণের মাঝে বিলিয়ে দিতে থাকেন। তখন গঠিত হয় আসহাবে সুফফার সেই মাদরাসা।
তিনি হুবহু এরই অনুকরণে পিতার সাথে পরামর্শক্রমে বাড়ীর বাংলা ঘরে আসহাবে সুফফার আদলে একটি মাদরাসার গোড়া পত্তন করে দ্বীনের আলো প্রজ্জ্বলিত করেন।

বাতিলের চৌদেয়ালে আবদ্ধ নিষ্পেষিত মানবাত্মা যখন মুক্ত আবহাওয়ায় শেষ নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য উদগ্রীব, তখন আলোর দিশারী আল্লামা সায়্যিদ আব্দুল মাজীদ (রহঃ) এর সুনিপুন কৌশলে বাতিলের চৌদেয়াল তছনছ হয়ে যায়। চলতে থাকে তাঁর মিশন, তা’লীম- তাদ্রীস, কিছু দিনের মধ্যেই তাঁর সুনাম চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
ছাত্ররা এসে ভীড় জমাতে থাকে। জায়গা সংকুলান না হওয়াতে তিনি তাঁর শ্বশুর ধর্মপুর-নিবাসী বিশিষ্ট দ্বীনদরদী, সমাজপতি, আলেমভক্ত হাজী ইয়াকুব উল্লাহ সাহেবের সাথে পরামর্শ করলে তিনি মাদরাসাটি মুন্সিবাজারে স্থানান্তরিত করার আবদার করেন।
হাজী ইয়াকুব উল্লাহ সাহেব মসজিদ, ঈদগাহ ও মাদরাসার জন্য হাজী বরগুদা আলী সাহেবের সাথে পরামর্শক্রমে কিছু জায়গা বরাদ্দের ব্যবস্থা করেন। এতে এলাকার বিশিষ্ট মুরব্বিয়ানদের সাথে পরামর্শক্রমে উক্ত জায়গার উপর ১৯২৯ সালে তিনি বাইতুল উলুম নামে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন।
বর্তমানে তা মুন্সিবাজার মাদরাসা নামে পরিচিত। মাদরাসাটি একটানা ৭ বৎসর চলতে থাকে, পরে বৈশ্বিক পট পরিবর্তন ও বৃটিশসৃষ্ট কিছু দালাল বিদআতপন্থী আলেমদের বিরুধীতার কারণে মাদরাসাটি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক বৎসর বন্ধ থাকার পর পুনরায় ১৯৪০ সালে রহিমপুর নিবাসী মাস্টার কবি আশরাফ সাহেবের সহযোগিতায় তিনি দ্বিতীয় বার মাদরাসা চালু করেন। কিছুদিন পর আবার মাদরাসাটি বন্ধ হয়ে যায়।

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর মাদরাসাটি তৃতীয় বারের মত চালু করেন হযরতের ২য় ছেলে মাওঃ খিজির আহমদ সাহেব।
দুই বৎসর পর আবার মাদরাসা বিরোধীদের প্রভাবে বন্ধ হয়ে যায়। পরে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ওলামাদের পরামর্শক্রমে মুন্সীবাজারের মাদরাসাটি মওকুফ অবস্থায় রেখে বলরামপুরে নিয়ে আসা হয়।
১৯৫৩ সালে আব্দুল মাজীদ (রহঃ) ও তাঁর ছোট দুই ভাই যথাক্রমে মাওঃ আং মান্নান ও আঃ করিম (রহঃ) এর ওয়াকফকৃত আড়াই পোয়া (১৯ শতক) ভূমির উপর শায়খে বাঘা, শায়খে বর্ণভী, শায়খে গৌড়করণী, মাজলুম শহীদ শেরপুরী ও শায়খে মাড়কোণী (রঃ) সহ আরো অনেক বুজুর্গানের দোয়ার মাধ্যমে মাদরাসাটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপে রূপান্তরিত হয়।
আব্দুল মাজীদ (রঃ) উক্ত মাদরাসার আমৃত্যু মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করে যান। তাঁর মৃত্যুর পর মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে : মাওঃ আং মান্নান (রঃ), মাওঃ পীর মাহমুদুল হাসান (রহঃ), খলিফায়ে মদনী শায়খ মুহাম্মদ আলী বলরামপুরী (রঃ), মাওঃ আব্দুল জলীল সাহেব (বর্তমান মুহতামিম)।

মুন্সীবাজার মাদরাসাটি বেশ কয়েকবার বন্ধ হয় চালু হয়। সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে গুণীজন আলেম ওলামাদের পরমার্শ, এলাকাবাসীর সহযোগিতা ও রহিমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিশিষ্ট সমাজপতি আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম সাহেব কর্তৃক মাদরাসা ভবন দান ও অর্থায়নের মাধ্যমে মাওঃ আব্দুল হক সাহেবকে মুহতামিম নিযুক্ত করে মাদরাসাটি পঞ্চম বারের মত চালু করা হয়।

বর্তমানে মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করছেন মাওঃ আব্দুল গফ্ফার সাহেব।

সায়্যিদ আব্দুল মাজীদ (রঃ) প্রতিষ্ঠিত দুটি মাদরাসাই (বলরামপুর ও মুন্সীবাজার মাদরাসা) বর্তমানে দাওরায়ে হাদীস (তাকমীল) পর্যন্ত উন্নীত হয়েছে। সেখান থেকে পড়াশুনা করে শতশত আলেম উলামা বিভিন্ন এলাকায় দ্বীনের খেদমত চালিয়ে যাচ্ছেন।

🌷🌷 *তার হাতে গড়া শিষ্যবৃন্দ* :
———————————-
শাইখুল হাদীস মাওঃ মকবুল হোসাইন সাহেব, শাইখুল হাদীস মাওঃ বদরুল আলম শায়খে রেঙ্গা (রঃ), শাইখুল হাদীস মাওঃ ওয়ারিছ উদ্দিন হাজীপুরী (রঃ), মাওঃ খিজির আহমদ সাহেব, শাইখুল হাদীস মাওঃ যয়নুল আবেদীন সাহেব, শাইখুল হাদীস মাওঃ আঃ বারী সাহেব ধর্মপুরী,
খলিফায়ে মদনী হযরত মাওঃ মুহাম্মদ আলী সাহেব শায়খে বলরামপুরী (রঃ), মাওঃ মাহমুদুল হাসান পীর সাহেব বলরামপুরী (রঃ), মাওঃ ইব্রাহীম আলী মুহাদ্দিসে কটারকোণী (রহঃ), মাওঃ সিরাজুল ইসলাম তরফী (রঃ), মাওঃ আঃ মান্নান (রঃ), মাওঃ ইসমাঈল আলী সাহেব, মাওঃ ক্বাসিম আলী (রঃ) প্রমুখ।ক্বারী তোফায়েল আহমদ,হাফেজ মাওলানা মাওসুফ আহমদ হা:ইসহাক আহমদ সাহেব প্রমুখ।

মৃত্যু তারিখ :- 🌷💐 *ইন্তেকাল* :🌺🌻 ————– নশ্বর এই পৃথিবীতে আমরা কেউই চিরস্থায়ী নই। প্রকৃতির আমোঘ নিয়মে একদিন আমাদের এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। পবিত্র কোরআনের ভাষায় “প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ উপভোগ করতে হবে”, নবী রাসুল, পীর-ওলী কেউই এ ধারা থেকে মুক্ত নন। এই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৪ ইংরেজীর ১৩ই মার্চ আল্লামা সায়্যিদ আব্দুল মাজীদ (রঃ) মাদরাসার বাৎসরিক জলসায় মাগরিবের পূর্বে স্বাভাবিক অবস্থায় ইন্তেকাল করে জান্নাতবাসী হন। তার পরলোক গমনের ঘটনাটি ছিল অত্যন্ত অলৌকিক, তিনি বৎসর খানেক আগ থেকেই তাঁর ভক্ত-মুরীদানকে বলতেন আপনারা দোয়া করবেন আল্লাহ যেন আগামী জলসায় আমাকে পরলোক গমন করান। জলসার দিন দুপুর থেকে দেশের সেরা আলেম-ওলামা মাহফিলে উপস্থিত হতে থাকেন। মাওঃ লুৎফুর রহমান বর্ণভী, মাওঃ বশীর আহমদ শায়খে বাঘা (রঃ), মাওঃ নুরুল হক শায়খে ধরমন্ডলী (রঃ), হাফিজ আং খালিক মাড়কোনী (রঃ) সহ দেশের শীর্ষস্থানীয় আরো অনেকেই উপস্থিত হন এবং তারা একসাথে আছরের জামাত আদায় করেন। আছরের পর শায়খে বাঘা (রঃ) এর সভাপতিত্বে মাওঃ শরফউদ্দিন শায়খে ভেড়াখালী (রঃ) এর বয়ান শেষে দোয়া চলাকালীন সময়ে তিনি বলেন হযরত দোয়া করেন আল্লাহ যেন আমাকে এই মুহুর্তে কবুল করে নেন আর বুজুর্গান আমার জানাজা পরে যান। দোয়া শেষ হওয়ার পূর্বেই তাঁকে স্টেইজ থেকে নামানো হলে তিঁনি স্পষ্ট ভাষায় “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” উচ্চারণ করে হাসিমুখে জান্নাতের পথে চলে যান। এদিকে দোয়াও শেষ হয়ে যায়। শায়খে বাঘা (রঃ) চিৎকার করে বলতে থাকেন আল্লাহর ওলীগণ এভাবেই সহজে দুনিয়া থেকে চলে যান, উনি যে আল্লাহর ওলী তাতে কোন সন্দেহ নেই। সারা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্ত-মুরীদান পঙ্গপালের ন্যায় ছুটে আসতে থাকে। পরিশেষে উক্ত মাহফিলেই তাঁর জানাযার সালাত আদায় করে তাঁর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। আমীন

Manual5 Ad Code

তথ্য দানকারীর নাম :- মাহফুজ আহমাদ* 🔻 তাকমীলঃ জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ ঢাকা। ইফতাঃ মারকাজুল উলূম আল্ ইসলামিয়া না’গঞ্জ, ঢাকা 🔻ফাযিল বি.এ (অনার্স) আল হাদীস এ্যান্ড ইসলামিক ষ্টাডিজ (ষ্টাডিং) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া 🔻হায়ার ডিপ্লোমা ইন এরাবিক ল্যাংগুয়েজ ইসলামী ইউনিভার্সিটি মাদীনা মুনাওয়ারা সৌদিআরব মোবা: ০১৭২৮-৯৮৭৫০০, ০১৮১৬-৩২৭৬৩৭

তথ্য দানকারীর মোবাইল :- ০১৭২৮৯৮৭৫০০

Manual5 Ad Code

Spread the love