সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া হামিয়ুচ্ছুন্নাহ মেখল হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

October 07 2019, 06:35

Manual1 Ad Code

প্রতিষ্ঠানের নাম :- আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া হামিয়ুচ্ছুন্নাহ মেখল (প্রকাশ হুজুর বাড়ি মাদরাসা) হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা :- গ্রাম: পূর্ব মেখল, ডাক: মেখল, থানা হাটহাজারী, জেলা: চট্টগ্রা।

প্রতিষ্ঠা কাল :- ১৯৩১ ইংরেজি

প্রতিষ্ঠাতা :- মুসলেহে উম্মাত মুফতী আজম মুফতী ফয়জুল্লাহ রহ.

প্রতিষ্ঠাকালিন মুহতামিম :- মুসলেহে উম্মাত মুফতী আজম মুফতী ফয়জুল্লাহ রহ.

প্রতিষ্ঠাকালিন শিক্ষাসচিব :- মাও. আজিজুল হক বড় হুজুর রহ.

প্রতিষ্ঠাকালিন শিক্ষকবৃন্দ :- মুফতী আজম ফয়জুল্লাহ রহ.
প্রতিষ্ঠাকালিন সময়ে উনি একায় দরস দিন। কিছুদিন পরে উনার ছাত্ররা দরস দিতেন।

প্রতিষ্ঠাকালিন জামাত সংখ্যা,বর্তমান সমাপনী জামাত / মাদরাসা দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত হলে্ এর উদ্বোধনীর সন :- গতানুগতিক কোন জামাত ছিল না। পরবর্তীতে শরহে জামি বর্তমান হেদায়া।

প্রতিষ্ঠাকাল থেকে চলমান সময় পর্যন্ত কৃতি শিক্ষার্থীর নাম, তাদের বর্তমান সামাজিক- অবস্থান :- আল্লামা নোমান ফয়জী দা.বা. বর্তমান পরিচাল। মাও. হিফজুর রহমান দা.বা. প্রতিষ্ঠাতা জামিয়া আবু বকর ঢাকা। মুফতী আব্দুল হামীদ. মুফতী রাশেদুল ইসলাম, মুফতী আবু সাঈদ, মুফতী সাইদ আহমদ দা.বা. উনারা হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষ। মাও. জাকারিয়া নোমান ফয়জী দা.বা. বিশিষ্ট লেখক, সমাজ সেবক ও মানবাধিকার কর্মী । মাও. নুরুল আমিন দা.বা. সহকারী পরিচালক ফরিদাবাদ মাদরাসা প্রমুখ।

Manual1 Ad Code

অত্র অঞ্চলের মানুষকে নিরক্ষরতা দূরিকরণে মাদরাসার ইতিবাচ ভূমিকা, মানুষের সামাজিক সাংস্কৃতিক দৈনতার পরিবর্তনে প্রতিষ্ঠানের অবদান :- পুরো এলাকা ছিল ঘোর অন্ধকা। কবর পূজা আর বিদআতের ছড়াছড়ি। আলহামদুলিল্লাহ ছাত্রদের মেহনতের ফলে পুরো এলাকায় একটা দ্বীনি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছর সারাদেশের তুলনায় অত্র এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি লোক দাওয়াতে তাবলীগে বের হোন।

মাদরাসার স্বর্নোজ্বল ইতিহাস :- হাবীব আনওয়ার:সময় তখন বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে। চারদিক ঘোর অন্ধকার। শিরক-বিদআত, জুয়া, মদপান, সন্ত্রাস-লুটতরাজ, তথা সর্বপ্রকার নির্লজ্জতায় লিপ্ত পুরো সমাজ। দ্বীনের নামে চলছিলো ভণ্ডামি। মাজারপূজা আর পীরপূজায় সবাই মত্ত। নিত্যদিন নতুন নতুন মনগড়া ফতুয়ার আভির্ভাবে অতিষ্ঠ দ্বীনপ্রিয় মানুষগুলো।
তখন সাধারণ মানুষগুলোকে সঠিক পথের দিশা দিতে ছুটে চলছেন একজন দরদী মানুষ। মানুষকে বুঝাতে লাগলেন সুন্নাত-বিদয়াতের পার্থক্য। শিখালেন নিত্যপ্রয়োজনীয় মাসআলা। তিনি হলেন, মুফতী আজম ফয়জুল্লাহ রহ.।

Manual2 Ad Code

সমাজ সংস্কারে তার দিন কাটতে লাগলো। সময়ের সাথে সাথে মুফতী আজমের বয়সও বাড়তে লাগলো।সেই সাথে বেড়ে গেল উম্মাহর চিন্তা। কীভাবে এই মানুষগুলোকে আলোর পথে আনা যায়! সঠিক পথে চালানো যায়!
এক সময় তিনি হাটহাজারী মাদরাসার খেদমত ছেড়ে নিজ বাড়ি মেখল চলে এলেন। এলাকাতে মেহনত শুরু করে দিলেন। সকালে কিছু চিড়া-গুড় নিয়ে বের হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দাওয়াত ও বয়ানের মাধ্যমে দ্বীনের বিষয়গুলো বুঝাতে লাগলেন। এ দিকে হুজুরের ইলমী যোগ্যতার সুনাম সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ায় ইলম পিপাসু তালেবে ইলমরা দল বেঁধে হুজুরের কাছে ভীড় জমালো। তারা দু’চার দিন অবস্থান করে আবার ফিরে যেতো। এভাবে অনেকে এসে সারাদিন ইলম শিখে, রাতে আশেপাশের মসজিদগুলোতে অবস্থান করতো। ক্রমেই ছাত্রসংখ্যা বাড়তে লাগলো। তখন হুজুর মুরুব্বিদের সাথে পরামর্শ করে ১৯৩১ সালে গাছ তলায় আনুষ্ঠানিকভাবে মাদরাসার ভিত্তিস্থাপন করেন। নাম দেন “হামিয়ুচ্ছুন্নাহ মাদরাসা”। অর্থাৎ সুন্নাত জিন্দাকারী। যা হবে অন্য মাদরাসা থেকে ভিন্ন নিয়ম ও সিলেবাসে। এবং এখান থেকে তৈরী হবে কুরআনে বর্ণিত সেই আলেম যাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, “নিশ্চয় আলেমগণই আল্লাহকে ভয় করে।”

হুজুর সা. যেভাবে মাদরাসা সুফ্ফা পরিচলনা করেছেন সেই আঙ্গিকে পরিচালিত হয় মেখল মাদরাসা। মাদরাসা সুফ্ফার ছাত্রদের জন্য যেমন নির্দিষ্ট থাকার জায়গা ছিল না, ছিলো না আহারের জন্য কোন ব্যবস্থা। ঠিক তেমনি মেখলের ছাত্রদেরও থাকার কোন নির্দিষ্ট জায়গা নেই। নেই খাওয়ার কোন সুযোগ-সুবিধা। যার কাছে যে পরিমাণ টাকা আসে তা নিয়েই সন্তুষ্টি থাকে। মাদরাসা সুফ্ফায় যেমন হাদিয়া-তোহফা নিজ উদ্যোগে পাঠিয়ে দিতেন, ঠিক তেমনিভাবে মেখলেও ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা নিজ উদ্যোগে তাদের সাহায্য-সহযোগিতা পাঠিয়ে দেয়। কখনো ছাত্রদের মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে চাঁদা তুলতে হয় না।

Manual7 Ad Code

মাদরাসা সুফ্ফায় যেমন হুজুর সা. এর পরে সাহাবায়ে কেরাম রা. বিশেষত : হযরত আবু হুরায়রা, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, হযরত ইবনে ওমর, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. সহ প্রমুখ সাহাবায়ে কেরাম নিঃস্বার্থভাবে তালিম দিতে শুরু করলেন, ঠিক সেই মাদরাসা সুফ্ফার ইতিহাসকে সামনে রেখে একদল ত্যাগী ও উদ্যামী উলামায়ে কেরাম নিজে উদ্যোগী হয়ে বিনা বেতনে পড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন। মুফতী আজম রহ. তাদের অনুমতি প্রদান করেন। যাদের মধ্যে মাওলানা আজিজুল্লাহ সাহেব (প্রকাশ বড় হুজুর), খতিবে আজম সিদ্দীক আহমাদ সাহেব, মাওলানা কাসেম ফয়জী সাহেব, মাওলানা মুজাফ্ফর রহ. সহ অনেকেই। এরপর থেকে ক্রমেই ছাত্র-শিক্ষকের উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে উঠে মেখলের আঙ্গিনা। আর পরিধি বাড়তে থাকে প্রচলিত মাদরাসার বিপরিত একটি মাদরাসা হামিয়ুচ্ছুন্নাহ মেখলের। ছাত্রদের পড়া-লেখার উন্নতি ও ইলমের প্রচার প্রসার বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রণায়ন করা হয় যুগোপযোগী এক সিলেবাস। যা অন্য মাদরাসা থেকে ভিন্ন ও অনন্য। বর্তমানে মেখলের নমুনায় সারা দেশে অসংখ্য মাদরাসা গড়ে উঠেছে।

অন্যান্য মাদরাসা থেকে মেখল মাদরাসা যে কারণে বৈশিষ্ট্যপপূর্ণ :
১. এখানে শিক্ষকগণের নির্দিষ্ট কেন বেতন নেই।
২. শিক্ষক -ছাত্রদের জন্য কোন বোর্ডিং এর ব্যবস্থা নেই। (সবাই নিজ খরচে রান্না অথবা জায়গির থেকে পড়ে)
৩. জুব্বা ও পাগড়ী পড়া বাধ্যতামূলক।
৪. ছাত্ররা কোন প্রকার রাজনৌতিক -অরাজনৌতিক সংগঠনের সাথে জড়িত হতে পারে না।
৫. মাদরাসার কোন রসিদ বই নেই! যার ফলে ছাত্রদের কোন প্রকার কালেকশন করতে হয় না।যা মাদরাসা জগতে নজির বিহীন।
৬. বিদআত ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এবং ছাত্রদের আমলে ও ইলমের লাইনে সাপ্তাহিক, মাসিক ও বাৎসরিক বয়ানের ব্যবস্থা আছে।
৭. প্রতি সোমবারে সুন্নাত-বিদআতসহ যাবতীয় কুসংস্কার ও ছাত্রদের ইলমী-আমলী যোগ্যতা বৃদ্ধির লক্ষে বিশেষ বয়ান।
৮. প্রত্যেক মাসে ২৪ ঘণ্টা দাওয়াতে তাবলীগর জন্য বের হওয়া ও মাদরাসায় ৫ কাজের সাথে জোড়া।
৯. প্রচলিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

গাছ তলায় শুরু হওয়া মাদরাসাটি সময়ের চাহিদা ও ছাত্রদের ইলম হাসিলের সুবিধার্তে বর্তমানে নতুন নতুন ভবনে পরিচালিত হলেও মাদরাসা সুফ্ফা ও দারুল উলূল দেওবন্দের ‘উসূলে হাসতেগানা’ অনুসরণ থেকে বিন্দুমাত্র সরে যায়নি।পুরো আদর্শ আজও ধরে রেখেছে। যা অনেক কওমী মাদরাসায় অনুপস্থিত।

কোন প্রকার রশিদ বই ও কালেকশন ছাড়া এত বড় প্রতিষ্ঠান কিভাবে চলে ও উস্তাদদের বেতন কীভাবে দেওয়া হয় জানতে চাইলে, মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী বলেন, আল্লাহর খাস দয়ায় চলছে। আমরা কখনো কারো কাছে চাঁদা চাই না। মুফতী আজম রহ. কারো কাছে ছাত্রদের পাঠিয়ে কালেকশন করা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।।তবে দ্বীন দরদী মুসলমানরা নিজ উদ্যোগে মাদরাসার পাশে দাঁড়ায়। আর এখানে উস্তাদদের নির্ধারিত কোন বেতন নেই! যখন যেমন সম্ভব হয় তাদের হাদিয়া দেওয়া হয়।
মাদরাসার দক্ষ পরিচালক মুফতী আজম ফয়জুল্লাহ রহ. এর প্রতিচ্ছবি আল্লামা নোমান ফয়জী ও শিক্ষা পরিচাক মুফতী আজম রহ. এর মসলকের ঝান্ডাধারী মাওলানা উসমান ফয়জী এর নেতৃত্ব ও ২০ জন দক্ষ শিক্ষকদের নিরলস মেহনতের কারণে দেশ-বিদেশে মাদরাসার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ গতিতে। পৃথিবী আনাচে-কানাচে পৌঁছে গেছে মেখল থেকে ফারেগ হওয়া ছাত্ররা। পৌঁছে দিচ্ছে দ্বীনের বাণী।

মাদরাসার বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করে আগামীর পরিকল্পনা :- বর্তমান জামাতে হেদায়া পর্যন্ত খুব সুনামের সহিত পাঠদান চলছে। আগামী মানসম্মত একটি ইফতা বিভাগ খোলার পরিকল্পনা চলছে।

মাদরাসাটি যে বোর্ডের অধিনে :- মেখল মাদরাসাসহ সারা দেশে প্রায় হাজারের উপর মাদরাসা রয়ে, যেগুলো প্রচলিত বোর্ডের বাহিরে ব্যতিক্রম সিলেবাসে পাঠদান করা হয়। তবে মেখল তরজের মাদরাসাগুলোকে নিয়ে ফয়জুল উলূম নামে একটি বোর্ড করার পরিকল্পনা চলছে ।

মাদরাসার হিসাব ব্যাবস্থা / ফান্ড:- সম্পূর্ণ কালেকশন মুক্ত।

বর্তমান মুহতামিম :- আল্লামা নোমান ফয়জী দা.বা.

বর্তমান মুহতামিমের মোবাইল নাম্বার :- ০১৮১৭৭০৬৭২৬

Manual1 Ad Code

বর্তমান শিক্ষাসচিব :- আল্লামা উসমান ফয়জী দা.বা.

বর্তমান শিক্ষকবৃন্দের তালিকা :- আল্লামা নোমান ফয়জী দা.বা. পরিচাল, আল্লামা উসমান ফয়জী দা.বা. শিক্ষা পরিচাল, মুফতী ইব্রাহিম খান সাহেব প্রধান মুফতী, মুফতী মোহাম্মদ আলী কাসেমী সহকারী মুফতী, মাও. ফোরকান ফয়জী দারুল একামা, মাও. নাসিরউদ্দিন সাহেব সহকারী শিক্ষা পরিচাল, মাও. জাকারিয়া নোমান ফয়জী সহকারী দারুল একামা, মাও. ইসমাইল খান, মাও. আনিসুর রহমা, মাও. মুজিবুর রহমা, মাও. ওমর ফারু, মাও. মুফতী হাসান মাহমু, মাও. খালেদ সাইফুল্লা, মাও. মুস্তাকিম বিল্লাহ।

চলমান মোট ছাত্র সংখ্যা :- ২৫০০

চলমান ছাত্রাবাসে অবস্থান রত ছাত্র সংখ্যা :- ১৫০০

তথ্য দানকারীর নাম :- মুহাম্মাদ হাবীব আনওয়ার

তথ্য দানকারীর মোবাইল :- ০১৭৩২ ৯১০ ৫৫৮

তথ্য দানকারীর ইমেইল :- habibanwar199@gmail.com

Spread the love

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code