সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

হাজী আবদুল ওয়াহাব রহ. এর জীবন ও কর্ম (তাবলীগের আমীর পাকিস্তান)

November 19 2018, 04:28


Manual7 Ad Code

লিখেছেন- আহমাদ আবসার হুসাইন মাদানী>

পাকিস্তানের নানা অসঙ্গতির খবরের মাঝখান দিয়ে একজন সাদা মানুষের আলোচনা বার বারই উচ্চারিত হতো।সেই মানুষটি হলেন হাজী আবদুল ওয়াহাব।একজন সাধারণ আওয়াম হয়ে দ্বীনকে যেভাবে তিনি আঁকড়ে ধরেছিলেন সত্যিই পৃথিবীর খ্যাতনামা অনেক আলেমও তার আমলের ধারেকাছে আছে কিনা আমার জানা নেই।তবে চলতে ফিরতে দাওয়াত ও তাবলীগের এই মাদরাসায় দ্বীনী ইলমের নূর ও স্বাদ গ্রহণ করেছেন।

সতত সৌন্দর্যের এক বটবৃক্ষ হাজী আবদুল ওয়াহাব। পাকিস্তানে বেড়ে উঠলেও জন্মটা তার ভারতের দিল্লিতে।তখন তো ভারত উপমহাদেশ বলতে ভারত বাংলাদেশ পাকিস্তান মিলেই ছিল।দাওয়াত ও তাবলীগের এই দাঈ হাজী আব্দুল ওহাব ১৯২৩ সালের পয়লা জানুয়ারী ‌ভারতের দিল্লিতে জন্মলাভ করেন।তিনি গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন লাহোর ইসলামিয়া কলেজ থেকে।আমরা সবাই জানি, মাদরাসায় পড়ুয়া কোন আলেম ছিলেন না তিনি।তবে দাওয়াত ও তাবলীগের সিলসিলায় নিজের পুরো জীবনকেই উৎসর্গ করেছেন।জীবনে কখনোই দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ থেকে জুদা হতে পারেননি। তাহসিল অফিসে চাকরি করার অভিজ্ঞতাও আছে তার।তিনি গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে পূর্ব-ভারতে তহসিলদার হিসেবে চাকুরি নিয়েছিলেন। পারিবারিকভাবে তারা সাহারানপুরের বাসিন্দা এবং বংশগতভাবে রাজপূত ছিলেন।

১৯৪৪ খৃস্টাব্দে হাজী আব্দুল ওয়াহাব রহ.নিযামুদ্দীন মারকাযে হযরতজী মাওলানা ইলিয়াস রহ.-এর সঙ্গে সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।অতঃপর ছয় মাস হযরতজীর খিদমাতে অবস্থান শেষে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে যুক্ত হন। হাজী আবদুল ওয়াহাব রহ.-এর আধ্যাত্মিক সম্পর্ক ছিল মাওলানা আব্দুল কাদির রায়পুরী রহ.-এর সঙ্গে।নিজের আমলে আখলাকে আধ্যাত্মিক পথপরিক্রমায় ১৯৬৫ সালে হযরতের ইজাযতও লাভ করেন তিনি।মাওলানা আব্দুল কাদির রায়পুরী রহ.-এর গুরুত্বপূর্ণ খলীফাদের একজন মনে করা হতো।

Manual6 Ad Code

১৯৪৭ খৃস্টাব্দ।দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে মুসলমানদের জীবনে যে অসনিসংকেত এসেছিল তাতে হাজী আবদুল ওয়াহাব পরিবারও পাকিস্তান হিজরত করেন।সে এক ভয়ানক ইতিহাস।কতজন নিজের শিশু বাচ্চাকেও তড়িঘড়ি করে ভারতে ফেলে গেছেন। আবার অনেক মুসলমান ও আলেমগণ ভারতকেই বেছে নিয়েছিলেন।মুহাম্মদ আলী জিন্নার দ্বিজাতিতত্ত্বের ঘোলাজলে খেই হারিয়ে ফেলেননি।কোটি কোটি মুসলমানদেরকে বিপদে না ফেলে, তাদের অর্থ সম্পত্তির প্রতি সম্মান দেখিয়ে ভারতকেই বেছে নেন।সাইয়্যিদ মাহমুদ মাদানী তো এরকম বলেছেন, ভারত মে হাম বাইচান্স নাহি বাই চয়েস নাগরিক। তিনি তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা ও আমির মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভীর জীবনকালেই তাবলীগে জামায়াতের সাথে যুক্ত হন।

Manual1 Ad Code

১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি তিনি নিজামুদ্দীন মার্কাজে আসেন এবং ৬ মাস ধরে সেখানে মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভীর সান্নিধ্যগ্রহণ করেন।তাবলীগে পুরোপরিভাবে সময় ও দ্বীনি কাজ প্রচারের জন্য তিনি তাঁর চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন এবং তিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রথম সেই পাঁচজন লোক, যারা তাদের সমগ্র জীবন তাবলীগের কাজ করার জন্য উৎসর্গ করেছিলেন।তিনি মাওলানা মুহম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভী, ইউসুফ কান্ধলভী এবং ইনামুল হাসান কান্ধলভীর সরাসরি সঙ্গী ছিলেন। দাওয়াত ও তাবলীগের ইতিহাস ঘেটে দেখা যায়, হাজী আবদুল ওয়াহাব রহ., ২য় হযরতজী মাওলানা ইউসুফ রহ.(১৯৬৫) ও ৩য় হযরতজী মাওলানা এনামুল হাসান রহ.(১৯৯৫) এর পরামর্শে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ এত সুন্দরভাবে করেছেন নিজের কোমলতা ও আন্তরিকতায় বিশ্বকে তিনি জয় করেছেন।নিজামুদ্দীন মার্কাজের একজন দাঈর সঙ্গে কথা বলছিলাম, তিনি শোনালেন, মাওলানা সাদ কান্ধলবী বলেছেন, হাজী আবদুল ওয়াহাব শুধু তাবলীগের বড় দাঈ নয়।আমাদের পারিবারিক মুুরব্বী ছিলেন।

আমাদের পরিবারে তার অনেক বেশি অবদান আছে। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, হযরতজীর খান্দানের হওয়ায় মাওলানা সাদ কান্ধলবীর কোনো বিষয়েও তিনি বিরোধিতা করেননি।(দিল্লী মার্কাজের একজনের মুখ থেকে শোনা) হাজী আবদুল ওয়াহাব অসাধারণ মেধাবী ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসাকাতর একজন দরদি ব্যক্তিত্ব ছিলেন।শুধু দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতকে ঠিকঠাকভাবে করার জন্যই চাকরিটাও করেননি।তাবলীগ করতে এসে চাকরি ছাড়ার মানুষদের সংখ্যা বিশ্বে অনেক।

তিনি হাজী শফী ক্বোরাইশি ও হাজী বশীর সাহেবের পর ১৯৯২ খৃস্টাব্দে পাকিস্তান তাবলীগ জামাতের তৃতীয় আমীর নিযুক্ত হন এবং আমৃত্যু এই দায়িত্ব সম্পাদন করে যান।হাজী সাহেব আবদুল ওয়াহাব রহ.ছিলেন হযরতজী এনামুল হাসান রাহ.কর্তৃক গঠিত আলমী শুরা -এর একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। হাজী আবদুল ওয়াহাব রহ.একজন শান্তিবাদী মানুষ।তিনি এর প্রমাণও দেখিয়েছেন।অনুরোধ রেখেছেন শান্তি আলোচনার।সাধারণত এ কাজগুলো সামাজিক আন্দোলন বা রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতারা করে থাকেন।বিশ্ব তাবলীগ জামায়াতের কাউকেই এ জাতীয় শান্তি আলোচনার মতো কাজে যোগদান করা একজন প্রকৃত শান্তিবাদি মানুষেরই কাজ বটে।

Manual6 Ad Code

২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে হাজী আব্দুল ওয়াহাব সরকারের সঙ্গে তালেবানদের শান্তি আলোচনায় বসাতে সক্ষম হয়েছিলেন।গণমাধ্যমের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, পাকিস্তান তালেবান ও সেনাবাহিনীর মধ্যে চলিছল দীর্ঘদিনের ভয়াবহ বিরোধ। এটা খুব কাছের আলোচিত ঘটনার একটি।জীবনের শেষ দিকে এসে তিনি কেবল পাকিস্তানেই নয় বিশ্বজুড়েই জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাতারে চলে আসেন।

Manual6 Ad Code

দুই হাজার চৌদ্দ এবং পনেরতে একটি পরিসংখ্যানে বিশ্বের ৫০০ শীর্ষ মুসলিম ব্যক্তিদের তালিকায় হাজী আব্দুল ওয়াহাব ১০ নম্বরে উঠে আসেন।তাজ্জব হয়ে তার প্রতি বিশ্বের মানুষের ভালোবাসার যেন সিক্ত হতে শুরু করেন তিন।বিশ্ব তাবলীগের মেহনতের সঙ্গে আজীবন টিকে থাকায় এই প্রভাব তিনি অর্জন করেন। দুই হাজার আঠার এর আঠার নভেম্বর রোববার বাদ ফজর ৯৬ বছর বয়সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।বিশ্ববাসীকে তিনি একটা নিরব কান্নায় যেন শামিল করে গেলেন। আল্লাহ ওনাকে জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা দান করুন। আমিন

haji_wahab-1-604x270

 

Spread the love