সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

মাওলানা মুহাম্মদ হারুন ইসলামাবাদী রহ.

November 10 2018, 09:23


Manual8 Ad Code

আল্লামা মুহাম্মদ হারুন ইসলামাবাদী রহ.। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ- এর দ্বিতীয় সভাপতি। বাংলাদেশে কওমি মাদরাসা শিক্ষার হাতেখড়ি যাদের হাতে আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী রহ. তাদের অন্যতম। বেফাকুল মাদারিসকে কেন্দ্র করে তিনি দেশব্যাপী ইসলামি শিক্ষা প্রসারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন।

আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী  রহ.  ১৯৩৮ সালে চট্টগ্রামস্থ পটিয়া থানার আশিয়া গ্রামের এক ধার্মিক ও অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বড় ভাইদের কাছে নিজ বাড়িতেই কোরআন মাজিদ শেখেন এবং পটিয়া ভাটিখাইন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর নিজ গ্রামের মাদরাসা এমদাদুল উলুম আশিয়াতে জামাতে (দাহুম) বেহেশতি জেওর পর্যন্ত পড়েন।

এরপর বড় ভাই শায়খুল হাদিস আলামা ইসহাক গাজী রহ.-এর তত্ত্বাবধানে পটিয়া জমীরিয়া কাছেমুল উলুম মাদরাসায় জামাতে নাহুমে ভর্তি হন।

১৯৬০ সালে পটিয়া মাদরাসায় দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন এবং একই মাদরাসায় তিনি উচ্চতর শিক্ষা সমাপন করেন।

Manual7 Ad Code

জ্ঞান অর্জনে ছিল তাঁর অদম্য স্পৃহা আর ঐকান্তিক অধ্যাবসায়। উচ্চশিক্ষা লাভের প্রবল আগ্রহ ছিল। মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খুব ইচ্ছা ছিল। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী হাবিবুর রহমানের মাধ্যমে সব ব্যবস্থাও চূড়ান্ত করেছিলেন। কিন্তু মুরুব্বীদের আপত্তির মুখে তিনি এ সফর বাতিল করে দেন।

১৯৬১ সালে দারুল উলূম দেওবন্দ গিয়ে পুনরায় দাওরায়ে হাদিসে ভর্তি হন। কিন্তু বিশেষ কারণে সেখানে থাকতে না পারায় লাহোরের জামিয়া আশরাফিয়ায় গিয়ে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন।

১৯৬২ সালে লাহোরস্থ জামিয়া মাদানীয়ায় বিশেষ দু’জন দার্শনিক উস্তাদের কাছে ফুনুনাতে আলিয়ার উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন।

শিক্ষা-দীক্ষা ও আধ্যাত্মিক জীবনে তিনি প্রথমে আলহাজ মাওলানা শাহ্ মুহাম্মদ ইউনুছ আবদুল জব্বার রহ.-এর নিকট আধ্যাত্মিক শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর ইন্তিকালের পর হজরত থানভী রহ.-এর সর্বশেষ খলিফা, মাওলানা শাহ্ আবরারুল হক সাহেবের কাছে মুরিদ হন।

১৯৬৩ সালে দেশে ফিরে এসে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ. এর সঙ্গে লেখালেখি শুরু করেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত একমাত্র উর্দু দৈনিক পাসবান-এ অনুবাদকের দায়িত্বও পালন করেন দীর্ঘদিন।

১৯৬৫-৬৬ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকা ভ্রমণ করেন। বাংলা ভাষায় উলামাদের একটি জাগরণ সৃষ্টি করতে সক্ষম হন। ধর্মদ্রোহীদের মোকাবিলার লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন গড়ে  তুলতে সক্ষম হন। কয়েকজন বিশিষ্ট মরুব্বীর অভিভাবকত্বে আন্দোলনের ঢাকার মুখপাত্র হাছান আনসারীর মাধ্যমে জামিয়া পটিয়ায় যান। তৎকালীন মুহতামিম হজরত হাজী সাহেব হুজুরের কাছে পৌঁছলে হুজুর তাকে সাদরে গ্রহণ করেন।

Manual3 Ad Code

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের পর দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যাওয়া ১৯৭২ সালে তিনি ঢাকা ত্যাগ করে চট্টগ্রাম চলে যান। চট্টগ্রাম বাবুনগর আজিজুল উলুম মাদরাসায় শিক্ষক নিযুক্ত হন। পাশাপাশি হজরত হাজী সাহেব হুজুরের আদেশক্রমে মাসিক আত-তাওহীদের সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর আবুধাবিতে নিযুক্ত বাংলাদেশী দূত এ.ডব্লিউ. শামসুল আলম-এর তত্ত্বাবধানে আরবি, ইংরেজি, বাংলা অনুবাদকের সরকারি দায়িত্ব লাভ করেন।

১৯৭৭ সালের ১ মার্চ “সুপ্রিম শরীয়া কোর্ট আবুধাবিতে অনুবাদক পদে নিয়োজিত হন। ইতোমধ্যে ইসলামী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের রেজিস্ট্রার্ড খতিব পদে এবং ১৯৮৫ সালে আবুধাবির বেতারে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রয়োজক ও উপস্থাপকের দায়িত্বে নিযুক্ত হন। পরে অনুবাদ-বিভাগীয় প্রধান পদে উন্নীত হন।

Manual1 Ad Code

১৯৯২-১৯৯৫ পর্যন্ত বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাকের) সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯০ সালে ‘রাবেতা আল আলম আল ইসলামীর পক্ষ থেকে তাঁকে বাংলাদেশ শাখার পরিচালক পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়।

তাঁর গুণ-জ্ঞান, কর্মদক্ষতা, দীনের দরদ, ইসলামি জাগরণের আন্তরিক অনুভূতি ও কালজয়ী যোগ্যতার সমাহার দেখে হাজী সাহেব হুজুর তার প্রতি আগের চেয়ে আরো বেশি স্নেহশীল ও আস্থাবান হয়ে পড়েন। ফলে তাঁর অন্তরে জেগে ওঠে তাকে পরবর্তী স্থলাভিষিক্ত করার আন্তরিক ইচ্ছা। হাজী সাহেব হুজুর একসময় তাকে বললেন, বাংলাদেশ আসলে পটিয়া মাদরাসাতেই আসতে হবে।

হাজী সাহেব হুজুরের ইন্তেকালের পর জামিয়ার সকল শিক্ষক ও মজলিসে শুরার সকল সদস্যের সর্বসম্মতিক্রমে তাঁর কাঁধে অর্পিত হয় জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার পরিচালকের গুরু দায়িত্ব।

১৯৯১সালে জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার সহকারী মহাপরিচালক নিযুক্ত হন।
১৯৯২সালে জামিয়ার মহাপরিচালকের দায়িত্বভার অর্পিত হয়।

কওমী মাদ্রাসা সনদের সরকারি স্বীকৃতি আদায়ের প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ধারায় তিনি অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। এটি ছিল তাঁর লালিত স্বপ্ন। কওমী শিক্ষাধারার স্বকীয়তা বহাল রেখেই স্বীকৃতি গ্রহনে তিনি উদ্যোগী ছিলেন।

ক্ষণজন্মা এ কর্মবীর ও মুখলেস বুজুর্গ পরপারে পাড়ি জমান ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৩ সালে। পঠিয়া মাদ্রাসার জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্হান ‘মাকবারায়ে আজিজি’তে তাঁকে সমাহিত করা হয়। আল্লাহ তাআলা তাঁকে জান্নাতে উঁচু মাকাম দান করুন। আমীন!

Manual8 Ad Code

(সৌজন্যে: আওয়ার ইসলাম)

Spread the love