মোবাইল ফোন সম্পর্কীত প্রয়োজনীয় শরঈ তথ্যাবলী ও মাসাইল

September 11 2019, 07:42

qowmipedia.com,
লিখেছেন- মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া

প্রশ্ন: ভুল ফ্লেক্সির মাধ্যমে কারো মোবাইলে টাকা এসে গেলে এ টাকা খরচ করা জায়েয হবে কি না? এ টাকার ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি? এর মালিক তো জানা নেই। এ ব্যাপারে করণীয় কি?

উত্তর : ভুলবশত ফ্লেক্সিলোড এসে গেলে তা ব্যবহার করা জায়েয হবে না। এ টাকা মূল মালিককে পৌঁছে দিতে চেষ্টা করতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যে নাম্বার থেকে ভুলে এসেছে সে নাম্বার থেকে কল করে থাকে। এমনটি হলে তো মূল মালিকের সন্ধান মিলেই গেল। কিন্তু প্রেরকের সন্ধান যদি না পাওয়া যায় তবে প্রাপক যে অপারেটরের মোবাইল ব্যবহার করে সেই অপারেটরের সাহায্যে মূল মালিকের নাম্বার সহজেই জানা যায়। তা এভাবে যে, ফ্লেক্সিলোড মেসেজের শেষে প্রেরকের আইডি নাম্বার লিখা থাকে। মোবাইল অপারেটর থেকে ঐ আইডি নাম্বার-এর ঠিকানা এবং মোবাইল সংগ্রহ করা যাবে। অবশ্য এ অনুসন্ধানের জন্য যা খরচ হবে তা বাদ দিয়ে বাকী টাকা পাঠালেই চলবে।

-আলবাহরুর রায়েক ৫/১৫২, ফাতাওয়া তাতার খানিয়া ৫/৫৮৫, বাদায়েউস সানায়ে ৫/২৯৮

ভুল ফ্লেক্সিকারীর দেওয়া ছাড় গ্রহণ

প্রশ্ন : যার নাম্বারে ভুলক্রমে ফ্লেক্সি চলে গেছে দোকানী  তাকে কিছু ছাড় দিয়ে বাকীটা পাঠাতে বলে। জানতে চাই, এ ছাড় গ্রহণ করা এ ব্যক্তির জন্য জায়েয হবে কি না?

উত্তর : এ ছাড় যদি সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেয় তবে তা নেওয়া জায়েয। কিন্তু ছাড় না দিলে বাকিটাও পাঠাবে না এ আশংকা করে যদি কিছু ছাড় দিতে চায় তবে তা গ্রহণ করা যাবে না। তাই সন্তুষ্টচিত্তে দিচ্ছে কিনা তা যাচাই করে নেয়া প্রয়োজন।

-আলবাহরুর রায়েক ৩/১৫৪, আল মাবসূত সারাখসী ১১/১০, আদ্দুররুল মুখতার ৪/২৮০, তাহতাবী আলাদ্দুর ২/৫০২

ভুল ব্যালেন্স

প্রশ্ন : কোনো কোনো সময় কোম্পানীর কম্পিউটারের ভুলের কারণে মোবাইলে ভুল ব্যালেন্স দেখায়। টাকা কম থাকলে বেশি দেখায়, আবার ব্যালেন্স না থাকলেও ভুলে ব্যালেন্স উঠে থাকে। কখনো ব্যলেন্সে কোনো টাকা দেখা যায় না ঠিকই, কিন্তু অন্যের কাছে আউট গোয়িং কল হয়। এই সুযোগ পেয়ে অনেকে অনায়াসে ব্যবহার করে থাকে। এটা জায়েয হবে কি না? যদি জায়েয না হয় তবে এভাবে ব্যবহৃত বিল আদায়ের উপায় কি?  এটাকা কি কোম্পানীকেই দিতে হবে? নাকি সাদকা করে দিলে চলবে?

উত্তর : প্রশ্নোল্লিখিত ক্ষেত্রে নিজের জমা টাকার বেশি খরচ করা জায়েয হবে না। বরং এ ভুলের কথা কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে ফোন করে অবহিত করা জরুরি। আর এ ক্ষেত্রে নিজের ব্যালেন্সে জমা টাকার অতিরিক্ত খরচ করে থাকলে এটিও কাস্টমার কেয়ারে অবহিত করতে হবে। যেন তারা তত টাকা ব্যালেন্স থেকে কেটে নেয়। এ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত কলের সমপরিমাণ টাকা ব্যালেন্স থেকে কেটে নিলেই দায়মুক্ত হয়ে যাবে। যেহেতু কোম্পানীকে ব্যবহৃত কলের বিল পৌঁছানো সম্ভব তাই এটাকা সাদকা করা যথেষ্ট নয়।

-আলবাহরুর রায়েক ৮/১০৯, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২৭২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/১৭৯

নির্ধারিত বিলের বেশি চার্জ করলে

প্রশ্ন: মোবাইল কোম্পানী থেকে যে চার্জ ঘোষণা করা হয় কোনো কোনো সময় ঘোষিত নির্ধারিত বিল থেকে বেশি কেটে নেয়। বা পোষ্ট পেইডে বেশি বিল করে। এটা জায়েয কি না? এ ক্ষেত্রে করণীয় কি?

উত্তর : প্রতিশ্রুত বিলের বেশি নেওয়াও জায়েয হবে না। এমনটি হলে কাস্টমার কেয়ারে অভিযোগ করতে হবে। কোম্পানী কর্তৃপক্ষ এ ভুল জানতে পারলে তা শোধরে নেওয়া জরুরি।

মোবাইল ও যাকাত

সিকিউরিটি ডিপোজিটের যাকাত

প্রশ্ন : পোষ্ট-পেইড মোবাইলে নির্ধারিত পরিমাণের বেশি বিল করলে লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। অবশ্য মোবাইল কোম্পানীর কাছে অতিরিক্ত টাকা সিকিউরিটি হিসাবে জমা রাখলে নির্ধারিত পরিমাণ বিলের সুযোগ থাকে। এক্ষেত্রে সাধারণ বিলের বেশি হলেও লাইন বিচ্ছিন্ন করে না। এছাড়া বিদেশে গিয়েও এই নাম্বারে রোমিং সুবিধা পাওয়ার জন্যও সিকিউরিটি জমার প্রয়োজন হয়। খরচের উদ্বৃদ্ধ সিকিউরিটি ডিপোজিটের জমাকৃত টাকার যাকাত দিতে হবে কি না?

উত্তর : হাঁ, খরচের অতিরিক্ত সিকিউরিটি ডিপোজিটের এ টাকা যাকাতযোগ্য সম্পদ। নেসাবের মালিকের জন্য এ টাকার যাকাত দিতে হবে। কেননা, এটাকা সে চাইলে ক্যাশ করতে পারে। এটি অন্যান্য জমার মতই। -আলবাহরুর রায়েক ২/২০২ ও ২০৬, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭৪

ব্যালেন্সে অবস্থিত টাকার যাকাত

প্রশ্ন : যাকাতের বছরের শেষদিন যদি প্রি-পেইড মোবাইলের ব্যালেন্সে টাকা থাকে তবে এটাকার যাকাত দিতে হবে কি না?

উত্তর : প্রি-পেইড মোবাইলের ব্যালেন্সে যে টাকার অংক দেখা যায় এটা মূলত টাকা নয়। বরং ঐ টাকার সমপরিমাণ আউটগোয়িং সেবা। আর ব্যালেন্সে অবস্থিত টাকা যেহেতু মূলত টাকা নয় বরং ক্রয়কৃত একটি সেবা পণ্য। যা ব্যবহারের উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। তাই অন্যান্য ব্যবহৃত সম্পদের ন্যায় ব্যালেন্সে অবস্থিত সম্পদ-এর যাকাত দিতে হবে না।

-হেদায়া ১/১৮৬, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৪৫, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২

প্রশ্ন : ফ্লেক্সি ব্যবসায়ীদের জন্য আগে কোম্পানীর নির্দিষ্ট স্থানে টাকা জমা দিতে হয়। এরপর এ থেকে ধীরে ধীরে গ্রাহকের নিকট ফ্লেক্সি বিক্রি করতে পারে। জানতে চাই ব্যবসায়ীরা ফ্লেক্সি বাবদ যে টাকা জমা দেয় তা ক্যাশ হওয়ার আগেই যদি যাকাতের বর্ষ পূর্ণ হয়ে যায় তবে ব্যবসায়ীকে এ বাবদ জমা টাকার যাকাত দিতে হবে কি না? যদি দিতে হয় তবে জমাকৃত টাকা এবং এর উপর সম্ভাব্য লাভ উভয়টিরই যাকাত আসবে নাকি শুধু জমা টাকার উপর?

উত্তর : ফ্লেক্সি বাবদ দেওয়া টাকার মধ্যে যা জমা আছে সে টাকার যাকাত দিতে হবে। কিন্তু এ টাকারও ফ্লেক্সি বিক্রি করলে যে লাভ হবে তার যাকাত এখন দিতে হবে না। কারণ, সে লাভ তো এখনো হয়নি।

মোবাইল ও নামায

প্রশ্ন : অনেকে বলে মসজিদে প্রবেশের আগেই নাকি মোবাইলের রিং বন্ধ করে দেওয়া জরুরি। আসলে কি তাই? যদি কেউ রিং বন্ধ করে দিয়ে শুধু ভাইব্রেশন দিয়ে রাখে তাতে কোনো ক্ষতি আছে কি না?

উত্তর : ‘নামায’ অন্য সকল ইবাদত থেকে ভিন্ন ধরণের ইবাদত। এ ইবাদতটি হল সরাসরি আল্লাহ তাআলার দরবারে হাজিরা দিয়ে তাঁর মহান স্বত্ত্বার সামনে দন্ডায়মান হয়ে তাঁর সাথে কথোপকথনের এক অপূর্ব মুহূর্ত। এ কারণেই নামায অবস্থায় একাগ্রতা ও খুশুখুযুর প্রতি যেভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, অন্য কোনো ইবাদতের বেলায় তেমনটি করা হয়নি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ‘ঐ সকল মুমিন সফলকাম, যারা নিজেদের নামাযে বিনয়-নম্র। -সূরা মুমিনুন ১-২

তাই মসজিদে প্রবেশের আগেই মোবাইল একেবারে বন্ধ না করলেও অন্তত রিংটোন বন্ধ করে দেওয়া আবশ্যক। কারণ, মসজিদে রিং বেজে উঠলে নামাযীদের খুশুখুযু নষ্ট হবে। আর নামাযের উদ্দেশ্যে প্রবেশকারীর জন্য মোবাইলে ভাইব্রেশন দিয়ে রাখা ঠিক নয়। কারণ, ভাইব্রেশন দিয়ে রাখলেও কল আসলে নামাযীর মনোনিবেশ নষ্ট করে। এতে অন্যের নামাযের ক্ষতি না হলেও নিজের নামাযের খুশুখুযু নষ্ট হয় বটে।

তাছাড়া মোবাইলটি তখন পার্শ্ববর্তী মুসল্লীর শরীরে স্পর্শ করলে তারও নামাযের একাগ্রতা নষ্ট হবে। তাই ভাইব্রেশন দিয়ে রাখাও ঠিক নয়, বরং হয়ত সাইলেন্ট করে রাখবে, কিংবা একেবারে বন্ধ করে দিবে।

নামায অবস্থায় রিং বেজে উঠলে

প্রশ্ন : কোনো কারণে যদি নামাযের আগে মোবাইলের রিং বন্ধ করা না হয় আর নামায পড়াবস্থায় রিং বেজে উঠে তখন করণীয় কি? নামাযে থেকে রিং বন্ধ করে দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা আছে কি না? নামায নষ্ট না করে রিং বন্ধ করার কোনো সুযোগ থাকলে বিস্তারিত জানতে চাই।

এ ছাড়া কিভাবে বন্ধ করলে নামায ভাঙ্গে বা ভাঙ্গে না তাও জানাবেন।

উত্তর : যদি জামাত চলাকালীন কোনো মুসল্লীর মোবাইল বেজে ওঠে তাহলে সে ক্ষেত্রে করণীয় ও লক্ষণীয় বিষয়সমূহ হল নিম্নরূপ :

এক হাত দ্বারা রিং বন্ধ করা

ক. দুই হাত ব্যবহার না করে নামাযের আপন অবস্থাতে থেকেই এক হাতের সাহায্যে মোবাইল পকেটে রেখেই কোনো বাটন চেপে রিং বন্ধ করে দিবে। আর পকেট থেকে বের করার প্রয়োজন হলেও এক হাত দ্বারাই করবে। মোবাইল বের করে পকেটের কাছে রেখেই না দেখে দ্রুত বন্ধ করে পকেটে রেখে দিবে।

জেনে রাখা প্রয়োজন যে, নামাযে প্রয়োজনে এক হাত কোনো কাজে ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। যেমন, টুপি ওঠানোর জন্য, জামার হাতা নামানোর জন্য, সিজদার স্থানের কংকর সরানোর জন্য, শরীরের কোন স্থান বিশেষ প্রয়োজনে চুলকানোর জন্য ইত্যাদি।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫৬৪, শরহুল মুনিয়াহ ৪৪৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৫, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১২৯, রদ্দুল মুহতার ১/৬২৪, শরহে নববী ১/২০৫

এক হাত দ্বারা দেখে বন্ধ করা

খ. এক হাত দ্বারা বন্ধ করতে গিয়ে মোবাইল পকেট থেকে বের করে দেখে দেখে বন্ধ করা যাবে না। কারণ, এমনটি (করলে যদিও দুই হাত ব্যবহার হচ্ছে না, কিন্তু মোবাইল দেখে দেখে বন্ধ করা অবস্থায় এ ব্যক্তিকে কেউ দেখলে সে নামাযে আছে বলে মনে করবে না।) আর নামায অবস্থায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে নামায ভেঙে যায়। তাই নামায অবস্থায় মোবাইল দেখে দেখে বন্ধ করার কোন সুযোগ নেই। -রদ্দুল মুহতার ১/২৬৪-২৬৫, আলবাহরুর রায়েক ২/১১-১২

দুই হাত দ্বারা বন্ধ করা

গ. নামাযে মোবাইল বন্ধের জন্য একসাথে দুই হাত ব্যবহার করা যাবে না। যদি এক সাথে দুই হাত ব্যবহার করে তবে নামায নষ্ট হয়ে যাবে।

রিং বন্ধের জন্য সিজদা থেকে উঠে গেলে

ঘ. সিজদাবস্থায় রিং বেজে উঠলে কেউ কেউ সিজদা থেকে প্রায় বসে গিয়ে মোবাইল বের করে বন্ধ করে থাকে। অথচ তখনো ইমাম-মুসল্লী সকলেই সিজদাতেই থাকে। নামাযের এ অবস্থা থেকে মোবাইল বন্ধের জন্য বসে যাওয়া অতঃপর মোবাইল বন্ধ করাতে তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় ব্যয় না হলেও নামায ভেঙ্গে যাবে। কারণ, যেখানে দুই হাতের ব্যবহারকেই নামায ভঙ্গের কারণ বলা হয়েছে সেখানে পুরো শরীরকে নামাযের অবস্থা থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা নিঃসন্দেহে নামায ভঙ্গের কারণ হবে। এ ছাড়া এ অবস্থায় কোনো আগন্তুক তাকে দেখলে সে নামাযে নেই বলেই মনে করবে। এটিও আমলে কাসীরের অন্তর্ভুক্ত। যা নামায নষ্টকারী।

নামাযে একাধিকবার রিং বন্ধ করা

প্রশ্ন : নামাযে একাধিক বার রিং বন্ধ করার পর আবার রিং বেজে উঠলে তা বন্ধ করতে পারবে কি না? এভাবে কতবার পর্যন্ত বন্ধ করার সুযোগ আছে?

উত্তর : তিনবার বিশুদ্ধভাবে ‘সুবহানা রাবিবয়াল আযীম’ বা ‘সুবহানা রাবিবয়াল আ’লা’ বলা যায় এ পরিমাণ সময়ের ভিতর উপরন্তু দুইবার পর্যন্ত এক হাতের সাহায্যে উপরোক্ত ‘ক’ তে উল্লেখিত নিয়মে রিং বন্ধ করা যাবে। এ সময়ের ভিতর দুইবারের বেশি বন্ধ করা যাবে না। যদি করে তবে নামায নষ্ট হয়ে যাবে।

হাঁ, একবার বা দুই বার বন্ধ করার পর তিন তাসবীহ পরিমাণ বিলম্বে আবার রিং বেজে উঠলে তখন বন্ধ করা যাবে। মোটকথা তিন তাসবীহ বলা যায় এ সময়ের ভিতর তিনবার রিং বন্ধের জন্য এক হাতও ব্যবহার করা যাবে না। এতে নামায নষ্ট হয়ে যাবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১২৯, রদ্দুল মুহতার ১/৬২৫, আহসানুল ফাতাওয়া ৩/৪১৮-৪১৯

মোবাইল বন্ধের জন্য দুই হাত ব্যবহারের প্রয়োজন হলে

প্রশ্ন : মোবাইল প্যান্টের পকেটে থাকলে তা বের করে বন্ধ করার জন্য দুই হাত ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। তদ্রূপ ফোল্ডিং সেট হলেও রিং বা ফোন বন্ধ করতে কখনো কখনো দুইহাত ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। অথচ দুই হাত ব্যবহার করলে নামায ভেঙ্গে যায়। তাই এক্ষেত্রে কি নিজের নামায নষ্ট করে হলেও রিং বন্ধ করবে? না কি মুসল্লীদের নামাযে বিঘ্ন হলেও নিজের নামায নষ্ট করা বা ছেড়ে দেওয়া যাবে না? সঠিক সমাধান কি?

কেউ কেউ এক্ষেত্রে মুসল্লীর নামায ছেড়ে দেওয়া বা নামায নষ্ট করার অনুমতি দেয় না। বরং এ পরিস্থিতিতেও নামায নষ্ট করা অবৈধ বলে।

উত্তর : নামাযে খুশুখুযুর গুরুত্ব অনেক বেশি। কোন নামাযীর মল-মূত্রের বেগ হওয়ার দরুণ খুশুখুযু বিঘ্নিত হলে তার জন্য নামায ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফিকহের কিতাবাদিতে এ ক্ষেত্রে নামায ছেড়ে দেওয়াকে উত্তম বলা হয়েছে। কেউ কেউ ওয়াজিবও বলেছেন। তাহতাবী আলাল মারাকী-১৯৮, হিন্দিয়া ১/১০৭, আল বাহরুল রায়েক ১/২৮৭, রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৪, তাহলে নামায অবস্থায় মোবাইল বেজে উঠলে যার মোবাইল শুধু তার নামাযেরই বিঘ্ন ঘটায় না বরং আশপাশের মুসল্লীদেরও খুশুখুযু বিঘ্নিত হয়। সুতরাং এক্ষেত্রে নামায নষ্ট না করে বন্ধ করা সম্ভব না হলে নামায ছেড়ে দিয়ে হলেও মোবাইল বন্ধ করা জায়েয তো বটেই বরং এমনটি করাই কর্তব্য। আর রিংটোন যদি গান বা মিউজিকের হয় তবে এর খারাবিতো আরো অধিক। সুতরাং এক্ষেত্রে নামায ছেড়ে দেওয়া না জায়েয হওয়া সম্পর্কিত প্রশ্নোক্ত কথাটি ঠিক নয়। সুতরাং এ ধরণের পরিস্থিতিতে নামাযে থেকে উপরোক্ত (৩৮ নং প্রশ্নোত্তরের ‘ক’ তে উল্লেখিত) নিয়ম অনুযায়ী একহাত দিয়ে বন্ধ করা সম্ভব হলে তাই করবে। কিন্তু তা সম্ভব না হলে নিজের নামায ছেড়ে দিয়ে হলেও রিং বন্ধ করে দিবে। অতঃপর মাসবুকের ন্যায় আবার নতুন করে জামাতে শরীক হবে। -রদ্দুল মুহতার ১/৬৫৫

মোবাইলের মেমোরি কার্ড এবং ডাটা ক্যাবল

প্রশ্ন : মোবাইলের মেমোরি কার্ড এবং ডাটা ক্যাবল ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয কি না? ডাটা ক্যাবল দ্বারা কম্পিউটার ও ইন্টারনেট-এর সাহায্যে বৈধ এবং অবৈধ ও অশ্লীল বস্ত্ত মোবাইলে নেওয়া হয়। আর মোবাইলের মেমোরি কার্ডে অডিও, ভিডিও এবং সকল প্রকার রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয়। এর ক্রয়-বিক্রয় জায়েয কি না?

উত্তর : মেমোরি কার্ড এবং ডাটা ক্যাবল এ দুটি বস্ত্তর ব্যবহারক্ষেত্র নাজায়েয হওয়া সুনির্দিষ্ট নয়। বরং মেমোরি কার্ডে প্রাকৃতিক দৃশ্য, বিভিন্ন ধরনের ছবি, গজল, হামদ-নাত, কুরআনে কারীমের তিলাওয়াত ইত্যাদিও সংরক্ষণ করা যেতে পারে। আর ডাটা ক্যাবলের মাধ্যমে কম্পিউটার থেকে এ ধরনের জায়েয বস্ত্ত সরবরাহ করা যেতে পারে। তাই মৌলিকভাবে এ দুটি বস্ত্তর ক্রয়-বিক্রয় নাজায়েয নয়। কিন্তু এ কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নাজায়েয কোনো কিছু আদান-প্রদান ও সংরক্ষণের জন্য এসব বস্ত্তর ব্যবহার নাজায়েয।

-রদ্দুল মুহতার ৬/৩৯১, বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ ১/৩৫৯, জাওয়াহিরুল ফিকহ ২/৪৪৬

মোবাইল ও ইন্টারনেট

প্রশ্ন : মোবাইলে ইন্টারনেট সার্চ করার হুকুম কী?

উত্তর : ‘ইন্টারনেট’ হল তথ্যের এক বিশাল জগত। এখানে যেমন নাজায়েয বস্ত্ত, দুনিয়ার সকল অশ্লীল জিনিস আছে তদ্রূপ ভাল ও দ্বীনি বিষয়ে জানারও অনেক কিছু আছে। তাই ইন্টারনেটের উপর ব্যাপকভাবে কোনো হুকুম আরোপ করা দুষ্কর। এর হুকুম হবে ব্যবহারকারী হিসাবে। ব্যবহারকারী যদি এ থেকে নাজায়েয ও অবৈধ বস্ত্ত সার্চ করে তবে গুনাহ হবে। আর যদি বৈধ ও জায়েয বস্ত্ত সার্চ করে তবে জায়েয হবে।

-রদ্দুল মুহতার ৬/৩৫০; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যা মুআসারা ১/৩৫৯

পণ্যসামগ্রীর দোকানে বিভিন্ন সিম ব্যবহারকারীদেরকে দেওয়া ডিসকাউন্ট

প্রশ্ন : কিছু কিছু পণ্যসামগ্রীর দোকানে ক্রেতার জন্য গ্রামীণ সিম ব্যবহারকারী বা বাংলালিংক লেডিস ফার্স্ট সিম ব্যবহারকারীর জন্য পুরো মূল্যের উপর ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়। যেমন ‘পেগাসাস সুজ’ কোম্পানির শোরুম থেকে কোনো জুতা ক্রয় করলে গ্রামীণ সিম ব্যবহারকারীদের জন্য ১০% ‘থ্যাংকইউ ডিসকাউন্ট’ দেয়। ক্রেতা দোকান থেকেই নির্দিষ্ট নাম্বারে ম্যাসেজ করে দিলে কোম্পানি থেকে একটি ফিরতি ম্যাসেজ আসে। সেই ম্যাসেজ দোকানের ক্যাশে  দেখালে ১০% মূল্য ছাড় দেয়। এভাবে ১০০০ টাকার জুতা ৯০০ টাকা দিয়ে পাওয়া যায়। তদ্রূপ বাংলালিংকের লেডিস ফার্স্ট সিম ব্যবহারকারীর  জন্য নাভানা ফার্নিচার, বিভিন্ন জুয়েলার্স, চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট ইত্যাদিতে ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়। জানতে চাই এই ডিসকাউন্ট নেওয়াটা বৈধ কি না? স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে যে, আমি দ্রব্য নিচ্ছি পেগাসাস, নাভানা ইত্যাদি থেকে, কিন্তু তারা আমার সিমের উপর নির্ভর করে আমাকে ডিসকাউন্ট দিচ্ছে। এ ডিসকাউন্ট নেওয়া আমার জন্য বৈধ কি না? এতে তো কোনো প্রকার সুদ নেই?

উত্তর : এই ছাড় গ্রহণ করা জায়েয। এটি সুদ নয়। ক্রেতার জন্য এ মূল্যছাড় বিক্রেতার পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে বলেই ধর্তব্য হবে। আর বিক্রেতার জন্য স্বেচ্ছায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্ধারিত মূল্য হতে ছাড় দেওয়া জায়েয এবং পছন্দনীয় কাজ।

সৌজন্যে- (আহলে হক মিডিয়া)