জামেয়া ইসলামিয়া ফরিদাবাদ সিলেট

March 23 2019, 08:40

qowmipedia.com,

প্রতিষ্ঠানের নাম :- জামেয়া ইসলামিয়া ফরিদাবাদ সিলেট

প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা :- বড়শলা, এয়ারপোর্ট, সিলেট

প্রতিষ্ঠা কাল :- ৭ আগস্ট ২০০৯

প্রতিষ্ঠাতা :- হাফিয মাওলানা ফখরুযযামান

প্রতিষ্ঠাকালিন মুহতামিম :- হাফিয মাওলানা ফখরুযযামান

প্রতিষ্ঠাকালিন শিক্ষাসচিব :- মাওলানা দিলাওয়ার হোসাইন

প্রতিষ্ঠাকালিন শিক্ষকবৃন্দ :- ১. হাফিয মাওলানা ফখরুযযামান
২. খায়রুল ইসলাম বড়লেখি
৩. মাওলানা দিলাওয়ার হোসাইন
৪. মাওলানা আবদুল কাদির

প্রতিষ্ঠাকালিন জামাত সংখ্যা,বর্তমান সমাপনী জামাত / মাদরাসা দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত হলে্ এর উদ্বোধনীর সন :- শিক্ষাকার্যক্রম
চারটি বিভাগে পরিচালিত হচ্ছে জামেয়ার সাধারণ শিক্ষাকার্যক্রম:
১. নাযারাহ বিভাগ।
২. হিফয সবক বিভাগ।
৩. হিফয তাকমীল বিভাগ।
৪. কিতাব বিভাগ।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সুদূরপ্রসারি শিক্ষাকার্যক্রমের ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে হিফয বিভাগ দিয়ে। ৬জন শিক্ষকের পাঠদান ও ৩৬জন ছাত্রের পড়াশোনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় নতুন জামেয়ার নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক যাত্রা। সম্পন্ন হয় প্রথম বৎসর। এভাবে হিফযের কার্যক্রম চলতে থাকে আরো তিন বৎসর। শুরু হয় নতুন চিন্তা। দেশের মাদারিসের সার্বিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে প্রথম ফারেগদের দিয়েই জামাতবিভাগ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিই। জামাতবিভাগ চালু করতে গিয়ে নতুনকরে পরিদর্শন করতে হয়, বাংলাদেশে বিদ্যমান কিতাবি শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন ধারা ও উপধারা। সামনে রাখতে হয় ছাত্রদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। শিক্ষাক্ষেত্রে দারসে নেজামি ও মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ হা.-কর্তৃক প্রণীত মাদানি নেসাবের সিলেবাস এবং তার পঠন-পাঠন পদ্ধতি। এদারা, বেফাক, তানজিম বোর্ডের উন্নতি-অবনতির নানান বিষয়। অবশেষে পরীক্ষামূলক ‘মাদানি নেসাব’ দিয়েই ২০১৩ সালের মাঝামাঝি ১৪৩৪ হিজরি সনের শাওয়াল মাস থেকে ১জন উস্তাদের পাঠদান ও ১০ জন ছাত্রের পাঠগ্রহণের মধ্যদিয়ে শুরু হয় জামাতবিভাগের যাত্রা।
এক. নাযারাহ বিভাগ। আসন সংখ্যা ১০০ (একশত) জন
যারা ছোট এবং হিফযে পড়তে আগ্রহী, তাদেরকে এখানে ভর্তি করা হয়। সম্পূর্ণ আলাদা ব্যবস্থাপনায় শতাধিক শিক্ষার্থীকে নিয়ে পরিচালিত হয় এ বিভাগ। আন্তর্জাতিক হাফিয-কারীদের তিলাওয়াত ও লেখাপড়ার বিশ্বমান বজায় রাখার জন্য ব্যবহার করা হয় সাউন্ডসিস্টেমসহ মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর। নিবিড়ভাবে মেহনত করা হয়, একবৎসর বা এর চেয়ে কমও। বৎসর শেষে বাচ্চার সাহস, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে নেয়া হয় নতুন সিদ্ধান্ত। হিফযের জন্য উপযুক্ত হলে তাকে হিফযে দিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও অন্যদের বিষয় কর্তৃপক্ষ, আসাতিযা, অভিভাবক ও ছাত্রের যৌথ পরামর্শে তার জন্য যা কল্যাণকর তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২৪ঘণ্টার রুটিন ও ৪জন প্রশিক্ষিত শিক্ষকের তত্ত্বাবধান ও নিরলস প্রচেষ্টায় বর্তমানে নাযারাহ বিভাগ পরিচালিত হচ্ছে। নাযারাহ বিভাগে ভর্তির বয়সসীমা সর্বনিম্ন আট। আর ভর্তির সময় নতুন শিক্ষাবর্ষ শাওয়ালের ১৫ তারিখ পর্যন্ত এবং ইংরেজি নতুন সনের পুরো জানুয়ারি মাস।
দুই. হিফয সবক বিভাগ। আসন সংখ্যা ২০০(দুইশত) জন
এ বিভাগের ছাত্ররা আবার তিন গ্রুপে বিভক্ত।
১. হিফয প্রথম : ১ থেকে ১০ পারা পর্যন্ত সবকের ছাত্ররা।
২. হিফয দ্বিতীয় : ১ থেকে ২০ পারা পর্যন্ত সবকের ছাত্ররা।
৩. হিফয তৃতীয় : ১ থেকে ২০ পারার উপরের সবকের ছাত্ররা।
তিন. হিফয তাকমীল বিভাগ। আসন সংখ্যা ৬৫ (পয়ষট্টি) জন
ক. সাধারণ গ্রুপ। আসন সংখ্যা ৫০ (পঞ্চাশ) জন
যারা বোর্ডের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেবে, তারা এ বিভাগের ছাত্র হিসেবে বিবেচিত হয়।
খ. প্রতিযোগী গ্রুপ। আসন সংখ্যা ১৫(পনের) জন
যারা বোর্ডের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে যারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণে আগ্রহী তাদের জন্য বিশেষ এই বিভাগ।
চার. কিতাব বিভাগ। আসন সংখ্যা ১৫০ (একশত পঞ্চাশ) জন
কিতাব বিভাগে রয়েছে চারটি জামাত।
১. এদাদিয়া।
২. মাদানি নেসাব প্রথম বর্ষ।
৩. মাদানি নেসাব দ্বিতীয় বর্ষ।
৪. কাফিয়া।
এক. এদাদিয়া। আসন সংখ্যা: ৪০ (চল্লিশ) জন
দেশের হিফযশাখাগুলোতে আমাদের বাচ্চারা প্রায় ৮-৯ বৎসর বয়সে ভর্তি হয়ে যায়। ফলে প্রাথমিক বাংলা, গণিত, ইতিহাস, ভূগোল, সমাজ, ইংরেজির সাথে হিফযপড়–য়া বাচ্চাদের চলনসই পরিচয়-পরিচিতি হয় না। একান্ত হলেও কার্যকর থাকে না। আবার অনেক বাচ্চা, যারা প্রাথমিক পড়াশোনা শেষে হিফয শুরু করে থাকে। উভয় গ্রুপের ছাত্ররা হিফয শেষে কিতাব বিভাগে ভর্তি হতে হিমশিম খায়। তাদের বিষয় বিবেচনা করে বাংলা, ইংরেজি, ইত্যাদি মোটেও না জানা বাচ্চাদের পড়াশোনা আমরা এদাদিয়া জামাত থেকে শুরু করি। এদাদিয়া জামাতের বাচ্চাদের সাহস ও যোগ্যতা অনুসারে প্রত্যেক বিষয়ই আমরা সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক কিতাব দিয়েই শুরু করি এবং শেষ করি সারফ জামাত বা মাদানি নেসাব ১ম বর্ষ পড়ার উপযুক্ত করতে প্রয়োজনীয় কিতাবাদির পাঠদানের মাধ্যমে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ১৪৪০ হিজরীর শাওয়াল থেকে এদাদিয়া জামাতের কার্যক্রম শুরু হবে সম্পূর্ণ অভিনব পদ্ধতিতে। প্রথম ৬মাসে পৃথকভাবে গুরুত্ব থাকবে কেবল ইংরেজি, উর্দূ ও বাংলাভাষায়। দ্বিতীয় ৬মাসে গুরুত্ব থাকবে আরবী, গণীত ও অন্যান্য বিষয়াদিতে। উভয়পর্বে হিফযুল কুরআনের গুরুত্ব তো থাকবেই। এজন্য ইংরেজি, বাংলা ও উর্দূর প্রতি আগ্রহী ছাত্ররা এ সুযোগ কাজে লাগানোর এটা একটা মোক্ষম সময়।

দুই. মাদানি নেসাব প্রথম বর্ষ। আসন সংখ্যা: ৬০ (ষাট) জন
হিফযপড়–য়া বা যাদের আরবি, বাংলা, ইংরেজি, গণিত ইত্যাদি মাদানি নেসাব প্রথম বর্ষের জন্য চলনসই, তাদেরকে ভর্তি করা হয় মাদানি নেসাব প্রথম বর্ষে। দু‘পর্বে পরিচালিত হয় এ জামাত। প্রত্যেক পর্বের সময় ছ‘মাস।
প্রথম ছ‘মাসের সিলেবাস: ১. আত-তারীক ইলাল আরাবিয়্যাহ। ২. আত-তামরীনুল কিতাবি। ৩. বাংলা। ৪. প্রাথমিক গণিত।
দ্বিতীয় ছ‘মাসের সিলেবাস: ১. আত-তারীক ইলাল আরাবিয়্যাহ। ২. আত-তামরীনুল কিতাবি। ৩. বাংলা (৫ম শ্রেণীর)। ৪. কাসাসুন নাবিয়্যিন ১ম খ-। ৫. আত-তারীক ইলাস সারফ। ৬. সহজ ইংরেজি। মাত্র একবছরের মেহনতে এ জামাতের ছাত্ররা আরবিতে কথা বলার যোগ্যতা অর্জন করে থাকে এবং প্রাথমিক যেকোনো আরবি কিতাব নির্ভুলভাবে পড়ার কৌশল রপ্ত করতে সক্ষম হয়। আলহামদুলিল্লাহ!
তিন. মাদানি নেসাব দ্বিতীয় বর্ষ। আসন সংখ্যা: ৩০ (ত্রিশ) জন
এ জামাতও দু‘পর্বে পরিচালিত।
প্রথম ছ‘মাসের সিলেবাস: ১. আত-তারীক ইলান নাহু। ২. আত-তারীক ইলাল কুরআন ১ম খ-। ৩. আত-তারীক ইলাল উর্দু। ৪. আল-কিরাআতুর রাশেদা। ৫. কাসাসুন নাবিয়্যিন ২য় খ-। ৬. আত-তারীক ইলাল ফিকহ। ৭. সহজ ইংরেজি।
দ্বিতীয় ছ‘মাসের সিলেবাস: ১. আত-তারীক ইলাল কুরআন ২য় খ-। ২. হেদায়াতুন নাহু। ৩. ইলমুস সীগাহ। ৪. আল-ফিকহুল মুয়াসসার। ৫. কাসুসন নাবিয়্যিন ৩য় খ-। ৬. আল-কিরাআতুর রাশেদা।
৭. মানতিক। ৮. ইমদাদুল উসুল।
চার. কাফিয়া: আসন সংখ্যা: ২০ (বিশ) জন
আসন সংখ্যা: এয়ারপোর্ট শাখা
এক. নাযারাহ বিভাগ। আসন সংখ্যা ১০০ (একশত) জন
দুই. হিফয সবক বিভাগ। আসন সংখ্যা ২০০(দুইশত) জন
তিন. হিফয তাকমীল বিভাগ। আসন সংখ্যা ৬৫ (পয়ষট্টি) জন
চার. এদাদিয়া। আসন সংখ্যা: ৪০ (চল্লিশ) জন
পাঁচ. মাদানি নেসাব প্রথম বর্ষ। আসন সংখ্যা: ৬০ (ষাট) জন
ছয়. মাদানি নেসাব দ্বিতীয় বর্ষ। আসন সংখ্যা: ৩০ (ত্রিশ) জন
সাত. তৃতীয় বর্ষ: আসন সংখ্যা: ২০ (বিশ) জন
………………….
মোট=৫১৫ জন

টিলাগড় শাখা
১. নাযারা বিভাগ ২০
২. হিফয বিভাগ ৩০
…………………..
মোট=৫০জন
আগামী বছর দুই শাখা মিলে ভর্তি দেওয়া হবে মোট ৫৬৫ জন ছাত্র।

অত্র অঞ্চলের মানুষকে নিরক্ষরতা দূরিকরণে মাদরাসার ইতিবাচ ভূমিকা, মানুষের সামাজিক সাংস্কৃতিক দৈনতার পরিবর্তনে প্রতিষ্ঠানের অবদান :- আন নাজাহ ছাত্রসংসদ
যোগ্যতা শুধুমাত্র কিতাবি পারদর্শিতার নাম নয়। যোগ্যতা একটি সার্বজনীন ও বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতার উপযোগী উপস্থাপনার বিষয় এবং নাম। এতে কিতাবাদিতে পারদর্শিতার যেমন দখল রয়েছে, তেমনি রয়েছে বক্তৃতা, লেখনি, তর্ক, বিতর্ক, আচার, আচরণ ও উচ্চারণেরও বিরাট দখল। জামাতে জামাতে উস্তাযদের পাঠদানের মাধ্যমে ছাত্রদের কিতাবি যোগ্যতা তৈরি হয়। নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্ধারিত কিতাবের লেখনিচর্চা হয়। দারসের মাধ্যমে তৈরি হয় ছাত্রের মূল যোগ্যতা। কিন্তু বাকি থেকে যায়, মূল যোগ্যতা উপস্থাপনার মতো সহায়ক অন্যান্য আরো অনেক যোগ্যতা। অবশিষ্ট থেকে যায়, অজানা বিশ্বের অনেক কিছু। না জানা রয়ে যায়, সমাজজীবনে চলাচলের কলাকৌশল। অধরা থেকে যায়, সমাজপরিচালনার কলকব্জা। না জানা রয়ে যায়, সমাজসেবার কার্যত ভূমিকার পদ্ধতিসহ আরো অনেক কিছু। এ যোগ্যতার্জন একসময় (আকাবিরদের সময়ে) অনানুষ্ঠানিকভাবে অর্জন হওয়া সম্ভব হলেও সঙ্গত কারণে বর্তমানে আমাদের ছাত্রদের দিয়ে তা হচ্ছে না। এদিকে এ সবকিছু হাতে কলমে জামাতে জামাতে শিখিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। তা শিখতে হচ্ছে ছাত্রদের পারস্পরিক বন্ধন, আয়োজন করে দারসের ফাঁকে ফাঁেক। যাকে আমরা মূল যোগ্যতা বহিঃপ্রকাশের সহযোগী যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করে থাকি। বস্তুত এটি সহযোগী যোগ্যতা হলেও অনেক ক্ষেত্রে এও মূল যোগ্যতা হিসেবে উপস্থাপন করতে হয়। সবমিলিয়ে এ যোগ্যতার্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। জামেয়ার ছাত্ররা সর্বপ্রকার যোগ্যতায় অভিজ্ঞ হওয়ার লক্ষ্যেই ১৪৩৬ হিজরি সনে তাদের জন্য গঠন করে দেয়া হয়েছে ‘আন-নাজাহ’- ছাত্রসংসদ। নির্ধারিত জিম্মাদার উস্তাযদের তত্ত্বাবধানে ছাত্ররা তাদের বক্তৃতা, লিখনিচর্চা চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রসংসদের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে- সাপ্তাহিক/পাক্ষিক সভার আয়োজন, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সমাজসেবা, মাদরাসার বিভিন্ন বিষয়াদির প্রতি খেয়াল করা, উন্নয়নে ভূমিকা রাখা, অসহায়-দুর্বলের সেবায় এগিয়ে আসা, ইত্যাদি। নির্ধারিত সভাপতির তত্ত্বাবধানে জামাতবিভাগের ছাত্ররা সংসদগঠনের পর থেকেই নিয়মিত সভার কাজ আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে। ১৪৩৯-৪০ হিজরিতে ১০টি সাধারণ সভা ও একটি প্রাণবন্ত বার্ষিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছাত্রসংসদ সাপ্তাহিক ছোট কাগজ ও ছাত্রদের হাতেলেখা নির্বাচিত রোজনামচা প্রকাশের ধারাবাহিকতা প্রথম থেকেই অব্যাহত রেখে আসছে। এতে ছাত্রদের লেখাপড়ার পাশাপাশি বক্তৃতা দেয়া, প্রবন্ধ লেখা, মুকালামা করা, রচনাতৈরি ও পাঠচর্চা অব্যাহতভাবে চলছে এবং ছাত্ররা সার্বিক যোগ্যতা নিয়ে বড় হচ্ছে।
অভিভাবক সম্মেলন
ছাত্র-উস্তায ও অভিভাবকের যৌথ নাম হচ্ছে, মাদরাসা। দেশের যেকোনো মাদরাসার সাথে শতকরা ৫০-৫৫ জন অভিভাবকের সম্পর্ক রয়েছে। যে মাদরাসার সাথে অভিভাবকের সম্পর্ক যত বেশি জোরালো, সে মাদরাসার ছাত্ররা পড়ালেখার প্রতি ততো বেশি মনোযোগী, আগ্রহী এবং ঝামেলামুক্ত। যেহেতু সে ছাত্র, বয়স যতই হোক, তার মধ্যে চঞ্চলতা, সমস্যা, বিশৃঙ্খলা থাকবেই। তবে এগুলো কাটিয়ে উঠা যায়, যদি ছাত্রের সমস্যা জায়গামত সনাক্ত ও সমাধান করা হয়। এই জায়গামতো সনাক্ত ও সমাধান করতে গেলেই প্রয়োজন দেখা দেয় অভিভাবকের সাথে আলোচনা-পর্যালোচনার। এছাড়া ছাত্রের পড়াশোনার উন্নতি-অবনতির অনেক বিষয় অভিভাবকের সাথে সম্পৃক্ত। এ সববিষয়কে সামনে রেখে ছাত্রের পড়াশোনা উন্নত করতে গেলে মাদরাসাকর্তৃপক্ষ ও অভিভাবক সম্মেলনের বিকল্প নেই। জামেয়া তার বাচ্চাদের লেখাপড়ার উন্নতির জন্য বাৎসরে তিনটি অভিভাবক সম্মেলন করে থাকে। যে কারণে আমরা আমাদের ছাত্রদের থেকে পড়াশোনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এমন জটিল কোনো সমস্যার তেমন সম্মুখীন হই না। আশাকরি হবও না-ইনশাআল্লাহ! এব্যাপারে আমরা বেশ সহযোগিতা পাচ্ছি স্বয়ং অভিভাবকদের কাছ থেকে। আমাদের প্রায় সকল অভিভাবকই জামেয়ার অভিভাবক সম্মেলনের প্রতি আন্তরিক এবং উৎসাহী।
শিক্ষাসফর
শিক্ষাসফর জ্ঞানার্জনে প্রভাববিস্তারকারী এক প্রচীন পদ্ধতি। হযরত আদম থেকে শুরু করে নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত সবাই শিক্ষাসফর করেছেন। শিক্ষাসফর করেছেন সকল আহলে ইলম। খতিব বাগদাদি তাঁদের অন্যতম। ‘আর রিহল্লাহ ফি তলবিল হাদিস’ এর জীবন্ত সাক্ষী। একা একা শিক্ষাসফর প্রাচীনযুগেও ছিল এখনো আছে। তবে সম্মিলিতভাবে শিক্ষাসফর প্রাচীনযুগেও কম এখনো কম। সম্মিলিতভাবে শিক্ষাসফরের গুরুত্ব যে দৃষ্টিকোণে গুরুত্বের এই সেই দৃষ্টিকোণেই উস্তায-ছাত্র ও অভিভাবক নিয়ে শিক্ষাসফর আরো বেশি গুরুত্বের। দেশের হাতেগোনা কয়েকটি সাধারণ কারিকুলামের প্রতিষ্ঠান এ ধরনের শিক্ষাসফরে অভ্যস্ত হলেও কওমিধারার মাদারিসগুলোর মধ্যে জামেয়া ইসলামিয়া ফরিদাবাদ সিলেটই প্রথম। প্রত্যেক বছরই সে তার এ শিক্ষাসফর চলমান রেখে আসছে। এতে ছাত্রদের বিনোদন, আনন্দ, ব্যায়াম, তিনপ্রজন্মের সাথে সফরের অভিজ্ঞতার্জন, প্রকৃতিপরিচিতির পাশাপাশি জানাশুনা হয় অনেক কিছু।
শিক্ষকপ্রশিক্ষণ
দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উস্তাদের পাঠদানের বিকল্প নেই। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন শিক্ষকের পাঠদান সাধারণ ১০জন শিক্ষকের পাঠদানের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ও অনেক ফলপ্রসূ। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন শিক্ষকের হাতেই তৈরি হতে পারে দেশ ও জাতির সচেতন হাজারো তরুণ। শিক্ষকপ্রশিক্ষণের গুরুত্ব নানাবিধ কারণে সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় অনেক হলেও মাদারিসে কওমিয়ায় আশাতীত নয়। ফলে তৈরি হচ্ছে না সচেতন কর্মীবাহিনী। গড়ে উঠছে না রিজাল তৈরির নীরব কাফেলা। শিক্ষকপ্রশিক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি জামেয়া ইসলামিয়া ফরিদাবাদ গুরুত্ব দিয়ে আসছে তার জন্মলগ্ন থেকেই। জামেয়ার নিজস্ব শিক্ষকদের নিয়ে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে পৃথক পৃথক প্রায় ১০টি প্রশিক্ষণ কর্মশালা। এছাড়া জামেয়া এবং বিভিন্ন মাদরাসার শতাধিক উদ্যমী, সচেতন উস্তায নিয়ে এ পর্যন্ত পশিক্ষণ কর্মশালা হয়েছে, মোট ৮টি। প্রত্যেকটিতে প্রশিক্ষক হিসিবে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় ও জাতীয় আলোচকবৃন্দ। তাদের মধ্যে দারুল উলুম দেওবন্দের নাইবে মুহতামিম হযরত মাওলানা আবদুল খালিক সাম্বলি, দারুল উলুমের তাখাস্সুস ফিল হাদিসের উস্তায মাওলানা আবদুল্লাহ মারুফি, মুফতি দিলাওয়ার হোসাইন, প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম, প্রফেসর মোহাম্মদ মোয়াজ্জম হোসেন, ড. শামীম খান, ড. আবদুল্লাহ আল মুমিন, বেফাকুল মাদারিসের প্রশিক্ষক মাওলানা এনামুল হক, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির উপপরিচালক, মাওলানা শাহ নজরুল ইসলাম অন্যতম। জামেয়ার আয়োজনে এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা থেকে প্রশিক্ষণার্থী অনেক উপকৃত হয়েছেন এবং কর্মক্ষেত্রে তারা অনেকের উপকারও করতে পরেছেন- বলে একাধিক অনুভূতি আমরা রেকর্ড করেছি। ফলে দিন-দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে শিক্ষকপ্রশিক্ষণ কর্মশালার চাহিদা। প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে বৃহৎ পরিসরে প্রশিক্ষণ কর্মশালার। জামেয়ার সীমিত পরিসরে কোনোভাবেই বৃহত্তর সিলেটবাসীর এ চাহিদাপূরণ সম্ভব নয়। আমরা মনে করি জামেয়া এ ধারা শুরু করেছে, এর সাথে এগিয়ে আসুক আরো প্রতিষ্ঠান, এগিয়ে অসুন আরো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ এবং বোর্ডও। এক্ষেত্রে জামেয়া তার সর্বপ্রকার অভিজ্ঞতা দিয়ে এগিয়ে আসা প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও বোর্ডকে সহযোগিতা করতে সদা প্রস্তুত রয়েছে- ইনশাআল্লাহ।
দাওয়াত ও তাবলীগ
তালিম, তাজকিয়া ও তাহরিক- এর কাজ বিভিন্নভাবে জামেয়ায় চলমান। দাওয়াত ও তাবলীগের সাথে জামেয়ার ছাত্ররা সক্রিয় এবং অভ্যস্ত হতে জামেয়া তার জামাতবিভাগের ছাত্রদের জন্য মাসিক ২৪ঘণ্টা, সবার জন্য সাপ্তাহিক গাশত, দৈনিক মাশওয়ারা ও তালিম, বাদ ফজর সম্মিলিত ইয়াসীন তেলাওয়াতসহ ইত্যাদির আমল বাধ্যতামূলক করে রেখেছে। এছাড়া সময় সুযোগে তিনদিন, রামাযানে চিল্লা লাগানোর প্রতিও নিয়মতান্ত্রিক সবাইকে উৎসাহ দিয়ে আসছে।
কুতুবখানাবিভাগ
যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানুষ গড়ে তুলতে হলে কুতুবখানা বা লাইব্রেরির গুরুত্ব অনেক। জামেয়া ধীরে ধীরে অন্যান্য বিষয় মোটামোটি গোছিয়ে আনার চেষ্টা করছে। বাকি আছে আরো কিছু বিষয়ের মতো কুতুবখানা বিভাগও। ইচ্ছা আছে পর্যায়ক্রমে একটি সমৃদ্ধ কুতুবখানা গড়ে তোলার।
প্রকাশনাবিভাগ
প্রকাশনা বিভাগ জামেয়ার অন্যতম পরিকল্পনা। এ বিভাগের অধীনে একদল যোগ্য, দক্ষ, সচেতন, অভিজ্ঞ অনুবাদক, সঙ্কলক দিয়ে মৌলিক রচনা, অনুবাদ, ব্যাখ্যাগ্রন্থ, গবেষণাকর্ম আঞ্জাম দেয়ার প্রবল ইচ্ছা রয়েছে। তাওফীকের মালিক একমাত্র আল্লাহপাক।

মাদরাসার স্বর্নোজ্বল ইতিহাস :- ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্বরকাননে বাংলার স্বাধীনতার শেষ সূর্য অস্তমিত হলেও বৃটিশরা দীর্ঘ দিন এদেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে হস্তক্ষেপ করার সাহস করেনি। কৌশলে ধীরে ধীরে এগুতে থাকে। ১৮৫৭ সালের আজাদী আন্দোলন দমন করার পর উপমহাদেশে হাজার বছরে গড়ে উঠা আরবি ও ফারসী-ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। এক পর্যায়ে ওস্তাযুল আসাতিযা ভারতের জ্ঞানসাগর মাওলানা মামলুক আলী নানুতুবি রাহ. এর ছাত্র ইলমে নুবুওয়াতের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক মাওলানা কাসিম নানুতুবি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, মাওলানা রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, মাওলানা মোহাম্মদ মাযহার রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, মাওলানা ইয়াকুব নানুতভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এগিয়ে আসেন। তাদের নেতৃত্বে হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর রহিমিয়া ও মোল্লা নিজাম উদ্দিন শাহলভীর দরসে নেজামি এ দুই ধারার সমন্বয় করে ১৮৬৬ সালে ঐতিহাসিক দেওবন্দ মাদরাাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। যা কওমি মাদরাসা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। একদিকে বৃটিশ বিরোধী সংগ্রামকে জাগিয়ে রাখার শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে এই দেওবন্দ। অন্যদিকে নিবিড় জ্ঞানচর্চার সেরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে। তারই ধারাবাহিকতায় ও আদলে গোটা পাক ভারত উপমহাদেশে গড়ে উঠে এ জাতীয় আরো অনেক মাদরাসা। জামেয়া ইসলামিয়া ফরিদাবাদ সিলেট’ এগুলোর একটি ।
শাহজালালের স্মৃতিবিজড়িত পুণ্যভূমি সিলেট। এর গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গতানুগতিক পদ্ধতিতে চলছে শিক্ষাদান। যুগ যখন এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে, লেখাপড়ায়ও আসছে আন্তর্জাতিক মান, সবকিছুতে নতুনত্বের ছোঁয়া। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে চলছে প্রতিযোগিতা। গড়ে ওঠছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। এরকমই এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘জামেয়া ইসলামিয়া ফরিদাবাদ সিলেট।’
২০০৯ সালের ৭ই আগস্ট শুরু করে যাত্রা। অস্থায়ীভাবে কিছুদিন সাগরদিঘীর পাড় রোডস্থ মসজিদে এলাহির সন্নিকটে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। তখন নাম ছিল “জামেয়া ইসলামিয়া সিলেট”। পরবর্তীতে ২০১০ সালে প্রাকৃতিক লীলাভূমি সিলেটের এয়ারপোর্ট এলাকায় পাড়ি জমায়। যেখানে চারিদিকে সবুজের সমারোহ। দৃষ্টিনন্দন চা-বাগান। ছোটবড় টিলা আর বৃক্ষঘেরা মনোরম পরিবেশ। এরই মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে জামেয়া।

মাদরাসার বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করে আগামীর পরিকল্পনা :- পরিকল্পনাসমূহ
১. প্রত্যেক বিভাগকে অত্যাধুনিক করা।
২. সমন্বিত সিলেবাস প্রণয়ন করা।
৩. সমৃদ্ধ একটি কুতুবখানা গড়ে তোলা।
৪. পৃথক পৃথক সেমিনার হল, পরীক্ষার হল, মেহমানখানা, দারুল মুতালা‘আ গড়ে তোলা।
৫. কেরাত, তাফসীর, হাদিস, ফিক্বহ, আরবি সাহিত্য, সারফ-নাহু, দাওয়াহ ও বাংলাসাহিত্য
বিষয়ে বিশেষ কোর্স চালু করা।
৬. জামেয়ায় নিজস্ব বহুতলবিশিষ্ট ভবন ও মসজিদ নির্মাণ করা।

মাদরাসাটি যে বোর্ডের অধিনে :- আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম বাংরাদেশ এবং বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ

মাদরাসার হিসাব ব্যাবস্থা / ফান্ড:- জামেয়ার স্থাবর কোনো সম্পত্তি নেই। ছাত্রদের কাছ থেকে আসা মাসিক ফি হচ্ছে জামেয়ার ব্যয়নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন। এ ছাড়া সাধারণভাবে চাঁদা সংগ্রহের প্রচলিত কোনো নিয়ম আমাদের নেই। স্বেচ্ছায় কেউ কিছু দান করতে চাইলে তা যাচাই-বাচাই করে গ্রহণ করা হয়। এছাড়া কুরআনপ্রেমিক দেশি-বিদেশি কোনো ভাই কাউকে হাফিয বা আলিম বানাতে স্পন্সর করতে চাইলে সবার উপযুক্ততা, আলোচনা ও বিবেচনা-সাপেক্ষে তা মূল্যায়নের একটি ব্যবস্থা রয়েছে।

বর্তমান মুহতামিম :- হাফিয মাওলানা ফখরুযযামান

বর্তমান মুহতামিমের মোবাইল নাম্বার :- ০১৭৩৮-৬২০৬০১

বর্তমান শিক্ষাসচিব :- মাওলানা দিলাওয়ার হোসাইন

বর্তমান শিক্ষকবৃন্দের তালিকা :- ৩৪ জন
১. হাফিয মাওলানা ফখরুযযামান
২. খায়রুল ইসলাম বড়লেখি
৩. মাওলানা দিলাওয়ার হোসাইন
৪. মাওলানা আবদুল কাদির
৫. মাওলানা লুকমান হাকিম

চলমান মোট ছাত্র সংখ্যা :- ৪৫০জন

চলমান দাওরায়ে হাদিস ছাত্র সংখ্যা :-

চলমান ছাত্রাবাসে অবস্থান রত ছাত্র সংখ্যা :- ৪৫০ জন

তথ্য দানকারীর নাম :- লুকমান হাকিম

তথ্য দানকারীর মোবাইল :- ০১৭২৭-৭২৪০৪৪

তথ্য দানকারীর ইমেইল :- lukmanbinashab@gmail.com

Spread the love