হযরত খাদিজাতুল কুবরা রা. দারুল হাদিস মহিলা মাদরাসা, দুর্লভপুর

November 27 2018, 03:52

qowmipedia.com,

প্রতিষ্ঠানের নাম :- হযরত খাদিজাতুল কুবরা রা. দারুল হাদিস মহিলা মাদরাসা, দুর্লভপুর

প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা :- দুর্লভপুর, কানাইঘাট পৌরসভা, সিলেট

প্রতিষ্ঠা কাল :- ১৯৯০ ঈসায়ী

প্রতিষ্ঠাতা :- শায়খুল হাদিস আল্লামা আলিমুদ্দিন শায়খে দুর্লভপুরী দা.বা.

প্রতিষ্ঠাকালিন মুহতামিম :- শায়খে দুর্লভপুরী

প্রতিষ্ঠাকালিন শিক্ষাসচিব :- মাও. আব্দুর রহীম সাহেব

প্রতিষ্ঠাকালিন শিক্ষকবৃন্দ :- তৎকালীন স্থানীয় কিছু উলামায়ে-কেরাম

প্রতিষ্ঠাকালিন জামাত সংখ্যা,বর্তমান সমাপনী জামাত / মাদরাসা দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত হলে্ এর উদ্বোধনীর সন :- বানাত অষ্টম। দাওরায়ে হাদিসের শুভ সূচনা হয় ২০১১ সালে।

অত্র অঞ্চলের মানুষকে নিরক্ষরতা দূরিকরণে মাদরাসার ইতিবাচ ভূমিকা, মানুষের সামাজিক সাংস্কৃতিক দৈনতার পরিবর্তনে প্রতিষ্ঠানের অবদান :- ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত জাতি গঠনে
মহিলা মাদ্রাসার প্রয়োজনীয়তা কী?
———————————-
প্রবাদ আছে, তোমরা আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেবো।
.
একসময় মেয়েরা ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য স্বীকৃত তেমন কোনো প্রতিষ্ঠান ছিলো না। নিজের ঘর কিংবা এলাকার মক্তবই ছিল তাদের প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষার উপযুক্ত স্থান। সেইসময়কার মেয়েরা ধর্মীয় শিক্ষায় যতটা না অগ্রগামী ছিলো, তারচেয়ে বেশি পিছিয়ে ছিলো জাগতিক শিক্ষার্জন থেকে। জাগতিক শিক্ষার্জন অনেকে ঘৃণার চোখে দেখতো।
.
কারণ, তখনকার মুসলিম মেয়েরা অতবেশি শিক্ষিত না হলেও ধর্মভীরু ছিলো। ধর্ম সম্পর্কে মা-দাদী থেকে যতটুকু জেনেছে তা পরিপূর্ণভাবে আমল করেছে। তারা শিক্ষার্জনে স্কুল-কলেজে যাওয়াকে ভিন্নচোখে দেখতো। নিজের ঘরই ছিল তাদের জন্য নিরাপদ এবং উপযুক্ত স্থান। তাই তখন প্রয়োজন পড়েনি তাদের জন্য আলাদা শিক্ষাঙ্গনের। জাগতিক শিক্ষাকে তারা গুরুত্বই দিতো না।
.
তবে সময়ের বিবর্তনে বদলে গেছে দৃশ্যপট।
এখন আধুনিক যুগ।
শিক্ষার বিকল্প নেই।
স্লোগান উঠেছে শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। সকলের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক। এখন মানুষ নানামুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। বসে নেই মেয়েরাও।
পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে তারাও এগিয়ে যাচ্ছে জ্ঞান অন্বেষণের অনন্য এক উচ্চতায়।
.
তবে সমস্যাটা হচ্ছে ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে। জাগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে এখন গ্রাম পাড়ি দিয়ে শহরে যেতে হয় না। প্রায় প্রতিটি এলাকা, গ্রাম, মহল্লায় গড়ে উঠেছে জাগতিক শিক্ষার নানামুখী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তবে মুসলিম দেশ হিসেবে সেই অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না ধর্মীয় মহিলা শিক্ষালয়।
.
ফলে মুসলিম পরিবারের মেয়েদেরও বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে জাগতিক শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে।
যেখানে নেই প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা।
নেই জীবন-যৌবনের নিরাপত্তা।
যেখানে মেয়েরা পাচ্ছে না প্রকৃত নৈতিক (দ্বীনি শিক্ষা।
আছে সর্বদা বিপদের আশঙ্কা।
সবকিছু বিবেচনা করে যুগের চাহিদা মিটাতে আজ থেকে বিশ-পঁচিশ বছর পূর্বে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয় মহিলা মাদ্রাসা।
.
মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার শুরুলগ্নে অনেক প্রসিদ্ধ আলেম মহিলা মাদ্রাসার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তাঁদের বিরোধিতার উল্লেখযোগ্য কিছু কারণও ছিল। কিন্তু ধীরে-ধীরে সেই বিরোধিতা কেটে মহিলা মাদ্রাসার দিকেই ঝুঁকে পড়ে আলেমসমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ মুসলমানরাও। কারণ, তারা স্পষ্ট লক্ষ্য করছে যে স্কুল-কলেজ মহিলাদের জন্য কিছুতেই নিরাপদ নয়। বিশেষকরে তারা জাগতিক শিক্ষাকেন্দ্রে ধর্মীয় শিক্ষার যথেষ্ট অভাব লক্ষ্য করছে।
.
ফলে মহিলা মাদ্রাসার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা দিনদিন বেড়েই চলেছে। মেয়েদের দ্বীন শেখাতে মহিলা মাদ্রাসার অবদান আজ অনস্বীকার্য। প্রকৃত দ্বীন মুসলিম ঘরে-ঘরে পৌঁছে দিতে মহিলা মাদ্রাসা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ইসলাম বিদ্বেষী অপশক্তি ইসলামকে চিরতরে মুছে দিতে জাগতিক শিক্ষার মাধ্যমে যে পায়তারা চালাচ্ছে তা আজ অনেকটা বাধাগ্রস্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে মহিলা মাদ্রাসা সঠিকপথে এগিয়ে যাওয়ার কারণে।
.
মহিলা মাদ্রাসায় যেমন সঠিক দ্বীন শিক্ষা দেওয়া হয়, তেমন যুগের চাহিদা মিটাতে বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজি, সমাজ, বিজ্ঞান, কম্পিউটার ইত্যাদি বিষয়েও গুরুত্ব সহকারে পাঠদান করা হয়। ক্বওমী মহিলা মাদ্রাসার ছাত্রীদের লেখাপড়ার মানও মাশা-আল্লাহ স্কুল-কলেজের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে। তাদের পাশের হারও উল্লেখযোগ্য।
.
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম মহিলা কওমী মাদ্রাসার প্রবর্তক অাল্লামা শায়খ অাবদুল মালেক হালীম সাহেব। যেটি \”হাইলধর মহিলা মাদ্রাসা\” নামে প্রসিদ্ধ। মাওলানা আব্দুল মালিক হালীম সাহেব \” ঈমানদ্বার নারী গঠনে মহিলা মাদ্রাসা অপরিহার্য \” নামক একটি মূল্যবান যুক্তিপূর্ণ পুস্তিকাও রচনা করেন।
.
অনেকে বলেন, স্কুল-কলেজের ছাত্রীরা যেরকম মাঝেমধ্যে অপকর্মে লিপ্ত হয়, তদ্রূপ মহিলা মাদ্রাসার ছাত্রীরাও তো অপকর্মে লিপ্ত হয়। তাহলে স্কুল-কলেজ আর মহিলা মাদ্রাসার মধ্যে পার্থক্য কই?
তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, দেখি আপনারা প্রমাণ দিন যে হারে স্কুল-কলেজের ছাত্রীরা অপকর্ম, অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয় তদনুযায়ী মহিলা মাদ্রাসার ছাত্রীদের অবস্থান কোন পর্যায়ে?
.
বেহায়াপনা আর বেলেল্লাপনায় লিপ্ত হওয়ার প্রথম উপকরণ হল নারী-পুরুষ সমানতালে শিক্ষাঙ্গনে যাওয়া। মহিলা মাদ্রাসার ছাত্রীরা স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের মত বয়ফ্রেন্ড নিয়ে গলায় হাত দিয়ে পার্কে ঘুরে বেড়ায় না। কোচিংয়ের নামে ছেলে-মেয়ে এক জায়গায় অশ্লীল আড্ডা জমায় না।
.
বিচ্ছিন্ন দু\’একটি ঘটনা সব জায়গায় ঘটে। তাই বলে ঢালাওভাবে মহিলা মাদ্রাসাকে অপকর্ম, অসামাজিক কার্যকলাপের স্থান বলা চলে না। এই মহিলা মাদ্রাসা জাতিকে দক্ষ, শিক্ষিতা, নীতিবান, আদর্শ মা উপহার দিচ্ছে। যা ইসলামের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য বড্ড প্রয়োজন। জাযাকুমুল্লাহু খইরন।

মাদরাসার স্বর্নোজ্বল ইতিহাস :- ইলমে-দ্বীন বা ইসলামী শিক্ষা অর্জন প্রত্যেক মুসলমান নার-নারীর উপর ফরয, যাতে করে কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক জীবন-যাপন করে ইহকালের কল্যাণ ও পরকালের নাজাত হাসিল করা যায়। একমাত্র সহীহ দ্বীন শিক্ষার দ্বারাই হালাল-হারাম, ন্যায়-অন্যায় এর পার্থক্য নির্ণয় করতঃ সকল প্রকার ভ্রান্তি পরিহার করে সঠিক পদ্ধতিতে ঈমান ও আমলের পথে জীবন পরিচালনা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন করা যায়। এ জন্যই কুরআন ও হাদীসে দ্বীনি শিক্ষার গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা বুঝাতে অসংখ্য বাণী বিদ্যমান রয়েছে।

একজন মুসলমানের জন্য আদর্শ ও শান্তিপূর্ণ ব্যক্তিজীবন, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র গঠনের পাশাপাশি পরকালীন চিরস্থায়ী জীবনের সফলতার জন্য ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সেই মতে জীবন পরিচালনার বিকল্প কিছু নেই।

উম্মাহঃ এই শিক্ষার্জনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই সমান বলে মনে করেন কি?

নিশ্চয়ই। পুরুষের মতো একজন নারীর জন্যও ইসলামী শিক্ষা সমান গুরুত্ববহ। জীবন চলার পথে প্রয়োজনীয় দ্বীনি ইলম শিক্ষা করা একজন পুরুষের জন্য যতটুকু গুরুত্বপূর্ণ, একজন নারীর জন্যও ঠিক ততটুকুই অপরিহার্য। যাতে করে মুসলমানদের প্রতিটি ঘর হয় এক একটি দ্বীন শিক্ষার বিদ্যাপীঠ। প্রতিটি মায়ের কোল হয় শিশুর দ্বীন শিক্ষার সুতিকাগার। আর মাতৃকোল থেকেই শিশুরা সুশিক্ষায় হাতে খড়ি পেয়ে তিলে তিলে সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হয় এবং মানবীয় গুণের বিকাশের মাধ্যমে উন্নত সমাজ গঠনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়।

মাদরাসার বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করে আগামীর পরিকল্পনা :- একটি আদর্শ জাতি গঠনে একজন আদর্শ নারীর অপরিসীম গুরুত্বের বিষয়টিকে সামনে রেখে কুরআন, সুন্নাহ ও সাধারণ জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক অনুপম সংমিশ্রণের দ্বারা শিশুকালেই তাদের মাঝে উন্নত চারিত্রিক, বুদ্ধিভিত্তিক, মানসিক ও আধ্যঅত্মিক গুণাবলীর ভিত রচনা করতঃ ধর্মীয়ভাবে সমৃদ্ধশালী একটি সমাজ ও দেশ গঠনের নিখাদ প্রচেষ্টার মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনই এই ব্যতিক্রমধর্মী মাদরাসা প্রতিষ্ঠার একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

মাদরাসাটি যে বোর্ডের অধিনে :- পূর্ব সিলেট আযাদ-দ্বীনী এদারা (মক্তব শাখা) এবং পূর্ব সিলেট বে-সরকারি মহিলা মাদরাসা শিক্ষা-বোর্ড।

মাদরাসার হিসাব ব্যাবস্থা / ফান্ড:- ১. জেনারেল ফান্ড ২. বিল্ডিং ফান্ড ৩. গুরাবা ফান্ড

বর্তমান মুহতামিম :- হযরত মাও. কাওসার আহমদ সাহেব দা.বা.।

বর্তমান মুহতামিমের মোবাইল নাম্বার :- +৮৮০১৭১৯৫০০৭৪০

বর্তমান শিক্ষাসচিব :- মাও. হুসাইন আহমদ বড়বন্দী

বর্তমান শিক্ষকবৃন্দের তালিকা :-

চলমান মোট ছাত্র সংখ্যা :- ৪৫০

চলমান দাওরায়ে হাদিস ছাত্র সংখ্যা :- ২৫

চলমান ছাত্রাবাসে অবস্থান রত ছাত্র সংখ্যা :- অনাবাসিক

তথ্য দানকারীর নাম :- রিয়াজ উদ্দিন

তথ্য দানকারীর মোবাইল :- ০০৯৬৬৫৭১২৪৫০৮৫

তথ্য দানকারীর ইমেইল :- riaz1245085@gmail.com

Spread the love