মাওলানা মুফতি শাহ্ আব্দুল হালীম বােখারী দা.বা. এর সংক্ষিপ্ত জীবন ও কর্ম

September 23 2020, 04:14

qowmipedia.com,

নাম :- আব্দুল হালীম বোখারী

হাকিমুল মিল্লাত আল্লামা শাহ্ মুফতি আব্দুল হালীম বােখারী। আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার মুহতামিম ও বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় আলেমদের অন্যতম।

জন্ম :- ইলমি জগতের এ কিংবদন্তি চট্টগ্রামের লােহাগাড়া থানার অন্তর্গত রাজঘাটা গ্রামে ১৯৪৫ সালের জানুয়ারি মাসে একটি ঐতিহ্যবাহী ইলমী ও সম্রান্ত পরিবারে জন্মলাভ করেন । তাঁর পিতার নাম আল্লামা আব্দুল গণী বোখারী রহ .।

শিক্ষা জীবন :- এই খ্যাতিমান ইসলামি চিন্তাবিদ লােহাগাড়া থানার অন্তর্গত ‘ রাজঘাটা হােসাইনিয়া আজিজুল উলুম মাদরাসায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে সমাপ্ত করেন । অতঃপর উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দ্বীনি বিদ্যাপীঠ আল – জামিয়া আল – ইসলামিয়া পটিয়ায় জামাতে দুয়ামে ( আলিয়া ২ য় বর্ষ ) ভর্তি হন । ১৯৬৪ সালে তিনি অত্যন্ত সুনাম ও কৃতিত্বের সাথে দাওরায়ে হাদিস পাশ করেন । জ্ঞানতাপস এই মহাপুরুষ এতটুকুতে ক্ষান্ত হননি । জ্ঞানের সকল শাখায় বিচরণের স্বপ্ন নিয়ে অদম্য সাহসিকতা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি আরাে কয়েক বছর যাবৎ শিক্ষাজীবন চালু রাখেন ।

এই ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৬৫ সালে আল – জামিয়া আল – ইসলামিয়া পটিয়ার বাংলা সাহিত্য ও গবেষণা বিভাগে অধ্যয়ন করেন । অতঃপর টাঙ্গাইল আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম ও কামিল , গােপালপুর মাদ্রাসা থেকে ফাজিলে ১ ম স্থানে উত্তীর্ণ হন । ১৯৬৯ ইং সনে টাঙ্গাইল কাগমারি এইচ.এস.সি এবং ১৯৭৫ সালে বি.এ পাশ করেন । এছাড়া তিনি লাহাের ডন হােমিও প্যাথিক কলেজে বায়োকেমিকের ওপর ২ বছর মেয়াদী কোর্স করে ১ ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন । সবার সাথে সুন্দর রুচিশীল আচরণ , বিনয় , নম্র ব্যবহার , বড়দের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবােধ , উস্তাদদের অকুণ্ঠ আনুগত্য ইত্যাদি চারিত্রিক সৌন্দৰ্য্য ও উন্নত গুণাবলীর কারণে ছাত্রজীবন থেকেই সমাজে গ্রহণযােগ্যতা ও নেতৃত্ব লাভ করেন ।

কর্ম জীবন :- বিজ্ঞ এ হাদিস বিশারদ কর্মজীবন শুরু করেন শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে । প্রথমে তিনি ১৯৬৭-১৯৬৮ সাল পর্যন্ত টাঙ্গাইল দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসায় আরবী প্রভাষক হিসেবে খেদমত করেন । তারপর ১৯৬৮ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত সাতকানিয়া মাহমুদুল উলুম আলিয়া মাদরাসায় , অতঃপর ১৯৭২ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত পুনরায় টাঙ্গাইল দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসার মুহাদ্দিস ও শায়খুল হাদিস এর দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৮২ সালে নিজ উস্তাদগণের আহবানে সাড়া দিয়ে চলে আসেন স্বীয় মাতৃকোড় উপমহাদেশের বৃহত্তম শিক্ষাকেন্দ্র আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ায় ।

দীর্ঘ ২০ বছর তিরমিজি শরীফের দরস প্রদান করেন । বর্তমানে তিনি জামিয়ার শাইখুল হাদিস হিসেবে “ সহীহ বােখারী শরিফ” এর দরস দিয়ে যাচ্ছেন । সৃজনশীল পাঠদান পদ্ধতি , মনােমুগ্ধকর উপস্থাপনা , দুর্বোধ্য বিষয়সমূহকে সহজভাবে ও সংক্ষেপে বুঝানাের বিস্ময়কর দক্ষতা , সকল শ্রেণীর ছাত্রদের বােধগম্য ও উপকারী তাকরির ইত্যাদি অনন্য বৈশিষ্টাবলীর কারণে ছাত্রদের হৃদয় – মনে ভালবাসার স্থান অধিকার করে আছেন । তিন বছর জামিয়ার শিক্ষা সচিব ছিলেন । এ সময় তিনি শিক্ষা পাঠ্যক্রম উন্নয়নে বিশেষ ও উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করেন ।

অবদান :- জামিয়া প্রধানের দায়িত্ব : ২০০৩ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি জামিয়া পটিয়ার সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন । অতঃপর ৩০-১০-২০০৮ইং মােতাবেক ২৯-১০-১৪২৯ হিজরী থেকে অদ্যবধি তিনি জামিয়া প্রধানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন । পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর জামিয়া পটিয়ার গৌরবােজ্জ্বল অতীত সংরক্ষণের পাশাপাশি বর্তমানকে সমৃদ্ধ ও ভবিষ্যৎকে বর্ণিল করার প্রানান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । তাঁর নিষ্ঠাপূর্ণ সুষ্ঠু পরিচালনায় জামিয়া পটিয়া এখনাে বহুমূখী উন্নয়ন – উন্নতির ধারা অব্যাহত রেখেছে । বর্তমানে তিনি আল – জামিয়া আল – ইসলামিয়া পটিয়ার সুষ্ঠু পরিচালনার পাশাপাশি আরাে বহু মাদরাসার পরিচালনা ও পৃষ্ঠপােষকতার দায়িত্ব পালন করছেন । এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নশীল ও সংস্কারধর্মী সংগঠনের চালনা করে জাতির অনেক বড় খেদমত করে যাচ্ছেন ।

মাসিক আত – তাওহীদের প্রধান সম্পাদক: জামিয়া পটিয়ায় শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি আরাে বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছেন । জামিয়ার মুখপাত্র মাসিক আত – তাওহীদের প্রথমতঃ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন সেই ১৯৮২ সাথে থেকেই ।

আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদরিস বাংলাদেশ – র মহাসচিব : ১৯৮৩ ইংরেজী থেকে অদ্যবধি জামিয়া পটিয়া কর্তৃক পরিচালিত \’ আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদরিস বাংলাদেশ \’ ( বাংলাদেশ কওমি মাদ্রসা শিক্ষা বাের্ড ) এর মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন । ১৯৫৯ সনে প্রতিষ্ঠিত এ বাের্ডটি তার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও দক্ষ পরিচালনার কারণে কওমি মাদরাসা শিক্ষাকে সুসংগঠিত করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছেন ।

বাংলাদেশ তাহফীজুল কোরআন সংস্থার সভাপতি : ‘ বাংলাদেশ তাহফীজুল কোরআন সংস্থা \’ আল – জামিয়া আল – ইসলামিয়া পটিয়ার পৃষ্ঠপােষকতায় পরিচালিত একটি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ মূলক সংস্থা । সল্প সময়ে পবিত্র কোরআন হিফজ করার জন্য শিশু – কিশােরদের উৎসাহিত করার মাধ্যমে তাজবীদ তথা বিশুদ্ধ পাঠভিত্তিক হিফজ শিক্ষার সম্প্রসারণ ও পবিত্র কোরআনের সংরক্ষণের লক্ষ্যে ১৩৯৬ হিজরী মােতাবেক ১৯৭৬ খৃষ্টাব্দে “ বাংলাদেশ তাহফিজুল কুরআন সংস্থা ” আত্মপ্রকাশ করে । বর্তমানে তিনি সংস্থার সভাপতি হিসাবে গুরু দায়ি ত্ব পালন করে যাচ্ছেন ।

ইসলামী সম্মেলন সংস্থা বাংলাদেশ’র সভাপতি: ১৯৮৬ সনে দেশব্যাপী ইসলামী সম্মেলনের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়’ ইসলামী সম্মেলন সংস্থা বাংলাদেশ । তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাকালীন সেক্রেটারী জেনারেল । ১৯৮৬ থেকে ২০১৫ ইংরেজী পর্যন্ত এই দায়িত্বে নিয়ােজিত ছিলেন । ২০১৬ ইং হতে এ সংস্থার সভাপতির মহান দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন ।

ইসলামী অর্থনীতিতে তাঁর অবদান : ইসলামী অর্থব্যবস্থা বর্তমান সময়ের অন্যতম চাহিদা ও দাবি । আধুনিক অর্থব্যবস্থা যথাযত অনুধাবন করে ইসলামী অর্থব্যবস্থার মাধ্যমে তার সমাধান পেশ করা একজন বিজ্ঞ মুফতির অন্যতম দায়িত্ব । এই গুরু দায়িত্ব তিনি পালন করে যাচ্ছেন । বর্তমানে তিনি শাহ জালাল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড’ এর সুপারভাইজারী কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালনে নিয়ােজিত আছেন।

আধ্যাত্মিক সাধনা : আল্লামা আব্দুল হালীম বুখারী দা.বা. কুতবে যামান আল্লামা মুফতি আজিজুল হক রহ . এর বিশিষ্ট খলীফা জামিয়া ইসলামিয়া দারুসসুন্নাহ হ্নীলা\’র সাবেক শায়খুল হাদিস আল্লামা ইসহাক ( ছদর সাহেব হুজুর ) রহ . এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেন এবং খেলাফত লাভে ধন্য হন । বর্তমানে তাঁর অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদ রয়েছে । অনেকেই তাঁর আধ্যাত্মিক আলাে পেয়ে তাঁর কাছ থেকে খেলাফত লাভে ধন্য হয়েছেন ।

তাঁর লিখিত গ্রন্থাবলি :
( ১ ) তাসহিত তাহাভী
( ২ ) তাসহিলুল উসূল [ যা দরসের অর্ন্তভূক্ত ]
( ৩ ) তাসহিত তিরমিজি ইত্যাদি ।

 

তথ্য দানকারীর নাম :- রেজাউল করিম বোখারী