জামেয়ার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী : প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান রহ. এর যুগান্তকারী কয়েকটি পদক্ষেপ

June 05 2020, 08:38

qowmipedia.com,

মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ

সিলেট আলীয়া মাদরাসা হতে তাকমীল ফিল হাদীসে সারা দেশের মেধা তালিকায় স্থান অধিকারী মাওলানা হাবীবুর রাহমান (রহ), বিভিন্ন আলীয়া মাদরাসায় অধ্যক্ষ হওয়ার হাতছানি উপেক্ষা করে শায়খুল মাশায়িখ হযরত মাওলানা আব্দুল কারীম শায়খে কৌড়িয়ার (রহঃ)নির্দেশে কাজির বাজারস্থ একটি ছোট মসজিদের ইমামতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
মসজিদের পার্শ্বেই ছিল একটি ডালিম গাছ,মসজিদের তরুণ ইমাম এ ডালিম গাছের নীচেই ১৯৭৪ সালের ৫ ই জুন কয়েকজন কোমলমতি শিশুদের নিয়ে গড়ে তুলেন একটি প্রতিষ্ঠান, ভিত্তিস্থাপন করে হযরত শায়খে কৌড়িয়া (রহঃ) বলেন,দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ডালিম গাছের নীচে,এ মাদরাসাও বুনিয়াদ রাখা হচ্ছে ডালিম গাছের নীচে,তা এতদঞ্চলের দেওবন্দ হবে ইনশাআল্লাহ।

হযরত শায়খের অনুপ্রেরণায় তরুন ইমাম মাওলানা হাবীবুর রাহমান হলেন অনুপ্রাণিত, ঘাত প্রতিঘাত,অপপ্রচার আর ষড়যন্ত্রের পাহাড় ডিঙ্গিয়ে গড়ে তুললেন আজকের বিশাল জামেয়া মাদানিয়া ইসলামীয়া কাজির বাজার।

প্রতিষ্টা লগ্ন থেকেই জামেয়া মাদানিয়া দ্বীন- ইসলামের বহুমুখী খেদমতে যুগেরচাহিদা অনুযায়ী নিরলস কাজ চালিয়ে যাচ্ছে,দাওয়াতে দ্বীনের ক্ষেত্রে প্রিন্সিপাল আল্লামা হাবীবুর রহমান (রহঃ) প্রনয়ণ করেছেন অনেক দুরদর্শী কর্মসূচি,নিন্দা আর অপফতোয়ার তোয়াক্কা না করে গ্রহন করেছেন যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

তৎকালীন সময়ে অনেক উলামায়ে কেরামের নিকট তা শরীয়ত বিরুধী মনে হলেও বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে তা ধারন করেই সেই আলেমগনই দ্বীনের তা’লিমী ও দাওয়াতী কাজ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন নির্দ্বিধায়, আলহামদুলিল্লাহ।

দ্বীন ইসলামের স্বার্থে জামেয়া মাদানিয়া ও
মুজাহিদে মিল্লাত প্রিন্সিপাল আল্লামা হাবীবুর রহমান (রহঃ)গৃহীত কয়েকটি দুরদর্শী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ তুলে ধরছি।

# প্রিন্সিপালএর প্রচলন —
মাদরাসা পরিচালকদের মুহতামীম বলার রীতি হলে ও জামেয়া মাদানিয়া প্রধান কে সর্বপ্রথম প্রিন্সিপাল হিসাবে অভিহিত করা হয়,এতে আধুনিক শিক্ষিতদের মধ্যে কাওমী মাদরাসার ইমেজ ও মর্যাদাবোধ সৃষ্টি হয়,মাশাল্লাহ এখন তো অনেকেই প্রিন্সিপাল হিসাবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন,অথচ প্রিন্সিপাল রহ কে আজীবন মুহতামীম শব্দের রুহানিয়াত বিনষ্ঠের অভিযোগ সইতে হয়েছে।

#আন্তর্জাতিক ইসলামী মহা-সম্মেলন।।
বার্ষিক জলছা,ওয়াজ মাহফিলের রেওয়াজ থাকলেও বিশ্ব বরেন্য ইসলামী ব্যক্তিত্বদের অংশ গ্রহনে আন্তর্জাতিক ইসলামী মহা- সম্মেলনের ধারা জামেয়া মাদানিয়ার মাধ্যমেই শুরু হয়েছে।

#ইসলামী ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়।
তৎকালীন সময়ে কওমী মাদ্রাসায় ইংরেজি তো দুরের কথা বাংলা চর্চাও নিন্দনিয় ছিল,জামেয়া মাদানিয়া ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশী বাংলা,ইংরেজি,কারীগরী শিক্ষার সমন্বয় করে সিলেবাস প্রনয়ন করে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে,ফলশ্রুতিতে আজও জামেয়ার ছাত্ররা আন্তর্জাতিকভাবে স্বমহিমায় প্রস্ফুটিত।

# রাজনৈতিক সচেতনতা।।।
(শিক্ষার সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে জামেয়ার ভুমিকা সর্বস্বীকৃত।প্রিন্সিপাল রহঃ রাজনৈতিক প্রজ্ঞার মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক বামধারার রাজনৈতিক নেতাদের ও জামেয়ার বহুমুখী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।)

#বাংলা ভাষায় মাসিক আনোয়ারে মদীনা।
#জমিয়তে তালাবার পরিবর্তে জামেয়া ছাত্র সংসদ।

#ছাত্র সংসদের জি,এস,ও এ,জি,এস। (সাধারনত মাদরাসায় ছাত্র নাজিম বলা হয়)

#ছাত্র সংসদ কর্তৃক বাংলা ও আরবী পাক্ষিক দেয়ালিকা।
#ছাত্র সংসদের অভিষেক ও নবীন বরন
# বার্ষিক শিক্ষা সফর।

#ছাত্র সংসদ পাঠাগারে পত্রিকা পাঠের ব্যবস্থাপনা
(মাদরাসায় পত্রিকা পাঠ তো দুরের কথা, ছাত্রদের সমসাময়িক বিষয়ে অবগত হওয়াও নিষেধ ছিল)
#ক্লাসে উর্দুর পরিবর্তে বাংলা দারস প্রদান।

#কলেজ ছাত্র সংসদের সাথে সমান্তরাল আন্দোলন ও সংগ্রাম।
(কওমী ছাত্রদের আধুনিক শিক্ষার ছাত্রদের সাথে চলাফেরা বারন থাকলেও প্রিন্সিপাল রহ জামেয়ার ছাত্র সংসদের দায়িত্বশীলদের অন্যান্য কলেজ ছাত্র নেতৃত্বের সাথে মিলে ছাত্র অধিকার আদায়ের আন্দোলনে অগ্রনী ভুমিকা পালনে সচেষ্ট থাকতেন,অনেক আন্দোলনে জামেয়ার ছাত্র নেতৃবৃন্দ নেতৃত্ব দিয়ে জামেয়ার সুনাম বৃদ্ধি করেছেন,স্কুল কলেজ ছাত্রদের মাঝে দ্বিনের আহ্বান পৌছে দেয়ার সুযোগ হয়েছে।)

#মিডিয়ায় প্রমানচিত্র সহ সংবাদ প্রচার।
#দ্বীনের মর্যাদা তুলে ধরার লক্ষে বরেন্য আলেমদের সম্বর্ধনা, মোটর শোভাযাত্রা।
#মেহমানদের সম্মাননা।

#গোলটুপির ব্যবহার
( কিশতি টুপিই হক্কানিয়তের মানদণ্ড ছিল)

#সৃজনশীল সুরে ইসলামী নাশিদ।
(বাংলা ইসলামী নাশীদকে নাজায়েয ভাবা হতো)

#মহাসম্মেলনের প্রচারনায় তোরন- ব্যানার।
(মানুষের টাকা অপচয় হচ্ছে বলে অপপ্রচার হতো)

#আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে প্রচারণা মাইকিং।
(সিনেমার মতো মাইকিং বলে তিরস্কার করা হতো)

#যুগোপযোগী চিত্তাকর্ষক শ্লোগান।
(জামেয়া ছাত্রদের শ্লোগানে রুহানিয়াত না থাকার অভিযোগ শুনা যেতো, ১৯৯০ সালে প্রিন্সিপাল রহ কারাগারে থাকাকালীন আমরা শ্লোগান দিতাম,মাররে লাথি ভাঙ্গরে তালা,বন্দিশালায় আগুন জ্বালা,একটি কওমী মাদ্রাসার ছাত্রদের এমন শ্লোগান শুনে শিক্ষিত জনতা হত পুলকিত)

#জামেয়ার সম্মেলনে হযরত প্রিন্সিপাল র এর বাজেট প্রনয়ণ,ও উপস্থাপন।
(বাজেট পুস্তিকা হাতে যখন হযরত প্রিন্সিপাল রহঃ দাড়াতেন,হাজারও মানুষের মধ্যে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করতো,বাজেট বক্তৃতার পর পুস্তিকা সংগ্রহের জন্য মুহতামীম হাযরাত হুমড়ি খেয়ে পড়তেন)

#সম্মেলনের সজ্বিতকরন।
#বন্যা দুর্যোগে ত্রান বিতরণ।
#সুসজ্বিত কার্যালয়।
#নতুন ভঙ্গিমায় সম্মেলনের উপস্থাপনা।
#ছাত্রদের সাদা সেলোয়ার ও কুর্তা পরিধান।

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code