মাওলানা শায়খ এজাজ আহমদ দা.বা. এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়

November 13 2019, 09:10

qowmipedia.com,

হযরত মাওলানা শায়খ এজাজ আহমদ সাহেব শেওলার হুজুর দা.বা.।

জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেংগা সিলেটের একজন সুদক্ষ প্রবীণ সিনিয়র মুহাদ্দিস ও নাযিমে দারুল একামা। কাজে-কর্মে পরিপাটি ও পরিচ্ছন্ন। দারস ও তাদরিসে তাহকিক এবং গবেষণার অধিকারী। সময় ও দায়িত্ব পালনে সদা যত্নবান। এবং আন্তরিক নীতিবান এক সু-উজ্জল সিতারা।

জন্ম: তিনি ২১শে জানুয়ারি ১৯৫৮ সালে সিলেটের ঐতিহ্যময় বিয়ানীবাজার উপজেলার অন্তর্গত ৪নং শেওলা ইউ.পি.’র নয়নাভিরাম দিগলবাগ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত ধর্মনিষ্ঠ মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হলেন দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে সুখ্যাতির সাথে ফারিগ–আলহাজ হযরত মাওলানা আব্দুল আজীজ কাসেমী রাহি.। তিনি শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানী ও শায়খুল আদব এজাজ আলী সাহেবের বিশেষ ছাত্র ছিলেন। তাঁর মাতা ছিলেন সম্ভ্রান্ত খান বংশের কন্যা মরহুমা জয়মুন্নেছা খানম। নামকরণ: তদীয় পিতা মাওলানা আব্দুল আজীজ রাহি. স্বীয় একমাত্র পুত্রের নাম রাখেন আপন উস্তায মহোদয়ের নামের সংমিশ্রণে। শায়খুল আদব এজাজ আহমদ রাহি. থেকে “এজাজ” এবং শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানী রাহি. এর নাম থেকে “আহমদ ” শব্দদ্বয়ের সংযুক্তির মাধ্যমে নাম রাখেন ” এজাজ আহমদ”।

শিক্ষাজীবন: শিক্ষাজীবনের শুরুতেই তিনি দিগলবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি অবধি লেখাপড়া করেন। অতঃপর তৎকালীন সিলেটের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা দক্ষিণ দারুল উলূম হুসাইনিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে তিনি স্বীয় মামা ও অত্র মাদ্রাসার স্বনামধন্য মুহতামিম সাহেব মাওলানা আব্দুর রহীম খান (শেরপুরী হুজুর) এর বিশেষ তত্ত্বাবধানে পড়ালেখা শুরু করেন। তিনি ২য় শ্রেণিতে ভর্তি হন কিন্তু তাঁর প্রখর মেধা ও গভীর সমুঝ থাকার কারণে এক বছরে তাকে ২য়, ৩য়,৪র্থ শ্রেণির সকল পাঠ্যবই শিক্ষকগণ পড়িয়ে নেন। ভর্তি হওয়ার পর থেকে ত্রৈ-মাসিক পরীক্ষা পর্যন্ত ২য় শ্রেণির সকল পাঠ্যবই, ত্রৈ-মাসিক পরীক্ষা পর থেকে ষণ্মাসিক পরীক্ষার আগ পর্যন্ত ৩য় শ্রেণির সব পাঠ্যবই এবং ষণ্মাসিকের পর থেকে ফাইনাল পরীক্ষা পর্যন্ত ৪র্থ শ্রেণির সকল পাঠ্যবই পড়ে নেন। এভাবে এক বছরেই তিনি তিন বছরের পাঠ চুকিয়ে মেধার স্বাক্ষর রাখা শুরু করেন। পরবর্তী বছর তিনি ইবতেদায়ী ৫ম বর্ষে ভর্তি হন এবং আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। মারহালায়ে মুতাওয়াসসিতার কেন্দ্রীয় পরীক্ষায়ও মেধা তালিকায় ২য় স্হান অর্জন করেন। এভাবেই কৃতিত্বের সাথে ফযীলত ১ম বর্ষ (জালালাইন) পর্যন্ত উক্ত মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেন। অতঃপর আপন মামা, রাহবার- শেরপুরী হুজুর রাহি. এর পরামর্শে দেশ বিখ্যাত বিদ্যাপীঠ দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে চলে যান। সেখানে প্রথম বছর ফুনূনাত পড়েন। তারপর তাকমীল ফিল হাদীস পর্যন্ত অত্যন্ত সুনাম ও কৃতিত্বের সাথে লেখাপড়া করে ১৪০২ হিজরিতে মোতাবেক ১৯৮২ ইংরেজিতে ফারাগাত হাসিল করেন।

কর্মজীবন: ফারেগ হওয়ার সাথে সাথে এবছরই ১৬ই শাওয়াল ১৪০২ হিজরি, ০৭ই আগস্ট ১৯৮২ইংরেজিতে হযরত শায়খে রেংগা রাহি.-এর আহবানে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি দরসগাহ জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেংগায় মুহাদ্দিস হিসেবে নিযুক্ত হয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন।

দীর্ঘদিন যাবত সহীহ মুসলিম, তাফসীরে বায়যাবী, হেদায়া ও মুখতাছারুল মাআ’নী সহ দরসে নেযামীর প্রসিদ্ধ ও কঠিন কিতাবাদি অত্যন্ত সুখ্যাতি ও সুনামেত সাথে পাঠদান করে যাচ্ছেন। এছাড়াও দারুল একামার দায়িত্ব অদ্যাবধি সুন্দর, সু-শৃঙ্খল এবং সুনিপুণভাবে আদায় করে যাচ্ছেন। শিক্ষাবিষয়ক অন্যান্য খেদামাত: তিনি তা’লীম – তরবিয়্যাতের উন্নতি ও অগ্রগতির প্রতি সদা সচেতন, বহু মাদ্রাসার তা’লিমী মুরব্বী ও উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োযিত আছেন। তাছাড়া “তানযীমুল মাদারিস সিলেট বিভাগ” শিক্ষা বোর্ডের সাথে প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আছেন। এবং বর্তমানে তিনি এ বোর্ডের সভাপতি পদে আসীন হয়ে অত্যন্ত সুদক্ষ ও সুনামের সাথে দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। তাসাউফ: আত্মশুদ্ধির জন্যে তিনি প্রথমে খলীফায়ে মাদানী শায়খে রেংগা রাহি.-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেন। অল্প কিছুদিন পর তাঁর ইন্তেকাল হয়ে গেলে আল্লামা শাহ আহমদ শফী দা.বা. এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেন এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ সালে তার কাছ থেকে খেলাফতের ইযাযত প্রাপ্ত হন। এরপর থেকে আধ্যাত্মিক সংগঠন “ইসলাহুল উম্মাহ বাংলাদেশ” এর সিলেট বিভাগের আমীরের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

সন্তানাদি: তিনি তিন ছেলে ও ছয় মেয়ের জনক। বড় ছেলে মাওলানা শরীফ আহমদ সুলতান। যিনি স্বীয় পিতার সাথেই জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেংগায় অধ্যাপনায় নিয়োজিত আছেন। ২য় ছেলে মাওলানা জামীল আহমদ উসমান কাতার প্রবাসী এবং ৩য় ছেলে মাওলানা সালিম আহমদ সুলাইমান। যিনি জামেয়া রেংগা থেকে ফারিগ হয়ে বর্তমানে অধ্যাপনায় নিয়োজিত আছেন। পরিশেষে— দোয়া করি মহান আল্লাহ পাক যেন সকল প্রকার রোগব্যাধি থেকে মুক্তি দেন এবং আমাদের মাথার উপর তার ছায়া সুদীর্ঘ করেন। আমিন। জাকারিয়া সদর শিক্ষার্থী- জামেয়া রেংগা, সিলেট।

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code