সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

মুফতি আবু ইয়াহইয়া মুহাম্মদ যাকারিয়া এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

June 01 2020, 09:27

নামঃ মুহাম্মদ যাকারিয়া । উপনামঃ আবু ইয়াহইয়া।

জন্মঃ মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানাধীন সুজানগর ইউনিয়নের অন্তর্গত সালদিঘা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত দ্বীনি পরিবারে ১৯৭৬ খৃষ্টাব্দের ৩রা জুন কার্তিক মাসে সোমবার সকাল ৮.০০ঘটিকায় জন্মগ্রহণ করেন।

পিতা- হাজী মোহাম্মদ আব্দুস শহীদ (মরহুম)
মাতাঃ জীবিত
ভাইবোনঃ দুই বোন চার ভাই । দুই বোন বড় আর চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়।

বিবাহঃ আকদ সম্পন্নঃ ২০অক্টোবর ২০০২খৃষ্টাব্দ রোজঃ সোমবার দারুসসালাম মাদ্রাসা মসজিদ সিলেট।
রুখছতিঃ ২৮অক্টোবর ২০০২খৃষ্টাব্দ সোমবার ।
ওয়ালিমাঃ ৩০ অঅক্টোবর ২০০২খৃষ্টাব্দ বুধবার শাহ মঞ্জিল বন্ধন ই-৮ খাসদবীর সিলেট।

সন্তানাদিঃ  এক মেয়ে ও চার ছেলে । মেয়ে বড় তিনিআলেমা । বড় দুই ছেলে হাফিজ ইয়াহইয়া মাহমুদ নাঈম ও হাফিজ নাসরুল্লা মাহমুদ নাছিম হাফিজে কেরআন । আর ছোট দুই ছেলে সাইফুল্লাহ মাহমুদ নাদিম ও নাজিবুল্লাহ মাহমুদ নাফে’ প্রাইমারীতে লেখাপড়া করিতেছে ।

বর্তমান কর্মস্থলঃ সাঈদ নগর ,ভাটারা, গুলশান, ঢাকা ।

শিক্ষাঃ প্রখর মেধা ও স্মরণশক্তি সম্পন্ন এ আলেমেদ্বীন তার মায়ের কাছে পবিত্র কোরআন শরীফ, উর্দু ক্বায়দা, তালিমুল ইসলাম(উর্দু) ইত্যাদি কিতাবাদি পাঠ করেন এবং সালদিঘা জামে মসজিদে কিছুদিন সবাহি মক্তবে মাওঃ আব্দুল কাইয়ুম( রহঃ) এর কাছে পড়াশোনা করেন ।

আজিমগন্জ আদর্শ ফুরক্বানিয়া মক্তবে ভর্তিঃ
অতঃপর আজিমগঞ্জ আদর্শ ফুরক্বানিয়া সাবাহী মক্তবে হাফিজ ফয়যুর রহমান (মিনু) সাহেব ,হাফিজ বুরহান সাহেব ও মাওঃ হারুনুররশীদ সুনামগন্জী (রহঃ) এর কাছে কোরআন শরীফ ও জরুরী মাসআলা-মাসায়েল পড়াশোনা করেন।

দারুল উলূম আজিম গন্জ মাদ্রাসায় ভর্তিঃ

১৯৮১খৃষ্টাব্দে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম আজিমগঞ্জ মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানে কাফিয়া জামাত পর্যন্ত সুনামের সাথে রেকর্ড ফলাফলের মাধ্যমে অধ্যয়ন করেন।

উন্নত লেখা-পড়ার উদ্দেশ্যে সিলেট শহরে
—————————————————-
অতঃপর ১৯৯১-৯২ খৃষ্টাব্দ শিক্ষাবর্ষে উন্নত লেখাপড়ার জন্যে সিলেট শহরস্থ জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজির বাজারে শরহে জামি ক্লাসে ভর্তি হয়ে অল্প দিনের মধ্যেই জামেয়ার শিক্ষকদের সু-দৃষ্টি ও ভালবাসা অর্জন করেন।
এছাড়া তিনি, জামেয়া নূরিয়া ইসলামিয়া ভার্থখলা সিলেট ও জামেয়া মদীনাতুল উলূম দারুসসালাম খাসদবীর , সিলেটে অত্যান্ত সুনামের সাথে লেখাপড়া করেন এবং শেষোক্ত জামেয়া হতে ১৯৯৬খৃষ্টাব্দে তাকমীল ফিল হাদিস সম্পন্ন করেন।
তার খুবই ইচ্ছা ছিল জামেয়া রহমানিয়া আরাবিয়া ঢাকা থেকে তাকমীল ফিল হাদীস সমাপ্ত করা । কিন্তু, দয়ামিরী হুযুর কোনক্রমে এতে রাজী হননি ।
ইবতেদাইয়াহ ৫ম শ্রেণী ও হেদায়াতুন্নাহু ক্লাসে তিনি আযাদ দ্বীনি এদ্বারায়ে তা’লীম বোর্ড পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া অন্যান্য কেন্দ্রীয় বোর্ড ফাইন্যাল পরিক্ষায় বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ বোর্ডের অধীনে অংশগ্রহণ করেন।
তিনি প্রায় সব পরীক্ষায়ই ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। এবং বোর্ড ফাইল পরিক্ষা সমূহে মোমতাজ(স্টার মার্ক প্রাপ্ত) ও জায়্যিদ জিদ্দানে উত্তীর্ণ হন।

দাখিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহনঃ

এছাড়া তিনি ১৯৯৪-৯৫খৃঃ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অনুষ্ঠিত দাখিল পরীক্ষায় বরইকান্দি আলিয়া মাদ্রাসা সিলেট থেকে অংশগ্রহণ করেন এবং একাধিক বিষয়ে লেটার মার্ক সহ রেকর্ড পরিমাণ মার্ক পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ঐ সময়ের দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকা সহ অন্যান্য খবরের কাগজে তার ছবি সহ ফলাফলের সংবাদ ফলাও করে প্রকাশ করা হয় ।

সিলেট সরকারী আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তিঃ

অতপরঃ ১৯৯৫খৃঃ সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসায় আলীম ক্লাসে ভর্তি হন। সেখানে তার ভর্তি পরিক্ষা গ্রহণ করেন শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা জিল্লুর রহমান জনাব সাহেব (রহঃ) । ভর্তি পরিক্ষা গ্রহণ করে তিনি তাঁর মন্তব্যে বলছিলেন “তুমি নিশ্চয় কওমী মাদ্রাসায় লেখাপড়া করছো”। এবং তখন তিনি অনেক দুয়া ও নসিহত করেন।
কিন্তু পরের বছর দাওরায়ে হাদীস পরিক্ষা এবং দারুল উলূম দেওবন্দ যাওয়ার ফলে জেনারেল (সরকারী)পর্যায়ে আর লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য যে ,তিনি ১৯৯৫-৯৬খৃঃ সেশনে দারুসসালাম খাসদবীর মাদ্রাসায় আননূর ছাত্র সংসদের জি,এস ছিলেন।

দারুল উলূম দেওবন্দ গমনঃ

অতঃপর ১৯৯৬খৃষ্টাব্দের শেষের দিকে উচ্চশিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্যে মাত্র ২০বছর বয়সে ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দ গমন করেন এবং ভর্তি পরিক্ষায় ”এমদাদি দাখেলা” প্রাপ্ত নম্বরে উত্তীর্ণ হয়ে তাকমীল ফিল হাদিসে ভর্তি হন। এবং বার্ষিক পরীক্ষায় ফতওয়া বিভাগে ভর্তির জন্য প্রাপ্ত নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

তার উস্তাদ বৃন্দঃ
“”””””””””””””””””””””
দারুল উলূম দেওবন্দে-

১ . শায়খ নাছির আহমদ খান সাহেব (রহঃ)-সহীহ বোখারী ১ম
২ .শায়খ আব্দুল হক আ’যমী (রহঃ)-সহীহ বোখারী ২য়
৩ .শায়খ মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী দাঃবাঃ – তিরমিজি ১ম ও তাহাবী শরিফ
৪ .শায়খ নিয়ামত উল্লাহ আ’যমী দাঃবাঃ -সুনানে আবু দাউদ ও সহীহ মুসলিম ২য়
৫ .শায়খ আল্লামা কমর উদ্দীন দাঃবাঃ -সহীহ মুসলিম ১ম
৬ .শায়খ সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানি দাঃবাঃ -সুনানে তিরমিজি ২য়
৭ .শায়খ রিয়াছত আলী বিজনুরী (রহঃ)-সুনানে ইবনে মাযাহ
৮ .শায়খ হাবিবুর রহমান আযমী দাঃবাঃ – সুনানে নাসায়ী
৯ .শায়খ ক্বারী উসমান মনসুরপুরী দাঃবাঃ – মুয়াত্তা ইমাম মালিক
১০ .শায়খ আব্দুল খালিক মাদ্রাসি দাঃবাঃ -শামায়েলে তিরমিজি
১১ .শায়খ মুফতি আমীম পালনপুরী দাঃবাঃ -মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ।

বাংলাদেশের উস্তাদবৃন্দঃ
——————————–
১ শায়খ হাফিজ নূরউদ্দিন আহমদ গহরপুরী (রহঃ)
২ শায়খ আল্লামা আব্দুল আজিজ দয়ামিরী (রহঃ)
৩ শায়খ হাফিজ মুফতি ওলীউর রহমান দাঃবাঃ
৪ শায়খ মুফতি মর্তুজা হুসাইন খান কুলাউড়ি (রহঃ)
৫ শায়খ নাসির উদ্দিন চতুলী (রহঃ)
৬ শায়খ নেজাম উদ্দিন (রহঃ)
৭ শায়খ আব্দুস সালাম জুড়ী দাঃবাঃ
৮ শায়খ হাফিজ মজদুদ্দীন দাঃবাঃ
৯ শায়খ বদরুদ্দীন আজীমগঞ্জী দাঃবাঃ
১০ শায়খ আব্দুল মালিক মোমেন শাহী দাঃবাঃ
১১ শায়খ উসমান গণী কুবাজপুরী (রহঃ)
১২ শায়খ আব্দুর রহমান মনোহরপুরী দাঃবাঃ
১৩ শায়খ আব্দুস সোবহান দাঃবাঃ
১৪ শায়খ আব্দুল মান্নান কিশোরগঞ্জী দাঃবাঃ
১৫ শায়খ তৈয়বুর রহামান বাহুবলী দাঃবাঃ
১৬ শায়খ আব্দুস সাত্তার মিরপুরী দাঃবাঃ
১৭ শায়খ তৈয়বুর রহমান আখালী দাঃবাঃ
১৮ শায়খ আবুল হাসান ফয়সল সুনামগঞ্জী
১৯ শায়খ আশরাফ আলী মিয়াজানি দাঃবাঃ
২০ শায়খ আং রউফ জকিগন্জী দাঃবাঃ
২১ শায়খ আনোয়ার বেগ বিশ্বনাথী দাঃবাঃ
২২ শায়খ আব্দুল কাদির দক্ষিনভাগী দাঃবাঃ
২৩ শায়খ নুরুল আমিন কুমিল্লা (রহঃ)
২৪ শায়খ মুফতি আবু সাঈদ দাঃবাঃ
২৫ শায়খ মাশুক আহমদ দাঃবাঃ
২৬ শায়খ হাফিজ ইয়াহইয়া আহমদ দাঃবাঃ
২৭ শায়খ আব্দুল হান্নান কানাইঘাটি দাঃবাঃ
২৮ শায়খ হাফিজ এম,এ,রশীদ দাঃবাঃ
২৯ মাষ্টার সুয়েজ আফজল খান (রহঃ)
প্রমুখ ।

কর্মজীবনঃ দেওবন্দ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর ১৯৯৭-৯৮খৃঃ শায়খুল হাদীস আল্লামা আব্দুল আজিজ দয়ামিরী (রহঃ) তাকে জামেয়া মদীনাতুল উলূম দারুসসালাম খাসদবীর সিলেটে মুদাররিস হিসেবে নিয়োগ দেন। এবং ২০১৯ ঈঃ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ তেইশ বছর তিনি অত্র প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে অধ্যাপনার দায়িত্ব পালন করেন। বিশেষ করে হাদীস ও ফিক্বহে ইসলামীতে ইর্ষণীয় শিক্ষক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন ।
উক্ত দীর্ঘ সময়ে তিনি সকল শিক্ষক -কর্মচারী ও ষ্টাফদের অনেক প্রশংসা অর্জনে সক্ষম হন।

এ দীর্ঘ সময়ে তিনি পাঠদানের পাশাপাশি বিভিন্ন মেয়াদে যে সব দায়িত্ব নিষ্টা ও সুনামের সাথে পালন করেন তা হলোঃ
———————————————-
১-মুয়ীনে মোহতামীম(সহযোগী মোহতামীম)

২-ভারপ্রাপ্ত মোহতামীম বিভিন্ন মেয়াদে তিন বার ।

৩-নাজিমে তালিমাত(শিক্ষা বিভাগীয়প্রধান)

৪-নাজিমে দারুল এক্বামা(হোস্টেল সুপার)

৫-নাজিমে কুতুব খানা ।

৬-নাজিমে দারুল ইফতা ।

৭- নাজিমে ইমতিহান(পরিক্ষা নিয়ন্ত্রক)

৮- ফাতওয়া বিভাগের মুশরিফ ।

৯-তাফসীর বিভাগের মুশরিফ ।

১০-দশ সদস্য বিশিষ্ট জামেয়ার প্রশাসনিক কমিটির আহবায়ক ।

১১- ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি ।

১২- জামেয়ার ফারেগীনদের অরাজনৈতিক সংগঠন “দারুসসালাম আন-নূর ফুযালা পরিষদের “সভাপতি ।

১৩- পদাধিকার বলে জামেয়ার মজলিসে শুরা ও আমেলা(কার্যনির্বাহী কমিটির ) সদস্য ইত্যাদি।
এছাড়া ঐ সময়ে তিনি দারসে নেজামির প্রায় সব কটি কিতাব পাঠদান করিয়েছেন।
ধারাবাহিক প্রায় ১২বছর তিরমিজি শরিফ ১ম ইলালুততিরমিযি সহ ও একবছর বোখারী শরীফ ” কিতাবুননিকাহ “হতে শেষ পর্যন্ত পাঠদান করিয়েছেন।
আল্লামা দয়ামিরী (রহঃ) অসুস্থহওয়ার পর তিরমিযি প্রথম খন্ড পাঠদানের জন্যে” মজলিসে ইলমী ” আহবান করে সকলের পরামর্শক্রে সর্ব সম্মতিতে তার যিম্মায় উক্ত কিতাব প্রদান করেন ।
উল্লেখ্য, তিরমিজি ১ম ও ২য়, মিশকাত, তাফসিরে জালালাইন, হেদায়া,শরহে নুখবাতুল ফিকার, আল ফাউযুল কবীর ,মুখতাছারুল মাআনি, কাফিয়া, হেদায়াতুন্নাহব, নাহবেমীর, পাঞ্জগঞ্জ ইত্যাদি কিতাব সমূহ পাঠদানে তার জুড়ি মেলা ভারী মুশকিল।

দারুসসালাম হতে স্থায়ী বিদায় গ্রহনের প্রক্রিয়াঃ  মুহাক্বিক্ব এ আলেমে দ্বীন বলেন —– দীর্ঘ দিনের কর্মস্থল থেকে কি ভাবে বিদায় নেবেন সে পন্থা তিনি খুঁজে পাচ্ছেননা । কি ভাবে বিদায়ের দরখাস্থ পেশ করবেন ? মুহতামিম সাহেব হুযুর কি বলবেন ? ছুটি মন্জুর করবেন কি না ? এ নিয়ে তিনি অনেক পেরেশান ছিলেন । অবশেষে সালাতুল হাযাত পড়া শুরু করলেন । তিনি বলেন ,দারুসসালাম থেকে বিদায়ের জন্য আমি যত রাকআত সালাতুল হাযাত আদায় করেছি অন্য কোন বিষয়ে এত সালাতুল হাযাত কোন দিন পড়িনি।
সুতরাং 22 শাবান 1440 হিজরী তিনি মুহতামিম সাহেবের নিকট তাঁর বাসা মেঝর টিলা সিলেটে বাদ এশা লিখিতভাবে বিদায়ের স্থায়ী দরখাস্থ পেশ করেন । কিন্তু মুহতামিম সাহেব কোন ক্রমেই তা গ্রহন করেন নাই । বরং বারবার প্রত্যাখ্যান করতে থাকেন ।পরের দিন মাদ্রাসা বার্ষিক বন্ধ হবে, আর ঐ দিন মুহতামিম সাহেব সকল শিক্ষকদেরকে একত্রিত করে ষ্টাফ বৈঠকের মাধ্যমে বিদায়ের দরখাস্থটি তাদের সম্মুখে পাঠ করে শুনান এবং এ ব্যাপারে করণীয় কি ? সে সম্পর্কে তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করেন ।
তখন একেকজন করে সকল শিক্ষকই বলেন যে, এখন তিনি বিদায় নিলে মাদ্রাসার অনেক ক্ষতি হবে । সকল শিক্ষক তখন সর্বসম্মতিতে বিদায়ের এ সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসার জন্য তাকে অনুরোধ করেন ।
কিন্তু,যখন তিনি কোন অবস্থাতেই তাদের অনুরোধ গ্রহন করতে অপারগতা প্রকাশ করেন ,তখন সর্বসম্মতিতে এ মর্মে তার কাছে বিদায়ের দরখাস্থ ফেরত দেয়া হয় যে,আরো পাঁচ দিন পুনর্বিবেচনা করার জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো । আশা করি আপনি বিষয়টি বিবেচনা করবেন এবং বিদায় নেয়ার অবস্থান থেকে ফিরে আসবেন ।
কিন্তু তিনি তার অবস্থানে অটল থেকে পাঁচ দিন পর বিদায়ের দরখাস্থ পুনরায় মুহতামিম সাহেবের কাছে জমা দিয়ে দেন ।
অতপর 6/5/2019 খৃঃ তারিখে তার বিদায়ের অনুরোধ মৌখিক ভাবে গ্রহন করা হয় ।

দ্বিনী খেদমাতে স্থায়ীভাবে ঢাকায় গমনঃ 

তার মাঝে সবসময় একটি স্বপ্ন লালিত ছিলো যে , দ্বীনের খেদমত সংক্ষিপ্ত পরিসরে সংকীর্ণ মনোভাব নিয়ে না করে তা প্রশস্ত মনমানসিকতা নিয়ে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে ,ছাত্র-শিক্ষকগন মেহনতি হবেন ,উস্তাদগন ছাত্রদেরকে ইলমী খোরাক প্রদান করবেন এমন স্থানে (প্রতিষ্ঠানে) ইলমের খেদমত করা । এ ছাড়া ওবিশেষ করে তার ইলমী ও আমলী তারাক্বীর উদ্যেশ্যে তিনি ২০১৯-২০ খৃঃ শিক্ষাবর্ষে 11/6/2019 রোজ মঙ্গলবার ঢাকার সাঈদনগর, ভাটারা গুলশানে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী “জামেয়া সাঈদিয়া কারিমিয়া” এ মুহাদ্দিস ও মুফতি পদে দ্বীনের খেদমতে যোগদান করেন। জামেয়ার ফ্যামিলি কোয়াটার সহ জামেয়া কর্তৃপক্ষ এ বরেণ্য আলেমকে নিয়োগ দান করেন । ফলে তিনি স্ব-পরিবারে ঢাকায় কর্মরত আছেন ।
তার উন্নত ও উত্তম পাঠদান পদ্ধতির কারনে অতি স্বল্প সময়ে তিনি উক্ত জামেয়ার কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রদের মন জয় করতে সক্ষম হন।
তার তাদরিসী জীবনে উত্তম পাঠদান পদ্ধতির কারনে ছাত্ররা সবসময় তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকেন ।
জামেয়া সাঈদিয়া কারীমিয়ায় তিনি বর্তমানে সিনিয়র মুহাদ্দিস ও ফাতওয়া বিভাগের উস্তাদ হিসেবে কর্মরত আছেন।

পাঠদানের বৈশিষ্ট্যঃ

প্রখর মেধার অধিকারী গবেষক ,আলোচক ও চিন্তক এ আলেমের বড় একটি বৈশিষ্ট্য হল, তিনি একজন আদর্শ শিক্ষক।
তার পাঠদান পদ্ধতি সাবলীল, নিজস্ব স্টাইলে সহজভাবে বোধগম্যময়, কঠিন থেকে কঠিনতম সবক্ব অতি সহজে উপস্থাপনায় তিনি অতুলনীয়।
মেধাহীন ছাত্ররা ও তার দারস অতি সহজে আত্মস্থ করতে সক্ষম হন।
তাঁর পাঠদানে এত পূর্ণাঙ্গতা থাকে যে ,তিনি যখন পাঠদান করেন তখন ছাত্রদের মাঝে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করে। এ ছাড়া
তার পাঠদান এমন বৈশিষ্টময় যে,ক্লাসে ছাত্ররা সাধারণত কোন ধরনের প্রশ্নের সুযোগ পায়না এবং প্রশ্ন করার প্রয়োজন ও হয়না। ফলে সর্বদা ছাত্ররা তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকে। শিক্ষা বর্ষের শুরুলগ্নে প্রতিটি ক্লাসের ছাত্ররা অপেক্ষমান ও আশান্বিত থাকে যেনো তাদের ক্লাসে তিনি কোন কিতাব পাঠদান করেন। পাঠদানের সময় কিতাব যে বিষয়ের হোক না কোন সবক্বে যদি ফিক্বহ, তাফসীর,উসূলে হাদীস, উসূলে ফিক্বহ, উসূলে তাফসির, সরফ, নাহু, মান্তিক,তাসাউফ, ইত্যাদির কোন কথা সরাসরি বা ইংগিতে আসে তাহলে তিনি অতি সুন্দর ও সাবলীল ভাবে তা বিশ্লেষণ করেন । ফলে ছাত্ররা অনেক অমূল্য রত্নভান্ডার তথা ফায়দা অর্জন করতে পারে।
প্রায় ইলমী সব কটি বিষয়ে তার যোগ্যতা রয়েছে । তবে তুলনামূলক হিসেবে হাদীস, উসূলুল হাদীস, ফিকহ, উসূলুল ফিকহ, উসূলে তাফসির, নাহু ও সরফে তিনি খুবই দক্ষ।।

অন্যান্য বৈশিষ্ট্যাবলী
১- ছাত্রদের সাথে আদর ও শাসনের সমান আচরণ তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ।
২- তা’লীমের সাথে তারবিয়ত প্রদান ও দরদী দিলে ছাত্রদেরকে নসীহত করা তার চিরাচরিত পরিচয়।
৩- তার অন্যতম আরেক বৈশিষ্ট্য হলো- তিনি প্রচার বিমুখতাকে পছন্দ করেন।
৪- যে কোন দায়িত্ব পালন করাকে আমানত হিসেবে বরণ করে যথাসাধ্য তা সুষ্টুভাবে আঞ্জাম দেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে তিনি কারো সমালোচনা কিংবা রক্ত চক্ষুকে পরোয়া করেন না৷
৫- পাঠদানের নির্ধারিত সবক্ব হল করার নিমিত্তে বিষয় ভিত্তিক অধ্যায়ন করা তার সবসময়ের অভ্যাস।
৬- খুবই তাড়াতাড়ি ছাত্রদের অন্তরে তার প্রতি শ্রদ্ধা ও মোহাব্বত সৃষ্টি হয়ে যায় এবং তিনি ও খুবই সহজে ছাত্রদেরকে আপন করতে ও ইলম অর্জনে অনুপ্রাণিত করতে পারেন।
৭- সর্বোপরি তিনি অধ্যাবসায়ী এক আলেম । অযথা সময় নষ্ট করা তার কাছে বিষতুল্য ।

তিনি কিভাবে মুফতি হলেনঃ
তিনি দেওবন্দের বার্ষিক পরীক্ষার পরপরই রমজানের পূর্বে দেওবন্দ থেকে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন । হযরত মাওঃ হাফিজ সিদ্দিক আহমদ চিশতি হুজুর ঐ বছর রমজানে দেওবন্দ এতেকাফ সমাপ্ত করে দেশে এসে বললেন ; ‘যাকারিয়া তোমার বার্ষিক পরিক্ষার রেজাল্টে ফতওয়া বিভাগে ভর্তি হওয়ার নম্বর এসেছে । আমি নিজে দেখে এসেছি। তুমি দেওবন্দ চলে যাও’।
এ সংবাদ শুনে তিনি মানসিক ভাবে পূর্নাঙ্গ প্রস্তুতি ও নিয়েছিলেন । কিন্তু ,বাধা হয়ে দাড়ালেন দয়ামিরী হুজুর (রহঃ)। তিনি বললেন– দেওবন্দ গিয়ে ইফতা পড়ার কোন প্রয়োজন নেই। তুমি আমার দারুসসালামে হাঃমুফতি ওলীউর রহমানের নিকট ইফতার তামরীন করতে থাক এবং উসূলের কিতাবগুলো পড়তে থাকো। যাইহোক একদিন দয়ামিরী হুজুর তার হাত ধরে মাদ্রাসার পূর্ব পার্শ্বের বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় দারুল ইফতায় হযরত মাওলানা মুফতি ওলিউর রহমান সাহেবের নিকট নিয়ে যান এবং তাকে বলেন, “এখন থেকে যাকারিয়া দারুল ইফতায় তুমার মুয়ীন হিসেবে কাজ করবে” । তার তামরীন তুমি দেখবে।
এরপর থেকে দয়ামিরী হুজুরের ইন্তেকাল পর্যন্ত অর্থাৎ ২০০৮ খৃঃ পর্যন্ত তিনি পাঠদানের পাশাপাশি ইস্তেফ্তার জবাব লিখে দয়ামিরী হুজুর (রহঃ) ও মুফতি ওলিউর রহমান সাহেব হুজুরকে নিয়মিত দেখাতেন । আর ফাতওয়ার ও উসূলের কিতাবাদী সময় সময় তাদের নিকট অধ্যায়ন ও করতেন। দয়ামিরী হুযুর তাঁর জীবদ্দশায়ই তাকে নায়েবে মুফতি হিসেবে নিয়োগ দান করেন ।
এভাবে দীর্ঘ ২৩বছর তিনি হাফিজ মাওঃ মুফতি ওলিউর রহমান দাঃবাঃ এর সোহবতে থেকে ফাতওয়ার কাজ করতে থাকেন এবং সিলেটের স্বনামধন্য একজন মুফতি হওয়ার গৌরব অর্জন করেন । এবং জামেয়া দারুসসালামে সহকারী মুফতি হিসেবে নিয়োগ পান এবং এ খেদমত সুষ্ঠু ভাবে এবং প্রশংসার সাথে আঞ্জাম দিতে থাকেন।
সিলেট শহরে শরয়ী যে কোন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে অনুষ্টিত সকল বৈঠকে তিনি জামেয়া দারুসসালামের প্রতিনিধিত্ব করতেন ।

লিখনীঃ
লেখনীতে তার অনেক আগ্রহ রয়েছে। ঈমান, আমল, মুআমালাত, মুআশারাত ও আখলাক বিষয়ে আরবী, উর্দু ও বাংলা ভাষায় তার লিখিত পুস্তকের সংখ্যা প্রায় ১৫টি।এর মধ্যে দরসী কিতাবের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ও রয়েছে কয়েকটি।
কিন্তু সবকটিই অপ্রকাশিত। পান্ডুলিপি হিসেবে পড়ে আছে ।
তার শুভাকাঙ্খী ,সহকর্মী শিক্ষকরা ও ছাত্ররা বারবার অনুরোধ করা সত্বেও তিনি তার লিখনি সমূহ প্রকাশ করতে রাজী হন নাই। বরং সবসময় একটা জবাব দেন যে, পরবর্তীতে প্রকাশ করবেন৷
কিন্তু ,বর্তমানে ঢাকার ছাত্ররা অধিক পিড়াপিড়ি করার পর তিনি আপাতত ৩টি কিতাব প্রকাশ করার জন্য রাজী হয়েছেন।
(١) نيل اللآلي شرح أصول الكرخي
১- নাইলুল্লাআলী শরহে উসূলুল কারখী (উর্দু)
(٢)التيسير في علوم القرآن وأصول التفسير
২- আততাইসির ফি উলূমিল কোরআন ওয়া উসূলীত তাফসির (উর্দু)
(٣)ألوجيز في علوم الحديث
৩- আল ওয়াজিয ফি উলূমিল হাদীস (আরবি)
এছাড়া প্রায় অর্ধশতাধিক প্রবন্ধ, নিবন্ধ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার লেখা রয়েছে । যেগুলো বিভিন্ন সময়ে
বার্ষিক, মাসিক, পাক্ষিক,সাপ্তাহিক,দৈনিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশ হয়েছে। তিনি একসময় মাসিক আদর্শনারীতে নিয়মিত প্রবন্ধ লিখতেন।

বায়আতঃ
1996ঈসায়ী সনে এ বরেণ্য আলেম তাকমীল ফিল হাদীস সম্পন্নের বছর শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর উদ্দীন আহমদ গওহরপূরী (রহঃ) এর নিকট বায়আতে সুলুক করেন । গওহরপূরী হুযুরের ইন্তিকালের পর ভারতের শাহী মুরাদাবাদ মাদ্রাসার মুহাদ্দিস ও মুফতি শায়খ সাইয়্যেদ সালমান মনসুরপূরী (দাঃবাঃ) এর দস্তে মুবারাকে পুনরায় বায়আতে সুলুক করেন ।
এ ছাড়া তিনি ঢাকা সহ দেশের অন্যান্য স্থানের আল্লাহওয়ালা বুযুর্গদের ইসলাহী মাজালিসে প্রায় সময়ই অংশ গ্রহন করেন এবং নিয়মিত তাঁদের সাথে ইসলাহী সম্পর্ক রাখেন ।

যাদের অবদান রয়েছেঃ
তিনি এপর্যন্ত পৌছার পিছনে তার পিতা-মাতা, দাদা, ভগ্নিপতি মাওঃ মর্তুজা হুসাইন খান (রহঃ), শশুড় হাফিজ মাওলানা আব্দুর রশিদ, ভগ্নিপতি মাওলানা সৈয়দ নুমান আহমদ (রহঃ) ,মাওলানা আব্দুর আজিজ দয়ামিরী রহঃ, হাফিজ মাওলানা মুফতি ওলিউর রহমান দাঃবাঃ ও মাওঃ সিদ্দিক আহমদ চিশতি প্রমুখ।

তার অনুস্মরনীয় ও অনুকরনীয় প্রিয়জন
শিক্ষা জীবন ,কর্ম জীবন ও দ্বীনের ভিন্ন ভিন্ন দিক বিবেচনায় বর্তমান সময়ে তার অনুস্মরনীয় ও অনুকরনীয় প্রিয়জনদের মধ্যে—————–
• শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ হালাভী (রহঃ)
• শায়খ মাহমুদ ত্বাহহান (রহঃ)
• শায়খ আবুল হাসান আলী নদভী (রহঃ)
• শায়খ ড, খালেদ মাহমুদ (রহঃ)
• শায়খ আজিজুল হক (রহঃ)
• শায়খ নূর উদ্দীন আহমদ গওহরপূরী (রহঃ)
• শায়খ সৈয়দ ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাই (রহঃ)
• শায়খ মুহিউদ্দীন খাঁন (রহঃ)
• শায়খ আব্দুল আজিজ দয়ামিরী (রহঃ)
• শায়খ মুফতি আবুল কালাম যাকারিয়া (রহঃ)
• শায়খ আওয়ামা দাঃবাঃ
• শায়খ ড,ইউসুফ আল কারজাভী দাঃবাঃ
• শায়খ মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপূরী দাঃবাঃ
• শায়খ মুফতি তকী উসমানী দাঃবাঃ
• শায়খ মুফতি খালেদ সাইফুল্লাহ রহমানী দাঃবাঃ
• শায়খ মুফতি সালমান মনসুরপূরী দাঃবাঃ
• শায়খ তারিক জামিল দাঃবাঃ
• শায়খ মুফতি মিজানুররহমান সাঈদ দাঃবাঃ
• শায়খ মুফতি ওলীউররহমান দাঃ বাঃ
• শায়খ মুফতি আব্দুল মালিক দাঃবাঃ
• শায়খ মুফতি দিলওয়ার হুসাইন দাঃবাঃ ।

আমরা দেয়া করি ,——————
আল্লাহপাক যেনো কর্মবীর আদর্শ এ শিক্ষককে দ্বীনি ইলমের আরো অধিক খেদমত করার তাওফিক দান করেন এবং দীর্ঘ হায়াত দান করেন যাতে করে ইলম পিপাসু তালেবে ইলম ভাইয়েরা আরো ইস্তেফাদা করতে পারে।

লিখেছেন- সৈয়দ সাফওয়ান আহমদ ফাহাদ

Spread the love