সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

মাওলানা শামছুদ্দীন কাসেমী রহ. এর সংগ্রামী জীবন

October 19 2019, 05:08

মানব জাতির হেদায়েতের জন্য মহান প্রভূ রব্বুল আলামিন যুগে যুগে বিভিন্ন নবী-রসূল প্রেরণ করেছেন। নবী-রসূল আগমনের ধারাবাহিকতা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়ে যায়। তাদের অবর্তমানে মানুষের হেদায়েতের দায়িত্ব ওরাসাতুল আম্বিয়া হিসেবে উলামায়ে কেরামের স্কন্ধে এসে পড়ে। তারা বিভিন্ন প্রতিকুল অবস্থা মোকাবেলা করে নববী কার্যক্রম চালিয়ে যান।
ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ যে সকল মর্দে মুজাহিদ উলামায়ে কেরামের নাম স্মরণ করে ‘রহমতুল্লাহি আলাইহি’ বলে আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করি, তাঁদেরই একজন হলেন মুজাহিদে মিল্লাত মাওলানা শামছুদ্দীন কাসেমী রহ.। প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন বাংলাদেশে দ্বীন ইসলামের ঝাণ্ড সমুন্নত রাখার জন্য যারা সংগ্রাম চালিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন মুজাহিদে মিল্লাত মাওলানা কাসেমী রহ.।
বংশ পরিচয়: মুজাহিদে মিল্লাত মাওলানা শামছুদ্দীন কাসেমী রহ.-এর পিতার নাম মৌলভী মুহাম্মদ মুদ্দাসের, মাতার নাম উম্মে হাবীবা। তিনি ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের সন্দ্বীপের অন্যতম সংগ্রামী পুরুষ মরহুম আলী মুন্সীর বংশধর। মরহুম আলী মুন্সী তৎকালে ফার্সী ভাষার একজন সুপণ্ডিত উকিল ছিলেন। জমিদারদের অত্যাচার ও বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে সংগঠিত আন্দোলনে তাঁর পূর্বপুরুষদের ভূমিকা ও অবদান অবিস্মরণীয়।
বাদশাহ আলমগীর আওরঙ্গজেবের সাথে তার ভাই সুজা লড়াইয়ে পরাজিত হলে চট্টগ্রামে এসে আশ্রয় নেন। সে সময় মাওলানা কাসেমী রহ.-এর পূর্বপুরুষরা চট্টগ্রামে আসেন এবং স্থায়ীভাবে সন্দ্বীপে বসবাস করতে থাকেন।
শিক্ষা: মাওলানা কাসেমী রহ. গ্রামের মক্তবে মাওলানা আবদুল আজীজ মুন্সীর কাছে প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করেন। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাইমারী বৃত্তি পরীক্ষায় ৪র্থ স্থান অর্জন করেন। সাধারণ শিক্ষার জন্য স্কুলের শিক্ষকদের অনুরোধ সত্ত্বেও পিতার ঐকান্তিক ইচ্ছায় স্থানীয় রিয়াজুল উলূম মাদরাসায় ভর্তি হন। অতঃপর সন্দ্বীপের ঐতিহ্যবাহী বশিরিয়া আহমদিয়া সিনিয়র মাদরাসায় ভর্তি হন। সেখান হতে প্রথম বিভাগে আলিম ও ফাজিল পাস করেন।
উচ্চতর শিক্ষার্থে বিদেশ যাত্রা ঃ মাওলানা কাসেমীর মুরব্বীদের প্রত্যাশা ছিল, তিনি দেশে কামিল পর্যন্ত পড়বেন। কিন্তু তিনি ইসলামী শিক্ষায় উচ্চতর শিক্ষা লাভের জন্য বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী বিদ্যালয় ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দে চলে যান। সেখানে ১৯৫৫-১৯৫৭ সাল পর্যন্ত ফেকাহ-মানতেক ও আরবী সাহিত্যসহ প্রভৃতি শাস্ত্রের উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। দেওবন্দে তাঁর শিক্ষকবৃন্দের মধ্যে ছিলেন শাইখুল হাদীস হযরত মাওলানা নাসির আহমদ খান রহ., হযরত মাওলানা নাঈম রহ., হযরত মাওলানা আহমদ হাসান বিহারী রহ. হযরত মাওলানা আবদুল আহাদ, হযরত মাওলানা মিয়া আখতার হোসাইন, হযরত ফয়েজ আলী শাহ সাহেব প্রমূখ।
এরি মাঝে শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি স্বদেশে চলে আসেন। সুস্থতা লাভের পর ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে পুনরায় দেওবন্দ যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় ১ বছর চট্টগ্রাম জিরি মাদরাসায় অধ্যায়ন করেন। এ সময় শাইখুল হাদীস হযরত মাওলানা আবদুল ওয়াদুদ, আল্লামা ছালেহ আহমদ ও হযরত মাওলানা মুফতী নুরুল হক প্রমুখের কাছে অধ্যয়ন করেন।
অতঃপর ১৯৫৮ সালে লাহোর গমন করে জামিয়া আশরাফিয়ায় উচ্চতর ফনুনাত, হাদীস, তাফসীর প্রভৃতি শাস্ত্রে সর্বোচ্চ সনদ লাভ করেন। লাহোর জামিয়া আশরাফিয়ায় তাঁর উস্তাদগণের মধ্যে ছিলেন ইমামুল ফনুনাত হযরত আল্লামা মুহা. রাসূল খান, হযরত মাওলানা মুফতী জামিল আহমদ থানভী, শাইখুত তাফসীর ওয়াল হাদীস আল্লামা মুহা. ইদ্রিছ কান্দালভী, মাওলানা জিয়াউল হক কেম্বেলপুরী, মাওলানা মুহা. ইয়াকুব হাজারভী, মাওলানা গোলাম মোস্তফা, মাওলানা আবদুল গনী সাহেব প্রমুখ।
জামিয়া আশরাফিয়া লাহোরে হাদীস শাস্ত্রে উচ্চ শিক্ষা লাভ করার পর তিনি ১৯৬০-৬১ সালে শাইখুত তাফসীর হযরত মাওলানা আহমদ আলী লাহোরী রহ.-এর নিকট তাফসীর শাস্ত্রে বিশেষ প্রশিক্ষণ লাভ করেন।
শিক্ষকতা ঃ ১৯৬১ সালে শিক্ষা সমাপ্ত করার পর মোমেনশাহী জেলার সোহাগী মাদরাসার শিক্ষক হিসেবে কাসেমী রহ.-এর কর্ম জীবন শুরু হয়। এক বছর সেখানে শিক্ষকতা করার পর ঢাকার বড় কাটারা আশরাফুল উলূম হোসাইনিয়া মাদরাসায় অন্যতম মুহাদ্দিস পদে নিযুক্ত হন। ২ বছর সেখানে শিক্ষকতার পর ফরীদাবাদ ইমদাদুল উলূম মাদরাসা স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হলে তিনি মুরব্বীদের পরামর্শে ফরীদাবাদ মাদরাসায় যোগদান করেন। সেখানে তিনি ৭-৮ বছর শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সালে যাত্রাবাড়ী জামিয়া মাদানীর বছরকাল অবৈতনিক শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর চট্টগ্রাম শোলকবহর কাশেফুল উলূম মাদরাসার মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ঃ চট্টগ্রামে শোলকবহর মাদরাসা, ঢাকার যাত্রাবাড়ী জামিয়া মাদানীয়া মাদরাসা, সাভারস্থ জামিয়া মাদানীয়া রাজফুলবাড়ীয়া মাদরাসা, আমিন বাজার মদীনাতুল উলূম মাদরাসা এবং জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মাদরাসাসহ বহু দ্বীনি শিক্ষালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মাওলানা কাসেমী রহ.। তাঁরই অক্লান্ত প্রচেষ্টায় জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ মাদরাসাটি পূর্ণাঙ্গরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইন্তিকালের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদের শাইখুল হাদীস এবং মুহতামিম ছিলেন।
রাজনীতি ও ইসলামী আন্দোলন ঃ মাওলানা শামছুদ্দীন কাসেমী রহ. প্রায় তিন দশক ধরে এ দেশের রাজনীতি ও ইসলামী আন্দোলনে এক নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তি ছিলেন। রাজনীতি ও ইসলামী আন্দোলন : আল্লামা কাসেমী (রহ.) আকাবির ও আসলাফের রেখে যাওয়া পথ, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের কালজয়ী কাফেলা, “জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম” করতেন। বিচক্ষণ এবং দূরদর্শি রাজনীতিবীদ তাঁর ব্যাপক সূখ্যাতি ছিল। ১৯৬৬ সালে ঢাকার জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের পূর্ব পাকিস্তানের কমিটি গঠিত হলে তিনি এর সেক্রেটারী জেনারেল নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পূর্ব পর্যন্ত তিনি জমিয়তের সেক্রেটারী জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে জমিয়ত পূর্ণগঠিত হলে তিনি সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৭ সালে পুনরায় সেক্রেটারী জেনারেল পদে নির্বাচিত হন এবং ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ইন্তিকাল পূর্ব পর্যন্ত জমিয়তের নির্বাহি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর প্রথম নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। খেলাফত আন্দোলন প্রতিষ্ঠাকালিন সময়ে তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ইসলামী ঐক্যজোট প্রতিষ্ঠাকালীন সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন।
স্বৈরাচারী আইউব বিরোধী আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল স্মরণীয়। আইউব খান কর্তৃক নিয়োজিত তথাকথিত ইসলামী গবেষণা পরিষদের ডাইরেক্টর কুখ্যাত ড. ফজলুর রহমানের ইসলাম বিরোধী চিন্তাধারার বিরুদ্ধে তিনি দেশব্যাপী জোরদার আন্দোলন সংগঠিত করেন। কুখ্যাত দাউদ হায়দারের বিরুদ্ধে সিলেট থেকে তিনি হরতাল আহ্বান করেন। এ সময়ে সরকার তাকে গ্রেফতার করে। ৬৭ সালে আরব ইসরাঈল যুদ্ধে বাইতুল মোকাদ্দাস পতনের পর তার নেত্বত্বে পূর্ব পাকিস্তান জমিয়ত ইসরাঈলী পণ্যদ্রব্য বর্জনের উদ্দেশে ব্যাপক গণ আন্দোলন গড়ে তোলে। আইউব খান কর্তৃক তথাকথিত মুসলিম পারিবারিক আইনের বিরোধী আন্দোলনও তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন।
আইউব খান বিরোধী সম্মিলিত রাজনৈতিক জোট ‘ডাক’এর অন্যতম নেতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর রাজনৈতিকভাবে আলেমদের সংগঠিত করার জন্য অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।
ইরানী বিপ্লবের পর কিছু সুবিধাবাদী লোকের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশেও শিয়া ইছনা আশারিয়াদের বিপ্লবী চিন্তা-চেতনা এবং তাদের মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে প্রচেষ্টা চালায়। সে সময় হযরত মাওলানা কাসেমী রহ.-এর অগ্রণী ভূমিকায় তাদের সেই অপচেষ্টা মুখ থুবড়ে পরে, এবং হযরত কাসেমী রহ. হারামাইন শরীফাঈন নামে একটি বৃহত আকারের সম্মেলন করেন। এ সম্মেলনে শিয়া মতবাদের মুখোশ উন্মোচন করেন তিনি।
১৯৯৪ সালে মওদুদীর অনুসারী জামায়ত শিবিরের বিরুদ্ধে তিনি দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন। প্রতিকুলতার মাঝেও তিনি অনড় থেকে ইঞ্জিনিয়ার ইন্সিটিউটে তাঁর নেতৃত্বে তানযীমে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত নামে একটি সম্মেলন করেন।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা সংগ্রাম ঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে মাওলানা কাসেমীর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে পাক বাহিনীর নির্মম হত্যাকা-ের বিরোদ্ধে মাওলানা কাসেমী ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কে জ্বালাময়ী বক্তৃতা প্রদান করেন। এ কারণে পাক সেনারা তাকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দী করে রাখে। দেশবাসীর নিকট তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা স্বপক্ষিয় আলেম হিসেবে পরিচিত।
কাদিয়ানী এবং বিভিন্ন বাতেল বিরোধী আন্দোলন ঃ স্বাধীন বাংলাদেশে মিথ্যা নবীর দাবীদার গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর অনুসারী আহমদীয়া সম্প্রদায়ের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম উলামায়ে কেরামকে সংগঠিত করেন। অতঃপর সাধারণ জনগণের মাঝে এদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য গোটা দেশব্যাপী সফর করেন। তাঁরই বলিষ্ঠ ভূমিকার ফলে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কাদিয়ানীদের কেন্দ্র উদ্ভোধন হতে বিরত থাকেন। এ ছাড়াও তিনি সাম্রাজ্যবাদ ও ইয়াহুদীবাদের সৃষ্ট মওদুদী ও শিয়া মতবাদের বিরুদ্ধেও ব্যাপক গণ সচেতনতা গড়ে তোলেন।
মসজিদ ভাঙ্গা বিরোধী আন্দোলন ঃ পল্টন ময়াদন সংলগ্ন মসজিদ ভেঙ্গে স্টেডিয়াম তৈরীর বিরুদ্ধে সৃষ্ট আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। পরবর্তীতে এরশাদের শাসনামলে গোলাপশাহ মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদ ভাঙ্গার বিরুদ্ধে তিনি ব্যাপক গণ আন্দোলন গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে সরকার তাঁকে গ্রেফতারও করে।
প্রবন্ধকার ও সম্পাদক ঃ মাওলানা কাসেমী রহ. পাক আমল হতেই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় রাজনৈকি ও ধর্মীয় প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন। তিনি সাপ্তাহিক জমিয়তের প্রতিষ্ঠাতা প্রকাশক ও সম্পাদক এবং মাসিক পয়গামে হকের প্রতিষ্ঠাত ও প্রকাশক ছিলেন। এছাড়াও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুস্তক রচনা করেছেন। নিম্নে এর নাম প্রদত্ত হল।
১। বাইতুল মোকাদ্দস ও মসজিদে আকসা।
২। পাকিস্তানে খৃস্টান মিশনারী উৎপাত।
৩। রমযানের সওগাত।
৪। ইসলাম বনাম কমিউনিজম।
৫। ধর্মনিরপেক্ষতা।
৬। শিয়া কাফের।
৭। কাদিয়ানী ধর্মমত।
বিদেশ সফর ঃ সউদী আরব, ইরাক, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রে সফরে করেন। সে সব দেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।
তাফসীর প্রশিক্ষণ কোর্স ঃ শাইখুত তাফসীর আল্লামা আহমদ আলী লাহোরী রহ. যখন পবিত্র কুরআনের তাফসীরের দরস শুরু করেন তখন অল্পদিনের মধ্যেই গোটা ভারত বর্ষে তাঁর এই তাফসীর কোর্সের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। দারুল উলূম দেওবন্দসহ অন্যান্য বিখ্যাত মাদরাসা থেকে ফারেগ হয়ে উলামায়ে কিরাম এমনকি উঁচু পর্যায়ের উলামা-মাশায়েখগণও তাঁর দরসে ভিড় জমাতেন। জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল আল্লামা শামছুদ্দীন কাসেমী রহ. আল্লামা লাহোরীর রহ.-এর সেই চমকপ্রদ দরস গাহের একজন সুযোগ্য শাগরিদ। তিনি সেই তাফসীরেরই সূচনা করেছিলেন আজ থেকে প্রায় বত্রিশ বছর পূর্বে স্বীয় প্রতিষ্ঠানের এক জীর্ণ কুটিরে। দীর্ঘ বাইশ বছর যাবত তিনি পবিত্র কুরআনের বিশাল খিদমত আনজাম দিয়ে জান্নাত বাসী হন। বলতে গেলে তিনিই সর্বপ্রথম বাংলাদেশে তাফসীরুল কুরআনের এ পূণ্যময় অধ্যায়ের সূচনা করেছেন।
তাফসীরের দরসে আল্লামা কাসেমী রহ. তাফসীর পেশ করার পদ্ধতি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন প্রকার লক্ষ্য করা যায়। তবে তাঁর দরস ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয়, হৃদয়গ্রাহী। তিনি কুরআনের একটি সূরাকে সামনে রেখে সূরার ঐতিহাসিক পটভূমি পেশ করতেন এবং সূরার আলোচিত বিষয়াবলীর তালিকা তুলে ধরতেন, যাতে করে প্রতিটি ছাত্র সর্বাগ্রেই সেই সূরার বিষয়াবলী সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা নিতে পারে। অতঃপর তিনি প্রতিটি রুকু ও আয়াতের অন্তর্নিহিত শিক্ষা অতি সহজ সরল ভাষায় ব্যক্ত করতেন এবং প্রতিটি আয়াতের আলোকে বর্তমান প্রেক্ষাপটের উপর সুদীর্ঘ আলোচনা রাখতেন। কখনো কখনো আলোচনা প্রসঙ্গে কুরআনের ধারক-বাহক পূর্বসূরী উলামা-মাশায়েখদের ইতিহাস তুলে ধরতেন।
ইন্তিকাল ঃ বাতিলের আতঙ্ক, আপোষহীন রাজনীতিবীদ, মুজাহিদে মিল্লাত মাওলানা শামছুদ্দীন কাসেমী দূরারোগ্য ব্যাধী কেন্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৬ সালের ১৯ অক্টোবর এশার আযান চলাকালীন সময়ে রফিকে আলার ডাকে লাব্বায়েক বলে নিজ প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়ায় নিজ কক্ষে সকলকে শোক সাগরে ভাষিয়ে এ পৃথিবী হতে বিদায় নেন। মিরপুরস্থ শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
মৃত্যুর সময় তাঁর ৫ ছেলে ও ৩ মেয়ে ছিল।
মৃত্যুর সময় বসবাসের বাড়ী রেখে গেছেন। বর্তমানে মুজাহিদে মিল্লাতের স্ত্রীর বয়স আনুমানিক ৬৩ বছর।
তথ্যপ্রদানকারী: আবু আফিফা আতিকুর রহমান- কাতার থেকে
Spread the love