সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক দা. বা. এর জীবন ও কর্ম

October 17 2019, 06:16

নাম :- মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক

জন্ম / জন্মস্থান :- যুগের এ মহান মনিষী ১৯৪৭ সালের ০৯ই আগস্ট সিলেট জেলার কানাইঘাট থানাধীন ঐতিহ্যময়ী আকুনি গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন৷ প্রভাবশালী শিকদার বংশে তাঁর জন্ম। পিতা, শাইখুল হাদীস ওয়াততাফসীর, কায়েদে জমিয়ত, আল্লামা শফিকুল হক আকুনি রহ.৷ দাদা: মাওলানা ইবরাহীম আলী রহ.৷ নয় ভাইবোনের মাঝে তিনি সবার বড়।

শৈশব কাল :- তিনি শৈশব থেকেই পড়াশুনার প্রতি অনেক মনোযোগী ছিলেন ।অনেক মেধাবী ছিলেন।

শিক্ষা জীবন :- শিক্ষাজীবন :
পিতা আল্লামা শফিকুল হক প্রতিষ্ঠিত নিজ গ্রামের মাজাহিরুল উলূম আকুনি মাদরাসায় মকতব থেকে মেশকাত পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর হাটহাজারি মাদরাসা থেকে ১৯৬৯ সালে দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করেন। ফারেগের পর দাওয়াত ও তাবলীগে এক সাল সময় দেন। ইমানের মেহনত কে বাংলার গ্রাম থেকে গ্রামে পৌঁছে দিতে অশেষ পরিশ্রম করেন।
এরপর ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ফাতেহপুর মাদরাসায় এবং ১৯৭৩ সালে ভারতের আসাম প্রদেশের নোয়াগাং মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। কিন্তু ইলমের পিপাসায় চিরকাতর এই মনীষী উচ্চতর শিক্ষালাভের আশায় কর্মজীবনের বিরতি দিয়ে ভারতের ইউ পিতে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী দীনী শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলুম দেওবন্দে গমন করেন। সেখানে তিনি ১৯৭৪-৭৫ সাল পর্যন্ত দুই বছরে উচ্চতর পড়াশোনা সম্পন্ন করে মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন।

কর্ম জীবন :- বর্নাঢ্য কর্মজীবন :
১৯৭৫ সালে শায়খ দা.বা. দেশে ফিরে আসেন৷ ১৯৭৭ সালে হজ্জে গমন করেন৷ ১৯৭৮ সাল থেকে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ফরিদাবাদ মাদরাসায় অধ্যাপনা মধ্য দিয়ে কর্মজীবনের এক আলোকিত অধ্যায়ের শুভসূচনা করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে ১৯৮৪-৮৭ সাল পর্যন্ত মালিবাগ জামিয়ায়, ১৯৮৭-৯৪ইং পর্যন্ত বাবার প্রতিষ্ঠিত নিজ গ্রামের মাজাহিরুল উলূম আকুনি মাদরাসায়, ১৯৯৫ থেকে বারিধারা জামিয়ায় এবং মাঝে ১৯৯৬-২০০১ ইং পর্যন্ত জামিয়া সুবহানিয়ায় থেকে পূণরায় বারিধারা জামিয়ায় ফিরে আসেন এবং অদ্যাবধি জামিয়ার শাইখুল হাদীসের মসনদ অলঙ্কৃত করে আছেন।

উল্লেখ্য যে ফরিদাবাদ ও মালিবাগে থাকাকালীন অনেক তালিবে ইলমকে হুজুর দেওবন্দ নিয়ে নিজ তত্ত্বাবধানে ভর্তি করে দিতেন এবং তাদের খোঁজখবর রাখতেন৷ এভাবে বাংলাদেশী ছাত্রদেরকে ব্যাপকভাবে দেওবন্দের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করার ক্ষেত্রে হুজুরের অবদান অনস্বীকার্য৷

ইসলাহী সম্পর্ক :
শায়েখ দা.বা. ছাত্র জীবন থেকেই মুরুব্বীদের ছায়ায় লালিত হয়েছেন। দেওবন্দে অবস্থানকালে ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়েদ আসআদ মাদানী রহ. এর সাথে ইসলাহী সম্পর্ক স্থাপন করেন। মহান এই বুযুর্গের সাথে ঐতিহাসিক ছাত্তা মসজিদে দীর্ঘ আঠারো বছর রমজানে ই\’তেকাফ করেছেন। তার ইন্তিকালের পর খলীফায় মাদানী শায়েখ আব্দুল মুমিন ইমামবাড়ি দা.বা. এর হাতে বাইয়াত হন এবং পরবর্তীতে খিলাফত লাভ করেন।
রাজনৈতিক জীবন:
১৯৬৬ সাল থেকে প্রায় পাঁচ দশক অবধি তিনি এদেশের রাজনীতি ও ইসলামী আন্দোলনের এক নিবেদিতপ্রাণ ব্যাক্তিত্ব। মূলত পারিবারিক সূত্রে বাবার হাত ধরে ছাত্রকাল থেকেই তিনি জমিয়তের সক্রিয় কর্মী। সময়ের প্রবহমান গতিধারায় জমিয়তের কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সাল থেকে 2018 পর্যন্ত প্রায় দুই যুগ ধরে তিনি জমিয়তের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।এরপর সেচ্ছায় পদ ছেড়ে দেন।বর্তমানে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্মর্তব্য যে, মাঝে কিছুদিন ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন। ২০১৭ ঈ. সালে অনুষ্ঠিত জামিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্থানের শতবর্ষী সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশের মুখপাত্র হিসেবে অংশগ্রহণ করে এক ঐতিহাসিক ও বিরল সম্মাননা লাভ করেন৷ হযরতের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দেখে পাকিস্তান জমিয়তের সভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমান দা.বা. অত্যন্ত অভিভূত হন এবং ভূয়সী প্রশংসা করেন৷

অবদান :- লেখালেখি ও রচনাবলী :
দীনের এই মহান খাদেম দরস তাদরীস, মাদরাসা পরিচালনা, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক অজস্র ব্যস্ততার মাঝেও রচনা করেছেন কয়েকটি গবেষনাধর্মী গ্রন্থ। যেমন ১. খুলাসাতুল আছার, (চমৎকার বিন্যাসের এ গ্রন্থে তিনি হানাফী মাযহাবের মৌলিক মাসআলাগুলোর সমর্থনের শক্তিশালী হাদীসসমূহ সাজিয়েছেন) ২. ইসলাম ও মওদুদিবাদের সংঘাত, ৩. কুরআন-হাদিসের আলোকে আমাদের নামায, ৪. তাহকীক ও তাকলীদ, ৫. শিক্ষা। এছাড়াও হুজুরের লিখিত ছোটো ছোটো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পুস্তিকা এবং বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও স্মারকে প্রকাশিত অসংখ্য প্রবন্ধ রয়েছে।

ইতিহাস, দর্শন ও ভূগোল :
ইতিহাস, দর্শন ও ভূগোলের ক্ষেত্রে হযরতের বিস্ময়কর অনুরাগ ও পাণ্ডিত্ব দেখে যে কেউ অবাক হবে৷ দরসগাহ হতে শুরু করে হযরতের যে কোনো আলোচনা মজলিসেই ইতিহাসের ছোঁয়া থাকবেনা— এটা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারেনা৷ হযরতের বয়ানের এই এক চমৎকার বৈশিষ্ট্য৷ জীবনের ঊষালগ্ন হতে বাবার কাছেই তিনি ইতিহাস, দর্শন ও ভূগোলের পাঠ গ্রহণ করেন৷

বিদেশ সফর:
হযরত তার সুদীর্ঘ কর্মময় জীবনে মহান হজব্রত পালনের লক্ষে তিনবার সৌদি আরব গমন করেন, একাধিকবার পাকিস্থানে দীনী ও রাজনৈতিক সফর করেন এবং শিক্ষামূলক, সাংগঠনিক ও ইসলাহী ও বর্তমান দাওয়াত ও তাবলীগ সংকট কে সামনে রেখে তিনি বাংলাদেশের উলামায়ে কেরামের মুখপাত্র হয়ে অসংখ্যবার ইন্ডিয়া সফর করেন৷

মৃত্যু তারিখ :- জিবীত।

মোবাইল :- 01712789220

তথ্য দানকারীর নাম :- জি এফ এম সাঈদুল আলম ।ফারেগঃ বারিধারা জামিয়া ।বর্তমান শিক্ষার্থী ঃঃ দারুল উলুম দেওবন্দ ।

তথ্য দানকারীর মোবাইল :- 01797265425

Spread the love