সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

মাওলানা আব্দুল হাফিজ রুপসপুরি দা: বা: সংক্ষিপ্ত জীবনী

September 23 2020, 06:39

লিখেছেন- মুফতি আহমদ রাফি জাকির

জন্ম: মৌলভীবাজার জেলার কমলগন্জ থানাধীন মুন্সীবাজার ইউনিয়নে অবস্হিত রুপসপুর গ্রাম। উক্ত গ্রামেরই এক দ্বীনদার, সম্ভান্ত ফ্যামিলিতে, জনাব মুহাম্মদ জহুর আলীর ঐরসে ১০ ফেব্রয়ারি ১৯৬৬ সালের কােন এক দিবসের শুভক্ষণে জন্মগ্রহন করেন।

হযরত মাওলানা আব্দুল হাফিজ রুপসপুরি দা:বা: এর শিক্ষাজীবন: তার লেখা-পড়ার হাতেখড়ি শুরু হয় আপন বাড়িতেই নিজ পিতা-মাতার নিকট। তারপর রামেশ্বরপুর জামে মসজিদে জনাব মৌলভী রওশন আলি রাহ: নিকট কায়দায়ে বােগদাদি থেকে শুরু করে কোরআন শরীফ পর্যন্ত পড়েন। পরে আপন বড় ভাই শায়খুল আল্লামা আব্দুল মালিক রুপসপুরি দা: বা: সাথে চলে যান মৌলভীবাজার অন্যতম দ্বীনি দরসগাহ।

জামেয়া ইসলামিয়া কর্মধা টাইটেল মাদরাসায়। সেখানে তিনি ইবতেদায়ি ৩য় বর্ষ থেকে শুরু করে মুতাওয়াসসিতাহ ২য় বর্ষ পর্যন্ত অত্যান্ত সুনামের সাথে লেখা-পড়া করেন। পরে মুহতারাম বড় ভাই শায়খুল হাদিস আল্লামা আব্দুল রুপষপুরি দা: বা: সাথে চলে যান, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহি দ্বীনি বিদ্যাপিঠ। জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেংগা মাদরাসায়। সেখানে মুতা: ৪র্থ বর্ষ হতে দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত অত্যান্ত সুনামের সাথে লেখা-পড়া করে দাওরায়ে হাদিসের ১৪০৭/১৪০৮হিজরি সনে আযাদ দ্বীনি এদ্বারায়ে তা’লিম সিলেট,বাংলাদেশ। বোর্ডের অধীনে মারকাযি পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করে সারা বাের্ডে মেধা তালিকায় ২য় স্হান লাভ করে সেরাদের সেরা কৃতিত্ব অর্জন করতে সক্ষম হন। দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করার পর আপন মুশরীফ, যুগের ইমাম বুখারী, শায়খুল হাদিস আল্লামা শিহাবুদ্দীন রাহ: ও অন্যান্য আসাতেযায়ে কেরামদের পরামর্শক্রমে উচ্চশিক্ষা লাভের লক্ষ্যে রমযান পরবর্তি সময়ে চলে যান চট্রগ্রামে।

সেখানে আল- জামেয়া আল- ইসলামিয়া পট্রিয়া মাদরাসায় ইসলামি আইন শাস্ত্র নিয়ে লেখা-পড়া করার অনেক আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও উক্ত বিভাগে তিনিও উপস্হিত হওয়ার পূর্বেই ভর্তি শেষ হয়ে যায়। উপমহাদেশের মুফতিয়ে আজম, মুফতি আব্দুর রাহমান রাহ. পরামর্শক্রমে দাওরায়ে হাদিসে আবারও ভর্তি হয়ে যান। আল- জামেয়া আল- ইসলামিয়া পট্রিয়া মাদরসার দাওরায়ে হাদিসে হাজারো তালিবে ইলমদের মধ্যে মেধা তালিকায় ১ম স্হান অর্জন করে আপন আসাতেযায়ে কেরাম ও আধ্যাত্বিক নগরী সিলেটের সুনাম বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন।

আল- জামেয়া আল- ইসলামিয়া পট্টিয়া মাদরাসার দাওরায়ে হাদিস হতে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ। বাের্ডে ১৪০৮/১৪০৯ হিজরীতে কেন্দ্রীয় পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করে সাড়া বাংলাদেশের মধ্যে মেধা তালিকায় ২য় স্হান অর্জন করে ঐতিহাসিক সফলতার মুকুট নিজের ভাগ্যে ছিনিয়ে এনে আধ্যাত্নিক নগরী সিলেটের উলামায়ে কেরামের সম্মান বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন। কর্মজীবন: চিটাগাং থেকে ফিরার পর বাংলাদেশের ঐতিয্যবাহি দ্বীনি বিদ্যাপিঠ জামেয়া মাদানিয়া আংগুরা মুহাম্মদপুরের সুনামধন্য মহা-পরিচালক। মুফাক্কিরে ইসলাম।হযরত মাওলানা শায়খ জিয়া উদ্দীন দা:বা: তাকে ডেকে পাঠান, তার সাথে একান্ত সাক্ষাৎ করতে। হযরতের সাথে দেখা করার সাথে সাথেই হযরত প্রস্তাব দেন। তাদের প্রাণপ্রিয় জামেয়া মাদানিয়া আংগুরা মুহাম্মদপুরকে দ্বীনি খেদমতের ক্ষেত্রে নির্বাচন করে নেয়ার জন্য।

হযরত আল্লামা শায়খ জিয়া উদ্দীন দা: বা: প্রস্তাব স্বাদরে গ্রহণ করে জামেয়া মাদানিয়া আংগুরা মুহাম্মদপুরেই দ্বীনি খেদমতের মাধ্যমেই তার ধনাঢ্য কর্মজীবন সূচনা করেন। জামেয়া মাদানিয়ায় খেদমতে নিয়ােগের পর থেকেই ফেকাহ্, উসুলে ফেকাহ, তাফসীর,বালাগত, ও হাদিসের বিভিন্ন কিতাব অত্যান্ত নিপুণতার সাথে দরস দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি একাধারে হাদিসের অধিকাংশ কিতাবাদিই দরস দিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে তিনি মুয়াত্তা মালিক, মুয়াত্তা মুহাম্মাদ, নাসাঈ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, তাহাবি শরীফ। পরে দীর্ঘ দিন তিনি আবু দাউদ শরীফের দরস প্রদান করেন।তিনি বাংলাদের ঐতিহ্যবাহি প্রতিষ্টানে অত্যান্ত সুনামের সাথে সহিহ মুসলিম শরীফের দরস দিচ্ছেন।

দীর্ঘ দিন যাবত হাদিসে নববির খেদমতের পাশাপাশি এই রত্নগর্ভা নিরলসভাবে এই বিশাল জামেয়ার অন্যান্য খেদমতও আন্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি এই বিশাল নববি কাননের মজলিসে শুরার একজন সম্মানিত সদস্য। প্রথমে জামেয়ার সহকারি হােস্টেল সুপার হওয়ার মাধ্যমেই তার দায়িত্ব পালনের সূচনা হয়।পরে জামেয়ার প্রধান হােস্টেল সুপার হয়ে তালাবাদের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে মেহনত, ও আপন পারদর্শিতার দরুণ হাজার হাজার তালাবাদের হ্রদয়ের মনিকােঠায় আপন স্হাপন করে নিতে সক্ষম হন। এ ছাড়াও তিনি দীর্ঘ দিন হতে জামেয়ার ঐতিহ্যবাহি আল- হেলাল ছাত্র সংসদের মুহতারাম সভাপতি হিসাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইসলামি রাজনীতি: তিনি ছাত্র জামানায় কােন রাজনৈতিক দলের অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত না হলেও আকাবির- আসলাফদের রেখে যাওয়া আমানত জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সমর্থক ছিলেন।

পরে ১৯৯২ সালে ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ গঠন হওয়ার পর তিনি জামেয়া মাদানিয়া আংগুরা মুহাম্মদপুরের জামেয়া কাম্পাস শাখার সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দীর্ঘ দিন দায়িত্ব পালন করেন।পরবর্তিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মৌলভীবাজার জেলা শাখার সময়ে সময়ে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। এবং ২০১৭ সালে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মৌলবীবাজার জেলার সহ- সভাপতি নির্বাচিত হন। বর্তমান পর্যন্ত একনিষ্টতার সাথে এ দায়িত্ পালন করে যাচ্ছেন। তাসনিফাত: লেখা-লেখির সাথে তিনি অনেক পূর্ব হতেই জড়িত। প্রায় সময় গবেষণামূলক অনেক রচনা-প্রবন্ধ তৈরী করে জাতিকে চিন্তা -গবেষণায় এগিয়ে নিয়ে যান। তার লিখিত কিতাব: * সারা বিশ্বে একই দিনে ঈদ। * শবে বরাত শবে কদর। * শরহে সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া। পরিশেষে মহান আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ করি।আল্লাহ তাআলা যেন তাকে সুস্হতার সাথে দীর্ঘ হায়াত দান করেন। আমিন।

Spread the love