সারা দেশের মাদ্রাসাসমূহ

ক্বারী উবায়দুল্লাহ এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়

November 08 2018, 05:31

 মাওলানা কারী উবায়দুল্লাহ একজন আলোর মিনার। সূরের পাখি। 

কুরআনের আলো ছড়ানো এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। সুমধুর কণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করে কুরআনের হৃদয়স্পর্শী আবেদন মানুষের হৃদয়ের গভীরে পৌছে দেওয়াই ছিল তার কাজ। দীর্ঘদিন অসুস্থ থেকে ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ মঙ্গলবার ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে তার নিজ বাসায় তিনি পরলোকগমন করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়ার কোদালা ইউনিয়নের একটি সম্ভ্রান্ত ধার্মিক পরিবারে ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা বিশিষ্ট আলেমে দীন আল্লামা শাহ মেহেরুজ্জামান ইসলামাবাদি রহ.। বাবা আল্লামা শাহ মেহেরুজ্জামান ইসলামাবাদি রহ. এর কাছেই তার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয়। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে ঢাকার লালবাগ মাদ্রাসায় ভর্তি হন। লালবাগে মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর রহ. , শাইখুল হাদিস আজিজুল হক রহ. সহ অন্যান্য বিজ্ঞ আলেমদের কাছে তিনি শিক্ষালাভ করেন। ১৯৬২ সালে লালবাগ মাদরাসা থেকে তিনি তাকমিল বা দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। এ বছরেই তিনি লালবাগ মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। একই বছর মাত্র ১৮ বছর বয়সে নাজিমুদ্দিন রোডে অবস্থিত রেডিও পাকিস্তান কেন্দ্রে প্রথম কোরআন তেলাওয়াত করেন তিনি।১৯৬৫ সালে শুরু হওয়া পাকিস্তান টেলিভিশন যত দিন ছিল ততদিন ক্বারী উবায়দুল্লাহ সুমধুর কন্ঠ দিয়ে মাতিয়ে রেখেছিলেন অগণিত ধর্মপ্রাণ মানুষকে। ১৯৭৫ সালে বিটিভি উদ্বোধন হয়েছিলো তারই তিলাওয়াতের মাধ্যমে । বাংলাদেশ পার্লামেন্টের সেই উদ্বোধনী অধিবেশন থেকে ৯ম পার্লামেন্ট পর্যন্ত আমাদের জাতীয় সংসদসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানসমুহকে কুরআনের মধুর তেলাওয়াতে আচ্ছন্ন করে রেখেছিলেন তিনি। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, নিউমার্কেট, হোটেল শেরাটনসহ জাতীয় অসংখ্য স্থাপনার উদ্বোধন হয়েছে তার তেলাওয়াতের মাধ্যমে। তার যাদুকরি কন্ঠে কোরআনের তেলাওয়াত করে দেশ ও জাতির জন্য বয়ে এনেছেন বিরল সম্মান ও মর্যাদা । কারি উবায়দুল্লাহ সৌদি আরব, কাতার, দুবাই, লিবিয়া, বাহরাইন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পাকিস্তানসহ বিশ্বের অন্তত ২০-২৫টি দেশে আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় বারবার প্রথমস্থান অর্জন করে বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনেন বিরল মর্যাদা। সৌদি বাদশাহ ফয়সাল ও খালেদ দুইবার তাকে কোরআনের শিল্পী বা কারী হিসেবে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন। ১৯৬২ সাল থেকে ঐতিহ্যবাহী চকবাজার শাহি মসজিদে খতিবের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন তিনি। অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর থেকে নামাজ পড়াতে না পারলেও তাকে নিয়মিত সম্মানী দিয়ে যাচ্ছিল মসজিদ কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ বেতারে তার সুমধুর কণ্ঠে আজান ও কুরআনের তেলাওয়াত সম্প্রচারিত হত। তিনি দীর্ঘ দিন অসুস্থ ছিলেন। অসুস্থ থেকেই অবশেষে ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ মঙ্গলবার বাদ ইশা ইন্তেকাল করেন।

Spread the love